সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে
১ কবিরা সব তেলাপোকা হয়ে যায়
-হ্যালো দোস্ত তুই কই?
-আমি বালুঘাট,তুই?
-আমি ক্যান্টনমেন্ট,তুই কাল আমার সাথে একটু দেখা করবি সকাল ১০টায়?
-দেখা করমু তবে আমারে দেখে কিন্ত্ত হাসাহাসি করবি না। আমি এখন স্মার্ট বয়।
-আচ্ছা হাসবো না।
মফিজ আমার বন্ধু। একসাথে পড়েছি।
সুগঠিত শরীর। যে কিনা পাট ক্ষেতে প্রেমিকার ঠোঁটে চুমু খেয়ে একবার কবি হয়ে উঠেছিল সে একসময় দাঁড়ি গোফ রেখে যাকে বলে জংলী মতন হয়ে গেলো। এমনিতেই শরীরে পশমের আধিক্য থাকায় আর শ্যামবর্ণের হওয়ায় অনেকটা আদি মানুষের মত লাগতে থাকে। সস্তা আতরের মৌ মৌ গন্ধে বমির উদ্রেক হত। লম্বা আসকান,বার হাত লম্বা পাগড়ি।
হালাল হারাম বেছে চলা। মাঝে মাঝে চরম লাগত।
একদিন তার বড় ভাই এসেছে। আমরা হলে থাকি তখন। বড় ভাই ঈদের সপিং করেছে অনেক টাকার।
মফিজকে কাপড়,জুতো অনেক কিছুই দিতে চেয়েছে। কিন্ত্ত সে কিছুই নেয়নি। আমি তাকে বলি শালা কত অভাবে থাকিস নিলি না ক্যান?সে কিছু বলতে চায় না। অনেক জোরাজোরির পরে বলল -আমি কিভাবে নিই তার দেয়া উপহার?সে বেতন পায় ৮হাজার টাকা আর বাসা ভাড়া দেয় ১০হাজার টাকা। অন্যান্য খরচের কথা কথা বাদই দিলাম।
আমি সেদিন তার আরক্তিম চোখের দিকে চেয়ে কিছু বলতে পারিনি। সবকিছুতে এত বেশি?কি জানি সে হয়ত কবি ছিল। মহৎ কবি যে কবির কোন কবিতা পৃথিবীর কোন কাগজে লেখা নেই।
সেই মফিজ। আমি প্রথমে চিনতেই পারিনি।
কী রে তোর এই অবস্থা?সে বলে স্মার্ট হইছি দোস্ত। আজকের জমানায় গালের চুল কাটলেই স্মার্ট হওয়া যায় বালচুল হোকনা মেয়েদের মতন। কয়েকটা চাকরির ভাইবা থেকে বাদ পড়লাম। কোথাও কোথাও মুখের দাঁড়ি নিয়ে আপত্তিও তুলেছে। এদিকে ছাদের মাল সব শেষ হইয়া যাইতাছে।
দুইদিন পড়ে আর কোন মাইয়াও মিলব না। তোদের না হয় বড় বড় স্বপ্ন আছে। আমরা মাটির মানুষের স্বপ্ন বড় জোড় বিয়া ,বউ ,বাচ্চা।
বড় ভাই টাকা দিব কইছে। যতইলাগুক।
আশাকরি ব্যাংকের চাকরিডা হইয়াই যাইব।
হায় কবি!!
২.নেশা আমাকে যত ভালবাসে মানুষ তত বাসে না
আমার বন্ধু রোম্যান। দারুণ তার কবিতার গলা। তুখুড় বক্তা। বিতার্কিক।
এবং একজন ভাল মানুষ। একটা মেয়েকে খুব ভালবাসত। মেয়েটা পাখি হয়ে গেল একদিন। এখন কোনডালে গান গায় সে খবর আর নেয়া হয়নি।
রোম্যান প্রায়ই তার ভরাট গলায় আবেগ মথিত কণ্ঠে তুলে ধরত মানুষের কথা,মানুষের বৈশম্যের কথা,ভণ্ডামির কথা,একটা সুন্দর সমাজের কথা।
সবাই হাততালি দিত তার কথায়। কেউ কেউ বলত আপনার গলা অনেক সুন্দর,অনেক সুন্দর করে কথা বলেন আপনি। নিরস মুখে রোম্যান তাকিয়ে থাকতো। সবাই তার কথার সৌন্দর্যকেই দেখে সে কী বলেছে সে কথা কেউ শুনে না। নির্বাচন সামনে রেখে দিনের পর দিন টানা খাটনি খেটেছি।
মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি।
মাইকে গেয়ে চলেছি গণসঙ্গীত। ভেবেছি মানুষ বুঝি জেগেই উঠবে এবার। নির্বাচন শেষে রোম্যানকে জিঙ্গেস করি কত ভোট পেয়েছিরে আমরা?৪৭০সে বলে। একটা ক্লান্তি এসে ভর করে ।
রেজাল্ট শোনার পর। এতদিন যেটা মানেই ছিলনা।
ও আলোর পথ যাত্রী এ যে রাত্রী'রোম্যানের খুব প্রিয় গান। আস্তে আস্তে সে আসক্ত হয়ে পড়ে। তাকে বোঝানোর কিছু নেই।
তাই কিছু বলিনা। তারপরও বলি কাধে হাত রেখে বলি নেশা করিস কনো?
সে বলে নেশা যেভাবে আমায় ভালবাসলো সেরকম তো আর কেউ বাসলো না । তাই।
হায় কবি তুইও কি ধোয়া হয়ে যাবি?
৩.লাভের গুড় পিপড়ায় খায়
বাসে করে সিলেট থেকে ঢাকা যাচ্ছি। যেমনটা প্রায়ই যাই।
তো প্রথমদিকে বাপ আর মেয়ে বয়সের দুইজন বসেছে। এমন সময বাসের ডিভিড প্লেয়ারে চলা শুরু হলো আশিক বানায়া.......। মাখামাখি। বাপবেটি কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছে না। বৃদ্ধ মানুষ শেষমেষ গানটা বন্ধ করতেই বলল।
হৈচৈ শুনে তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়। একলোক বলছে-হ ,ওয়াজ লাগাও ওয়াজ। গান বালা না লাগলে কানে তুলা ,চোখে চশমা দিয়া রাখলেই হয়। মোল্লাগীরী মারাইতে আইছে। আমি শুধু ভাবছিলাম বাবা-আর মেয়ের অনুভূতির কথা।
৪.আদালত বিষয়ক
-এই শুনছস ?
-হু, বল
-আদালত নাকী রায় দিছে বাঁধনরে যারা ল্যাংটা করছিল তারা খালাস।
-হু শুনছি আমি কি করব?
-রায় তো আরেকটা বাকি রইছে মনে হয়।
-কোন রায় ,কীসের রায়?
-আদালতের উচিত এখন যে ছবিগুলোতে বাঁধনরে বিবস্ত্র দেখা যাইতাছে হেই ছবিগলোর মধ্যে কাপড় পরানোর রায় দেয়া । তাইলে ব্যাপারটা পারফেক্ট হয়। কি বলিস?
-আরে যাহ শালা !সকাল বেলা ক্যাচাল দূর হ!
৫.মৌ লোভী মহাকবি
বাসে দিয়ে যাচ্ছি।
মাঝখানে কিছু লোককে কিছু্তেই সরানো যাচ্ছিল না। সামনের দিকে মানুষেগিজগিজ করছে কিন্ত্ত পেছনে ফাঁকা। ওরা পেছনে যাচ্ছেনা কেনো?কী হইছে ভাই পোছনে যাচ্ছেন না কেনো?এক বেরসিক কবি বলে উঠলেন। যাইবো ক্যামনে এইখানে যে মধু দেখাই রাখছে?চমকে উঠি। এক মেয়ে স্বল্প বসনা।
ফ্যাসনেবল ড্রেস পড়েছে। তাতে যারা দাঁড়িয়ে ছিল সবাই তার উধাঙ্র্গ দেখতে পাচ্ছে আর কামোত্তোজনায় হুমরি খেয়ে দেখছে। মেয়েটি মৌলোভী সব মৌমাছির গুঞ্জন দেখে মজা পাচ্ছে। বেরসিক ড্রাইভার হার্ড ব্রেক না কসলে জটলাটা সেদিন ভাঙ্গতোইনা। হায় ড্রাইভার তুমিও মহাকবি।
৬.অ্যাডাম টিজিং
-হেলো কে বলছেন প্লীজ
-আমি তারা । আপনি কি আকাশ বলছেন?
-কতবার বলব যে আমি আপনার আকাশ নই।
-রাগ করছেন কনো। আপনার সাথ কি একটু কথাও বলা যাবেনা?
-বলেন কেনো ফোন করছেন?
-আপনার বয়স কতো?
-আমার বয়স ৪৫। বয়স দিয়ে কী করবেন?
-ও তাহলেতো পারবেন না।
-কি পারবানা?
-ভালো মতন ঢেউ তুলতে। আচ্ছা হাত চালাতে পারেন আপনি?
-রাবিস
-হিহিহিহিহি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।