অযথা ঝগড়া বিবাদ ভাল লাগে না। শিক্ষা বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। সু শিক্ষা চাই সর্বত্র।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র। অন্য আরো অনেক শিশুর মতো তাকেও রেহাই দেয়নি ঘাতকরা।
ঘটনার সময় শিশু রাসেল কাঁদছিল আর বলছিল আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে চল। তার নিষ্পাপ মুখ দেখেও একটুও মায়া হয়নি ওই নরঘাতকদের।
বুলেটের নির্মম আঘাতে কচি ওই দেহটা নিথর করে দেয় ওরা। রাসেল মৃত্যুর আগে কি বলছিল জানি না। তবে আঁচ করতে পারছি বুলেট বের হওয়া লোহার যন্ত্রটার দিকে হয়তো তাকিয়ে ছিল কিংবা মায়া ভরা চোখে ঘাতকদের পাণে।
পাষান হৃদয়ের ঘাতকরা তখন মেতে উঠেছে ইতিহাসের এক বর্বরতম হত্যাযজ্ঞে। ওরা তখন মানুষ থেকে পরিণত হয়েছে হায়েনায়। শিশু হত্যা আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। যুদ্ধে বিনা কারনে নির্মমতার স্বীকার হয় শিশু। যুদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তি প্রতিহিংসার কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে শিশুকে।
চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে এই নারায়ণগঞ্জেও এক মেধাবী শিশুকে হত্যা করেছে পাষন্ডরা। তার নাম তানভির মুহাম্মদ ত্বকী। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত একজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সে যাদের নাম বলেছে তারা সবাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমান পুত্র আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্টজন।
৬ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বী এ হত্যাকান্ডের সাথে ওসমান পরিবারের সদস্য সংশ্লিষ্ট আছে বলে অভিযোগ করছিলেন।
এমনকি নিখোঁজের দিন তিনি শহরের টর্চারসেলগুলোতে হানা দিতে অনুরোধ করেছিলেন পুলিশকে। পুলিশ তার কথায় কর্ণপাত করেনি। ৮ মার্চ শহরের কুমুদিনী সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে খুন করতে খুনীরা অন্ধকার রাতকেই বেছে নিয়েছিলো। শিশু শেখ রাসেলকে ওরা রাতেই মেরেছে।
ত্বকীকেও রাতেই দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে পাষন্ডরা। আসলে কাপুরুষেরা রাতেই নিজেদের সিংহ ভাবে। দিনের পরিচ্ছন্ন আলোয় ওরা এক একেকটা নেড়ি কুত্তা।
ত্বকীর মৃতদেহ দেখে ওর বাবা মা অঝর ধারায় কাঁদছিল। সাথে ছোট ভাইটিও।
তাদের সেই কান্না দেখে সেদিন নারায়ণগঞ্জের আকাশ বাতাসে এক করুণ সুর বেজে উঠে। সমাজের উঁচু শ্রেনী থেকে শুরু করে সর্ব শ্রেনীর মানুষ রব তুলেছিল ‘হায় হায় কে এমন কাজ করল, কারা এই পাষন্ড। ’ তবে যারা একটু আধটু খোঁজ খবর রাখেন তাদের কেউ বলাবলি করছিল নানা নাম।
প্রতি বছর ১৫ আগস্ট এলে শেখ রাসেলের নাম আসে মনের অগোচরে। পত্রিকার পাতায় মায়াভরা শিশু মুখের ছবিটি দেখে অনেকেই ভাবেন ‘ শিশুটিকেও রেহাই দেয়নি পাষন্ডরা’।
তবে সবচেয়ে বেশী মনে হয় শেখ রাসেলের প্রিয় হাসু আপুর। এদিনটায় টেলিভিশনে তার ছল ছল দু’ চোখ দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে কি পরিমান বেদনায় আচ্ছন্ন তার মন। পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি ছোট ভাইটির জন্য সারা বছরই তার মন কাঁদে। প্রিয়জন হারানোর বেদনা সেই বুঝে, যে হারায়।
ত্বকীর জন্যও মন খারাপ করে ওর স্বজনরা।
তার হয়তো একজন হাসু আপু নেই। তবে আছে আদরের ছোট ভাই সাকী। সে বাড়ির চারপাশে খুঁজে বেড়ায় মেধাবী ভাইকে। না পেয়ে সবার অগোচরে চোখের জল ফেলে।
শেখ রাসেলের প্রিয় হাসু আপু বর্তমানে প্রিয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তাই তিনি সব শিশুর হাসু আপু। ব্যক্তিগতভাবে তিনি শিশুদের খুব মায়া করেন বলে জানি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাই আবেদন নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিশু ত্বকী হত্যার সাথে জড়িত প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার।
যাতে ভবিষ্যত ত্বকীরা কিংবা শেখ রাসেলরা নিরাপদে থাকে এই দেশে। তারা যেন নির্বিঘেœ এগুতে পারে প্রিয় এই দেশ গড়তে।
কোন অপশক্তিকে যেন ভয় না পায়। হায়েনার ধমকে যেন উল্টো ধমকে দেয় ‘ হাসু আপুকে বলে দিব কিন্ত’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।