সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজি।
প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, আমাকে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাবনার জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওইদিন সুধী সমাবেশে কাঁদেননি, টিসু দিয়ে চোখ মোছেননি। মিডিয়া অতিরঞ্জিত খবর পরিবেশন করেছে। সাংবাদিকরা অতি উত্সাহী হয়ে বেশি বেশি লিখেছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পাবনায় এসেছেন পরিবেশ সৃষ্টি করতে, যাতে আগামী দিন সরকারি দল ও প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে। ডিসির প্রত্যাহারের ব্যাপারে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে বদলি একটি চলমান প্রক্রিয়া, তবে এমপি চাইলেই ডিসি প্রত্যাহার হবে না, অন্য নেতাদেরও চাইতে হবে। এত দেরিতে পাবনা এলেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে এইচটি ইমাম বলেন, ঘটনার পরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের কাজে রাজনীতিবিদদের তদবির আসবেই। তবে সেটা যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে।
তিনি মিডিয়াকে দোষারোপ করে বলেন, মিডিয়া সরকারকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে এসে অনেক সময় বিপদে ফেলে দেয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষায় হামলা ও এডিসিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের মারধরের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের চাপে সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। সন্ত্রাসী যে হোক সে অন্যায় করলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
আপনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিন্তু ঘটনার ১০ দিন পর এলাকায় এলেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলেই সব সমস্যা সমাধান হয় না। আইনগত ব্যবস্থা করেই এসেছি। তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করলাম। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসব, আশা করি সব সমাধান হয়ে যাবে। গতকাল সন্ধ্যায় জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর এইচটি ইমাম ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকু সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর পাবনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কি ঘটেছিল তা বর্ণনা করেন পরীক্ষার দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা।
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিজয় ভূষণ পাল বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি পাবনার জেলা স্কুল কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৩০-৪০ জন যুবক জঙ্গিরূপ ধারণ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রশ্নপত্র কেড়ে নেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা টেনেহেঁচড়ে রুম থেকে বের করে কিল ঘুষি মারতে মারতে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসে। এ সময় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আরও কয়েক সন্ত্রাসী এসে তাকে ধরে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে গিয়ে আরও মারধর করে।
এ সময় তার অফিসের দুই পিওন ও ড্রাইভার এসে তাকে রক্ষা করেন। তিনি বলেন, তার ২১ বছরের চাকরি জীবনে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার মুখোমুখি হননি। তিনি বলেন, এ সময় সন্ত্রাসীরা কয়েকজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মহিলা পরীক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলে। একপর্যায়ে তারা মোবাইল, মানিব্যাগ ও ভ্যানিটি ব্যাগও ছিনিয়ে নেয়।
সভায় ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত ফারজানা বলেন, আমার ছোট বাচ্চা নিয়ে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলাম।
৩ বছরের ছোট বাচ্চাকে নিচে রেখে তৃতীয়তলায় হলে ছিলাম। এ সময় দেড় দুইশ’ যুবক লাঠিসোঠা নিয়ে স্কুলের গেট ভেঙে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। তারা আমার সামনে সদরের ইউএনও আবদুল হালিমকে মারতে মারতে নিচে নামিয়ে আনে। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে গায়ে হাত তোলে। ৪ বছরের কর্মজীবনে নিজেদের এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা কোনো সময় কল্পনাও করিনি।
আমরা জীবনের নিরাপত্তা চাই। স্বাধীনভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে চাই।
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইমামূল কবির বলেন, সঠিক দায়িত্ব পালন করি বলে আমাদের হুমকি দেয়া হয়।
পাবনা সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসীদের কাজের প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করা হয়েছে। আমার শার্টের কলার ধরে মারধর করা হয়।
বর্ণনা শোনার পর সংস্থাপন উপদেষ্টা পাবনার জেলা প্রশাসক ড. এএফএম মনজুর কাদিরকে বলেন, আপনি সুধী সমাবেশ করে ও মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে সরকারি চাকরি বিধি লংঘন করেছেন। এটা ঠিক হয়নি। এ জন্য সরকার এখন বিব্রত। সরকারি দল ও প্রশাসন মিলেমিশে কাজ করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া করার সময় কথা বলে কাজ করলে ভাল হতো।
তিনি পুলিশকে প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এত পুলিশ, র্যাব থাকতে কি করে এতবড় একটি ঘটনা ঘটল। আপনাদের দায়িত্ব নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
তবে পাবনার জেলা প্রশাসক ড. এএফএম মনজুর কাদির তার অবস্থানে এখনও অনড় আছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
রাজশাহীর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার স্বপন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা সেটেলম্যান্ট অফিসার সেলিনা বানু, এডিসি শিক্ষা সাইদুর রহমান, এনডিসি ময়নুল ইসলাম।
উপস্থিত ছিলেন পাবনার পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ, পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আল মামুন ও পাবনার সিভিল সার্জন। মতবিনিময় সভায় পাবনার জেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভার আগে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পাবনা সার্কিট হাউসে পৌঁছলে পাবনার আলোচিত এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স এইচটি ইমামকে বলেন, পাবনার ডিসি এই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ঢাকা থেকে সাংবাদিক এনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখাচ্ছে। তখন এইচটি ইমাম বলেন, লেখার সুযোগ করে দিয়েছেন তাই সাংবাদিকরা লিখছেন। এছাড়াও মতবিনিময়ের আগে সার্কিট হাউসে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ঘটনার বিবরণ জানেন এবং জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুল হক চুন্নু, রেজাউর রহিম লালসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের সভা থেকে বের করে দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, পাবনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তবেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব। তিনি আরও বলেন, আমরা সংবাদপত্রে অনেক কিছু শুনেছি, এখন কর্মকর্তাদের মুখ থেকে জানতে চাই। আগামী দিন যেন পাবনার প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা এক সঙ্গে কাজ করতে পারে এ ব্যবস্থা করতে চাই।
এদিকে রাত পৌনে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন ও প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু পাবনা সার্কিট হাউসে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন। এতে পাবনা-৫ সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইদুল হক চুন্নু, সহ-সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেনসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেলা প্রশাসন ও সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের মধ্যকার বিরোধকে আরও ঘোলাটে করতে নিজ দলের কিছু নেতাকর্মীই চেষ্টা চালাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।