আমিনবাজারের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার আপডেট জানাতেই ব্লগারদের জন্য এই সংবাদটি পোষ্ট করলাম। এতে দুর্ঘটনাস্থলের সর্ব শেষ তথ্য রয়েছে ।
রাজধানীর অদূরে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে তুরাগ নদীতে ডুবে যাওয়া বাসের অবস্থান জানার জন্য চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর কাছ থেকে সোনার ডিভাইস মেশিন আনা হচ্ছে। রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে বিমানে করে মেশিনটি ঢাকা আনা হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে এটি সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে ঘটনাস্থলে।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, পানিতে ডুবে যাওয়া বস্তুর অবস্থান জানার জন্য সাধারণত মেশিনটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
এদিকে সাড়ে ১০ ঘণ্টায়ও ডুবে যাওয়া বাসটির অবস্থান খুঁজে বের করতে পারেননি ফায়ার ব্রিগেড এবং সেনা-নৌবাহিনীর ডুবুরিরা।
ফায়ার ব্রিগেড ও নৌবাহিনীর মোট ১১ জন ডুবুরি ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরা নিয়ে পানিতে বাসটির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। সকালের দিকে ফায়ার ব্রিগেডের ডুবুরিরা ডুবে যাওয়া বাসটির অবস্থান নির্ণয়ে ব্যর্থ হলে সেনা ও নৌবাহিনীর ডুবুরিদের ডাকা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান।
৭০ জন যাত্রী নিয়ে তুরাগ নদীতে ডুবে যায় বাসটি। এ পর্যন্ত ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয় ৮ জনকে। নিহতদের মধ্যে ১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মনোয়ারা খাতুন তারা (১৮)।
তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী। বৈশাখী পরিবহনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন।
এদিকে উদ্ধার কাজে ফায়ার ব্রিগেডের অগ্নিনির্বাপন জাহাজ অগ্নিবিনাকে সংযোজন করা হয়েছে। গত দুই মাস আগে কেনা জাহাজটিকে এবারই প্রথম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। তবে, এটিকে মূলত স্টিামার ও লঞ্চে আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
ফায়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক আবু নাঈম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, এ জাহাজে একটি লাশ ঘর রয়েছে। তাই উদ্ধারের পর সেখানে লাশ রাখা এবং ডুবরিরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে সেখানে যাতে বিশ্রাম নিতে পারে সে জন্য এটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বাস উদ্ধার কাজে আরো ১৫ ডুবুরিকে যোগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন ফায়ার ব্রিগেডের এবং বাকিরা নেভির।
নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধানে শোকার্ত স্বজনরা ভিড় জমিয়েছেন, সালেহপুর ব্রিজের কাছে।
সাভার হেমায়েতপুর যাদুরচর থেকে এসেছেন হৃদরোগ হাসপাতালের কর্মচারী শেখ ফাতেমা আলী। তার মেয়ে একই হাসপাতালের কর্মচারী শিউলি আকতার ওই বৈশাখী বাসের যাত্রী ছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় তার মেয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। মেয়ে তাকে জানায়, ‘মা আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই হেমায়েতপুরে পৌঁছে যাব। ’ এটাই ছিল মেয়ে শিউলি আকতারের শেষ কথা।
এরপরই তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন। শেখ ফাতেমা আলী বলেন, স্বামীর সন্ধানে তার মেয়ে গুলশান গিয়েছিল। সেখান থেকেই সে বৈশাখী পরিবহনে হেমায়েতপুর রওয়ানা হয়। সাভার থেকে ঘটনাস্থলে এসেছেন প্রাইম ব্যাংকের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা। বাস্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি জানান, তার শ্যালক এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র আরিফুল ইসলাম ছিলেন হতভাগ্য বৈশাখী পরিবহনের যাত্রী।
সকাল ১০টায় সে গুলশান থেকে বৈশাখী পরিবহনের বাসে ওঠে। এরপরই তিনি জানতে পারেন বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পানিতে পড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে বৈশাখী পরিবহনের বাসটি সালেহপুর ব্রিজের কাছে অপর একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তুরাগ নদীতে পড়ে যায়। বাসটি ঢাকা থেকে সাভার যাচ্ছিল। সাভার ক্যান্টনমেন্টের ইএমই-৪ এর সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছেন।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর বলেন, আপাতত বাসটির অবস্থান খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। নৌবাহিনীর ১১ জন এবং ফায়ার ব্রিগেডের ৭ জন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি জেলেরাও নৌকা থেকে জাল ফেলে বাসের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। সন্ধ্যার দিকে নৌবাহিনীর কমোডর এসএম বাকের ঘটনাস্থলে আসেন এবং উদ্ধারকাজ তদারকি করতে শুরু করেন।
ফায়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রি.জে. আবু নঈম জানান, তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সাভার থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান আজ রাতে শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, বাস উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, সালেহপুর ব্রিজটি একটি অভিশপ্ত ব্রিজ। ইতিপূর্বেও ব্রিজের কাছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানীও হয়েছে অনেক। এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, পুলিশের আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, ঢাকার ডিসি মহিবুল হক, সাভার উপজেলা কর্মকর্তা রাব্বি মিয়াসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঢাকার ডিসি মহিবুল হক জানান, ফায়ার ব্রিগেডের ডুবুরিরা বাসটি উদ্ধারে কেন ব্যর্থ হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
উদ্ধার তৎপরতা ঢিলেতামে চলার অভিযোগে স্থানীয় জনতা বিক্ষোভ করে। কয়েক হাজার লোক ব্রিজ ও নদীর দুই পাড়ে জড়ো হয়। প্রথমে ৩ জন ডুবুরি দিয়ে বাসটির সন্ধান চালানো হয়। এর দুই ঘণ্টা পরও বাসটির সন্ধান না মেলায় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
তারা বিক্ষোভ দেখালে ঘটনাস্থলে র্যাব সদস্যরা তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে হাজার হাজার জনতা ভিড় করে সালেহপুর ব্রিজের কাছে। অনেকে যোগ দেয় উদ্ধার কাজে। রাতেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে জনতার ভিড় ছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।