যমুনার দখলে থাকা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জমির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক। জাতীয় অন্ধ সংস্থা গাজীপুর জেলা শাখার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল জেলা প্রশাসক এ নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেবাস্টিন রেমা আগামী বৃহস্পতিবার অভিযোগকারীদের বক্তব্য গ্রহণ করার তারিখ নির্ধারণ করেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও বনের জমি দখল করে যমুনার কারখানা' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশে। বিশেষ করে গাজীপুর জেলায় যমুনা গ্রুপ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জমি দখল করার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। টনক নড়েছে জেলা প্রশাসনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অন্ধ সংস্থা গাজীপুর জেলা শাখা যমুনার বাবুলের ফাঁসির দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। পরে অন্ধ সংস্থা গাজীপুর জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজারের পূর্বদিকে সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক অন্ধদের জন্য দেওয়া জমি জোর পূর্বক যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল দখলে নেয়। দখলকৃত ওই জমিতে বাবুল হান্টার নামের মদের কারখানা গড়ে তোলে। জমি দখলের সময় যমুনার বাবুল তিন অন্ধকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল দুপুর ১টায় অভিযোগকারী জাতীয় অন্ধ সংস্থার গাজীপুর জেলা শাখার নেতাদের বক্তব্য শুনে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় অন্ধ সংস্থা জেলা শাখার নেতারা জেলা প্রশাসকের দফতরে ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত দুটি অভিযোগ দাখিল করেন। এ সময় সংগঠনটির ২০-২৫ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান ও মো. মহসিন তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান অন্ধ নেতারা। জাতীয় অন্ধ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি তাদের দাবির প্রতি একাত্দতা প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ দাখিলের পর অন্ধদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দাখিলকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত দুটি আবেদনে অন্ধদের দাবি ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানানো হয়। আবেদনে জাতীয় অন্ধ সংস্থা জেলা শাখার সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান অভিযোগ করেন, কালিয়াকৈর থানাধীন সফিপুরে অন্ধেরটেক নামক স্থানে আমরা ৪০টি অন্ধ পরিবার বসবাস করতাম। যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল তার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের অন্ধেরটেক ছেড়ে যেতে হুমকি দেয়। আমরা বসতভিটা না ছাড়ায় বাবুলের বাহিনী আমাদের অন্ধেরটেকের চারদিকে খাল খনন করে আমাদের পরিবারকে পানিবন্দী করে রাখে। এরপর রাতের অাঁধারে সন্ত্রাসীরা আমাদের ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়ে আসে। পরবর্তী সময় আমাদের কয়েকজন অন্ধ পুনরায় অন্ধেরটেকে গেলে বাবুলের লোকজন আমাদের সংগঠনের তিন সদস্য আবদুল বারেক, সাফাজ উদ্দিন ও মো. সেলিমকে হত্যা করে। এরপর ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বাবুল তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অন্ধেরটেক থেকে ৪০টি অন্ধ পরিবার উচ্ছেদ করে মদের কারখানা তৈরি করেন। বিভিন্নভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করার অভিযোগে অন্ধদের নেতা আবদুল বারেক ও মো. সেলিমকে মারপিট করে বিষাক্ত নেশা জাতীয় মাদক দ্রব্য খাইয়ে জঙ্গলে ফেলে দেয়। পরবর্তী সময়ে তাদের লাশ উদ্ধার হয়। এ সময় বাবুলের ভয়ে মুখোশ পরে পালিয়ে থাকা অন্ধদের আরেক নেতা সাফাজ উদ্দিনকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় রাস্তার পাশে ভিক্ষা করার সময় গাড়ি চাপা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। বাবুল নিজেই গাড়ি চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন। কিন্তু বাবুলের ভয়ে ও পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা মামলা করতে পারিনি। তারা বলেন, আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে বিচার প্রার্থনা করি। অন্ধদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য জেলা শহরে আসার পথে কালিয়াকৈরের মৌচাকে ও টঙ্গীর এরশাদ নগরে দুটি বাস আটকে দেন বাবুলের সশস্ত্র ক্যাডাররা। কর্মসূচিতে আসতে বাধা দিতে বাবুলের লোকজন অন্ধদের হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন। অন্ধদের নেতা ফয়েজকে বাবুলের ক্যাডাররা হত্যার হুমকি ও ব্যারিকেড দিয়ে সমাবেশে আসতে দেয়নি। সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে দুই শতাধিক অন্ধ নেতা-কর্মী বেলা ১টা পর্যন্ত মৌচাক ও টঙ্গীর এরশাদ নগরে আটকে থাকেন। আমাদের আশঙ্কা খুনি নুরুল ইসলাম বাবুলের সন্ত্রাসীরা আমাদের বসতভিটা অন্ধেরটেক আত্দসাৎ করার জন্য তিন সহকর্মীকে হত্যার মতো এখনো যে কোনো অন্ধ কর্মীকে হত্যা ও গুম করতে পারেন। এ অবস্থায় আমাদের বসতভিটা অন্ধেরটেক ফেরত চাই। তিন অন্ধের খুনি নুরুল ইসলাম বাবুলসহ সব আসামির ফাঁসি চাই। অন্ধদের নিরাপত্তা চাই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।