সত্যকে বলতে শিখুন.......
রাজধানীতে সাম্প্রতিক সংঘটিত চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আতঙ্কজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নগরবাসী। এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অপেশাদার ও পক্ষপাতমূলক মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। সর্বপরি রাজধানীর অপরাধ
নিয়ন্ত্রণে ফুটে উঠেছে পুলিশের অনভিজ্ঞতার সার্বিক চিত্র।
গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীতে ৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটে।
৭ অক্টোবর মগবাজারে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পুরাতন মোটরসাইকেলের নিলাম দরপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা হত্যা, গুলশানে পুলিশের পিস্তল ছিনতাই, মতিঝিলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে পুলিশ হত্যা, গুলশানের নিকুঞ্জে পুলিশ সদস্যের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি, ইভটিজিং, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য, মানি এক্সচেঞ্জ থেকে টাকা লুণ্ঠন, ক্রমবর্ধমান চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পেশাদারিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ড নিয়ে 'ইব্রাহিমকে এমপি শাওন খুন করেছে এ কথা কে বললো? যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম এমপি শাওনের পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে! এটা কখনই খুন নয়, বলা যায় অপমৃত্যু'। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের গানম্যানের গুলিতে ছিনতাইকারী নিহতের ঘটনায় ‘গুলশানে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুর রাজ্জাকের গানম্যানের গুলিতে ছিনতাইকারী খুন হয়নি। এমপির বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ছিনতাইকারী গুলি করার পর গুলিটি ফিরে এসে ছিনতাইকারীর বুকে বিদ্ধ হয়েছে।
এতেই ছিনতাইকারী মারা যায়’ পুলিশ কর্মকর্তার এমন লাগামহীন বক্তব্যে হতাশ নগরবাসী। সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এসব বক্তব্য সাবেক ডিএমপি কমিশনার একেএম শহীদুল হকের ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনের। দায়িত্বশীল পদে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়ীত্বহীন এমন মনগড়া বক্তব্য ও মন্তব্য খোদ পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ কমিশনারের এমন বক্তব্য মেনে না নেয়ায় তার পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে, এমপি রাজ্জাকের গানম্যান কনস্টেবল হেমায়েতউদ্দিন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্যের পুরো বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে গুলি করে, আত্মরক্ষার খাতিরে সরকারি পিস্তল দিয়ে তখন তিনি সরাসরি ছিনতাইকারীর বুকে গুলি করেন। এতে ছিনতাইকারী ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
বর্তমান সময়ের দুঃসহ যানজট, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতিতে রাজধানীবাসী ধৈর্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার উপর পুলিশের অপেশাদার ও জ্ঞানশূন্য এমন আচরণ, বক্তব্য সকলকে হতাশ করেছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নগরবাসী এখন প্রশ্ন তুলছে।
অপরদিকে লুণ্ঠিত হওয়া পুলিশের অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশ কাফরুল ও গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে রমজান ডাকাত, শামীম ও জামাল নামে তিন অপরাধীকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ২ রাউন্ড গুলিসহ ৭.৬৫ ক্যালিবার পিস্তল উদ্ধার করা হয়। একটি সূত্র জানায়, ওই পিস্তলটি গুলশান থানার এক এসআইয়ের লুণ্ঠিত অস্ত্র। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা করা হয়েছিল।
সাবেক নৌবাহিনী প্রধানের মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায় ও উত্তরায় দুই সেনা কর্মকর্তার বাসায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সম্প্রতি পুত্রের হাতে পিতা হত্যার ঘটনা, ইব্রাহিম হত্যা, ৩০ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীতে ভাতিজার হাতে মা, ছেলে ও পুত্রবধূ হত্যা, খিলগাঁওয়ে প্রকৌশলী হত্যা, মহাখালীতে কর্মচারী নেতা সিদ্দিকুর রহমান ও খিলগাঁওয়ে গৃহবধূ কণিকা হত্যা, মিরপুরে ইডেন কলেজের ছাত্রী মেনকা হত্যা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ড নগরবাসীর মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, অনভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকায় অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। বর্তমানে রাস্তা বা মহল্লার অলিগলিতে বখাটে ও ছিনতাইকারীরা পথচারীদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা না পাওয়ায় এখন পুলিশের কাছে অভিযোগ করা বাড়তি ঝামেলা মনে করা হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক আইজিপি এএসএম শাহজাহান শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, অপরাধ পূর্বেও ছিল, এখনো আছে এবং আগামীতেও থাকবে। তবে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর এর কোনো রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় এবং অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত না করতে পারলে তা বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দেবে। অপরাধের কোনো পরিসংখ্যান আমি দেখিনি কিংবা তা দেখতে মোটেও আগ্রহী নই। স্পর্শকাতর সকল ধরনের অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। পুলিশ কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে এমন ভূমিকা পালন করছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কেউ কেউ বা পুলিশের কিছু অংশ প্রভাবিত হতে পারে তবে ঢালাওভাবে পুলিশ প্রশাসন প্রভাবিত এমনভাবে বলা মোটেও উচিত হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।