আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাগাও একবার-----২

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

প্রথম পর্ব ৪ আকাশে মেঘ দেখলেই নগরীর বিষন্নতা বাড়ে। ভ্যাপসা গরমে মানুষ অস্হির হতে শুরু করে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে কখন এক পশলা ন গরীর তৃষ্ঞা মেটাবো, শীতল পরশে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে নগরবাসী। অজস্র ষোড়শী ছাদে দাড়িয়ে অপেক্ষা করে কখন বৃষ্টি প্রথমে প্রেমের মতো তার পুরোটা চুমুর শিহরন ছড়িয়ে দেয়।

বৃদ্ধ কাকেরা তাদের নীড়ে ফিরে একটু জিরোয়, ভাবে আজকে আর ভাগাড়ে খাদ্য খুজবে না। ঝুম বৃষ্টি শাহেদের খুব প্রিয়। জীবনে কোনো নেশা করেনি, না সিগারেট না অন্যকিছু। তবে সে বুঝতে পারে বৃষ্টির টানা ছন্দ তাকে নেশার ঘোরে নিয়ে যায়। তার সাবকনসাশ মাইন্ড ভাবতে থাকে কোনো এক ঘটনা নিয়ে।

সে ঘটনার আদ্যপান্ত তার ট্রেন্স লেভেলে খুব সাবলীল ভাবে বাস্তবতায় রূপ নেয় অজানাকে সে এভাবেই জানে, জানতে চেষ্টা করে। পাশে শুভ্র দাড়িয়ে। ওর ক্লাশমেট। প্রথম বর্ষে এসে ওর সাথে প্রথম পরিচয় হয়। ও ওরিয়েন্টেশন ক্লাশ শেষ করে বেরোয়, ৪ টাকার বাদাম কেনে।

এমন সময় শাহেদ বেরুলে জিজ্ঞেস করে,"ভাইয়া, আমি এখানে নতুন। কার্জন হলটা কোন দিকে?" শাহেদ হেসে ফেলে,"আমিও নতুন এখানে। প্রথম ক্লাস আমার। চলেন পাবলিক লাইব্রেরীতে যাই। ছবির হাটে একটু পর "জলের গান" অনুষ্ঠান করবে!" শুভ্র কেন যেনো তখন থেকেই শাহেদকে অনুসরন করে।

শুভ্র বসে বসে আজকেও বাদাম হাতে নিয়ে বসে আছে। শাহেদ আনমনেই জিজ্ঞেস করলো,"ও এখন কোথায়?" শুভ্র চমকে ওঠে," কে...কার কথা?" শাহেদের ঘোর কাটিয়ে ওর দিকে মুখ করে দাড়ায়, "প্রতিদিন ৪ টাকার বাদাম কেনো তুমি। কখনো আমি খাই, কখনো অন্য কেউ। যদি কোনো সমস্যা না থাকে চলো রোকেয়া হলে যাই। ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শেষ আজকে।

ও নিশ্চয়ই রোকেয়া হলের সামনেই থাকবে! বৃষ্টি কমে এসেছে। আগে গেলে ওর সাথে দেখা হবে। " শুভ্র নীচের দিকে তাকিয়ে,"আসলে ব্যাপরটা সিরিয়াস না। এমনেই ভালো লাগে। " শাহেদ ওর দিকে একটু বসে খুব তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো," ভ্রু কুচকে আছে, ভয়েসটা কাপা।

কিছু লুকোচ্ছো। বাসায় কোনো সমস্যা?" শুভ্র কিছু বললো না। দুজনে বেরিয়ে গেলো কার্জন হল থেকে। ড্যাবে বসে চা দু কাপ চা নিয়ে বসলো। গাছের পাতাগুলো টাটকা সবুজ বনে গেছে।

ব্যাস্ত নগরীর ধূলোয় গাছগুলোকে মনে হতো মরুভূমিতে দাড়িয়ে থাকা ক্যাকটাস। এইতো গ্রীস্ম চলে গেলো, মাটিতে একটা ঘাসও ছিলো না। দিন যায় মাটির নীচে পানির স্তর নীচে নামছে। ঘাসগুলো যখন আগে বারো মাস কিছু না কিছু সবুজের আভা ছড়াতো এখন সাদাটে এটেল মাটি দেখা যায়। : শাহেদ, আমার আরও টিউশনি দরকার।

চারটা টিউশনি করছি। তারপরও কুলাতে পারছি না। মার ডায়াবেটিস অনেক। পরশু টাকা পাবো কিন্তু আজ ইনসুলিন কেনার টাকা নাই। মাঝে মাঝে মনে হয় একটা ব্যংক ডাকাতী করি।

: ব্যাংক ডাকাতী আইডিয়াটা মন্দ না। : আর ইউ সিরিয়াস? : (একটু হেসে বললো) চলো, আজকে আন্টির সাথে দেখা করি। তুমি আমাকে বাসায় নামিয়ে টিউশনিতে চলে যেও। আমি ইনসুলিনের ব্যবস্হা করছি। ভয় নেই, টাকা লাগবে না।

শাহেদ আর শুভ্র হাটতে থাকলো শাহবাগের দিকে। শাহবাগে এখন আর উত্তাল কিছু নেই। আগে যেমন শাহবাগে আসলে গায়ে একটা শিহরন দিতো, চোখ ভরা স্বপ্ন খেলা করতো এখন যেনো মনে হয় শাহবাগ ধর্ষন করেছে দালালেরা! এখন ধর্ষিত শাহবাগ দেখে মানুষ মৈথুনানন্দ উপভোগ করে। ৫) : আন্টি, কেমন আছেন? : ভালো আছি বাবা। তুমি কেমনে আছো? : ভালো।

আন্টি, আমি আপনাকে একটা দারুন জুস খাওয়াবো। খেয়ে বলবেন কেমন শিখেছি রান্না বান্না! : আচ্ছা। তার আগে একটা কথা, ফজরের নামাজ পড়েছো? : নাহ, পড়িনি! এই বলে শাহেদ রান্নাঘরে হাটা দিলো। শুভ্রর মা অনেকটা আশাহত। শুভ্রও আগে নামাজ পড়তো এইচএসসি তে গোল্ডেন এ পাবার পর মাথায় ভুত উঠলো ফিজিক্সে পড়বে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাইড ফিজিক্সে চান্সও পেলো। তারপর থেকে নামাজ রোজা সব ছেড়ে দিলো। শাহেদ যেদিন প্রথম এসেছিলো বাসায় সেদিনই বুঝেছিলো এর কারনেই নামাজ ছেড়েছে। এত ভালো একটা ছেলে কিভাবে যে নাস্তিক হয়ে যায়, ভাবলেই কষ্ট হয় তার। তার ছেলেটাও সে পথে হাটা দিলো।

আকাশ পাতাল ভেবে আছরের নামাজে দাড়ালেন তিনি। শাহেদের জুস বানানো শেষ। শুভ্রর মা নামাজ শেষ করে বিছানায় উঠে বসলেন, দেখলেন শাহেদ জুস টা টেবিলে রেখে বসে আছে। : নামাজে কি দোয়া করলেন? : আমার দুই ছেলেকে যেন আল্লাহ হেদায়েত দেয় আর ফুট ফুটে দুটো মেয়ে খুজে দেয়। : নিন জুসটা খান।

: এই বিশ্রী দেখতে কিসের জুস? : এটা ভেষজ ইনসুলিন। উস্তার জুস। আপনার ডায়াবেটিস লেভেল এটা নিয়মিত খেলে কম থাকবে। শুভ্র ইনসুলিন খুজে পায়নি বাজারে। পরশু আসবে।

এই জুস খান দেখবেন খুব ভালো থাকবেন। : আমি এখন আমাকে নিয়ে ভাবি না। ওর বাবা কষ্ট করে একটা মাথা গুজার ঠাই করে গেছে আমি তাতেই সুখী। দে বাবা, আমি একটু খাই। এই বলে শুভ্রর মা উস্তার তেতো জুস খাওয়া শুরু করলো।

মেডিক্যাল সায়েন্সে প্লেসিবো বলে একটা কথা আছে। এটাও খুব দরকার এখন। ৬) পলাশ রহমত চাচার দোকানে বসে আছে একটা বেনসন ধরিয়ে। অপেক্ষা করছে শাহেদের জন্য। একটা উদ্ভট কাজ করতে বলেছে, কাজটা সে করেছেও।

শাহেদ যদি বলে নদীতে ঝাপ দিতে, তাহলে পলাশ সেটাও করবে, কারন শাহেদকে ও এতটাই বিশ্বাস করে। : রহমত ভাই, চায়ের এমন স্বাদ কেন? দিন যায় চায়ের স্বাদ খারাপ হয়, কি চা যে বানান? : জ্বরের মুখে কোনোকিছুই ভালা লাগনের কথা না। : আমার জ্বর আসে নাই, মিছা কথা বইলেন না। তোমার চা তেই সমস্যা। গোরস্হানের চা দিয়া চা বানাইছে।

এই বলে চা ফেলে দিয়ে কাপটা পানি ভর্তি বাল্টিতে রেখে দিলো। এমন সময় শাহেদ রিক্সা থেকে নামলো। রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে একটা চায়ের কাপ হাতে নিলো। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে চা টানছে, পলাশ শুধু চুপচাপ দেখছে। : তো শাহেদ, এখন কি? শাহেদের মুখে কোনো শব্দ নাই।

কি যেনো ভাবছে! এমন সময় একটা সাদা শার্ট পড়া ভদ্রলোক আসলেন দোকানে। "এক কাপ চা দেন তো দেখি। বেনসন আছে ?" এই বলে ভদ্রলোক বসে পড়লো। শাহেদ পলাশকে ইশারা করলো চলে যেতে। পলাশ উঠে দাড়িয়ে আস্তে করে হাটা ধরলো পাকা রাস্তা ধরে।

লোকটা চা হাতে নিয়ে শাহেদের দিকে তাকালো,"আপনি কি এই এলাকার?" শাহেদ চা শেষ করে বললো,"হ্যা, রতন আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। " লোকটা চা খাওয়া বন্ধ করে শাহেদের দিকে খুব তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো,"রতন কে?" শাহেদ বললো,"সাদা শার্ট ইন করে পড়া, অফিসিয়াল জুতো। মাথার দু পাশটা ভালোভাবে ছাটা। আপনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক। যেহেতু আপনি ইউনিফর্মে নেই, অথচ কাগজে মোড়া একটা কিছু নিয়ে ঘুরছেন এবং এখনও বিকেল ৪টা সেহেতু আপনি কোনো কেসের উদ্দেশ্যে এসেছেন।

রতন কাল মারা গেছে, যদিও সবাই বলছে আত্মহত্যা তবু পুলিশের কিছু কাজ আছে। " : কি করো তুমি? : আমি ছাত্র, এই এলাকাতেই থাকি। কে মেরেছে জানতে পেরেছেন? : আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি বলতে চাইছো। তোমার একটা জায়গায় ভুল হয়েছে আমি ডিবিতে চাকুরী করি তবে আমি কোনো কেসের ব্যাপারে আসিনি। একটা বাসা দরকার।

তোমার নামটা কি? : শাহেদ। : তো শাহেদ, তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। আর ভালো কথা, মার্ডার কেস নিয়ে এভাবে অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলো না। তোমার ভালোর জন্যই বলছি। : রতনকে আমরা ছোটভাই হিসেবে দেখতাম।

ওর ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। আমরা চাই এই খুনের বিচার হোক। : শিহাব নামের কাউকে চেন? : (মুচকি হাসি দিয়ে বললো) ও রতনের পাশের বাড়ি থাকে। ওর চাচাতো ভাই। ভদ্রলোক চা শেষ করে পাশের গলির ভেতর ঢুকে গেলেন সন্ধ্যার অন্ধকারে! শাহেদ কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছিলো যেনো।

৭ আকাশে থালার মতো চাঁদ, জ্যোৎস্না উপচে পড়ছে পুরোটা ন গর জুড়ে। দক্ষিনা বাতাসে শরীর এলিয়ে শুয়ে জানালার ফাক গলে তারা দেখছেন সোহরাব সাহেব। রতন তার একমাত্র ছেলে। মাঝে মাঝে ভাবেন কি পাপ করেছিলেন যে তার ছেলেটা এমন হবে! যেমনই হোক, এর পেছনে সেই দায়ী। নিজের ডান হাতটা উঠালেন, দেখলেন এই হাত দিয়ে ছেলেটিকে কতবার আঘাত করেছেন, রক্তাক্ত করেছেন।

ছেলেটা উবুদ হয়ে কাঁদতো ফুপিয়ে ফুপিয়ে, এভাবেই ওর এজমা হয়। কাঁদবার সময় ভয়ে চিৎকার করতো না পাছে যদি আবার মার শুরু হয়। "রতন তুই ফিরে আয়" বলেই কাদতে শুরু করলেন। বিদ্যূৎ চলে গেছে ঘন্টা দুই, চাঁদের আলোয় ঘরময় আলো। এমন সময় দরজায় নক,"আন্কেল, আছেন?" সোহরাব সাহেব দরজায় তাকিয়ে দেখেন শাহেদ দাড়িয়ে, বুকটা ভরে যায় এই ছেলেটাকে দেখলে।

পুরো এলাকায় এই একটা সোনার ছেলে,"বাবা, আসো। ভেতরে আসো। বসো এখানে। " : আন্কেল, আপনি কাদছেন? : বাবারে, আমি কি করবো এখন? ওরে জন্ম দিতে গিয়া ওর মা মারা যায়। এই শেষ বয়সে কে আমার খাটিয়া কাধে নিবো, আমার লাশটার গোসল কে দিবো? সোহরাব সাহেব কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

শাহেদ উঠে দাড়ালো, মানুষটা কাদুক। অনেক কান্না জমে আছে তার বুকে। সোহরাব সাহেবের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো শাহেদ। ৩ টা বেড রুম একটা ড্রইং কাম ডাইনিং রুম। কোনার ঐ ঘরটায় রতন থাকতো।

সোহরাব সাহেবের বাবা এই জমিটি কিনেছিলেন পাকিস্হান আমলে। বছর দুই আগে এখানে এপার্টম্যান্ট হয়। পাশের বিল্ডিংটা সোহরাব সাহেবের ছোটভাই এর। রতনের ঘরের জানালা দিয়ে শিহাবের ঘর দেখা যায়। রতনের ঘরটা অগোছালো একটু।

রতন এমনিতে খুব গোছানো, মেয়েলি স্বভাবের। রতনের যে এমনকিছু হবে সেটা কি রতন জানতো? ওয়ার্ডড্রোবে রাখা সেন্ট এর বোতলটা ভেঙ্গে পড়ে আছে। বিছানাটায় এখনও সেই সেন্ট কিন্তু অগোছালো। মেঝেতে কিছু খাতা পত্র পড়ে আছে। শাহেদ রতনের ঘর থেকে বেরিয়ে আবার সোহরাব সাহেবের ঘরে ঢুকলো।

উনি ওজু করে আসলেন কেবল এশার নামাজ পড়বেন বলে। : আন্কেল একটা কথা ছিলো। : বলো বাবা। : ঘটনার দিন কি আপনি ওর গায়ে হাত তুলেছিলেন? : শাহেদ, তুমি আমার ছেলের মতো। নিজের ছেলেকে শাসনো কি করতে পারবো না? : শিহাব কি সেদিন দিনের বেলা বাসায় এসেছিলো? : না আসেনি।

কেন বলতো? পুলিশও দেখি ওর ব্যাপারে জানতে চাইছে। : আন্কেল একটা পারসোনাল কথা জিজ্ঞেস করবো? : করো। : আপনার বাসার ছাদের চাবি কার কার কাছে আছে? : চাবী দুটো। একটা আমার কাছে আরেকটা শিহাবের বাবার কাছে। : আপনার চাবীটা কোথায় সে রাতে কোথায় ছিলো? : আমার কাছেই ছিলো।

: তাহলে রতন ছাদে কিভাবে বলো? সোহরাব সাহেবের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। বড় বড় শ্বাস নিয়ে মাথার টুপিটা খুলে খাটে বসে পড়লো। শাহেদের দিকে তাকিয়ে বুকে হাত বুলাতে বুলাতে অস্ফুট স্বরে বললো,"বাবা, আমাকে এক গ্লাস পানি দিবা আমার মাথাটা ঘুরাচ্ছে!" চলবে.....

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।