ডুবোজ্বর
০১.
আমাকে ভাবতে বলা হয়েছিলো। আমি চোখ বন্ধ করে সান্তিয়াগোর হাঙরের কথা ভেবেছিলাম-- তীরে এসে যে একফালি কঙ্কাল হয়ে লবণের সাথে সঙ্গম করে কাঠের মতো। সান্তিয়াগোর চোখে ঘুমের ক্লান্তি। তার স্রষ্টা বলেছিলেন, ভাঙবে তবু মচকাবে না। এই বলে আত্মহত্যা করলে আমি জানতে পারি জীবন মৃত্যুর চেয়ে আপত্তিকর।
আমি সেই ছেলেটা ছিলাম যে সৈকতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করেছিলো, সা-ন্তি-য়া-গো.. আর ঢেউয়ের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আমার কণ্ঠস্বর ইকো হয়ে আমার কাছেই ফিরেছিলো।
আমি নার্সিসাস হতে পারি নি। নার্সিসাস আকাঙ্ক্ষাতেই সুন্দর।
০২.
ল্যুসুনের কাব্যনাটক দ্য পাসার বাই পড়ে আমার ডাকঘরের কথা মনে হয়েছে। রবিনাথ সবখানে বিচরণ করেন।
তার জন্যে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
লোরকার ব্লাড ওয়েডিং আমার ভালো লাগে। তোমার কেমন লাগে? অশ্ব আর রক্তের মধ্যে মনে হয় একটা সম্পর্ক আছে। লোরকা লিরিকের ভিতরে রক্তবীজ বুনে দিয়ে হারিয়ে যায়। তার চোখ বাঁধা।
হাত বাঁধা। লোরকা গুলিবিদ্ধ কবিতা।
০৩.
প্রবচন লেখা অনেক ঝামেলা এবং জটিলকাজ বলে আমার মনে হয়েছে। অনেকেই অবশ্য প্রবচনকে প্রবাদের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। আমি অস্কার ওয়াইল্দের এপিগ্রাম পড়েছিলাম।
তারপর পড়েছি হুমায়ুন আজাদের প্রবচন, যিনি ছিলেন বাঙলাদেশের কয়েকজন শিক্ষিতদের অন্যতম। তার প্রবচন পড়ে ভাবলাম নিজেও কয়েকটা লিখি। তাই এই অপচেষ্টা। আমার একটি প্রবচন নিচে দেয়া হলো।
বাঙালি হিউমার জানে না, জানে ভাঁড়ামি।
বাঙলাদেশের একশ্রেণির স্ক্রিন-প্লে অথবা টিভি নাটক দেখলে আমার তাই-ই মনে হয়।
০৪.
চুল আর নখ তাড়াতাড়ি বাড়লে আয়ু কম হয়। আমার এমন হয়। হয়তো আর সাড়ে পাঁচবছর বাঁচবো। এক পামিষ্ট আমাকে এইসব বলেছে।
আমার হাতের আয়ুরেখা মাঝখান থেকে কাটা। এটা সত্যও হতে পারে। সম্রাট নেপোলিয়ানের হাতের আয়ুরেখাও মাঝখান থেকে কাটা ছিলো। তিনি ছুরি দিয়ে টান দিয়ে কাটারেখা জোড়া লাগান। কিন্তু নিয়তি পাল্টাতে পারেন নি।
জ্যোতিষির বলে দেয়া সময়ে নিহত হন।
ইশ্কুলে থাকতে একটা মেয়েকে বলেছিলাম তুমি আমার নিয়তি। সে আমার নিয়তি হয় নি।
০৫.
ইমানুয়েল কান্তের আলোকায়ন শাদা-কালো বাইনারি অপোজিশনের জন্ম দেয় নি কথাটা অসত্য নাও হতে পারে।
রবিনসোন ক্রুশো অচেনা দ্বীপে প্রথম নিয়োগ করে একজন চাকর।
যে কিনা কৃষ্ণাঙ্গ এবং আদিবাসী। মানে দানিয়ালের নায়ক ক্রুশো শাদাপ্রভু আর তার চাকর কালো অসভ্য নিগার।
ইমানুয়েলকে দেখে লোকজন ঘড়ির কাঁটা ঠিক করে নিতেন।
০৬.
পাথরের মধ্যে ক্ষয়ে যাওয়ার উপাদান লুকিয়ে ছিলো। সে পর্বতের গায়ে দেয়াল হয়ে ছিলো বহুদিন।
তারপর য়ে গেলো মাটি নদী আর কাদা হয়ে। একটি গাছ জন্মালো। গাছের নাম জানি না। আমি বিস্ময় ও শূন্যতার পাশে দাঁড়িয়ে লোপাট।
আমাকে নাও, সমূলে বপন করো নদীতে।
০৭.
কর্মসম্পাদন করে দুটি বৃক্ষ গাছ থেকে কাঠে পরিণত হয়। এমিবা ছিলো আদিম জোলা। সেই থেকে কবির। সন্ত অথবা বাউল। তাঁত বুনে।
গাছের বাকল। লালনের সাথে তার গানের শিকল। রবিনাথও বাউল ছিলেন বৈকি। তবে আচারে নয়, গানে।
০৮.
গলায় তার মন্দিরা।
আমি মন্দিরার টুংটাং শুনতেই গিয়েছিলাম। আলো অন্ধকারে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম তিনকুড়ি বছর। কেবল গোলাপি আমার প্রিয় নয়, কচিলেবুপাতার বসনে সে সূর্যের সহোদর। আমাকে গান শেখায়। কবিতা এলে একফোঁটা ধূলি ভেঙে বলি, কাদা হও, সভ্যতার ধূম্রলিপি হারিয়ে যাক।
০৯.
কখনো ভাবি নি নদীর অধিকার ছেড়ে দেবো। অনেকদিন আসি নি, অনেকদিন যাই নি সেখানেও। তথাপি পুষ্প কী কারণে কুসুমিত হইয়া ঝরিয়া পড়িলো বুঝিলো না একদা কমলা ঝরিয়া। তার কীর্তনে আজো লেগে আছে চির বিভক্তি। নদী আর খেয়া পারাপার।
কৃষ্ণ তো চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। বসনে কী বা যায় আসে?
১০.
সে ঝাঁকুনি দিয়েছিলো। আমি বাড়ির অন্যান্য ঘর থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম এবং গাছের ধারে তাদেরকে ভালোবেসেছিলাম। তাদেরকে এখনও ভালোবাসি।
সে খুব কালো করেছিলো, কিন্তু এটি হয়তো নৌকো ছিলো, সুতরাং তাকে দেখা যাচ্ছিলো না।
নৌকোর পূর্বে কাজ করতে একটি গাছ এসে মাঝি হয়েছিলো। আমি এর কোণে আমাদের উজ্জ্বল ভাইটিকে দেখি।
১১.
বহুদূর মানে আসলে কতোদূর? আমি মাতাল, আমি কোনটা মিথ্যা বুঝতে পারি। তাকে যদি স্বত্ব ছেড়ে দিই তাতে কী আর এমন হবে? তালগাছ সে দাঁড়িয়েই রবে। অনেকদিন আসি না বলে আমাকে দেখে জানলার কপাট বাতাসে কাঁপলো না।
আমি বললাম, আমিই তোকে খুলেছিলাম...
সে অদ্ভুত চোখে তাকালো।
১২.
তোমাকে আমি কখনো ফুল্লুরার কথা কি বলেছিলাম; অথবা চণ্ডিমঙ্গল? হাত কাঁপে। আমরা পরস্পরের দিকে বেলুন ছুঁড়ে দিয়ে একটা করে শব্দ ছুঁড়ে দিই সাথে। আমি ছুঁড়ে দিই ছুরি। আমি ছুঁড়ে দিই চোখ... তুমি কবিতার খাতা হারিয়ে কাঁদো।
কেননা, তোমার খাতায় লেখা অসম্পন্ন কবিতার শেষটা পাঠক জানতে পারবে না।
১৩.
আমার অসুখ নেই বলার পরও তুমি সন্দেহের চোখে তাকাও। তুমি আয়নার ভিতর সারাদিন সন্দেহ।
কবিতা লিখতে না পারার যন্ত্রণা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। তুমি জ্ঞানী সলোমনের গানের কাছে ফিরে যাবে, আঙুর বাগানের রোদে পোড়ে পোড়ে বালি রঙ বালিকা, তোমার গ্রীবা গজদন্তমিনার।
যিশু একটা টাওয়ারে উঠে ইশ্বরের হাতে একটা রুটি দিলেন। ওটা ছিলো টাওয়ার অব বেবেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।