আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: কাঁটাসুন্দরী

ডুবোজ্বর আমরা দুজনে মিলে লিখে ফেলি ডুমুরের পাতা, বাদামি পাতাবন। তারপর বহুদনি ভেঙে যায় দিন, ভেঙে যায় বন। ওখানে যারা গিয়েছিলো কস্তুরির স্বাদ নিতে— আর ধূলিকণা এসেছিলো। সে সকালে চলে গিয়েছিলো— কখনো ভোরবেলা শূন্যতা দিয়ে ভেজা চালের গন্ধ রেখে হারিয়ে গিয়েছিলো। আর আমি সজারুকুসুম— গুল্মের দরোজায় ডানা আটকে দীঘল হাহাকার।

সজারু বলতেই থোক থোক কাঁটা চোখে ভাসে। ফণীমনসা যেমন। শিমুল-পলাশ-দালিম-লেবুরও কাঁটা থাকে। আর থাকে বরইগাছে। বরইপাতা কাজে লাগে, বরইপাতা ঢেকে দেয় মৃতদেহের চোখ।

সজারুর কাঁটায় হয় শোপিস। আর খেজুরের কাঁটায় উঠানো যায় মানুষের চোখ। থোকা থোকা কাঁটার তলে বেদনা জানে না মানুষ; তাই খেজুরের কাঁটা আততায়ী পাখি হয়ে আসে মানুষের চোখে। কে তুমি ওগো মানুষের ঈশ্বর, আমাকে সজারু বানিয়ে ছেড়ে দিলে বনে, সারাদেহে বিঁধিয়ে দিলে রূপবত-কাঁটা, আমার কি ব্যথা লাগে না? বহুদিন ফুরিয়ে যাওয়ার পর আমি একটি জলপাইয়ের পাতা হাতে দাঁড়ালাম পথের ধারে। লতাগুল্ম আরো অনেকে ছিলেন, পাহাড়ের তলে দুইটি হিজলের গাছ নতমুখ আঙুল মেলে দাঁড়িয়ে ছিলো বাদলের প্রতীক্ষায়, একটি চালতার গাছ ছিলেন শীতে জরজর— কেবল একটি পাতা তার ঢেকেছিলো চোখ।

তার সাথে আমার মিল এইখানে— আমি বসার পর দাঁড়িয়ে আছি। তারপর আমি হেঁটে হেঁটে পানপাতার বাগানের দিকে গেলাম। এখানে এটাকে বরজ বলে। রোদ আর পানপাতার গন্ধ মিলে যে অদ্ভুত ঘ্রাণ পরিবেশকে রঙিন করে— তাতে আমি সমূলে নিমজ্জিত হলাম। সবুজশৃঙ্গারে একাকার নদীর গ্রামে আমি কেনো পরিব্রাজক? অনেকদিন আগের কথা।

আমি ও সে হাঁটছিলাম বৃষ্টির পর। সে বকুল। আর সেদিন বকুলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমি মাটির নিকট হলাম। বললাম, বকুল! তোর গন্ধের মুখ খুলে দিলি বিস্মৃতপথে, অবাকদূরে। তারপর একটু পরে আমি অভিভূত পিঁপড়া হয়ে গেলাম।

আর কেবল তোর খোঁজে, তোর খোঁজে হারিয়ে গেলাম ঘাসের ভিতর। আর বাতাস আর হাওয়া দুজনে মিলে তোকে কুড়িয়ে নিয়ে গেলো। ঘুম খুলে দাঁড়িয়ে থাকি। তুমি থাকো। বাদল এসে নিয়ে যাও আমার ঘর, অপর।

এইখানে বহুদিন জ্বাল দিয়ে মদ— রেখে দিয়েছি। অনিবার্য ক্লেদ মেখে ভেঙেছি আলো। আলো তার নোংরা সুরে নখরা সারা ঘোর। ঘোর এমন কদর্য! বুঝি না কিছু। নিঝুম রূপের থেকে তুলে এনে কাঁটা— মৌমাছি দিলো যে অমৃত— তা বিষ হবে ভেবে তুমি সরে গেলে একটু দূরে।

যথা বালি, নুন, কর্কট, পাঁক আর ইট— অগ্নিমোহে জন্মান্ধ এই সোনালি কীট। এই মানে আমি। আমার মাথার কাছে সুবর্ণরেখা শাড়ি দাঁড়িয়ে। এ কে? পাথরের রূপ নাকি? নাকি সুন্দরী কাঁটা? আহা। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মহিপালের দিঘিতে।

দিঘিতে ঢেউ ছিলো না, পুষ্প। তোমার দেহের কাঁটা আমাকে জাগালো— বুকে তুলে শেখালো সাঁতার। তারপরও ডুবে গিয়ে হয়ে গেলাম কাদা। তারপর দিনরাত বসে থাকা। পোকা-কাটা দাঁতে ছাড়িয়ে বসন কালো আর পরমের অজ্ঞাত ফুলে ভুলে যাওয়া।

ঘুম এলে আঙুলে দাঁত বসায় রূপসী আরশোলা। দন্তনখর সবি কাঁটা। এইভাবে বসে থেকে ফুরিয়ে যায় গোপন বনের পথ। যাওয়া হয় না। যাওয়া হয় না ফুল আর রূপবতী কাঁটার পাশে।

একটা মিহিন সুখের সুতো কেটে যায়। দূরে— পাটভাঙা দুপুরের পাড়ে, ঝোপের আড়ে। আমি বসে থাকি। এই চতুষ্কোণ দেবে না ছেড়ে। পেলাম একটা ঘাট।

তাও ক্রমে পিছল। মাঠের কথা ভাবি। ভুলে গেছি শেষ কবে গিয়েছিলাম মাঠে। সেই মাঠ আর নেই। মাঠ ভেঙে ক্ষেত হলো।

ধানক্ষেত-গমক্ষেত-পাটক্ষেত— গমক্ষেতে কাক উড়ে যায়। সোনালি রাতের শেষে আসে না রোদের দিন। এই ব্যথাভার সঁপি কার কাছে। সজারুজীবন আটকে থাকে গুল্মের জানলায়। শিকারি-কদুলিবন তাড়া করে রাতদিন।

কে তুমি প্রিয়, জানো সজারুর বেদনা? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।