প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের গভীরতম স্পন্দনে একমাত্র প্রত্যাশা, সম্ভাব্য সংঘাত এবং সামাজিক বিপর্যয়ের নির্মম ধ্বংসাবস্থা থেকে দেশ রক্ষা পাক। নির্ধারিত দিবসে নির্দলীয় ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাটি আজকে কোনো দলের নয়, গণতান্ত্রিক মননশীলতায় বিশ্বাসী প্রতিটি উদ্বেলিত হৃদয়ের। কখনো কখনো ক্ষীণ হলেও একটি আশার আলো জেগে ওঠে, মানুষ উদ্দীপ্ত হয়, একটু স্বস্তির ঠিকানা খুঁজে পায়। কিন্তু আবার যেন অজানা মরীচিকার মধ্যে হারিয়ে যায় মানুষের প্রত্যাশা। এর প্রধান কারণ, দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সা ও মর্মান্তিক অসহিষ্ণুতা, জেদ এবং নির্দয় প্রতিহিংসা। এই অঙ্গনে দেশ, জাতি ও মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-উদ্দীপনার কোনো অস্তিত্ব থাকে না। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রার কুশলী ও অভূতপূর্ব উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমণের ইতিহাসটি সম্ভাব্য নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে আমি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। পাকিস্তানের ২৩ বছরের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কি নির্যাতন-নিগ্রহকে অকাতরে সহ্য করে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ, বিকাশ, ব্যাপ্তি এবং সফলতার সৈকতে পেঁৗছতে পেরেছি তার বিস্তৃত বর্ণনা দিতে গিয়ে আমি গণতন্ত্রের প্রতিশব্দ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের কালজয়ী অবদানের কথা প্রত্যয়দৃঢ় চিত্তে উপস্থাপন করতে কার্পণ্য করিনি এবং সেই ঐতিহাসিক সত্যটিকেও আমি প্রত্যয়দৃঢ় চিত্তে বারবার উচ্চারণ করেছি যে, গণতান্ত্রিক পথ পরিক্রমণের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ, বিকাশ ও সফলতার প্রজ্বলিত দীপ্ত মশাল হাতে ছিল ছাত্রলীগের। সেই ছাত্রলীগের মূল্যবোধের আজ এ কী মর্মান্তিক অবক্ষয়! এই দৃশ্য অবলোকনে ৬০ দশকের সফল রাজনৈতিক নেতৃত্বের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ সেই বেদনাবিধুর চিত্রটি তুলে ধরতে গিয়ে আবেগে আমি শিশুর মতো কেঁদে উঠেছিলাম। আমার ওই আলোচনাটি ছিল জিল্লুরের অনুরোধ সাপেক্ষে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসের পরিমলের আবর্তে সীমাবদ্ধ। সেখানে কোনো বিতর্কিত প্রশ্ন উত্থাপিত করিনি। আজকের সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য কে কতটুকু দায়ী সেই বিতর্কের অবতারণা করিনি; কোনো নিবন্ধ এবং টকশোতে পক্ষপাতিত্বের অপরাধে আজও কেউ আমায় অভিযুক্ত করতে পারেননি। আমি নির্মোহ চিত্তে, অকুতোভয়ে সত্য ভাষণে বিশ্বাসী এ ব্যাপারে রাজনৈতিক মহল বিশেষ করে সুশীল সমাজ একমত হলেও আমার কঠোর, নির্মম ও নির্মোহ সমালোচনা অনেকের কাছেই অগ্রহণযোগ্য_ এটা আমি অবহিত এবং জিল্লুর রহমানের অনুরোধে সেদিন আমি আবেগাপ্লুত থাকলেও প্রতিহিংসার বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরার কোনো চেষ্টা করিনি। তবুও প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে বলেছিলাম ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের সভায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে জাতির জনক উপাধিতে ভূষিত করে শপথবাক্য পাঠ করা হয়েছিল (উল্লেখ্য যে, '৬৯ এ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলার মুজিব ভাইকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিল)।
তার প্রায় ৪১ বছর পরে সাংবিধানিকভাবে ৩ মার্চের শপথটি স্বীকৃতি লাভ করে, তাই জাতির জনকের প্রতিকৃতি দলীয়ভাবে ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করুন। আমার বদ্ধমূল ধারণা, আমার হৃদয়ের সেই আকুতি নির্দয়ভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে এবং হবেও। বিতর্কের আবর্তে তাকে টেনে আনলে তার আত্দার প্রতি অসম্মান করা হবে তো বটেই বরং জাতীয় অর্জনকে দলীয় সংকীর্ণতার গহ্বরে নিক্ষেপ করার হীনম্মন্যতা ইতিহাসের মানদণ্ডে একদিন বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
আমি আরেকটি অনুরোধ করেছিলাম বিরোধী দলের নেত্রীর কাছে, ১৫ আগস্টে তার জন্মদিবসের বিতর্কের প্রশ্নের অবতারণা না করেও অত্যন্ত বিনয়ে আমি হাত জোড় করে বলেছিলাম যে, ১৫ আগস্ট আপনার জন্মদিবস হলেও ১৪ অথবা ১৬ তারিখে আপনি সেটাকে উদযাপন করুন। কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির, দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার, এই অনুরোধটি এমন নির্মমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে যে ১৫ আগস্টে আগের চাইতেও ঘটা করে অতি বিশাল কেক কেটে যেই মানসিক হীনম্মন্যতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, দলের অভ্যন্তরে তার কোনো প্রতিবাদ না হলেও, দলের অভ্যন্তরের অনেক শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূল কর্মীরা এটিকে অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারেননি। দলের অভ্যন্তরে বিন্দুমাত্র গণতন্ত্র থাকলে দেশবাসী বিএনপির নেতৃত্ব ও কর্মীদের বিরাট একটি অংশের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ অবলোকন করতে পারত।
হরতাল সংবিধানসিদ্ধ। হরতাল ডাকার সাংবিধানিক অধিকার বর্তমান শাসনতন্ত্র অনুযায়ী অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ক্রমাগত হরতাল দেশের শিল্প-কারখানাগুলোকে বিকলাঙ্গই করে না, অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকেও চূর্ণ-বিচূর্ণই করে না বরং সারা বিশ্বের কাছে আমাদের গণতান্ত্রিক সহনশীলতার দারিদ্র্যকেই উন্মোচিত করে। রমজান মাসে হরতালের ভয়াবহতা লক্ষ্য করে সব দেশ, বিশেষ করে ব্যবসায়ী মহল একটি নিদারুণ আশঙ্কায় আশঙ্কিত ছিলেন। ঈদের পরে কী ব্যাপক অরাজকতা; হরতালের নামে কী পৈশাচিক নৃশংসতা না জানি নেমে আসছে। পাশর্্ববর্তী দেশ ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে নানা দল, নানা মত, ভিন্ন বর্ণ-গোত্র-ভাষা; মন ও মননশীলতাও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে সবার দায়িত্বশীলতা আছে বলেই কারণে-অকারণে ওখানে হরতাল পালিত হয় না, বরং অনশন থেকে শুরু করে মিছিল, অসহযোগ আন্দোলনকেই তারা প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়।
তবুও সম্প্রতি খবরের কাগজ পড়ে আমি কেবল বিস্মিতই হইনি, কোনো এক মন্ত্রীর মন্তব্য, এরপর হরতাল ডাকলে গৃহে প্রবেশ করে নেতৃস্থানীয়দের হত্যা করতে হবে। আমার লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায় এই ভেবে_ সারা বিশ্বই ভাবছে, এদেশের রাজনীতি আজ শুধু স্তাবক, মোসাহেব ও ভ্রান্ত বাম দ্বারা পরিবেষ্ঠিত নয়, এটি একটি উদভ্রান্ত-উন্মাদের দেশ। তবে জাতি অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছিল বিরোধী মহল, বিশেষ করে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী দেখে। একটি সমঝোতা ও নির্দলীয় সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে এরকম একটি সম্ভাবনার আলোকরশ্মি মানুষের চোখের সামনে ঝিলিক দিয়ে উঠছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ দেশের, দুর্ভাগা এ জাতি! ভিয়েতনামের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধও আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। পাকিস্তান, যেটি আজ গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত, যেখানে মসজিদের জামাতে আত্দঘাতী বোমায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে সেখানেও তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, সেখানেও বিচারব্যবস্থা সামরিক ও বেসামরিক প্রভাব বলয়কে বারবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, সব প্রতিকূলতার মুখে হিমাচলের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থেকেছে। অথচ আমাদের দেশে বিচারব্যবস্থা ক্রমেই যেন দলের আবর্তের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। একজন প্রধান বিচারপতি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতে পারেন তার নিরপেক্ষ, নির্মোহ বিচারিক আদেশ প্রদানের মাধ্যমে। সম্প্রতি খায়রুল হক সাহেবের নিয়োগ সবারই মনে প্রশ্ন তুলেছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বে যে রায়টি তিনি প্রদান করেছিলেন সেখানে প্রাপ্তি-প্রত্যাশার কোনো ইঙ্গিত তার হৃদয়কে কি আচ্ছন্ন রেখেছিল?
মানবাধিকারের আদিলুর রহমান খানের গ্রেফতার দৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ যেন আজকে ভুলভ্রান্তি এবং একগুঁয়েমির প্রতিযোগিতায় নেমে প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, তারা এ বিষয়ে অদ্বিতীয়। আদিলুর রহমান খান বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে তার গ্রেফতার এবং রিমান্ড চাওয়ার প্রশ্নটি বিশ্ব মানবাধিকারপন্থিদের, বিশেষ করে বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। অনেক প্রথিতযশা মিডিয়া একে মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘনীয় একটি বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুটি সংবাদপত্র_ ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এ বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে (এখানে পরিপূর্ণ উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন) কতগুলো বিশ্লেষণ দিয়েছেন, তাদের নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন এবং ওই প্রতিপাদ্যে সমগ্র বিষয়টিই ছিল সৃজনশীল বিরোধিতার মধ্য দিয়ে সরকারকে সচেতন ও বাস্তবমুখী করা। কিন্তু ফলাফল দাঁড়িয়েছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো সম্বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য গণতান্ত্রিক ধারায় ভিন্নমতের প্রতি তার ঘৃণার চরম মানসিকতা প্রকাশ পেল। সরকার এটুকু সমালোচনা সহ্য করতে না পারলে বিশ্ব জনমত ধরে নিতেই পারে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের বিস্তৃত ক্যানভাস হতে আজকে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা সম্পূর্ণ অবলুপ্ত। তাছাড়া সুশীল সমাজ, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিবেকবান সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সব অনুরোধ-উপরোধ এমন নির্মম চিত্তে উপেক্ষা করতে পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি। আর বিরোধী দল, সে তো স্বৈরশাসকেরই সৃষ্ট ক্ষমতাশ্রিত একটি রাজনৈতিক দল। এটি প্রমাণিত বাস্তব। জঙ্গিবাদীদের সযত্ন লালিত্যে দুধভাত খাওয়ালে তাদের কাছে জাতির আতঙ্ক ছাড়া আর কোনো প্রত্যাশা থাকে না। অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক পথ পরিক্রমণে আওয়ামী লীগ কী বিচিত্র আবদার করল নির্বাচন কমিশনের কাছে যে, মনোনয়ন বঞ্চিত ব্যক্তি কোনো অবস্থাতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন না। বাকশালের মধ্যেও যেটিকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বলা হতো, সেখানে বাকশাল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন। এমনকি সমাজতান্ত্রিক দেশেও নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে দলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে। আর আজ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে দুটি নেতৃত্বের কাছে সব ঐতিহ্য নিঃশেষিত হবে! সেটি জাতির জন্য কতখানি অপমানকর যারা বুঝবেন তারা অবশ্যই এটার প্রতিবাদ করবেন_ এটিই স্বাধীন জাতীয় সত্তার অতি জরুরি কর্তব্যে পরিণত হয়েছে।
পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিরোধী দলের জয় যদি তাদের ইতিবাচক রাজনীতির ফলশ্রুতি হিসেবে আসত, সংসদকে অকার্যকর করা থেকে শুরু করে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যদি তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারত তাহলে অন্তত মানুষের মনে প্রত্যাশা জন্মাত যে, সরকারের পরিবর্তন হলেই দেশ একটি উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পথে চলতে শুরু করবে। ২০০১-২০০৬-এ তাদের কর্মকাণ্ড এবং তার জন্য কোনো রকমের অনুশোচনার লেশমাত্র প্রকাশিত না হওয়া এবং সংসদকে অকার্যকর রাখায় জনমনে শঙ্কা কোনোভাবেই যেন আজ দূরীভূত হচ্ছে না। তবুও তো একটি জাতি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে পারে না। এত রক্ত, এত অশ্রু, এত ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল নেতৃত্বের দায়িত্বহীনতা ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার বেদিমূলে বলি দেওয়া যেতে পারে না।
অনেকে এটি আমার কৌতুক মনে করতে পারেন, যে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখতে পছন্দ করে না! তাই বিরোধী দলের কোনো জ্বলন্ত ইস্যু না থাকলেও আওয়ামী লীগ তাদের সামনে এমন কিছু ইস্যু দাঁড় করায় যাতে তারা ইন্ধন পায় আবার নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরি করতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিও তাই। একটি অবজারভেশনকে কেন্দ্র করে তড়িঘড়ি পঞ্চম সংশোধনী এনে বিরোধী দলকে তারাই যেন অনুপ্রাণিত করল যে পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করে ঘরে বসে থেক না, রাস্তায় নেমে এস। তোমাদের কাছে প্রতিবাদের কর্মসূচি তৈরি করে দিলাম। বিরোধী দলের উপর্যুপরি নেতিবাচক রাজনীতির যে সুযোগ প্রধানমন্ত্রী নিতে পারতেন তা তো তিনি পারেনইনি বরং প্রায়ই প্রতীয়মান হচ্ছে বিরোধী দলের শক্তির উন্মেষকও তার অপরিকল্পিত এবং অগণতান্ত্রিক উক্তি। হঠাৎ করে পাটের নব উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আহূত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশকে একটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েই অতি কৃতিত্ব ও দূরদর্শিতার সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনটি শেষ করতে পারতেন। নির্বাচন ও রাজনীতির প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি অবহিত করতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিক হিসেবে অন্য একটি সময়ে তিনি রাজনীতির কথা বলবেন। আজকে শুধু সুখের অনুভূতিটিই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আপনারা পেঁৗছে দিন।
এই উদ্ভাবন জাতির জন্য একটি বিরাট সম্ভাবনার সিংহদ্বার উন্মোচিত করেছে_ সেটিই আমি জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই স্টেটসমেনশিপ তিনি দেখাতে পারেননি। সেই স্টেটসমেনশিপ দেখানোর বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা তিনি করেননি। বরং বিতর্কিত প্রশ্নগুলো আরও অনড়ভাবে তুলে ধরে নতুন করে বিরোধী দলকে উজ্জীবিত করলেন, যেন তুষের আগুনকে একটু উসকে দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্য, ভারতসহ সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকার বহাল থেকেই স্বাধীন ও শক্তিধর নির্বাচন কমিশন দেশে নির্বাচন করেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত বা কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই তো রাজনীতি কেবলমাত্র দুটি নেত্রীর অাঁচলে বাঁধা চাবি হয়ে থাকে না। সেখানে প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের আবর্তে অবরুদ্ধ নয়। দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড নিঃশেষিত নয়। সহনশীলতা সে দেশের একটি বাস্তব সত্য। সেখানে জাতীয় স্বার্থে সরকার, বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ, হিমাচলের মতো অটল। এই অসহিষ্ণুতা ও চুলাচুলির রাজনীতি, জেদই যেখানে একমাত্র উপকরণ, সরকার এবং বিরোধী দলের কোনো রাজনৈতিক আচরণেই যখন সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও পরিশীলিত মানসিকতার চর্চা নেই; সংগঠনের মধ্যেও দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করার পরিবেশ নেই_ তখন ওই সব দেশের উদাহরণ টানা অবাস্তব ও হাস্যকর।
সংকট যতই ঘনীভূত হবে একটি সংঘবদ্ধ তৃতীয় পক্ষকে ততই সংঘবদ্ধ হয়ে অকুতোভয়ে দাঁড়াতে হবে। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, ক্ষমতার সিংহাসনে কে আসীন হবেন এই প্রলোভন বিবর্জিত একটি নেতৃত্ব আমা&
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।