জীবন যখন যেখানে যেমন
মা কে নিয়ে সব সময় কিছু লিখতে খুব ইচ্ছে করে,কিন্তু কি যে লিখব কিছু মাথায় আসে না,তাই লেখাও হয়না। মায়ের কথা কি কখনো বলে শেষ করা যায়? .... যায় না। মায়ের ভালবাসার কোন তুলনা এই পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয়না। সেটা এক অমূল্য,অতুলনীয় স্নেহ মায়ামমতা মাখানো ভালবাসা। আল্লাহ মায়ের হৃদয়টা এমন ভাবে তৈরী করেছেন যে, সে সব সময় সবকিছু হৃদয় দিয়েই ভাবে।
কখনো সন্তানের ব্যাপারে কোন দুশ্চিন্তা যদি একবার তার মাথায় ঢুকে তো তার রাতের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে যায়,যতক্ষন পর্যন্ত না সে তার সন্তানের সাথে কথা বলে বুঝবে যে সে ভাল আছে। আমার মায়ের কথাই বলি,কয়েকদিন আগে (আমার এখানে রাত প্রায় ৯ টা হবে, বাংলাদেশে তখন রাত ৩ টা) আম্মু আমাকে ফোন করলো,আমি মোবাইলে আম্মুর নাম্বার দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলাম কারণ এত রাতে কখনো ফোন করার কথা না বা করে না। আমি ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করলাম,না জানি কি খারাপ কথা শুনতে হয় এখন। ফোন ধরতেই ঐ পাশ থেকে আম্মু বলে উঠলো কেমন আছো,কি করছো এই সব। আমি ভাবলাম মনে হয় কোন খারাপ কথা আছে যা বলতে পারছে না হয়ত।
আমি বার বার জিজ্ঞাসা করলাম হঠাৎ এত রাতে ফোন করলে বিকালেই তো কথা হলো ইয়াহু ম্যাসেন্জারে আবার ফোন করলে, কোন কথা থাকলে বলো। আম্মু বলে না হঠাৎ একটা স্বপ্ন দেখলাম তোমাকে নিয়ে,তাই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল ভাবলাম ফোন করে কথা বলে নেই, না হলে ঘুম আসছিলনা। হায়রে বেচারী আম্মু আমার চিন্তায় রাতের ঘুম পর্যন্ত ভেঙ্গে যায় আর আমি তো তখন ইয়াহু আর ব্লগে আরামসে ঘুরাঘুরি করছি। যাইহোক তো এই হলো মায়েদের হৃদয়,এই রকম আরো অনেক অনেক ছোট কারণ আছে যার জন্য মায়েদের দুশ্চিন্তার কোন শেষ নেই। ছেলে রাত করে বাড়ি ফিরবে,বাড়ির সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু মায়ের চোখে কোন ঘুম নাই।
সে না খেয়ে টেবিলে খাবার নিয়ে বসে থেকে ছেলের প্রতিক্ষা করছে,ছেলে আসলে এক সাথে খাবে সেই ভেবে। মেয়েটা কে বিয়ে দিয়েছে, খাবার সময় মেয়েটার পছন্দের কোন তরকারি রান্না হলে মায়ের মনে হয়,আহা মেয়েটা থাকলে কত পছন্দ করেই না খেত। শ্বশুর বাসায় মনের মত খাওয়া খেতেই পায় কিনা,মেয়েটা তো মুখ ফুটে কিছু চায়ও না। এইসব ভেবে হয়ত সেই তরকারি মা মুখেও তুলেন না। অসুস্থ বাচ্চার মাথার কছে রাত জেগে থাকতে থাকতে নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েন কিন্তু তারপরেও প্রতি রাতে জেগে থেকে সন্তানের রোগ মুক্তির দোয়া করতে থাকেন।
মায়েদের এইসব ছোট ছোট কথা বলে শেষ করা যাবে না,মা হচ্ছে আল্লাহর তৈরী এক আজিব সৃষ্টি.....। তবে বাংলাদেশের মায়েরদের মত মনে হয় না পৃথিবীর সব মায়ের হৃদয় হয়। এইখানে বিদেশে দেখি বাচ্চারা নিজের মত করে বড় হয়,বাচ্চাদের দেখাশুনার জন্য আয়া থাকে,মায়েরা তাদের ছোট ছোট কোলের বাচ্চাদের রেখে দেশের বাইরে পর্যন্ত চলে যায়। আমার অবাক লাগে যখন এসব দেখি আর ভাবি আমাদের মা ছোটবেলায় আমরা কখনও চোখের আড়াল হলেই অস্থির হয়ে যেত। তাই আমার মনে হয় বাংলাদেশের মায়েদের হৃদয় আল্লাহ একটু বেশী মায়ামমতা দিয়ে স্বয়ং নিজের হাতে তৈরী করেছেন,সেজন্য তাদের হৃদয়টা এত কোমল।
ছোটবেলায় পড়া একটা ছড়ার এই দুটা লাইন আমার এখনও খুব ভাল লাগে-----
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই,
এই জগতে মায়ের চেয়ে আপন কেহ নাই।
অবশ্য আমার মা বাবা দুজনেই আমাদের দুই ভাইবোনকে অনেক অনেক বেশী ভালবাসে,আমার মা বাবা নিজে কষ্ট করলেও কোনদিন আমাদের দুজনের কোন কষ্ট অনুভব করতে দেয়নি। জীবনে যা স্বাদ আহ্লাদ সবই পূরণ করছে আমার বাবা। এখনও আমার বাবা আমাকে আর আমার ভাইকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে। মায়ের কথা অনেক বললাম,কিন্তু ছোটবেলায় আম্মু কোন কথা বললে সেটা সহজে শুনতাম না।
আর আব্বু একবার বললেই সংগে সংগে করে ফেলতাম। মা হাজার চিল্লাচিল্লি করলেও পড়তে বসতাম না। আব্বু বাড়িতে থাকলে সেদিন আর পড়া ছেড়েই উঠতাম না। হা হা হা......সেসব দিনের কথা মনে পড়লে এখন খুব হাসি পায় কিন্তু পরক্ষণেই মনটা খারাপও হয়ে যায়, আবার যদি সেসব দিন গুলো ফিরে পেতাম......
********************************************************************
কয়েকদিনের জন্য ব্লগ বিরতিতে যাচ্ছি.... তাই যাওয়ার আগে কিছু একটা পোষ্ট না করে মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না..... সেজন্য এই লেখা। সবই পুরানো কথা খালি আমার ব্লগে এই প্রথম লিখলাম।
আপনাদের বিরক্তির কারণ হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবার জন্য অনুরোধ করছি.....
সবাই অনেক অনেক ভাল থাকবেন....আবার আসব কিছুদিন পরে আপনাদেরকে জ্বালাতে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।