বুধবার সকালে এক ঘণ্টার মধ্যে আসামি পক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করতে তৃতীয় বারের মতো সময় বেঁধে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়।
একই আদেশে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে তার জবাব দেয়া শুরু করতে বলা হয় প্রসিকিউশনকে।
মঙ্গলবার প্রথমার্ধের মধ্যে সালাউদ্দিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করতে সোমবার তার আইনজীবী এএইচএম আহসানুল হক হেনাকে সময় বেঁধে দেয় ট্রাইব্যুনাল।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মৌখিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হলে লিখিত যুক্তিতর্ক ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
তবে মঙ্গলবার ষষ্ঠদিনেও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারেননি সালাউদ্দিনের আইনজীবীরা।
এদিনের সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে আনা তৃতীয়, ষষ্ঠ ও অষ্টম অভিযোগে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্যের অসঙ্গতি তুলে ধরেন আহসানুল হক হেনা।
এছাড়া অভিযোগের ঘটনাগুলোর সময় সালাউদ্দিনের পাকিস্তানে অবস্থানের বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ ও নথিপত্রের বক্তব্য তুলে ধরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অপর আইনজীবী একেএম ফখরুল ইসলাম।
দিনশেষে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে এক ঘণ্টা সময় চান আহসানুল হক হেনা। এসময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের কাছে মঙ্গলবার প্রথমার্ধ পুরোটা সময় চান।
ট্রাইব্যুনালকে তিনি বলেন, “স্যার, দুই বছর আট মাস জেল খাটছি। আপনাদের কাছে কি আধাবেলা সময়ও চাইতে পারবো না?”
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, আপনার আইনজীবীদের অনেক সময় দেয়া হয়েছে। আজকে প্রথমার্ধ দেয়া হয়েছিল, এরপরও পুরো দিন সময় দেয়া হয়েছে। কালকে আর সময় দেয়া হবে না।
সালাউদ্দিন কাদের বলেন, “আপনাদের যা করার তা আপনারা করবেনই।
আপনাদের সময়ের স্বল্পতা আছে জানি। কিন্তু এটা তো আমার ‘ইগো’র প্রশ্ন না, এটা আমার জীবনের প্রশ্ন। আধাবেলা সময় দেয়া হলে কী ক্ষতি হয়ে যাবে?”
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারক আনোয়ারুল হক সালাউদ্দিন কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার আইনজীবী তো বললেন কালকে একঘণ্টা হলেই হবে।
এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান মঙ্গলবার সকালে এক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তিতর্ক শেষ করার আদেশ দেন।
গত ২৮ জুলাই থেকে শুরু করে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন।
১ অগাস্ট থেকে আসামি পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের পরে প্রসিকিউশনের জবাবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া। এরপরে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবে ট্রাইব্যুনাল।
২৪ জুলাই আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। তার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি নিজেসহ মোট চারজন।
অন্য তিন সাফাই সাক্ষী হলেন তার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ, এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী।
এর আগে আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলামসহ প্রসিকিউশনের মোট ৪১ জন সাক্ষী। আর চার সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
এছাড়া অন্য চার সাক্ষী- মৃত জ্যোৎস্না পাল চৌধুরী, মৃত জানতি বালা চৌধুরী ও মৃত আবুল বশর এবং ভারতে থাকা বাদল বিশ্বাসের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
হরতালে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।
১৯ ডিসেম্বর তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো আদালতে হাজির করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগে গত বছরের ৪ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলার বিচার শুরু হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।