ছোটবেলায় প্রচুর দুষ্টামী করতাম। প্রতিদিনই আমার নামে আম্মার কাছে বিচার আসে।
দলবেধে ঘুরি।
তাই দলের কেউ কিছু করলেই শুধু আমার নামেই বিচার যায়।
আমার আম্মা অনেক কড়া।
তাই বিচার দিলে বিচার করা হয়। দলের সবার হয়ে মার খাই... অপরাধ করলেও আবার না করলেও ...
তাই নিয়মিত মারখেয়ে মুটামুটি অভ্যস্ত।
রাস্তায় মাটি ভরাট চলছে...
পাশের ডোবা থেকে মাটি কেটে মাইট্টালরা (মাটি কাটার শ্রমিক) মাটি সড়কে ফেলছে। মাটি কিছুটা নরম। তাই আমরা দলবেধে সেই নরম মাটি দিয়ে গোল মার্বেলের মত গুলি বানাই।
গুলি শুকাতে দিয়ে ডোবার একপাশে হাডুডু আর লাঠালাঠি খেলি। মাঝে মাঝে বাংলা সিনেমা খেলি।
বাংলা সিনেমা খেলাটা মজার। কয়েকজন গুণ্ডা হয় কয়েকজন পুলিশ। ভিলেন, নায়ক, নায়িকা সব ধরনের চরিত্রই থাকে(নায়িকা ছেলেদের মধ্য থেকেই দুর্বল কাওকে নেয়া হয় )।
একজন পরিচালনায় থাকে। সে বলে এই মুহুর্তে কোন সিনটা হবে।
কিছুক্ষন পরে আর এসব মানামানির বালাই থাকে না। ধুমা মারামারি। চোখ বন্ধ করেই ধুমা ঘুষি।
কার শরীরে লাগছে বা কারো শরীরে আদো লেগেছে কিনা তা নিয়া কোন চিন্তা নাই। কিছুক্ষন পর বড়দের কেউ এসে চড় থাপ্পর দিয়ে মারামারি থামিয়ে দিলে সবাই ছুট দেই পুকুরে। গিয়েই লাফালাফি শুরু।
মাটি কাটার সময় মাইট্টালরা মাটির হিসাব রাখতে বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে রাখে। একদিন আমরা মারামারি করার সময় মাইট্টালদের একটা ছোট ঢিবি ভেঙ্গে দেই।
সেই ঢিবিটা ছিল তাদের মাটির হিসাব।
যা হবার তাই হল । আমার নামে বিচার গেল। সবার মার শুধু আমার উপর দিয়েই গেল। মার খাওয়ার রাতেই জ্বর এসে গেছে।
আর সহ্য করা যায় না। প্রতিশোধ নিতে হবে।
পরের দিনও জ্বর আছে। বিকালে আব্বা আমার জন্য নতুন শার্ট আর হাফপেন্ট আনলে সেগুলো গায়ে দিয়ে পায়ে সেন্ডেল গলিয়ে বাইরে আসলাম। জ্বর তাই খেলাতে গেলাম না।
পাড়ে বসে খেলা দেখতে লাগলাম। মাইট্টালরা একদিকে মাটি কাটছে অন্য দিকে সবাই খেলছে। মাইট্টালরা হুক্কা খায়। তাই একাপাশে তাদের হুক্কা তামুক রাখা। মাথাই প্রতিশোধের আগুন ...
আস্তে আস্তে গিয়ে হুক্কার পানিটা ফেলে দিলাম।
পানি ফেলে দিয়ে চলে আসব হঠাৎ দুষ্টবুদ্ধিটা মাথায় আসল। হুক্কার পানি ভরার ছিদ্র দিয়ে পস্রাব করে হুক্কার ভিতরে পানি দিলাম। পানি পর্যাপ্ত হয়ে গেল হুক্কাটা সেইখানে রেখে সোজা বাড়ি গিয়ে আম্মার চোখের আড়ালে বিছানায় শুয়ে রইলাম।
সন্ধ্যায় আবার আমার নামে বিচার আসল। এবার সব মাইট্টালরা আর সেখানে খেলারত সবাই একসাথে এসেছে ।
মাইট্টালরা এসেছে আব্বার কাছে কঠিন একটা বিচার চাইতে। আর বাকিরা এসেছে তামাসা দেখতে । আব্বা বাঁশঝার থেকে কঞ্ছি কেটে আনতে আমাদের রাখাল ছেলেটাকে পাঠাল। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাঁশের ৪-৫ টা লিকলিকে কঞ্ছি হাজির। আব্বাকে এত রাগতে আমি আগে কখনও দেখিনি।
গ্রামের আরও অনেক মুরুব্বি হাজির হল। এর মধ্যে একজন আব্বাকে বলছে " রইচান, তুমি সারা গ্রামের বিচার করে বেড়াও, তোমার ছেলের বিচার তুমিই কর" । আমি তখন আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম এই অপমানে আব্বা রাগে অন্ধ হয়ে আছেন। আমার জ্বরের শরীর দুর্বল হয়ে আছে। আমি খালি আল্লাহ আল্লাহ করছি।
আব্বার মার সহ্য করার মত শক্তি আমার নেই।
সেই মুহুর্তেই আমার বড় ভাই হাজির। আব্বা ভাইকে বললেন সবগুলো কঞ্ছি আমার শরীরে ভাংগার জন্য। ভাইকে আমরা এমনিতেই অনেক ভয় পাই। কোন কারন ছারাই মারধর করে।
আমার বাঁচার আশা নাই।
ভাই একটা কঞ্চি হাতে নিয়ে আমার দিকে আসছে। আমি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। সবাই কেমন জানি করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমার বন্ধুদের অনেকেই কেদে ফেলবে এমন অবস্থা।
আমি দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা।
ভাই আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন " তুই হুক্কায় মুতছোস ???"
আমি সাহস নিয়ে মিথ্যা বলে দিলাম ..." আমার জ্বর উঠছে ... আমি খেলায় আজ যাই নি... আমি মুতাম কেমনে ??? "ভাই একটা হাত আমার কপালে রেখে আতকে উঠলো। আমাকে কোলে তুলে নিয়ে কলপাড়ে ছুটলো...
কলপারে একটা পাটি বিছায়ে আমার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে... আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম... কখন ঘুমিয়ে বা অজ্ঞান হয়ে গেলাম বলতে পারি নাই...
পরের দিন জ্বর তেমন নেই । খেলার জন্যে বাহির হব এমন সময় আমার বন্ধুরা হাজির। তাদের মুখেই শুনলাম সন্ধায় বিচারে সবাইকেই( সব পিচ্চি যারা ডোবায় খেলে )পিটানো হয়েছে।
আর ডোবায় খেলা বন্ধ।
আমি এ ঘটনায় খুশি... সবার উপরেই প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেল... আমি কাউকেই এই ঘটনাটা বলি নি ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।