আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থাইল্যান্ডে বাঙালির ঈদ

ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি ঈদ মানে হাসি। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ। দলে দলে ঈদগাহে যাওয়া। ছোট শিশুদের কলকাকলি।

চারদিকে বিভিন্ন প্রকার খাবারের ম-ম গন্ধ। সেলামির নতুন টাকা। নাড়ির টানে অনেক কষ্ট করে হলেও প্রিয়জনের কাছে ছুটে যাওয়া। ঈদ এলেই ঈদকে ঘিরে ছোট-বড় সবার ভেতরে হূদয়জুড়ে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।
আমরা যাঁরা প্রবাসে থাকি, তাঁদের কাছে ঈদ মানেই খুশি নয়।

বরং অন্যান্য দিনের চেয়ে এই বিশেষ দিনে কষ্ট লাগে বেশি। প্রবাসে আমাদের ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলো পালনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমরা এই দিনগুলো পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে সবার সাধ্য ও সুযোগমতো পালন করার চেষ্টা করি।
কিন্তু বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ছুটি। কারণ, আমাদের দুই ঈদের দিনগুলো আরবি চান্দ্র মাসের হিসাবে নির্দিষ্ট দিনে ক্যালেন্ডারে নির্ধারিত থাকে না। মুসলিম দেশগুলোর বাইরে অন্য কোনো দেশেই এ জন্য সরকারি ছুটি নেই।

অফিস-আদালত এবং বাচ্চাদের স্কুল খোলা। যদিও আমরা ছুটি নিয়ে নিই। বাচ্চাদের জন্য শিক্ষকদের কাছে ই-মেইল পাঠিয়ে দিই ঈদের শুভেচ্ছা আর বাচ্চার ছুটির কথা জানিয়ে। আরও কষ্ট লাগে যখন দেখি ঈদ মানে যে আনন্দ, বাচ্চারা সেটা বোঝে না। ওদের কাছে ঈদ মানে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া আর কোলাকুলি করা।


কয়েক দিন আগে উদ্যাপিত হলো ঈদ। এবারও ঈদে আমার মনটা খারাপ ছিল বেশি। যখন জানতে পারলাম, আমার স্বামী তাঁর কাজের জন্য ফুকেটে আটকে গেছে। আসতে পারছেন না ঈদের দিন। মনে হলো, যেটুকু আনন্দ হতো তাও মাটি হয়ে গেল।

হায়রে প্রবাসজীবন! তার পরও ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে, বাচ্চাদের গোসল করিয়ে মসজিদের পথে রওনা হলাম। মসজিদটা আমার বাসার কাছেই। হেঁটে যেতে ১০ মিনিট লাগে। ওখানে গিয়ে দেখলাম, বাঙালি সবাই এসেছে। আমরা বাঙালি যাঁরা ব্যাংককের প্রাতুনাম এলাকায় থাকি, রোজার এক মাস এই মসজিদেই ইফতার করেছি এবং জামায়াতে নামাজ পড়েছি।

ফজলু ভাই, জান্নাত ভাবি, মাসুম ভাই, সামাদ ভাই, ড্যানি ভাই, মারুফ ভাই, মোতাহার ভাই। এবার ঈদের দিনে নতুন সদস্য যোগ হয়েছিলেন আশিক ভাইয়ের বাবা আর ছোট ভাই। তাঁরা ঈদের আগের দিন ব্যাংকক এসেছেন। পরীক্ষার জন্য আসতে পারেননি আশিক ভাই, মনিরা ভাবি আর নীলিমা আপা। খুব খারাপ লাগছিল তাঁদের জন্য।

সারা মাস রোজা করে তাঁরা ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি। আর ছোটদের মধ্যে ছিল আমার দুই ছেলে আবীর, আরীক, ফজলু ভাইয়ের ছেলে জিজান। বাকি সবাই ছিলেন পাকিস্তানি, ভারতীয় আর স্থানীয় মুসলিম। সবাই মিলে নামাজ পড়ার পর কোলাকুলি পর্ব। আমার বাঙালি ভাইদের কোলাকুলি যেন শেষই হয় না।

কোলাকুলি শেষে নিচে নেমে একসঙ্গে খাওয়া। মসজিদ থেকেই খাবারের বাবস্থা করা হয়। থাই মিস্টি, ভাত, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, বিভিন্ন রকমের ফল, কোকাকোলা। আরও থাকে পাকিস্তানি বিরিয়ানি ও ফিরনি। ঈদের প্রথম খাবার আমাদের মসজিদ থেকেই শুরু হয়।

ইমাম সাহেব বাচ্চাদের ঈদের সেলামি দেন। খাওয়াদাওয়ার পরে আমরা হাঁটতে হাঁটতে বাসার পথ ধরি আর ভাবতে থাকি সারা দিন কী করা যায়। না হলে ফোনে, ফেসবুকে, স্কাইপে সারা দিন আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে দিনটা পার করে দিই। আমাদের মন পড়ে থাকে দেশে। প্রবাসে ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই।

ঈদের দিনে দেশের জন্য, আত্মীয়স্বজনের জন্য, ঈদের আনন্দের জন্য, ঈদের দিনটার জন্য মনের ভেতর কোথায় যেন রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যায় না।
ইসমত আরা
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
<ismatara93@yahoo.com>:।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.