বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার পেছনের পৃষ্ঠায় গতকাল প্রকাশিত সরেজমিন প্রতিবেদন মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে দালাল ধরে চিকিৎসা 'কেডা আপনে, রোগী না অইলে ফুটেন' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশে সারা দেশে তোলপাড় হয়েছে। তোলপাড় শুরু হয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ডাক্তারদের মধ্যেও। গতকাল সংবাদ প্রকাশের পর হাসপাতালের অনিয়মের আরও খবর বেরিয়ে আসে।
মিরপুরের বাসিন্দা অর্নব চৌধুরী সুমন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, "মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে তার বাবা সেলিম রেজা চৌধুরীকে চিকিৎসা করাতে এসে অল্প বয়সে ডাক্তারদের অবহেলায় জীবন দিতে হয়।'' এ বছরের এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে তার বাবাকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে উন্নতর চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। হাসপাতালে আনার পর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় ও দালালরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমনকি তার মা তাসলিমা চৌধুরীকে এক চিকিৎসক খারাপ ভাষায় গালি দেন।
তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হলে ভালো এবং খরচ হবে কম। এমন চিন্তা করেই বাবাকে নিয়ে যাই মহাখালীর এই বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। কিন্তু ভর্তি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ি। এক দালাল বলে, এখানে টাকা দিলে ভালো সিট পাওয়া যাবে। নয়তো ওয়ার্ডের মেজেতে থাকতে হবে। পরে তিনি ২ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে একটি বেড পান বলে জানান। তিনি আরও বলেন, আমার বাবাকে যেই বেডে রেখে চিকিৎসা করাই তার পাশের বেডে থাকা আরেক রোগীকে নার্স-আয়ারা টাকার জন্য মুখের অঙ্েিজনের পাইপ খুলে দেয়। পরে টাকা দিলে ওই রোগীর মুখে অঙ্েিজনের পাইপ লাগানো হয়।
সুমন জানান, ডাক্তারদের পরামর্শে হাসপাতালেই আমার বাবার মাথায় একটি এঙ্রে করাই। বিনা খরচে হওয়ার কথা থাকলেও এঙ্রে বাবদ ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। এদিকে আমার বাবা খুবই গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও ওই এঙ্রে রিপোর্ট দেননি কর্তৃপক্ষ। এঙ্রে রিপোর্টের জন্য আমি আর আমার বাবার টিটমেন্ট করাতে পারিনি। ডাক্তারদের কাছে গেলে বলেন রিপোর্ট দিতে কিন্তু রিপোর্টের জন্য গেলে তারা বলেন, রিপোর্ট এখনো হয়নি। এভাবে ডাক্তার ও রিপোর্ট ডেলিভারির দোটানায় পড়ে আমার বাবাকে জীবন দিতে হলো। ২৫ এপ্রিলে ভর্তি হয়ে ৩ মে আমার বাবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শুধুই হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায়। এভাবে বলতে গিয়ে সুমন চৌধুরী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। সুমন চৌধুরী তেজগাঁও কলেজে সোসাল ওয়ার্ক বিষয়ে অনার্স পড়েন। তিনি জানান, আমার বাবার মিরপুরে ফ্রিজের দোকান ছিল। বর্তমানে আমার পরিবারে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় আমিই ব্যবসাটি দেখছি। এমন ঘটনা আরও অনেক। মহাখালী জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আউটডোরের দালাল সমস্যা তো আছেই। এর চেয়ে বেশি অনিয়ম হয় ভর্তিকৃত রোগীদেও সঙ্গে। দেওয়া হয় না ঔষধ। সরকারি বরাদ্দকৃত ঔষধ বাইরে বিক্রি করা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।