আসুন ভালো থাকি (মূল ইংরেজির অনুবাদ, ইংরেজি লেখা: রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান সঞ্চালক, ইক্যুইটিবিডি)
উন্নয়নশীল বিশ্ব, তথা জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য কানকুন সমঝোতাতে দুটি অর্জন সাধিত হয়েছিল, একটি হলো জলবায়ু বাস্তুচ্যূতদের স্বীকৃতি এবং ক্ষতি ও বিপর্যয়ের ব্যাপারে আলোচনা। ক্ষতি ও বিপর্যয় (খড়ংং ধহফ ফধসধমব) ধারণার মূল কথা হলো - অভিযোজনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। প্রকৃতির বিরূপ আচরণের কারণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ক্ষতি বা বিপর্যয় ঘটে গেছে, আরও অনেক বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে। কানকুন সমঝোতায় এই সম্ভাব্য বিপর্যয় বা ক্ষতির একটি হিসাব করার কথা বলা হয়েছিল এবং সেই ক্ষতি মোকাবেলার কৌশল নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কর্মকৌশল নির্ধারণের কথা বলা হয়েছিল।
এই বিষয়টিই বাংলাদেশের মতো জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য কিছুটা ভরসা হিসেবে দেখা দিয়েছিল, কারণ ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে কার্বন নির্গমন ব্যাপকভাবে কমিয়ে ফেলার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ এবং এই পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ ডিপ্রি বেড়ে যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী।
আর এ কারণেই, বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন বাংলাদেশের মতো নিচু এলাকার দেশগুলোর আরও অনেক বেশি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি বিপদাপন্ন দেশগুলো এই ইস্যুটাকে সামনে নিয়ে আসতে পারে, এটাকে নিয়ে নিয়ে যদি আলোচনা হয়, তাহলে হযতো জলবায়ু বাস্তুচ্যূতির বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে, এবং ক্ষতি ও বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিরও তাহলে একটি সুরাহা হওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সুশীল সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ চলমান জলবায়ু সম্মেলনে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব না পাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে তারা অংশগ্রহণকারী সকল দেশের মন্ত্রীদের কাছে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গত ৩ ডিসেম্বর দোহাতে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জলবায়ু বাস্তুচ্যূতি এবং ক্ষতিপূরণের একটি কাঠামো সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জলবায়ু বাস্তুচ্যূতদের অধিকারের ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য রাখছেন। তিনি জোর দিয়েই বলছেন যে, বাংলাদেশ যেহেতু কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী নয, তাই দেশটি তার জলবায়ু বাস্তুচ্যূতির জন্যও কিন্তু দায়ী নয়। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ধনী দেশগুলোকেই এর দায়িত্ব নেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। এমনকি তিনি এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটি আলাদা সনদও দাবি করছেন।
আইপিসিসি, বিভিন্ন মডেলের বিশ্লেষণ, বিশ্ব ব্যাংক এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বলছে, নিকট ভবিষ্যতে সারা পৃথিবিতে ৩০ থেকে ৯০ মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যূতির শিকার হবে।
গত প্রায় ৫ বছর ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের সুশীল সমাজ সংগঠন প্রতিটি জলবায়ু সম্মেলনের সময়ই এই বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছে।
কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলো, এমনকি বাংলাদেশী প্রতিনিধিদেরও তেমন আগ্রহ আছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রতিনিধি দলগুলোতে আমলা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের দল ভারি, তাই এসব প্রতিনিধিদলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অন্তত দুটি জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছি। তার মনে করছেন যে, এখানে এ বিষয়ে যে আলোচনাই হোক না কেন, অর্থায়নের ব্যাপারে যদি ধনী দেশগুলো রাজী না হয়, তাহলে এই সম্মেলনের সাফল্য নিয়ে তারা খুব কমই আশাবাদী।
কেউ কেউ অবশ্য বলছেন যে, জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোর প্রতিনিধিদের দৃষ্টি মূল প্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে রাখার জন্যই এই ধরনের নানা বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।