আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহানায়ক মান্নার মৃত্যু ও বাংলাদেশের ভবিষ্যত সিরিজ-০১



নায়ক মান্নার মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক বছর হলো। তার মৃত্যুর পর একটি হাসপাতাল এবং তার দায়িত্বরত চিকিৎকদের কর্তব্য পালন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। যতদূর মনে পড়ে এ নিয়ে মামলা মোকাদ্দমাও হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল কি হয়েছিল জানি না। অবশ্য জানার আগ্রহও বোধ করি না।

কারণ এ দেশে পাতাল থেকে শুরু করে সমতল পর্যন্ত ‘বে’ (বেওয়ারিশ, বেহুদা, বেঈমান, বেতাল, বেসুর ইত্যাদি জাতীয় শব্দ) আর ‘অপ’তে ( অপব্যাখ্যা, অপশক্তি, অপমৃত্যু ইত্যাদি) ভরপুর। কত খবর রাখবো। যাক এ সব নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। এ নিয়ে আমাদের ‘জীবী’ শ্রেণীর লোকেরা অনেক কথা বলেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতেও বলবেন এ আশা রেখে মূল প্রসঙ্গে যাই। তার আগে শিরোনাম নিয়ে দু‘এক লাইন খোলাসা করে বলি।

কারণ এতে অনেক সুধীজনের আপত্তি থাকতে পারে। বিশেষ করে মহানায়ক শব্দটি নিয়ে। এ উপাধিটি আমি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা থেকে গ্রহণ করেছি। নায়ক মান্নার মৃত্যুর পর বিনোদন সাংবাদিকরা তাকে উপাধিটি দিয়েছিল। সাংবাদিকদের কা-জ্ঞান বা দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না।

এটি সময়ের হাতে ছেড়ে দিলাম। মান্নার যখন মৃত্যু হয় তখন একটি সংবাদপত্রে কাজ করি । সেই সুবাধে এর কিছুটা উত্তাপ সহকর্মীদের মাধ্যমে পেয়েছিলাম। শুধু সহকর্মী বললে ভুল হবে। রাস্তাঘাটেও এর রেশ দেখেছিলাম।

একটু পরিষ্কার করেই বলি- মান্নার মৃত্যুর পর যথা নিয়মে শহীদ মিনারে তার লাশ আনার কথা। এটি যে কোনো সংস্কৃতিকর্মীর ক্ষেত্রেই হয়। আমি তখন চকবাজারে থাকি। যথারীতি সকালে রিকশা করে অফিসে আসছি। শহীদ মিনারের কাছাকাছি এসে রিকশা আর সামনে এগুচ্ছে না।

সামনে কি হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আমার খেয়ালই ছিল না আজ এখানে মান্নার লাশ আনা হবে। ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে বুঝতে পারলাম আসল ঘটনা। হাজার হাজার নারী পুরুষের ভীড়! চিৎকার চেঁচামেচি আর কান্নাকাটি। সবার মধ্যে শোকের ছায়া।

যেন তারা তাদের স্বজন হারিয়েছে। বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম। মান্নার কী এমন গুণ বা অভিনয় কারিশমা ছিল যার জন্য এত মানুষের হাহাকার। তার ছবি যে দেখিনি এমন নয়। কি আছে তাতে।

তাকে আমরা এতটা তাচ্ছিল্য করতাম যে বড়সড় কোন মানুষ দেখলে হাসতে হাসতে বলতাম নায়ক মন্নান। কিন্তু ওরা কি দেখেছে কিংবা পেয়েছে? এই দেখা বা পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে আজকাল বাংলাদেশকে খুজে পাই। সেই সঙ্গে খুঁজে পাই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিটা কে এবং কারা হবে। পাঠক বাংলা সিনেমার প্রতি অন্য সবার মতো আপনাদের যদি নাকসিটকানোর অভ্যাস না থাকে তাহলে নিশ্চয় মান্না অভিনীত সিনেমাগুলো আপনাদের দেখা হয়েছে। যদিও অনেকে বলবেন ড্রয়িং রুমে বসে ওর সিনেমা দেখার মতো নয় (দু‘একটি ব্যতিক্রম ছাড়া)।

এগুলো গার্মেন্টস আর বস্তির লোকদের জন্য তৈরি। মোটাদাগে বলা যায় নিম্ন শ্রেণীর লোকদের উপযোগী করে তৈরি। নাক সিঁটকানো সেই সব ভদ্দরনোকদের চিন্তাকে অস্বীকার করার কোনো জো নেই। কারণ তারাই সমাজের চলতি মানদ-টি নির্দেশ করে। তাদের সেই নির্দেশ শিরোধার্য।

আর এখানেই নিহিত আছে বাংলাদেশের ভুলনীতি কিংবা চিন্তা। আমারতো মনে হয় এই সূক্ষতম অনুভূতিটুকু যদি আমাদের কর্তাব্যক্তি আর মধ্যেিত্তর মগজে প্রবেশ করে তাহলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। মান্নাকে নায়ক বা মহানায়ক বলা যায় কিনা সে বির্তকে যাচ্ছি না। আপাতত প্রতীকি অর্থে সে হতে পারে আমাদের আইডল। সেই আইডল ঘুণে ধরা সমাজের সেতু বা বন্ধনের মতো...(চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.