:::
সেদিন আর দূরে নেই, যেদিন রাস্তায় গাড়ি চালাতে, আকাশে বিমান ওড়াতে কোনো জ্বালানি তেল লাগবে না। জ্বালানি তেল ছাড়াই দিব্যি দেখা যাবে, পাখা মেলে আকাশে উড়ছে উড়োজাহাজ, রাস্তায় চলছে মোটরগাড়ি। ইতিমধ্যেই সেই স্বপ্নের প্রাথমিক মহড়া সেরে ফেলেছে সুইজারল্যান্ডের একটি বিমান সংস্থা।
কিছুদিন আগে জ্বালানি ছাড়াই ২৬ ঘণ্টা আকাশে উড়েছে সুইজারল্যান্ডের একটি সৌরবিমান। এটি ২৬ ঘণ্টা সফলভাবে আকাশে ওড়ার পর মাটিতে অবতরণ করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ওই বিমানটির ২৬ ঘণ্টার যাত্রায় একফোঁটা জ্বালানি তেলও ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়নি। বিমানটিতে মাত্র একজনের বসার জায়গা ছিল।
তবে এর উদ্ভাবকেরা বলছেন, এখানে পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি এবং বিমান তৈরির জন্য খুবই হালকা পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিমানের পরিবহনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। যে বিমানটির কথা এতক্ষণ বলছিলাম, তার নাম সোলার এমপাল। কীভাবে কাজ করে এটি?
বিমানটির ওজন সাধারণ একটি মোটরগাড়ির সমান।
ডানাজোড়া অবশ্য জাম্বো জেটের সমান—আকারে ৬০ মিটার, যেগুলো সৌর প্যানেল দ্বারা আবৃত। একটি-দুটি নয়, ১২ হাজার সৌরকোষ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে একে, যেগুলো সূর্যের আলো থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে এবং বিমানটি আকাশে ভেসে থাকার প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। একটি স্কুটারের সমান শক্তি নিয়ে চলছে বিমানটি। বিবিসির পরিবেশবিষয়ক সাংবাদিক রজার হারমিন বলেন, বিমানটি সফলভাবে উড়ে নেমে আসতে পেরেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি উড়তে শুরু করার আগে ব্যাটারিতে যে পরিমাণ শক্তি ছিল, এরচেয়ে বেশি শক্তি সঞ্চয় করে ফেরত এসেছে।
আর সে কারণে এর উদ্ভাবকেরা বলছেন, আক্ষরিক অর্থে এটি পৃথিবীর মধ্যে প্রথম, যেখানে একটি সৌরবিমান সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। সৌরবিমান হিসেবে এটি সবচেয়ে বেশি উঁচুতে উঠেছে এবং বেশি সময় ধরে উড়েছে—প্রায় ২৬ ঘণ্টা।
বিমানটি সূর্যের আলোর শক্তিতে চলে। রাতের বেলায় বা মেঘলা দিনে এটি কীভাবে চলে? যে বিমানের কথা লেখা হচ্ছে, সেটি একটি সপ্তাহের বুধবার থেকে উড়তে শুরু করে সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে উড়েছে। এর আগে গত এপ্রিল মাসে বিমানটি সারা দিন উড়ে রেকর্ড করে।
তবে এবার বিমানটির সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিল, তা হলো উড়তে উড়তে রাতের জ্বালানি সংগ্রহ করা এবং অন্তত ২৪ ঘণ্টার জ্বালানি সংগ্রহে রাখা। নামার পরে এটিকে আবার উড়তে হবে, এই পরিমাণ জ্বালানি মজুদ রাখতে হবে। এটি তা করতে পেরেছে। বলা যায়, একটু বেশিই পেরেছে। অন্যদিকে বিমানের চালককে কিন্তু জেগে থাকতে হয়েছে পুরো ২৬ ঘণ্টা।
বৈমানিকের জন্য এটি ছিল ঝামেলার ব্যাপার। কারণ তাঁকে ২৬ ঘণ্টার বেশি জেগে থাকতে হয়েছে। যদি তিনি সেটা না করতে পারতেন, তাহলে তাঁর মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল। কন্ট্রোল রুম থেকে বিভিন্নভাবে বৈমানিকের ওপর নজর রাখতে হয়েছে। টেলিমিটারি ও ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে যেমন তাঁর ওপর নজর রাখা হচ্ছিল, তেমনি প্রতি মুহূর্তে দেখা হয়েছে, তিনি কী পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করেছেন।
পুরো ব্যাপারটি ছিল এমন, যা পুরোপুরি মহাকাশ অভিযাত্রার মতো এবং এটি খুবই বিস্তারিত ও গুরুত্বপূর্ণভাবে করা হয়েছে। এদিকে বিমানটি যখন নামার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে, রানওয়ের চারপাশে উশখুশ করা মানুষেরা উল্লাস করেছে এবং করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে।
তাহলে কি বিমানযাত্রার নতুন ইতিহাস লেখার সময় হলো? সেটি বলা যায় বটে! তাই বলে খুব তাড়াতাড়ি আপনি ওই বিমানে একটি টিকিট কেটে চড়ে বসতে পারছেন এমন নয়। এই বিমান যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা এটি প্রমাণ করেছেন যে একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও স্বপ্ন থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
এই প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যাটকান পিটার বলেন, ‘এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করতে আমরা বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার করতে পারি।
’
তিনি বলেন, ‘এই সফলতা আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। আমরা যদি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চাই, আমরা যদি একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি তৈরি করতে চাই, আমরা যদি একটি স্থিতিশীল বিশ্ব তৈরি করতে চাই এবং আমরা যদি ভবিষ্যতের পৃথিবীর মানুষকে কাজ দিতে চাই, তাহলে উচিত হবে এই পরিবেশবান্ধব বিষয়গুলো কাজে লাগানো। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের যে নির্ভরশীলতা আছে তা কমিয়ে আনতে এসব প্রদ্ধতি সাহায্য করবে। আর এ জন্যই আমাদের এতকিছু করা। ’
সামনের দিনগুলো
এই বিমানের সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা বলছেন, এরপর তাঁরা আটলান্টিকের ওপর দিয়ে চালাতে চান এই বিমান।
আর আগামী তিন বছর পর যখন সৌরশক্তি আরও নিখুঁতভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পাওয়া যাবে, তখন তাঁরা এমন একটি বিমানে চড়ে সারা পৃথিবী ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন।
prothom alo news
বিবিসি বাংলা অবলম্বনে
বিজ্ঞান প্রজন্ম প্রতিবেদক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।