আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদ্রিদ এর পথে...(কিছুটা ১৮+) ৩য় পর্ব

I reclaim my life...

রিপোষ্ট মাদ্রিদ এর পথে...(কিছুটা ১৮+) ১ম পর্ব মাদ্রিদ এর পথে...(কিছুটা ১৮+) ২য় পর্ব মাদ্রিদ এর পথে...(কিছুটা ১৮+) ৩য় পর্ব .......................................... স্পেনিশ বুলফাইট সলে পৌছে দেখে আশ্রাফ আরেকজন বাংগালীর সাথে তার জন্য অপেক্ষা করছে। আশ্রাফ পরিচয় করিয়ে দিল খসরু ভাইয়ের সাথে। নিও খসরু ভাইয়ের সাথে রওনা দিলো। যার বাসায় যাচ্ছে সে খসরু ভাইয়ের আপন বোনজামাই। সলের পরের স্টপেই তার বাসা।

খসরু ভাই মাদ্রিদ এসেছিলেন প্রায় ১৫ বছর আগে। একটি দোকানও দিয়েছিলেন, কিন্তু এক স্পেনিশের সাথে ঝামেলা হওয়ায় বেশিদিন ব্যবসাটা টিকেনি। এখন ফেরী করা ছাড়া তার কোনো উপায় নাই। আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো থেকে উপরে উঠেই নিও অবাক হয়ে গেল। একি স্পেন নাকি বাংলাদেশের কোনো শহর! চারিদিকে সবাই বাংগালী! মুদি দোকান, সেলুন, রেস্টুরেন্ট এমনকি ফোন ফ্যাক্সের দোকান গুলো পর্যন্ত বাংগালীদের।

খসরু ভাই নিও'র বিস্মিত ভাব দেখে মুচকি হাসলেন। এই এলাকায় একসময় খুব বেশী বাংগালী ছিলোনা কিন্তু এখন এই ছোট্ট এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার বাংগালীর বসবাস। ঢালু একটা পথ বেয়ে উঠতে শুরু করল ওরা। সল স্কয়ারে অলস আড্ডা একটু পরেই বাসায় পৌছে গেলো ওরা। বাসায় পৌঁছে দেখে ওর রুম আগে থেকেই রেডী।

খসরু ভাইয়ের বোনজামাই আবুল হোসেন নতুন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট কানেকশন নিয়েছেন, অনলাইনে নতুন চাকরী খোঁজ করার জন্য!! রাত প্রায় ১২টা তাই তারা আগেই খেয়ে নিয়েছেন। এখন ওর জন্য খাবার গরম করা হচ্ছে। এই ফাঁকে নিও ফ্রেশ হয়ে নিলো। লাউয়ের তরকারী আর ভাজা রুই মাছ দেখে নিও'র মন গুনগুন করে উঠলো। ওর শহরে না আছে রুই মাছ, না আছে লাউ! যদি থাকতোও, নিও যে কুঁড়ে; সে রান্না করে খেতো কিনা সন্দেহ! দেশে থাকতে সে কখনও ডিম সেদ্ধ ছাড়া আর কিছু রান্না করে নাই, সবসময় মায়ের হোটেলেই খেয়ে এসেছে।

বেশ আয়েশ করে খাওয়া শেষ করে ইমেইলটা চেক করে নিলো সে। বেশ সকালে বের হতে হবে। ঘুমানোর ব্যবস্হা করা দরকার। বেডরুমটা বেশ ছোটো। খুব বেশি হলে ৬ স্কয়ারমিটার! আবুল ভাইয়ের ছেলে এই রুমে থাকতো।

এখন কাজের জন্য অন্য শহরে চলে যাওয়ায় তারা নতুন একজন ভাড়াটিয়া খুজঁছেন। নিও ভাবতে লাগলো, নতুন শহরে একান্ত সময় বাংগালীদের সাথে! সাথে চিরায়ত বাংগালী খাবার! ভাগ্যকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলো না নিও। সকালে ভাবী ৮ টায় তুলে দিলেন। হাল্কা নাস্তা মুখে পুরেই বাসা থেকে বের হয়ে পড়ল নিও। গন্তব্য প্লাজা মায়োর।

রাতের অলস আড্ডামুখর রাস্তা এখন বেশ ব্যস্ত। প্লাজা মায়োর পৌছে দেখে ইতিমধ্যে সব টুরিস্ট এসে পৌঁছেছেন। টুরিস্টদের মধ্যে একটি ফ্যামিলী পুরা অসি। কথাও শুনা লাগেনা, তাকালেই বুঝা যায়। তাদের পিচ্চি মেয়েটি অবসরে খোলা স্কয়ারে এক্রোবেট প্র্যাকটিস করছে।

জটিল কসরত তার! তিনটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ের একটি গ্রুপও আছে। সামার বলে গায়ে বেশি জামা রাখা খুব কষ্টের। তাই তারা হাটুঅব্দি স্লীভলেস গাউনের মত একটা জামা পরে এসেছে, অনেকটা ফ্রকের মত। প্রথম প্রথম এসব দেখে নিও বেচারার অবস্হা খারাপ হয়ে যেত। এখন এগুলো ডালভাত হয়ে গেছে।

আগের মত আর কষ্টবোধ হয় না। ইউরোপে সামারে মেয়েরা প্রায়ই এরকম দল বেঁধে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে। লাইফটা সত্যিই ইনজয় করে তারা। আমাদের দেশের মেয়েদের আমরা এরকম স্বাধীনতা, নিরাপত্তা দিতে পারি না; এটা আমাদের ব্যর্থতা। তবে এদের এইসব ট্যুর সবসময়ই নিষ্পাপ হয় না।

ক্যামেরার কোনায় অনুপ্রবেশকারিনীরা একটু পরেই গাইড চলে আসলেন। খাঁটি স্পেনিশ মহিলা, নাম ইসাবেলা। উনার ফোকাস হচ্ছে প্রাচীন মাদ্রিদ ও তার ইতিহাস। মাদ্রিদ শব্দটি আসলে এসেছে "মাখরীদ" শব্দ হতে যার মানে হচ্ছে জলবেষ্টিত। সমুদ্রপৃষ্ট হতে প্রায় ২১০০ ফুট উঁচু এই শহরটির পত্তন হয়েছিলো কিন্তু বসবাসের জন্য না।

স্ট্রাটেজিক পজিশনিং এর জন্য মাদ্রিদের উত্পত্তি হয়েছিলো মিলিটারী ফোর্ট হিসেবে। শত্রুদের অস্তিত্ব বেশ দুর থেকেই টের পাওয়া যেত এবং আক্রমন ভালোভাবে প্রতিহত করা যেতো। এই শহর যে কত লক্ষ মানুষের রক্তস্নাত তা ভাবতেই নিও'র সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। প্রাচীন অংশ দেখছে বলেই যাত্রা পথ হচ্ছে সব নীরব গলিঘুপচি। হাটতে হাটতে নিওরা চলে এল এক পাহাড়ী উপত্যকায়।

অবশ্য বাড়ীঘরের জন্য তা সহসাই বোঝা যায় না। দুই পাশের দুই পাহাড়ের সহজ যোগাযোগের জন্য আছে একটি ব্রীজ। এই পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে প্রাচীন একটি চার্চ উপরের ব্রীজটা কিন্তু দুটি পাহাড়কে যুক্ত করেছে! নিও স্বভাবসুলভ ভাবেই গাইডকে মাদ্রিদের ইতিহাস সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করল। ইসাবেলাও অনর্গল সব বিবরন দিতে লাগল। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মনে হয় খুশিই হচ্ছিলো ও।

নিও শুনেছে যে এখানে গাইড হতে গেলেও নাকি লম্বা ট্রেনিং নেয়া লাগে! ম্যালা হেপা! একটুপর ঐ মেয়ে গ্রুপটাও ইসাবেলাকে নানা প্রশ্ন করা শুরু করল। বেশিরভাগই কোন এলাকায় আরো ঘুরা যায় আর ভালো শপিং কোথায় করা যাবে ঐ প্রসঙ্গে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.