আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোটা মেধাবীদের জন্য একটা প্রহসন

শহীদের খুন লেগে, কিশোর তোমার দুই হাতে দুই, সূর্য উঠেছে জেগে। -------হাসান হাফিজ

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটা সমস্যা হলো বেকার সমস্যা। জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে ঠিক সে হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকার যুবদের সংখ্যা প্রতিদিন হু হু করে বেড়েই চলছে। তবে বেকার সমস্যার কারণ হলো, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা।

আমাদের দেশে যে শিক্ষা প্রচলিত, তাতে শুধু অফিসিয়াল লোক তৈরি করা যায়। টেকনিক্যাল বা প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে দক্ষ লোক তৈরিতে আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাঁরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেন তাঁদের প্রধান টার্গেট থাকে বিসিএস। কিন্তু হায় ! এখানে তাঁদের জন্য রয়েছে অমানবিক প্রহসন। বিসিএসে কোটার ছড়াছড়ি ।

মোট আসনের ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০%মহিলা কোটা , ১০% জেলা কোটা, ৫%আদিবাসী কোটা আর ৪৫% মেধা কোটা। ভাবতে অবাক লাগে, ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়েদের জন্য রয়েছে ৩০% কোটা। আর ১৬ কোটি মানুষের জন্য রয়েছে ৪৫%কোটা। কয়েকদিন আগে বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার অধিকাংশ পদই শূন্য রয়েছে প্রার্থীর অভাবে।

ঐ পদগুলো দশক দশক ধরে শূন্যই পড়ে রয়েছে । সবচেয়ে বড় প্রহসন হলো, ২২০তম হয়েও কপালে বিসিএস জোটে না অথচ ৫৬৩২তম হয়েও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এএসপি হয়। যাঁরা বিসিএস পরীক্ষা দেন তাঁরা কত পড়ালেখা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সকাল ৮টায় ঢোকেন আর বের হন রাত ৯টায়। সারাদিন তাঁরা পড়াশোনা করেন।

দুপুরে হয়তো কিছু সময়ের জন্য বের হন ডাকসু বা টিএসসি ক্যাফেটেরিয়াতে খাওয়ার জন্য। তাঁরা যখন সারাবছর পড়ালেখা করে বিসিএসে টিকতে পারেন না, অথচ তাঁরই আর এক বন্ধু কোটার জোরে চাকরি পেয়ে যায়, তখন তাঁর মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করে কখনো প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। কোটা নামক অদ্ভুত সুযোগ অদক্ষদের সে সুযোগটাই দিচ্ছে। আজ মেধাবীদের ক্যারিয়ার আটকে গেছে কোটা নামক ভয়ঙ্কর বস্তুর ভেতরে।

যেখানেই যাই সেখানে শুধু কোটা আর কোটা। প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সবক্ষেত্রে ভর্তি হতে কোটা আর কোটা। চাকরিক্ষেত্রে অফিসের দপ্তরি থেকে বিসিএস, সেখানেও কোটা। কোটার কুঠারাঘাত ক্রমেই যেন অসহনীয়ভাবে বেড়ে চলছে। যদি মেধার সঠিক মূল্যায়ন চাই, তাহলে তো কোটা থাকাই উচিত না।

আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। সবার সমান অধিকার। এ অধিকার সংবিধান প্রদত্ত। বিসিএস-এ কোটা পদ্ধতির কারণে মেধাবী ছাত্ররা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। তাদের ভবিষ্যতকে অন্ধকার দেখছে।

হতাশায় তারা নেশাগ্রস্ত হচ্ছে, নানারকম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অনেককেই বলতে শুনেছি যে, আমাদের পড়ালেখা করে কোনো কাজ হবে না। আমরা তো আর বিসিএস-এ চান্স পাবো না। বিসিএস তো আর আমাদের জন্য নয়। আমার বাবা-দাদারা তো মুক্তিযোদ্ধা নয় যে, আমরা বিসিএস-এ চান্স পাবো।

অতএব পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাড়ি গিয়ে ব্যবসা করো। কোটাব্যবস্থার ফলাফল হচ্ছে ভয়াবহ। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য নিজেদের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা এ দেশের উন্নতি, সমৃদ্ধি, জাতির কল্যাণ ও দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, এতেও কোনো সন্দেহ নেই। আমি মনে করি কোটা দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে।

তাঁদেরকে করুণার পাত্র করা হয়েছে। তাঁরা নিজেরাও এরকম কোটা চান না। তাঁরা অগণতান্ত্রিক কোনো সুবিধা নিতে চান না। শিক্ষক নিয়োগে কোটার ফলে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা মেধাবী শিক্ষকদের কাছে পাচ্ছে না। অদক্ষ, কম মেধাবীরা ছাত্রছাত্রীদের আর কী শেখাবেন? ফলে বাংলাদেশের শিক্ষা গুণগত মানে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে।

তাই সরকারের কাছে বিনীত আবেদন—কোটা পদ্ধতির অবসান করুন। মেধাবীদের মূল্যায়ন করুন । আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.