আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!
প্রথম পর্ব
৪
শফিক স্যারের ক্লাসে কেউ মনোযোগ দেয় না। আজকে থার্মোডিনামিক্সের ক্লাস করাচ্ছেন, কিন্তু ক্লাসের কারো মনোযোগ নেই। দোষ অবশ্য ছাত্রদের নয়, স্যার ক্লাস শুরু করানোর আগে বিশাল একটা প্রিপারেশন নেন। চেষ্টা করেন প্রত্যেকটা থিওরীর পেছনের এমন গল্প বলতে যেগুলো মুগ্ধ করে দিতে পারে।
সমস্যা হলো লেকচার শুরু করবার সময় সব গুলিয়ে ফেলেন। হার্ট বীট বেড়ে যায়, মাথা ঘামতে শুরু করে তার। গত আধ ঘন্টা যাবত উনি ঘুরপাক খাচ্ছেন থার্মোডিনামিক্সের তিনটি সুত্রের মধ্যেই। হিট এনট্রপি নিয়ে বোধ হয় উনি বেশ সমস্যায় পড়েছেন।
শাহেদ হাত তুললে শফিক স্যার বললেন,"কিছু বলবে?"
: স্যার, হিট এনট্রপি যদি বদ্ধ তান্দুরীর চুলোর সাথে বর্ননা করা যায় তাহলে হয়তো আরো ব্যাপারটা স হজ হয়ে যাবে।
শফিক স্যার কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে ভাবলেন এই অতি পাকনা ছাত্রটিকে ভর্ৎষনা করবেন নাকি তার কথাতে এগোবেন। আরে সত্যি তো! এই একটা চুলোর বর্ননা দিয়ে পুরো সবকিছু খুব স হজেই বর্ননা করা যায়। মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। আনমনে তান্দুরী চুলো আকা শুরু করলেন বোর্ডে। এমন সময় দরজায় দাড়িয়ে আছেন পরবর্তী ক্লাস নেবার জন্য ওসমান স্যার, ডিপার্টম্যান্ট হেড।
চুলো আকা বাদ দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, একবার চুলোর দিকে তাকালেন আরেকবার তাকালেন শাহেদের দিকে। ছেলেটার হাসিতে একটা অন্যরকম ব্যাপার আছে। কথা বলতে হবে একসময় ওর সাথে। বেশ কিছু ব্যাপার ঘুরপাক খাচ্ছে তার।
ক্লাসের পর সেশনাল শেষ হতে বিকেল চারটা।
টিএসসি তে হাটা দিলো শাহেদ। সাথে আছে শুভ্র। কিছু একটা বলবার জন্যই সকাল থেকে ঘুর ঘুর। ওদের এই ব্যাচে এই একটা ছেলেই ওর চোখে পড়ে যার মুখস্হ বিদ্যা পুরো ফটোগ্রাফিক মেমরী, সমস্যা হলো ছেলেটার বুকে বিশাল একটা ক্ষত আছে।
: শাহেদ, আমি ভাবছি বাইরে এপ্লাই করবো।
এই এপ্লাইড ফিজিক্স পড়ে দেশে কেউ কিছু করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। চাকুরী নাই, সব ইলেক্ট্রিক্যালের পোলাপান ভাগ বসাইছে। এর চেয়ে স্কুলে মাস্টারী করা ভালো।
: ও কি ড্যাবের সামনে বসে আছে এখন?
: ও কে? মানে.. ওর নাম উর্মি।
: চলো কথা বলি।
: আমি জানি তোমার কাছেই সমাধান, কিন্তু কিভাবে যে বলি বুঝতে পারছি না।
শাহেদ ডগ ডগ করে হেটে গেলো ড্যাবের দিকে। পাশেই বসে ছইলো ঊর্মি আরেকটা ছেলে। ঊর্মি জুনিয়র ব্যাচ, ফাস্ট ইয়ার। কিন্তু পুরো ফিজিক্স ডিপার্টম্যান্ট মাথায় উঠেছে তার রূপে।
: আরে ভাইয়া, কেমন আছেন? আপনার কথা অনেক শুনেছি। পরিচয় করিয়ে দেই ও শোয়েব।
শাহেদ শোয়েবের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো,"তা ঊর্মি, তোমার কথা অনেক শুনেছি, তাই কথা বলতে আসলাম। কতদিন ধরে চলছে?"
ঊর্মি অবাক হয়ে বলল,"কতদিন মানে? ইয়ে মানে ... ওসব কিছু না...মানে"
শাহেদ ওর কথা বন্ধ করিয়ে দিয়ে বললো,"গালে ফ্লাশ, পিউপিল ঘোলাটে, শোয়ব অন্য দিকে তাকিয়ে। পরিচয় করিয়ে দেবার সময় 'ও'...তোমাদের ক্লাশ শুরু হয়েছে গত মাসে সে হিসেবে গত সপ্তাহ থেকে।
কিন্তু শোয়েব, একটু আগে যেই মেয়েটার পাশে বসে ছিলে তার নামটা কি ঊর্মি জানে?"
শোয়েব থতমত খেয়ে একটু খাক্কারী দিয়ে,"কি বলছেন ভাইয়া? আমি তো ক্লাস শেষ করে আসলাম!"
শোয়েব বললো,"তুমি ক্লাসে ছিলে না কারন ঊর্মির হাতে কলম তোমার হাতে কিছুই নেই, ঊর্মির জামা থেকে জেসমিনের গন্ধ তোমার কাছ থেকে আসছে শিউলির কোনো ব্রান্ড! ছেলেরা নিশ্চয়ই কোনো ফুলের সেন্ট ব্যাব হার করে না, আর তোমার গলাতে একটু লুকোনোর টোন...যদি একটু সময় দাও হয়তো মেয়েটার নামও বলে দিতে পারবো! উমম...মেয়েটার নাম শায়েলা, তাই না?..."
শুভ্র আর ঊর্মি শোয়েবের দিকে তাকিয়ে, শোয়েবের কপালে ঘাম। "ভাইয়া, আপনি আমার বড়, তাই কিছু বললাম না। কিন্তু কাজটা ঠিক করেননি। " বলেই শোয়েব হাটা দিলো। শুভ্র কলার সোজা করে "ঐ" বলে ডাক দেবার আগেই শাহেদ থামালো।
ঊর্মি লজ্জিত কন্ঠে বললো,"ভাইয়া, আই এম সরি...আসলে ক্যাম্পাসে নতুন এসেছি। তবে আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছে ছিলো। এভাবে দেখা হবে বুঝতে পারিনি। "
শাহেদ হেসে বললো," ব্যাপার না, কখন কিভাবে দেখা হবে কার সাথে এটা কেউ বলতে পারে না!" এটা বলেই শাহেদ থেমে গেলো। ভ্রূ কুচকে কি যেনো ভাবতে লাগলো।
শুভ্র কিছু বলতে যাবার আগেই শাহেদ বলে উঠলো," আচ্ছা যাইরে, একটা ব্যাপার মনে পড়েছে আমার!"
এই বলে শাহেদ দৌড়ে রিক্সায় উঠে পড়লো।
৫
পলাশ বসে একটা সিগারেট ধরিয়েছে। বেনসন খাওয়া শুরু করেছে কিছু দিন আগে। শাহেদের কল পেয়ে বসে আছে। উদ্ভট একটা কাজ করতে বলেছে সে।
শাহেদকে সে গুরু মানে, যদিও সমবয়সী। ছোটবেলা শার্লক হোমস পড়েছিলো, মাসুদ রানার সব বই গুলো পড়া। ভেবেছিলো এসব চরিত্র শুধু গল্পেই হয়। কিন্তু শাহেদ কে দেখে ওর ভুল ভাঙ্গে। মাঝে মাঝে মনে হয় ওর যদি কোনো ভাই বেছে নেয়ার মতো সুযোগ হতো তাহলে শাহেদকে নিজের বড় ভাই হিসেবে বেছে নিতো অথবা পরজন্মে ওর ছোট ভাই হয়েই জন্ম নিতো।
: রহমত ভাই, চায়ের এমন স্বাদ কেন? দিন যায় চায়ের স্বাদ খারাপ হয়, কি চা যে বানান?
: জ্বরের মুখে কোনোকিছুই ভালা লাগনের কথা না।
: আমার জ্বর আসে নাই, তোমার চা তেই সমস্যা।
এমন সময় শাহেদ রিক্সা থেকে নামলো। রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে একটা চায়ের কাপ হাতে নিলো। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে চা টানছে, পলাশ শুধু চুপচাপ দেখছে।
: তো শাহেদ, এখন কি?
শাহেদের মুখে কোনো শব্দ নাই। এমন সময় পাশে একটা মাইক্রো এসে থামলো। মাইক্রো থেকে বের হয়ে আসলেন তোরাব ভাই, বর্তমান সরকারের দলীয় ক্যাডার। সাদা পায়জামা পান্জ্ঞাবী, ক্লিন শেভ। দেখলেই মনে হয় আমিনবাজারের কসাই।
: আরে শাহেদ! সেই শাহবাগের পর তো তোমার দেখাই পাইলাম না। তুমার কয়টা ব্যানার লেইখা দিতে কইলাম তুমার তো টাইমই হয় না। ভার্সিটির কি খবর?
: তা আছে ভাই। ভাই একটা হেল্প দরকার।
: এইডা কি কও? বড় ভাইয়ের কাছে কি কেউ কোনো হেল্প চায়? এইটা তো তোমার অধিকার।
কিন্তু আমার ঐ কথাটা মনে আছে তো?
: ভাই, ঐটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। সবকিছু ঠিক করা আছে। আমার আজ রাতে একটা শো ডাউন লাগবে। শুধু দুটো, জায়গাটা আমি লিখে দিচ্ছি। এখানে সব লেখা আছে।
এই বলে শাহেদ একটা কাগজ ধরিয়ে দিলো। কাগজটা ধরে তোরাব আলি কিছুক্ষন পড়লো। পড়ার পর বললো,"জীবনে অনেক মানুষ দেখছি, এরকম উদ্ভট আব্দার কেউ করে নাই, যেই দেখে সেই বলে লাশ ফেলাও উঠায় আনো। আর এই পোলায় খালি সার্কাস দেখায়। তুমারে একটা কথা কই, তুমি আমাগো পাড়ার গর্ব।
তুমার সাথে আছি। আমি যত খারাপই হই। ঐ দিন রাতে তুমি আমার জন্য যা করছো তার জন্য আমি কেনা গোলাম হয়ে থাকবো। "
এই বলে তোরাব আলি চলে গেলো। পলাশ এই লোকটাকে দেখলে ভয় পায়।
পারতপক্ষে কথা বলে না তার সাথে। তোরাব আলির গাড়ি চলে যাবার পর জিজ্ঞেস করলো,"শাহেদ, কি করছিলা তুমি?"
শাহেদ একটু হেসে বললো,"তেমন কিছুই না। ঐদিন আমি যুথীকে একটা পড়াটা দেখাতে গিয়েছিলাম। এমন সময় তার মার শরীরটা খুব খারাপ করে। ইনসুলিন শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
চাচার ফার্মেসীতে ইনেহেলার ছিলো না। তোরাব ভাই তখন ছিলো কুমিল্লায়। আমি বাজার থেকে দুটো উস্তা কিনে এনে লবন দিয়ে জুস করে খাইয়ে দিই। সে দিন উনার ইনসুলিন টা মিস হয়নি। "
পলাশ একটু অবাক হয়ে বললো,"ইনসুলিনের অল্টারনেটিভ উস্তার জুস জানতাম না।
"
শাহেদ পিঠে হাত দিয়ে বললো," অনেক কিছুই জানিস না, বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি এটা বের করেছে কিন্তু যেহেতু এদেশে সেহেতু ততটা কেউ মনে রাখে না। এখন চল, রতনের আত্মার জন্য একটু কিছু করি। আর ইউ রেডি?"
পলাশ মুখে হাসি দিয়ে বললো,"যা বলেছ তাই করছি। আসলেই এর একটা বিহিত হওয়া দরকার!"
দুজন গলির ভেতর ঢুকে গেলো সন্ধ্যার অন্ধকারে!
চলবে.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।