আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আক্রান্ত ওলামা : আক্রান্ত শফি : জাগলে না, তবু তুমি জাগলে না

এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com

নোমান বিন আরমান : ভালো থাকার দিনগুলো সম্ভবত ফুরিয়েছে। ইচ্ছে করলেই পথচলা, কথা বলা যাবে না আর। প্রাণ খোলে হাসা বা কাঁদাও কারো নখের দখলে চলে গিয়েছে।

বেঁচে থাকাটাও তাই আর সহজ থাকছে না। সব কিছুই নির্দেশনির্ভর হয়ে পড়েছে। সব কিছুই দখলে চলে গিয়েছে। নিজের বলে কিছু অবশিষ্ট নেই আর। কিন্তু এমন তো কথা ছিলো না।

কথা ছিলো, আমরা হাসবো। প্রাণ খোলে কথা বলবো। তাহলে কে সেই, যে কথার বরখেলাফ করে বা করায়। কে সে, আঁধারে থেকে যে ছড়ি ঘোরায়। কে সে, মানুষের শরীর থেকে যে রক্ত ঝরায়! দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ও নিরুপদ্রব জীবন নিশ্চিত করার শপথ নিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

আমরা বিপুলভাবে অভিনন্দিত করে সংসদে পাঠিয়েছি। রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়েছি। এমনটাই জানি আমরা। এমনটাই দাবী আমাদের। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, জনতাই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।

এখানে অন্য কোনো শক্তি নেই। অন্য কোনো ক্যারিশমা নেই। সুতরাং সরকারকে চলতে হবে জনতার পথেই। সরকারকে দেখতে হবে দেশ ও জনতার স্বার্থই। এতে কারো মর্জির তোয়াক্কা করা স্পষ্টতই সংবিধান ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা।

সরকারকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছি, কতগুলো ওয়াদার মাধ্যমে। সরকার ওয়াদা দিয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণে সে অটুট থাকবে। প্রত্যেক নাগরিককে কথা বলার অধিকার দেবে। কারো কণ্ঠ সে চেপে ধরবে না। কাউকে কথা বলতে বারণ করবে না।

কিন্তু আমরা দেখছি, সে তার ওয়াদা রক্ষা করতে আন্তরিক নয়। আমরা দেখছি, সরকার জনতার স্বার্থ লঙ্ঘন করছে। তার কথা বলার অধিকার হরণ করেছে। যেমনটি হলো, চট্টগ্রামের লালদিঘির সমাবেশকে কেন্দ্র করে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে প্রকাশ্যে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার।

এ অধিকার সংবিধানই তাকে দিয়েছে। সরকার তার কথা বলায় প্রতিবন্ধক হবে না, এমনটা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও সাংবিধানিক নির্দেশনা রয়েছে। যেকোনো নাগরিক যদি চায়, সে সম্মিলিত বা ব্যক্তিগতভাবে সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে পারে। এমনটাই যখন চট্টগ্রামে হতে যাচ্ছিলো, তখনই সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি হলো। সমাবেশে আগত আলেম-ওলামা ও ছাত্র-জনতার সম্মিলিত পদযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়া হলো।

হরণ করা হলো স্বাধীনভাবে চলা ও বলার অধিকার। পথরোধের প্রতিবাদ করায় এলোপাতারি গুলি ছোঁড়া হলো Ñ নিরস্ত্র, নিরপরাধ আলেম-ওলামা ও ছাত্র-জনতার মিছিলে। কেনো। কীসের আলমত এটি। দেশের পুলিশ কী সাংবিধানিক নির্দেশনায় চলছে না? এরা কী স্বাধীন দেশের নাগরিক না? তবে কেনো কথা বলার অধিকারে হস্তক্ষেপ হলো।

কেনো, জনতার মিছিলে গুলি হলো? কেনো আহত হলো শতশত ছাত্র-জনতা। কেনো জারি হলো ১৪৪ ধারা? ঘটনার পর দিন সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ওই দিনের সমাবেশের আয়োজক বয়োবৃদ্ধ জ্যেষ্ঠ আলেমে দ্বীন, বেফাকের চেয়ারম্যান, হাটহাজারি মাদরাসার মহাপরিচালক ও আয়োজক সংগঠন হেফজতে ইসলামের সভাপতি আল্লামা আহমদ শফির সাথে। ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়া হয়। এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। এমন সহজে ঘটনাটি ‘শেষ’ হলেও বিষয়টির সমাপ্তি হয়নি।

সমাপ্তি হয়নি কারণ, সরকারের ধরপাকড় আর হয়রানির হিসেব করে এরা মাঠে নামেনি। এরা মাঠে নেমেছেন সুনির্দৃষ্ট দাবী নিয়ে। তাদের দাবীতে রয়েছে, (১) ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে সাধারণ শিক্ষায় প্রত্যেক ধর্মের মৌলিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। (২) ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের নামে ইসলামকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা ও (৩) দেশময় যেকেনো ইস্যুতে মাদরাসা ছাত্রদের ‘জঙ্গি’ নামে আখ্যা দেয়ার প্রবণতা ও এর পেছনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করা। এবং (৪) কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করা।

এইসব দাবীর কথা জানাতেই ব্যাপক আয়োজন, মাইকিং ও পোস্টারিং ও প্রচারের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় লালদিঘিতে মহাসমাবেশের। মাসাধিককাল থেকে এই সমাবেশের আয়োজন করা হলেও সরকারের কোনো সংস্থাই Ñ না পুলিশ, না গোয়েন্দা কেউই এই সমাবেশের ব্যাপারে কথা বলেনি। সমাবেশ করা যাবে না বলে কিছু জানায়নি। যেটুকু জানা গেছে, মহাসমাবেশের দিন সকালে ফোনে প্রোগ্রাম করা যাবে না বলে পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়। কেনো করা যাবে না, এর কোনো সদুত্তর দেয়া হয়নি।

এমনকি মহা সমাবেশ আয়োজক হেফাযতে ইসলামের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত কোনো নির্দেশনাও আসেনি। লিখিত নির্দেশনা (নিষেধাজ্ঞা) না থাকায় প্রোগ্রাম বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেননি কর্তৃপক্ষ। এই খবরটিই সংবাদপত্র ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে অন্যভাবে। বলা হয়েছে, প্রশাসনিক অনুমতি না নিয়ে প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছিলো। কেউ কেউ তো সরাসরি এটি ‘জঙ্গি’দের সমাবেশ বলেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।

অথচ এরা একবারের জন্যও প্রশ্ন করেনি, প্রায় মাসখানেক থেকে যে এই প্রোগ্রামের জন্য মাইকিং হলো, পোস্টারিং হলো তখন কোথায় ছিলো পুলিশ, কোথায় ছিলো গোয়েন্দা। পোস্টার আর মাইকিংয়ের সময়ই কেনো এটি ‘জঙ্গি’দের সমাবেশ বলে নিষিদ্ধ করেনি? এইসব কিছুই না করে প্রোগ্রামের দিন সকালে শুধু ফোন করে জানিয়ে দেয়া হলো, প্রোগ্রাম করা যাবে না। এই ভাবে মুখের কথায় এখন সরকার চলে না কি? সরকার তো চলবে লিখিত নির্দেশনার মাধ্যমে। কেনো সেই নিয়ম রক্ষা হয়নি? কেনো অতর্কিতে হামলা হলো সম্মেলনগামীদের উপরে? ২\ ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সরাসরি টিভি ভাষণে শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিলেন, তারা ক্ষমতায় গেলে ‘কুরআন-সুন্নাহবিরোধী’ কোনো আইন করবেন না। এই ওয়াদা এতো দ্রুত আর সহজে ভুলে গেলেন তিনি! এতো সহজেই ভুলতে পারেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী Ñ কী করে বলি এমনটা।

নিশ্চয় কেউ তাকে ভুলিয়ে রাখছে। কেউ তাকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। সরকারের দিনবদলের শ্লোগান তারুণ্যকে ছুঁয়ে গেছে; উদ্দীপ্ত করেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দিনবদল থেকে দ্বীনবদলই সরকারের এজেন্ডায় অগ্রাধিকার পচ্ছে। সরকারের কর্তব্যক্তিরা জানেন নিশ্চয়, এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে।

আলোর দিন আসছে! পুনশ্চ : এই লেখাটি যে কারণে শুরু করেছিলাম। যে চিন্তা থেকে শিরোনাম দিয়েছিলাম, লেখা শেষ করে দেখি ওই প্রসঙ্গে যেতেই পারিনি। ক্ষোভ এবং ব্যর্থতার কথা কিছুই বলিনি। বলিনি, আহমদ শফির গাড়ি লক্ষ্য করে পুলিশের ব্রাশ ফায়ারে পরও দেশের হাজার হাজার মাদরাসা, লাখো আলেম-ওলামার অমার্জনীয় নিশ্চুপতা এবং নির্লিপ্ততা নিয়ে। বলিনি, কেনো আওয়াজ ওঠেনি আলেম ওলামার উপর আক্রমেণর প্রতিবাদে।

কেনো এখনো এর বিচার হয়নি। এখন মনে হচ্ছে, না লিখে ভালোই করেছি। যারা ঘুমে আছে তাদের ঘুমেই মরতে দেয়া ভালো। জাগিয়ে এদের কষ্ট দেয়ার দরকার নেই! এদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে, এদের ধিক্কার দিয়ে Ñ এদের পাপকে লঘু করার দরকার নেই। এরা ঘুমে থাক।

কবরে যাক। যে জাগার সে জেগে ওঠবেই! প্রথম প্রকাশ : কালকণ্ঠ ২০১০ এই লেখাটি আমার সাইটে সংরক্ষণের জন্যই মূলত পোস্ট করা হয়েছ। চাইলে আপনি পড়তে পারেন। }

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।