তোমার অস্তিত্বে সন্দিহান, তবু্ও সদাই তোমায় খুঁজি
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর দিনটার কথা কোনদিন ভুলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তখন বিবিসি ও সিএনএন এর সংবাদগুলো সরাসরি প্রচার করত। টেলিভিশন দুটোর কল্যাণেই সরাসরি দেখেছিলাম কিভাবে হিন্দু করসেবকরা চোখের পলকেই গুড়িয়ে দিয়েছিল ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদটি। ঘটনাটি ঘটেছিল বিজেপি নেতা এল কে আদভানী আর মুরলি মনোহর যোশীর সামনেই, অনেকের মতে তাদের প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতে। বাবরী মসজিদ ধুলিস্যাৎ হওয়া স্বাধীন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি একটি বড় আঘাত।
সুপ্রিম কোর্টের নিকট প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও আদভানী, যোশী কিংবা উত্তর প্রদেশের তৎকালীর মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং কেউ মসজিদটি রক্ষা করতে পারেননি বা করেননি। কেন্দ্রের নরসীমা রাওয়ের কংগ্রেস সরকারও ছিল নির্লিপ্ত।
তবে যাই ঘটুক, ভারতের রাজনীতিবিদরা ললাটে যতোই কলংকের তিলক ধারণ করুক সেটা ছিল তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটা নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়ার কোন সুযোগ ছিলনা। কিন্তু সুযোগ সন্ধানী একটি গোষ্ঠী ঠিকই তা লুফে নিয়েছিল।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ধর্মাশ্রয়ী বিএনপি সরকার এই সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা আর ক্ষেত্রবিশেষে সহযোগীতার কারণে শনির আখড়ার যে মন্দিরটির সামনে শৈশবে খেলা করে বড় হয়েছি তা চোখের পলকেই মাটিতে মিলিয়ে গেল। মন্দিরের পাশের যে হিন্দু বসতিগুলো ছিল চোখের পলকেই তাদের মাটির ঘরগুলো মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হল। শুধু মন্দির এলাকা নয় আশেপাশের মহল্লার হিন্দু বাড়িগুলো কোনটিই রক্ষা পায়নি।
হিমাংশু, সঞ্জয় বা নিপেন যারা ছিল শৈশবের বন্ধু তাদেরকে আর দেখতে পাইনি। পরে শুনেছি সীমানার ওপারে চলে গেছে। এসব ঘটনা নিয়ে এর আগেও একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। তাই এ আলোচনাটা আর বাড়াতে চাইনা।
আঠার বছর পরে সেই বাবরী মসজিদ মামলার রায় আজ।
রায়ে যাই থাকুক, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার তিলকে যতোই কলংক লাগুক, ভারতে যাই ঘটুক, এদেশের প্রশাসনের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ এ ইস্যু নিয়ে যাতে কেউ এখানে কোন অপকর্ম না ঘটাতে পারে তার পরিবেশ নিশ্চিত করুন। আর যাতে কোন মন্দির ভাঙা না হয়, আর যাতে কাউকে আশ্রয়হীন না করা হয়, আর কেউ যাতে কাউকে সীমানার ওপারে চলে যেতে না হয়।
সত্যিকারের মননশীলতার জয় হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।