আর একটি যুদ্ধ চাই
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। আর দেশের বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে বাংলাদেশ। গত ৩০ বছরে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ দেশে প্রায় দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা একক দেশ হিসেবে বিশ্বে সর্বোচ্চ। বুধবার ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান 'ম্যাপলক্রফট' এর প্রকাশিত জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির সূচকে একথা বলা হয়েছে।
এ লক্ষ্যে ১৭১টি দেশ ও অঞ্চলের গত ৩০ বছরের তথ্য সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা,মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির হার,আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস,অবকাঠামোগত অবস্থা,অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন তথ্য বিবেচনায় আনা হয়েছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশগুলোকে সর্বোচ্চ ও স্বল্প ঝুঁকির তালিকায় ভাগ করেছে ম্যাপলক্র্যাফট। ম্যপলক্রফট জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মুখে থাকা ১৭১ টি দেশের যে ক্রমতালিকা দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ১১০ কোটি জনসংখ্যার চাপে এ ঝুঁকির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মাদাগাস্কার। এরপর যথাক্রমে নেপাল, মোজাম্বিক, ফিলিপাইন, হাইতি, আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও মিয়ানমারের অবস্থান এবং পাকিস্তান রয়েছে ১৬তম অবস্থানে। সমীক্ষায় আগামী ৩০ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এমন ১৬টি দেশের তালিকা করা হয়েছে। আর এই ১৬টি দেশের মধ্যে পাঁচটি দেশই দক্ষিণ এশিয়ার। মূলত বন্যা, খরা, ঝড় এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলেই মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এসব দেশ।
এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সমীক্ষায় বলা হয়েছে,একদিকে সর্বোচ্চ খরা ও বন্যা,অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশটি। সমীক্ষা অনুযায়ী,উচ্চ ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-৪৯তম অবস্থানে চীন,৮১তম অবস্থানে ব্রাজিল এবং ৮৬তম অবস্থানে জাপান। এছাড়া, মধ্যম ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশসমূহের তালিকায় রয়েছে ১১৭তম অবস্থানে রাশিয়া,১২৯তম অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,১৩১তম অবস্থানে জার্মানি, ১৩৩তম অবস্থানে ফ্রান্স এবং ১৩৮তম অবস্থানে যুক্তরাজ্য।
১৭১ টি দেশ নিয়ে তৈরি এ সূচকের সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে।
নরওয়ের পর সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন ও ডেনমার্ক।
এ সূচক তৈরিতে কোনো দেশে খরা, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধসের আশঙ্কা এবং দারিদ্র ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় দেশটির সামর্থ্যকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, একটি দেশের জনসংখ্যা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কৃষিনির্ভরতার মাত্রা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বিবেচনা করেও এ সূচক তৈরি করা হয়েছে।
মেপলক্রফ্ট-এর পরিবেশ বিশ্লেষক আনা মস বলেন, এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা এবং হার দুটোই বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, অতি সামান্য পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধিই মানব পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
এর ফলে পানির অভাব, শস্য উৎপাদন হ্রাস, রোগ-বালাই বৃদ্ধি এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ফলে ভূমি ধসের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
বার বার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ বিশ্ব জলবায়ু ,এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সব সময় দেখা যায়, বাংলাদেশ কিভাবে এই হুমকি মোকাবেলা করতে পারে সেই ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের দেশগুলির কাছে নিজেদের অবস্থানকে তুলে ধরতে পারেনি।
যেহেতু এই মুহুর্তে কোন বড় ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ছেনা বা বন্যায় দেশ ডুবে নেই তাই জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির ব্যাপারটি নিয়ে আমরা সবাই আবারও ভুলে বসে আছি । টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, সুশীল সমাজ, আমাদের এই ব্লগ..সবাই নিশ্চুপ । আমাদের নাড়া দেবার জন্য আরো কিছু মৃত্যু প্রয়োজন।
প্রশ্ন হচ্ছে কতগুলি সস্তা মৃত্যুর পর আমাদের আবার বোধোদয় হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।