আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেঁয়াজের ঝাঁজ

সাধারণত ঈদের আগে বাজার থাকে চড়া। পেঁয়াজ, বেগুন থেকে শুরু করে সব ধরনের কৃষিপণ্যের দামই বেশি থাকে। তবে এবারের ঈদুল ফিতরের সময় বাজার তেমন চড়েনি; সরবরাহ ছিল পর্যাপ্ত, সরকারেরও নজর ছিল। কিন্তু ঈদের পরেই বিস্ময়করভাবে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। কিন্তু সরকার এ নিয়ে কী ভাবছে? সরকার সব সময় গর্ব করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলে, বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেই সরকার স্বস্তি পায়।

ভাবটা এমন যেন মানুষ শুধু চাল খেয়েই বাঁচে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি বটে, কিন্তু মোটেও যথেষ্ট নয়। পেঁয়াজের দাম যদি লাগামছাড়া হয়, তাহলে মানুষের দিশাহারা অবস্থা দেখা দেয়। কারণ, পেঁয়াজ ছাড়া মানুষের চলে না। তো এই পেঁয়াজ ঈদের পরে হঠাৎ করে কেন উধাও হয়ে গেল, আর যখন পাওয়া যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হলো, তখন কেন তার দাম লাগামছাড়া—এসব প্রশ্নের উত্তর যে নেই তাও নয়।

প্রথম কথা, আমাদের পেঁয়াজের মোট চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হয় বলে ঘাটতি থাকে বছরে কয়েক লাখ টন। এই ঘাটতির বেশির ভাগ পূরণ হয় প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে। ঈদের পরে ঘাটতি ও দাম হঠাৎ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ খোদ ভারতেই পেঁয়াজের সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধি। দেশটির বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভারতের সরকার অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই, তারা পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য বেঁধে দিয়ে আদেশ জারি করেছে।

কেউ ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ ৬৫০ মার্কিন ডলারের কমে রপ্তানি করতে পারবে না।
ভারতের বাজারে কৃষি ও পোলট্রিজাত পণ্যের সরবরাহ ও দামের ওঠানামার ওপর আমাদের বাজারের গতিপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ভারতে কোনো পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতিজনিত মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে দেশটির সরকার ত্বরিত কিছু না কিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তা ছাড়া সরকারের সার্বিক পরিকল্পনার অভাবও আমাদের বাজারের অস্বাভাবিক আচরণের বড় কারণ।

সংকট সৃষ্টি হলে তখনই চিন্তা করা হয়, আপাতত এই সংকট কীভাবে কাটানো যাবে। সামগ্রিকভাবে নীতিকৌশলভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় না। এখন যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়, অথবা আমদানিমূল্য এত বেশি হয় যে তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তাহলে কি বাংলাদেশের মানুষকে পেঁয়াজ ছাড়াই চলতে হবে? পেঁয়াজ একটা দৃষ্টান্ত মাত্র; রসুন, টমেটো কিংবা ডিম—এ রকম যেকোনো পণ্যের ক্ষেত্রেই হঠাৎ এমন লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটতে পারে। অতীতে ঘটেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকারের ভাবা উচিত, কীভাবে সব পণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো যায়, যার ফলে আমদানি-নির্ভরতা কমবে।

স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, পচনশীল কৃষিপণ্যের সংরক্ষণব্যবস্থা বাড়ানো এবং সরবরাহব্যবস্থা আরও সাবলীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।