নিঃসঙ্গ এক ইলেকট্রনের কথন (১)
উত্তরা,ঢাকা।
সেক্টর ৪ এর ২২ নম্বর বাড়িটির নিচে আজ লোকজনের বেশ বড় একটা জটলা। মানুষজন একজন আরেকজনের ওপর কাঁধেরওপর দিয়ে তাকানোর চেষ্টা করছে।
গেট দিয়ে বের হয়ে রিক্সা নেবে এমন সময় সাঈদের চোখে পড়ল ভিড়টা। একটা পুলিশের গাড়িকেও দেখলো দাঁড়ানো।
'কি ব্যাপার!পুলিশ কেনো আর এত লোকেরই বা ভিড় কেনো?'মনে মনে বলে সাঈদ। কৌতুহল জাগে তার মনে। এগিয়ে যায় ভিড়ের দিকে।
লোকজনকে ঠেলে ঠুলে ভেতরে ঢুঁকে সাঈদ। ভেতরে ঢুঁকেই দেখতে পায় দুজন পুলিশকে।
পুলিশ দুজন একটা লোকের সাথে কথা বলছে। লোকটাকে চেনে সাঈদ। এ বাড়ির দাড়োয়ান। কি নিয়ে কথা হচ্ছে তা জানার জন্য এগিয়ে গেলো সেদিকে।
-এক্সিউজ মি,আমিকি একটু কথা বলতে পারি?
সাঈদের কথা শুনে পুলিশের লোকটা বেশ বিরক্ত হয়েছে মনে হয়।
ভ্রু কুঁচকে সাঈদের আপাদমস্তক দেখছে।
-আপনি কে?
-আমি পাশের বিল্ডিংয়ে থাকি। মানুষের ভিড় দেখে এলাম। কি হয়েছে জানতে এলাম।
-আপনার জানার দরকার কি?আপনি গোয়েন্দা নাকি?যান এখান থেকে।
কাজের সময় বিরক্ত করবেন না।
কথা শুনে সাঈদের রাগ উঠে গেলো। অনকে কষ্টে কন্ট্রোল করল নিজেকে। এখন মাথা গরম করা চলবে না। তাহলে কিছুই জানা যাবে না।
-আপনাদের বড় স্যার কোথায়?আমি তার সাথে কথা বলবো।
-আপনাকে যেতে বলেছি যান। ডিস্টার্ব করবেন না কাজে।
-আমি আপনাদের কাজে তো কোন ডিস্টার্ব করছি না। আমি বলেছি আমি আপনাদের বড় স্যারের সাথে কথা বলবো।
সাঈদের কাছে পরিচয় পত্র আছে। সে ভালো করেই জানে পরিচয় পত্রটা দেখালেই পুলিশ লোকটা কোন কথা বলবে না। কিন্তু সাঈদ তা করলো না। সে একটু আড়ালেই থাকতে পছন্দ করে। এতে কাজ করার সুবিধা বেশি।
পুলিশ লোকটার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। এর চেয়ে অপেক্ষা করা ভালো। এস পি আসলেই কথা বলা যাবে। আগের এস পি বদলি হয়ে গেছে না হলে তার পরিচয় দিয়ে কথা বলা যেত।
এমন সময় পাশ থেকে ভরাট গলার একটা গলার আওয়াজ পেলো সাঈদ।
গলার আওয়াজটা কেনো যেনো তার পরিচিত লাগলো। পুলিশের লোকটাকে দেখা গেলো সালাম ঠুঁকতে। পাশ ফিরে তাকালো সাঈদ। তাকানোর সাথে সাথে সাঈদের মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুঠে উঠলো।
-মি. রহমান,আমরা ডেড বডিটাকে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠাবো।
তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বলা যাবে কি হয়েছে।
রহমান সাহেব কোন কথা বলছেন না। সাঈদ দেখতে পেলো রহমান সাহেবরগালটা ভিজে রয়েছে। কেঁদেছেনযে তা বোঝা যাচ্ছে।
-স্যার,আপনিএখানে!
-আরে সাঈদ!কেমন আছো?
-ভালো।
আপনি এখানে বদলি হয়েছেন নাকি।
-হুম। কাল এখানে এসেছি। এসেই কেস পেয়ে গেলাম।
-ব্যাপারটা কি?
-বলছি দাঁড়াও।
-মি. রহমান,এ হচ্ছে সাঈদ। ইয়াং জার্নালিস্ট আর শখের গোয়েন্দা। আমি যে এলাকায় ছিলাম সেখানে বেশ কয়েকটা কেসে দারুণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলো ছেলেটা।
প্রশংসা শুনে সাঈদ লজ্জ্বা পেলো। হাতটা বাড়িয়ে দিলো মি.রহমানের দিকে।
পরিচিত হলো। খেয়াল করল লোকটা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
-সাঈদ,চলো উপরে যাই। ব্যাপারটা তোমাকে যেতে যেতে বলছি। মি. রহমান আমি ওকে একটু দেখিয়ে নিয়ে আসি।
-চলেন স্যার।
লিফটের দিকে এগোলো তারা। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত সাঈদ দেখতে পেলো রহমান সাহেব এখনো তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সে তাকানোতে বিরক্তিকর একটা ভাব ফুঁটে উঠেছে। ব্যাপারটা কেমন যেনো খটকা লাগলো তার কাছে।
(@*@)
-তুমি থাকো কোথায় এখন?
-এই এলাকাতেই। ১৯ নাম্বার বাসায়। কাজে বের হচ্ছিলাম এমন সময় লোকজনের ভিড়টা চোখে পড়লো। তাই ভেতরে আসলাম কি হয়েছে জানার জন্য।
-রহমান সাহেবকে আগে দেখেছো?
-বিশিষ্ট শিল্পপতি।
তবে আজই প্রথম দেখলাম।
-আচ্ছা,এখনকা জের কথায় আসি। রহমান সাহেবের ছোট ছেলে তমাল মারা গিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তমালের মা মানে মিসেস রহমান ডাকতে যান। তিনিই প্রথমে বুঝতে পারেন।
-স্যার,আপনারা কখন এসেছেন এখানে?
-ফোন করে আমাদের জানানো হয় ১১ টার দিকে। বাড়ির সবাই মনে করেছে স্বাভাবিকমৃত্যু। কেননা তমালের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নি।
লিফট ততক্ষণে ষষ্ঠ তলায় চলে এসেছে। সাঈদ আর মি. রাসেল লিফট থেকে বের হলেন।
সাঈদ খেয়াল করলো ষষ্ট তলায় দুটো ইউনিট আছে। রাসেল সাঈদকে নিয়ে বাম পাশের ইউনিটে ঢুঁকলেন। সাঈদকে নিয়ে তিনি সোজা তমালের রুমে চলে এলেন। গ্লাভস পরা কয়েকজনকে দেখা গেলো লাশের কাছে।
-স্যার,আমি লাশটাকে একটু দেখতে চাই।
-শিউর। দেখো কোন ক্লু পাও কিনা।
কথাটা বলে অর্ধ বয়স্ক একটা লোকের দিকে ফিরলেন তিনি। সাঈদকে দেখিয়ে লোকটাকে বলছেন
-মি. আরিফ,এ হচ্ছে সাঈদ। জার্নালিস্টএবং শখের গোয়েন্দা।
সাঈদের দিকে ফিরলেন তিনি।
-সাঈদ ইনি ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের একজন ডক্টর। তমালের চাচা তিনি। প্রিয়ভাতিজার মৃত্যুটা তিনিও মানতে পারছেন না। তাই তিনি নিজেই ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে চাচ্ছেন।
করমর্দনের জন্য মি. আরিফের হাত বাড়িয়েদিলো সাঈদ।
-হ্যালো স্যার,ইটস সো নাইছ টু মিট ইউ।
-মাই প্লেজার।
করমর্দন করে সাঈদ এগোলে লাশটার দিকে। পকেট থেকে ডিজিটার ক্যামেরটা বের করলো।
তমালের ডেড বডিটা দেখে সাঈদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। "নিষ্পাপএকটা ছেলে এভাবে মরে গেলো!"
লাশের দিকে নজর দিলো সাঈদ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। সাথে ছবিও তুলে নিচ্ছে। চোখ এড়িয়ে গেলেও যাতে তা ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে।
কিন্তু হতাশ হতে হলো তাকে। শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই।
ফ্লোরে বসা থেকে উঠতে যাবে এমন সময় হাতে কিসের যেন একটা ছোঁয়া পেলো। তাকিয়ে দেখে সুঁই ভাঙা একটা সিরিঞ্জ। কি মনে করে সিরিঞ্জটা সবার অলক্ষ্যে পকেটে ঢুঁকিয়ে ফেললো।
লাশ দেখা শেষে উঠে দাঁড়ালো সাঈদ। এগোলো সার্জেন্টের দিকে।
-স্যার,ডেড বডিটাকে ল্যাবে পাঠাবেন কখন?
-এখনই। লোক এসে গেছে।
-ল্যাব রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আমাকে একটা কপি দিয়েন।
-অবশ্যই।
-স্যার,বাড়িতে আছে কে কে?
-মি. রহমান,তাঁর স্ত্রী,বড় ছেলে,তমালের চাচা-চাচী আর কাজের মেয়ে।
-কাজের মেয়েটা কি এখানেই থাকে নাকি শুধু কাজের সময় আসে?
-এখানেই থাকে। তবে তার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই।
-কেনো স্যার?
-কারণ,ও কথা বলতে পারে না।
-ও আচ্ছা।
হটাত সাঈদ একটা মহিলার আহাজারির আওয়াজ পেলো। বুঝতে পারলো গলাটা মিসেস রহমান। ছেলের শোকে পাগল প্রায়।
-স্যার,আমি আজ আসি।
পরিবারের কারো অবস্থা ভালো না। কারো সাথে কোন কথা বলতে পারবো না মনে হয়। কাল এসে কথা বলা যাবে।
-ওকে। আর কোন হেল্প লাগলে বলো।
-ওকে স্যার। বাই।
-বাই।
লিফট দিয়ে নিচে নেমে এলো সাঈদ। ডান হাত পকেটে ঢুঁকানো।
পকেটের ভেতর সেই সিরিঞ্জটা। সাঈদে র কেনো যেনো মনে হচ্ছে ব্যাপারটাতে স্বাভাবিকতা নেই। তমালকে মেরে ফেলা হয়েছে এমনটাই মনে হচ্ছে তার। তাঁর ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলছে ব্যাপারটাতে খুব সূক্ষ্ম আর জটিল একটা ব্যাপার লুকিয়ে আছে। ফ্যামিলির লোকদের সাথে কথা বললে হয়তোবা কোন ক্লু পাওয়া যাবে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে মেইন গেট দিয়ে বেড়িয়ে এলো সাঈদ।
(২)
পরের দিন রাতে-
নিজের রুমে খাটে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে সাঈদ। আলো নেভানো। হাতে ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে আজকের তোলা ছবিগুলো দেখছে। একটার পর একটা ছবি দেখছে।
যে ছবিটা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে মনে সেটা জুম করে দেখছে।
হটাত্ সাঈদের সেলফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখে সার্জেন্ট রাসেলের ফোনে। নতুন খবর পাওয়ার আশায় সাঈদের মনটা নেচে উঠলো।
-হ্যালো স্যার!
-হ্যাঁ সাঈদ।
ল্যাব রিপোর্ট হাতে এসেছে। কিন্তু রিপোর্টে স্বাভাবিক মৃত্যুএসেছে।
-স্যার রিপোর্ট টা কি তমালের চাচা নিজে তৈরি করেছেন?
-হ্যাঁ।
-স্যার,আমারমনে হচ্ছে রহস্যের ভেতর রহস্য রয়েছে। আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখতে পারবেন?
-হুম বলো।
-তমালের মৃত্যুর কারণটা ল্যাব রিপোর্টেও এসেছে স্বাভাবিক। এ কারণে তমালের পরিবার ডেড বডিকে নিয়ে যেতে চাইবে। মানে হল তাড়াতাড়ি দাফন করতে চাইবে। আমি চাচ্ছি লাশটা কয়েকদিন হিমাগারে থাকুক।
-কারণ টা একটু বলবে?
-আমি রহমান সাহেবের বাসার দড়জাটা ভালো করে লক্ষ্য করেছি।
বিশেষ করে ঘরে প্রবেশের দরজা। কিন্তু বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করেছে এমন লক্ষণ পাই নি। তার মানে যদি তমালকে খুন করা হয়ে থাকে তাহলে খুনি বাড়ির ভেতরেই থাকে। পরিবারের মধ্যে কেও একজন হবে। আসলে স্যার আমি চাচ্ছি ডেড বডিটাকে আবার টেস্ট করাতে।
তবে অন্য জায়গায়। আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছেন। আপনি বললে আমি কাজটা করতে চাই।
-এমন কেনো করতে চাচ্ছো?
-আমার সন্দেহ হচ্ছে ল্যাব রিপোর্টে কিছু লুকানো হয়েছে।
-কিন্তু ল্যাব রিপোর্টটা তমালের চাচার নিজের করা।
নিজের ভাতিজার মৃত্যুর কারণটা তিনি কেনো লুকাতে চাইবেন?
-সেটা আমি জানি না স্যার। আমার মনে হচ্ছে কোথাও কিছু লুকানো হচ্ছে।
-হুম বুঝতে পারছি তোমার কথা। আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি সব।
-ও স্যার একটা কথা।
-হুম বলো।
-তমালের লাশটা পরীক্ষা করতে যেয়ে আমি ফ্লোরে একটা সুঁই ভাঙ্গা সিরিঞ্জ পেয়েছি। আমি ব্যাপারটা কাউকে জানাই নি। এটার মধ্যে কোন প্রমাণ থাকতে পারে এই ভেবে লুকিয়ে এনেছি।
-কোন সমস্যা নেই।
তুমি তোমার কাজ করে যেতে থাকো। কি হয় সাথে সাথে জানিয়ো আমাকে।
-অবশ্যই স্যার।
-আচ্ছা এখন রাখি ,বাই।
-বাই।
সংযোগ কেটে গেলো। সাঈদ উঠে তার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। ড্রয়ার খুলে সিরিঞ্জটা বের করলো। কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। ঠিক করলো কাল তার পরিচিত ডাক্তারের কাছে যেয়ে সিরিঞ্জটা দেখাবে।
তখনই জানা যাবে সিরিঞ্জটা কি কাজে ব্যবহৃত হয়েছিলো বা এর ভেতরে কি ছিলো। সিরিঞ্জটা আবার ড্রয়ারে রেগে বিছানায় এসে বসলো সাঈদ। চোখ বুজলো। ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে গেলো সে।
(@*@)
সকালে উঠেই সাইদ খবর পেলো তমালের চাচা নাকি গতকাল মারা গিয়েছে।
খবরটা পেয়ে এক মুহূর্ত দেরি কর নি সাঈদ। সোজা রহমান সাহেবের বাসায়র দিকে রওনা দিয়েছে। তমাল যেদিন মারা গিয়েছিলো সেদিন যেমন ভিড় হয়েছিলো আজো তেমনি ভিড় দেখাগেলো। সাঈদ লোকজনের ভিড় ঠেলে বাড়ির ভিতরে ঢুকল। ওইদিন যে পুলিশ লোকটা তাকে দেখে বিরক্ত হয়েছিলো আজকে সেই পুলিশটা তাকে দেখে সালাম দিলো।
তা দেখে সাঈদ মুচকি হাসল। লিফটের সুইচ টিপে অপেক্ষা করতে লাগলো। লিফট আসার পর ভেতরে ঢুকে পড়লো।
রহমান সাহেবের বাসায় সদর দড়জায় আসার সাথে সাথে মহিলা কান্নার আওয়াজ পেলো সাঈদ। বুঝতে পারলো তমালের চাচী কাদছে।
ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেলো তমালের চাচীকে তমালের মা সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তমালের বাবা সোফায় বসে আছেন। মাথা নিচের দিকে নোয়ানো। তার ফোপানির আওয়াজ শুনতে পেলো।
তমালের রুমের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সেখানে সার্জেন্ট রাসেল সহ ২ জন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে আছে।
সেদিকে এগোলো সাঈদ।
-আরে সাঈদ এসো।
-তমালের চাচাও মারা গেলো?
-আমার কাছে কাহিনী অনেক ঘোলাটে লাগছে। তমালের মত তমালের চাচার গায়েও আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় নি।
এ কথা শুনে সাঈদ ডেড বডির দিকে এগোলো।
ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে লাগলো। সাথে খুটিয়ে খুটিয়ে আঘাতের চিহ্ন খুজতে লাগলো। কিন্তু তাকে হতাশ হতে হলো।
-স্ট্রেঞ্জ!!
-হুম,এখন ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো ছাড়া উপায় নেই।
-স্যার,তমালের বেলায় ফরেন্সিক ল্যাবে পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে।
তমালের চাচারটাও যদি তেমন আসে?
-সেটাও আরেক চিন্তার বিষয়। আচ্ছা তুমি না তোমার পরিচিত এক ডাক্তার দিয়ে তমালের বডি চেক করতে চেয়েছিলে?এক কাজ করো তমাল আর তার চাচার বডি একসাথে ঐ জায়গায় টেস্ট করাও। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
-মন্দ বলেন নি স্যার। ঠিক আছে স্যার।
আপনি পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন আমি তাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।
-হুম, রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথে জানিয়ো।
-অবশ্যই স্যার। স্যার আমি একটু ফ্যামিলির মেম্বারদের সাথে আলাপ করতে চাচ্ছি। যদি কিছু জানতে পারি তাদের আলাপ থেকে।
-আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। তেমন কিছু জানতে পারি নি। তারপরো তুমি যখন চাচ্ছো কথা বলে দেখো।
-আচ্ছা স্যার।
তমালের রুম থেকে বের হয়ে সাঈদ ড্রয়িং রুমের দিকে এগোল।
তমালের চাচী নিস্তেজ হয়ে পরে আছেন। তার পাশে তমালের মা। চেহারা দেখে বুঝা গেলো পরপর দুইটা মৃত্যুর শোকে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। তমালের বাবা চুপ করে আছেন। কিন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো রহমান সাহেব কাঁদছেন।
ভাইয়ের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছেন না কোনোভাবেই। এই অবস্থায় এখন তাদের সাথে কথা বলা যাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পরে গেলো সাইদ। কিন্তু রহস্যের কিনারা করতে হলে তাদের সাথে কথা বলতে হবে।
-এক্সিউজ মি,আমি একটু কথা বতে চাচ্ছিলাম তমালের চাচার ব্যাপারে।
কথাটা শুনে রহমান সাহেব সাঈদের দিকে তাকালেন।
পকেট থেকে রুমাল নিয়ে চোখ মুছে সাঈদকে সামনের সোফাটা দেখিয়ে বসতে বললেন। সাঈদ সোফায় যেয়ে বসলো।
-বলো কি জানতে চাও।
-আপনারা কখন তমালের চাচাকে মৃত অবস্থায় দেখলেন?
-ভোর সকালেই। নামায পড়তে উঠেছিলাম।
তাকে ডাকলাম। সাড়া দিলো না। কালকে একটু দেরিতে ঘুমিয়েছিলো। তাই আর ডাকলাম না। পরে যখন নাস্তা খাওয়ার জন্যডাকতে যাই তখন বুঝতে পার..................
কথাটা শেষ করতে পারলেন না রহমান সাহেব।
কান্না করতে লাগলেন ।
রহমান সাহেবের কান্না দেখে সাঈদ বিব্রত বোধ করলো। আরো কিছু প্রশ্ন করা বাকি ছিলো তার।
-স্যার, আপনার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। ছেলের মৃত্যুর পর পরই ভাইয়ের মৃত্যু,আসলেই অনেক কষ্টের।
স্যার আমার আর কয়েকটা প্রশ্ন ছিলো।
-হুম বলো।
-কালকে রাতে তমালের চাচা দেরিতে ঘুমিয়েছিল কেনো?
-কালকে রাতে আমরা দুজন তমালের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। আসলে নিজের ছেলের মৃত্যুটা মেনে নেয়া কষ্টের। তার উপর ছেলেটার কোনো অসুখছিলো না।
-হুম। আচ্ছা আমি আসি এখন। আশা করছি খুব শীঘ্রই তমাল আর তার চাচার মৃত্যুর কারণটা বের করতে পারবো।
রহমান সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না। সাঈদ আর সেখানে দাড়ালো না।
ড্রয়িং রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় রুমের কোণার দিকে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার দিকে নজর গেলো তার। রুম থেকে বের হয়ে অন্যান্য রুমের দিকে এগোলো সে। প্রত্যেকটা রুমেই একটা করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো আছে। আবার ঘুরে ড্রয়িংরুমের দিকে গেলো সাঈদ।
-স্যার, আপনাদের প্রত্যেকটা রুমে ক্লোজ সার্কিট ক্যামের দেখতে পেলাম।
আমি ক্যামেরা গুলোর রেকর্ড দেখতে চাচ্ছি।
-অবশ্যই। তুমি নিচে গিয়ে দাড়োয়ানকে গিয়ে বললেই দেখিয়ে দিবে।
-হুম,ধন্যবাদ। আমি আসি তাহলে।
রহমান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাঈদ নিচে নেমে এলো। দারোয়ানকে ক্যামেরার রেকর্ড গুলো দেখাতে বলল। হটাত কি মনে করে সাঈদ ঠিক করলো ক্যামেরার রেকর্ড গুলো বাসায় নিয়ে গিয়ে দেখবে। এখানে বসে দেখলে হয়তো কিছু মিস হয়ে যেতে পারে। ব্যাগ থেকে পেনড্রাইভ বের করে কম্পিউটার থেকে ভিডিওগুলো কপি করতে লাগলো।
কপি করা শেষে সাঈদ বের হয়ে আসলো। ঠিক করলো রাতে বসে বসে দেখবে। এখন তাকে যেতে হবে ফরেন্সিক ল্যাবে। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে তার।
(৩)
-আচ্ছা সাঈদ, আগের রিপোর্টটা কার করা?
-তমালের চাচা নিজে করেছেন স্যার।
-উনিই রিপোর্ট করলেন আর এরপর উনিই মারা গেলেন?
-স্যার ব্যাপারটা খোলাশা করার জন্যই আপনার কাছে আসা।
-তোমাকে আগেই বলে রাখি ব্যাপারটাতে লুকোছাপা করা হয়েছে।
-সেটা স্যার আমি প্রথম থেকেই সন্দেহ করেছি।
-এসো তোমাকে কিছু দেখাই।
ডাক্তারের সাথে লাশের দিকে এগোলো সাঈদ।
লাশের ওপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে সাইদকে দেখাতে লাগলেন। লাশটা তমালের। হাতের দিকে ঈশারা করে বললেন
-এ জায়গাটা দেখো।
কথাটা বলে সাঈদের দিকে ম্যাগনিফাইনিং গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলেন।
-হুম স্যার, সুঁই ফোটানো হয়েছে হাতে।
-হুম। আরেকটা কথা হল তমালকে মেরে ফেলা হয়েছে।
-কিভাবে স্যার?
-নিকোটিন দিয়ে।
-আই সি। স্যার আপনাকে একটা জিনিস দেখাতে ভুলে গিয়েছিলাম।
কথাটা বলে সাইদ ব্যাগ থেকে সেই সিরিঞ্জটা বের করলো।
-তমাল যেদিন মারা যায় সেদিন এটা তার রুমে পেয়েছিলাম।
সিরিঞ্জটা সাঈদের কাছ থেকে নিয়ে ডাক্তার দেখতে লাগলেন। নাকের সামনে নিয়ে গন্ধ শুঁকতে লাগলেন।
-হুম,এটাতে নিকটিনের গন্ধ রয়েছে।
আমার মনে হয় এটা দিয়েই তমালের শরীরে পুশ করা হয়েছিল।
-নতুন একটা তথ্য পেলাম। আর স্যার তমালের চাচার ব্যাপারটা?
-তমালের চাচাকে বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে। তবে ভিন্য উপায়ে।
-কিভাবে স্যার?
-তমালের চাচার শরীরে আমি অ্যালকোহলের অস্তিত্ব পেয়েছি আর অ্যালকোহলের সাথে বিষ মিশ্রিত ছিলো।
-ও মাই গড।
-হুম, যে এ কাজটা করেছে সে অনেক সুক্ষ ভাবে কাজটা করেছে। আমার মনে হয় তমালের ল্যাব রিপোর্টে একি ব্যাপারটা এসেছিল। কিন্তু তা লুকানো হয়। আর যেহেতু রিপোর্টটা তমালের চাচা নিজে করেছিলেন সেহেতু আমি মনে করি তিনিই লুকিয়েছেন ব্যাপারটা।
-বুঝতে পারছি স্যার। স্যার আমি এখন আসি তাহলে। প্রমাণ অর্ধেক হাতে পেয়েছি। আর একটা কাজ বাকি আছে। আশা করি তারপরেই অপরাধীকে ধরতে পারবো।
-উইশ ইউ গুড লাক।
-ধন্যবাদ স্যার।
ল্যাব থেকে বের হয়ে সাঈদ বাড়ির দিকে রওনা দিলো। ঠিক করলো বাসায় যেয়েই আগে ভিডিও রেকর্ডগুল দেখতে হবে। সেখান থেকেই হয়তো নিশ্চিত হওয়া যাবে কে আসল খুনি।
*@*
ব্যাগ থেকে পেনড্রাইভ বের করে কম্পিউটারে কানেক্ট করলো সাঈদ। প্রত্যেকটা রুমের ভিডিও গুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। আর দেখতে গিয়েই কিছু খুত ধরা পরলো সাঈদের চোখে। কিছু কিছু ভিডিও দেখে সাঈদ নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা। মুখ হা হয়ে গেছে তার।
ভিডিওগুলো আবারো দেখতে লাগলো জুম করে। প্রমাণ প্রায় সব হাতের মুঠোয় এসে গেছে। এখন আর একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তাতেই হয়তো থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
পরের দিন সকালে-
রহমান সাহেবের বাসা।
সাঈদ বসে আছে রহমান সাহেবের বাসার ড্রয়িংরুমে। সাথে আছে সার্জেন্ট রাসেল। তাদের সামনের সোফায় বসে আছেন মিসেস রহমান আর তমালের চাচী। রহমান সাহেব নাকি গতকাল বাসায় ফেরেন নি। কোথায় গেছেন কেও বলত পারছে না।
আত্মীয় সজনদের বাসায় খোজ নেওয়া হয়েছে,কিন্তু তিনি সেখানেও যান নি। মিসেস রহমান খুব চিন্তায় আছেন। দুই দুইটা মৃত্যুর পর এখন আবার তার স্বামী নিখোঁজ। কিচুক্ষণ চুপ তাকার পর সাঈদই মুখ খুলল। মিসেস রহমানকে উদ্দ্যেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো
-রহমান সাহেব কাল সারা দিন কোথায় ছিলেন?
-অফিসেই ছিল।
-আপনার সাথে তার ফোনে কথা হয় নি?
-হয়েছে। কিন্তু সন্ধার পর থেকে তার ফোন অফ পাচ্ছি। এখনো অফ। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।
কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন তিনি।
এখানে বসে থাকলে আর কিছু জানা যাবে না। যে কাজে এসেছে সে কাজটা আগে করতে হবে।
-মিসেস রহমান, আমি আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়েটাকে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নিয়ে যেত চাই। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে।
-কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না।
-আমি জানি। এ জন্যই নিতে চাচ্ছি। আমাদের লোক আছে। তার সাহায্যে আমরা জা জানতে চাচ্ছি তা জেনে নিতে পারবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
নিয়ে যান।
-তাকে ডাকুন।
-শিল্পী, এদিকে আয় তো।
মোটামোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে এসে সামনে এসে দাড়ালো।
-এনারা তোকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন।
তুই এদের সাথে যা।
মাথা কাত করে সায় দিলো মেয়েটা। মিসেস রহমানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসলো সাইদ আর সার্জেন্ট রাসেল।
(৪)
-তোমার ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। তোমাকে কেউ কিছু বলবে না।
তুমি একদম নিরাপদ থাকবে। নির্ভয়ে সব বলতে থাকো।
রহমান সাহেবের বাসার কাজের মেয়েকে দেখিয়ে জামিলকে জিজ্ঞেস করতে বলে সাঈদ। সাঈদের নির্দেশ পেয়ে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে জামিল। মাঝে মাঝে সাঈদ ভিডিও ফুটেজগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছে।
জিজ্ঞেস করা শেষে জামিলের কাছ থেকে জেনে নিতে লাগলো সবকিছু। কথাগুলো শুনে সাঈদ সার্জেন্টের দিকে ফিরলো।
-স্যার,মেয়েটাকে আপনি খুনি বের না হওয়া পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখুন। মেয়েটাকে বাড়িতে পাঠালে মেয়েটার সমস্যা হতে পারে।
-তা ঠিক আছে,কিন্তু বেশিক্ষণতো রাখা যাবে না।
-সেটা আমিও জানি স্যার। আর বেশিক্ষণ রাখতেও হবে না। আপনাকে শুধু এখন একটা কাজ করতে হবে।
-হুম বলো।
কি করতে হবে তা সার্জেন্ট রাসেলকে বিস্তারিত বলে দিলো।
-হুম, ঠিক আছে। কিন্তু সাঈদ খুনিটা কে তা কিন্তু এখনো তুমি বলো নি।
-আমার স্যার একটু শিউর হতে হবে। আপনি কাজটা করতে থাকুন। আশা করি আজকের মধ্যেই ধরতে পারবো।
-হুম। ঠিক আছে। আমরা তাহলে বের হচ্ছি।
-ওকে স্যার।
*@*
-হ্যালো, মিসেস আরিফ।
দড়জা খুলেই সাঈদের গলার স্বর শুনে চমকে উঠলেন মিসেস আরিফ ।
-তু..তু..তু..মি!!
-চিনতে পারেন নি? আমি সাঈদ।
-ওহ! ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে।
-সরি ফর দ্যাট। ভেতরে আসতে পারি?
-হুম,আসো।
ঘরের ভিতরে ঢুকে সাঈদ সোজা ড্রয়িং রুমে পাবাড়ালো। সিঙ্গেল সোফাটায় গিয়ে বসে পড়লো।
-মিসেস আরিফ, সবাই কি ঘুমাচ্ছে?
-হুম, কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে।
-সবাইকে একটু ডাকুন। কিছু প্রশ্ন করতে হবে।
-তুমি তো তাহলে কালকেই আসতে পারতে। রাতের বেলা আসার কি দরকার ছিলো?
-দরকার ছিল বলেই তো এসেছি। প্লিজ ডাকুন সবাইকে।
মিসেস আরিফ যাওয়ার পর সাঈদ সন্তর্পণে দড়জাখুলে বেরিয়ে পরলো। বেরিয়ে এসে ছাদের দিকে রওনা দিলো।
মনে মনে যা আন্দাজ করেছে তাই হচ্ছে দেখে সাঈদের মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
*@*
-তুমি আজকে এসেছ কেনো?
-গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলার জন্য।
-আচ্ছা বলো কি বলবা।
-সাঈদ ছেলেটাকে সরিয়ে ফেলার দরকার। অনেক সমস্যা করছে।
একটু আগে এসেছিলো। এসে বলল সবাইকে ডাকতে। কিন্ত এসে দেখি নেই।
-এমনিতেই তিনটা মার্ডার হয়ে গেছে। এখন যদি সাঈদ ছেলেটাকে মারার চেষ্টা করো তাহলে অনেক সমস্যা হবে।
আর এতো চিন্তা করার কিছু নেই। কোনো প্রমাণ রাখিনি। কেউ ধরতে পারবে না।
কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে একটা ভরাট গলার আওয়াজ ভেসে আসলো।
-আপনি ঠিকই বলেছেন।
সাঈদকে যদি এখন সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে অনেক সমস্যা হবে। আর কে বলেছে প্রমাণ নেই হাতে। প্রমাণ তো হাতের মুঠোয়।
-কে কথা বলছেন?
-এখনি দেখতে পাবেন।
সাথে সাথে রুমের লাইট জলে উঠলো।
এতক্ষণ অন্ধকারে যে দুটি মানুষ কথা বলছিলেন তারা দেখতে পেলেন রুমের কোণায় রাখা টেবিলের উপর বসে আছে সাঈদ। দেখে তাদের মুখ হা হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। আর সাইদের ঠোটের কোণে ফুটে রয়েছে মুচকি হাসির রেখা।
-তু...তু...তুমি?
-কেনো চিনতে পারছেন না?
-না মানে...
-আরে আপনারা দাঁড়িয়ে কেনো? বসুন।
আমরা বসে কথা বলি।
মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না তাদের। যন্ত্রের মত সোফায় বসে পরলেন দুইজন।
-স্যার, এবার আপনারা আসতে পারেন।
সাঈদের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বেডরুমের দড়জা খুলে বের হয়ে আসলেন সার্জেন্ট রাসেল আর দুই জন পুলিশ।
সার্জেন্ট রাসেল এসে সাঈদের পাশে বসলেন।
-তারপর মিসেস রহমান, আপনি সব বলবেন নাকি আমিই বলবো?
মাথা নিচু করে আছেন মিসেস রহমান। কোন কথাই বলছেন না।
-স্যার আমিই বলি তাহলে।
-হুম শুরু করো।
আমার নিজেরই তর সইছে না।
-তাহলে বলছি স্যার। তমালকে মারা হয়েছিলো নিকোটিন পুশ করে। রহমান সাহেব ডায়াবেটিকসের রোগী ছিলেন। তাই তার ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন হত।
তমালের শরীরে সেই ইঞ্জেকশন দিয়ে নিকোটিন পুশ করা হয়েছিলো। আর নিকোটিনটা এসেছিলো তমালের বাবার সিগারেটের প্যাকেট থেকে। তমালের বাবার সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস ছিলো। এর কারণ হচ্ছে তমালের বাবাকে যাতে ফাসানো যেতে পারে। কিন্তু পরে মিসেস রহমান সে ডিসিশন চেঞ্জ করেন।
কেনো ফাঁসাতে চেয়েছিলেন আর কেনো পরে ডিসিশন চেঞ্জ করেছেন তা পরে বলছি।
মিস্টার আরিফের সাথে রহমান সাহেবের কয়েক সপ্তাহ ধরেই সম্পত্তি নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো। এ তথ্য আমি পেয়েছি বাড়ির কাজের মেয়েটার কাছ থেকে। এর প্রমাণ আমি ভিডিওতেও পেয়েছিলাম। মিসেস রহমান মিস্টার আরিফকে বলেছিলেন তাকে যদি হেল্প করেন অর্থাৎ মৃত্যুর কারণটা লুকাতে সাহায্য করেন তাহলে রহমান সাহেবেকে সরিয়ে সব সম্পত্তি তার নামে লিখে নেয়ার ব্যাবস্থা করে দিবেন।
মিস্টার আরিফ সে প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। তারপরে কি হয়েছে তা তো আপনি জানেনই স্যার।
-আচ্ছা সাঈদ তাহলে তমালকে মারা হলো কেনো?
-আসলে স্যার মিসেস রহমানের সাথে মিস্টার আরিফের সম্পর্ক ছিলো। তমাল যেদিন রাতে মারা যায় সেদিন রাতে তমাল তাদের দুজনকে একসাথে দেখে ফেলেছিলো। মিসেস রহমান টের পেয়ে যান যে তমাল দেখে ফেলেছে।
ছেলে যাতে এ কথা তার বাবাকে না বলতে না পারে সে জন্যই তমালকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিলো। কিন্তু ভিডিও রেকর্ড থেকে তমালকে যে সময় মারা হয় সে সময়টুকুতে ক্যামেরা অফ ছিলো না হয় পরে ওই ভিডিটুকু কেটে ফেলেছিলো। তাই আমি ভিডিওতে ওই সময়টুকুর ভিডিও পাই নি। কিন্তু মিস্টার আরিফ আর মিসেস রহমান যে একসাথে ছিলেন তার প্রমাণ পেয়েছি ওই ভিডিও থেকে। তমাল যে তা দেখে ফেলেছিলো তাও আমি দেখেছি।
আমি কি কোন কিছু ভুল বললাম মিসেস রহমান?
মিসস রহমান কোনো কথা বলছেন না। মাথা নিচু করে আছেন।
-তাহলে এরপর তমালের চাচা মারা গেলো কিভাবে?
-মিসেস রহমান ভয়ে ছিলেন পুলিশ ঘটনা গিয়ে যদি মিস্টার আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাহলে হয়তো মিস্টার আরিফ হয়তো ভয় পেয়ে শেষ পর্যায়ে বলে দিবেন। এ ভয়ে তিনি মিস্টার আরিফকে মারার প্ল্যান করেন। আর কারণ সেই সম্পত্তি।
-কিভাবে?
-রহমান সাহেবকে মিসেস রহমান মিস্টার আরিফকে মেরে ফেলার প্ল্যান দেন। রহমান সাহেব প্রথমে রাজি হন নি। কিন্তু যখন তাকে ভয় দেখানো হয় যে কাজটা না করলে মিস্টার রহমান কিভাবে ফেসে যেতে পারেন। আর ফেসে গেলে যে তিনি সব সম্পত্তি হারাবেন তাও বলেন। রহমান সাহেব তখন রাজি হন।
মিস্টার আরিফ যেদিন রাতে মারা যান সেদিন রাতে তারা ড্রিঙ্কস করেছিলেন। আড়ালে সে ড্রিঙ্কসে বিষ মিশিয়ে দেয়া হয়েছিলো। আর তা খেয়েই মারা যান মিস্টার আরিফ।
-হুম বুঝলাম। মাস্টার প্ল্যানের মত সব কিছু করেছেন মিসেস রহমান।
কিন্তু পরে মিস্টার রহমান মারা গেলেন কিভাবে? আর এ লোকটাই বা আসলো কিভাবে এর মধ্যে?
-বলছি স্যার। কথাগুলো শুনে আপনার কি মনে হবে তা জানি না। তাও বলছি। আসলে মিসেস রহমানের সাথে প্রথম থেকেই এই লোকটার সম্পর্ক ছিলো। পরকিয়ার সম্পর্ক।
মিসেস রহমান চেয়েছিলেন সব সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তারপর এই লোকটার সাথে অন্য কোথাও চলে যেতে চেয়েছিলেন। মিসেস রহমান চেয়েছিলেন কাজটা ধীরে ধীরে হোক। কিন্তু তমাল মাঝে দেখে ফেলায় মিসেস রহমান এতসব করেন।
-ও মাই গড।
মিসেস রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন
-আপনি এসব কিভাবে করতে পারলেন মিসেস রহমান?
মিসেস রহমান আর চুপ থাকতে পারলেন না। জোরে চিৎকার দিয়ে কথাবলতে লাগলেন।
-কারণ আমার মনে কোন সুখ ছিলো না। আমার স্বামী আমাকে সব সময়ই নির্যাতন করত। আমি মানসিক দিয়ে সুস্থ ছিলাম না।
তাই আমি সব করেছি। শুধু টাকা থাকলেই হয় না। দেহের,মনের দুইটারই সুখ লাগে।
কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন মিসেস রহমান।
সাঈদের দিকে ফিরলেন সার্জেন্ট রাসেল।
-ওয়েল ডান মাই বয়। শেষ পর্যন্ত বের করেই ছাড়লে।
-আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ স্যার। আমাকে সাহায্য করার জন্য।
-এই লোকটার তো কোন দোষ নেই।
-স্যার এরও দোষ আছে।
-এ তো কিছুই করে নি। কোনো খুনের সাথে তো এ জড়িত নয়।
-স্যার এই লোকটাও খুনের সাথে জড়িত।
-কি বলছ এসব? আমি কিছুই বুঝছি না।
-বলছি স্যার। এই লোকটার সাথে মিসেস রহমানের সম্পর্ক আজ প্রায় কয়েক মাস। লোকটা বিবাহিত ছিলো। অবশ্য কোনো সন্তান ছিলো না। মাস এক আগে সে তার স্ত্রীকে মেরে ফেলে।
আর কারণ হচ্ছে সম্পত্তির লোভ। মিসেস রহমানকে বিয়ে করলে সে অনেক সম্পত্তির মালিক হবে এই চিন্তা ভর করেছিলো তার মনে।
-এ তো দেখি অনেক বড় মার্ডার কেস!!
-হুম স্যার।
রুমের ভিতর থাকা অন্য দুইজন পুলিশকে ঈশারা করে বললেন
-তোমরা এ দুই জনকে গাড়িতে নিয়ে যাও। আমরা আসছি।
-ওকে স্যার।
হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ দুজন তাদেরকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো।
-আচ্ছা সাঈদ,একটা ব্যাপার একটু খোলাসা করো তো। তুমি জানলে কিভাবে যে এই লোকটা মিসেস রহমানের সাথে জড়িত।
-ঐ ভিডিও দেখেই।
ঐ লোকটা কয়েকবার মিসেস রহমানের সাথে দেখা করেছে। কাজের মেয়েটাও দেখেছে। তখনই সন্দেহ জাগে। তখন থেকেই লোকটার ওপর নজর রাখি। মিস্টার রহমান যেদিন নিখোঁজ হোন সেদিন রাতে আমি বাসার বারান্দায় বসে ছিলাম।
হটাত দেখি লোকটা একটা বড় ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পেছনে যাচ্ছে। সন্দেহ হওয়ায় লোকটার পিছু নেই। বাড়ির পেছনে ছোটখাটো একটা বস্তি ছিলো। তার পাশে লোকটা মাটি খুড়ে ব্যাগটা পুতে ফেলে। লোকটার যাওয়ার পর আমি ঐ জায়গাটা আবার খুড়ি।
আর সেখানে মিস্টার রহমানের কাটা লাশ পাই। এটা আমি ইচ্ছা করেই আপনাকে বলি নি। আমার শেষ সুতোটা জোড়া দেয়া বাকি ছিলো। তাই আমি আপনাকে পরে ঐ প্ল্যানটা বলি। আর বাকি কাহিনি তো আপনার জানাই আছে।
-ওয়েল ডান মাই সান। চমৎকার দেখিয়েছ। কালকে একবার অফিসে এসো। একটা সাক্ষাৎকারের দরকার আছে।
-স্যার আমি একটু আড়ালে থাকতে চাই।
-হাহ হাহ হাহ হা। বুঝেছি। ওকে আসতে হবে না।
-ধন্যবাদ স্যার।
-তাহলে এক কাজ করো, কালকে বিকালে অফিসে এসো একবার।
গল্প করা যাবে চাও, খাওয়া হবে।
-স্যার কালকে বিকালে আমি কক্সবাজার যাচ্ছি। টিকেট কাটা হয়ে গেছে।
-হটাত ওখানে?
-মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য।
-মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য নাকি কোনো অপরাধি ধরতে?
-না স্যার।
ঘুরতে যাচ্ছি।
-ওকে যাও তাহলে। আবার দেখা হবে।
-ওকে স্যার। আসি তাহলে।
-ওকে যাও।
বিদায় নিয়ে সাঈদ পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। পেছন দিক থেকে তাকিয়ে রইলেন সার্জেন্ট রাসেল। মনে মনে স্যালুট করলেন ছেলেটাকে। মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো তার।
এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলেন তিনি। গাড়ি চলতে শুরু করলো আপন গতিতে।
(সমাপ্ত)
[আমি কোনো প্রফেশনাল রাইটার নই যে আমি ত্রুটি বিহীন লেখা লিখব। ভুল থাকতেই পারে। আপনারা যারা মনোযোগ দিয়ে গল্পটা পড়বেন তারা যদি কোনো ভুল পেয়ে থাকেন,তাহলে আমাকে জানাবেন।
ভুল গুলো সংশোধন করে পরবর্তীতে যাতে আরো ভালো লিখতে পারি,সে জন্য আপনাদের মতামত প্রয়োজন। আশা করি সবাই আমাকে সাহায্য করবেন। ধন্যবাদ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।