আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাগো মহল্লার কবিরা

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

মনে রাহিস ওয় কিন্তু আমাগো মহল্লার পোলা- গিরিঙ্গি আব্বাস ক্যারাম বোর্ডের উপরে ম্যাশিনটা রেখে বললো, তোগো সামুয়িকিতে ওর কবিতা না দেখলে তোগো খবরই আছে কইলাম, নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের উদ্যোগে একটা কবিতা প্রকাশনা বের হবে, অবশ্য এমন উদ্যোগ প্রতি বছরই নেওয়া হয়। একটা সাহিত্য সাময়িকী ছাপাতে ৫০০০ টাকার বেশী খরচ হয় না কিন্তু এই বাবদ বিজ্ঞাপনে পাওয়া যায় হাজার পঞ্চাশ, ছাপিয়ে, বিলিয়েও অনেক লাভ, তাই প্রতি বছরই এমন একটা প্রকাশনা ছাপানো হয়ই নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের উদ্যোগে। এ বছর ব্যতিক্রম, আশিক ইবনে মাসুদ, শহরের উঠতি কবি, বাসা বদল করে এসেছে মহল্লায়, যদিও কৈশোরের সীমানা অনেক আগেই অতিক্রম করে এসেছেন তিনি তবুও তিনি শিং ভেঙে বাছুরের দলে যোগ দিয়েছেন। কোনো কিছু করবার অক্ষমতাকে তিনি স্বীকার করেন না, নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে তার বক্তব্য হলো, কবি মানুষদের ইরাম হতেই হয়, ওরা থাকে ভাবের জগতে, এইসব ছুটোমুটো কাজ করলে হবে, অপেক্ষায় থাকতে হবে, কখন কবিতা ধরা দেয়.............. তার উৎসাহেই মূলত বারোয়ারী সাময়িকীর বদলে একটা কবিতা সাময়িকী তথা লিটল ম্যাগ ছাপানোর কথা ভাবছে নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের সভ্যরা। কবিতার বই কি চলবে? মাহমুদ রব্বানী এক কোণ থেকে প্রশ্নটা উঠিয়েই চুপ হয়ে যায়- আরে বেটা কবিতার বই চলনের কি দরকার? তুই কি এইখানে কবিতা ছাপায়া নোবেল পাইবি? না মানে কেউ কি বিজ্ঞাপন দিতে রাজি হইবো, না হইলে তো পুরা প্রোজেক্টের গাঢ় মারা গেলো।

রাজী হইবো না মানে আলবত রাজী হইবো, বুঝাইতে হইবো হেগোরে, বুঝাইলে বুঝে না এমন মানুষ কম, আমাগো গিরিঙ্গি আব্বাস আছে না, হ্যায় দ্যাখবো বিজ্ঞাপনের বিষয়, তোগো ভাবনের কাম নাই। সেই থেকেই নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘেরক্লাব রুমের দরজায় ঝুলছে বিজ্ঞপ্তি, অচিরেই প্রকাশিতব্য কবিতা সাময়িকীর জন্য কবিতা আহ্বান করা হচ্ছে- আপনার কবিতাটি জমা দিন, মনোনিত কবিতার কবিকে পুরস্কৃত করা হবে। নালিতাবাড়ী ক্লাবের সদস্যদের অনেক বিষয়েই অভিজ্ঞতা আছে, পাশের পাড়ার ছেলেদের সাথে লড়াই, রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিটি বাজানো, কলেজে ম্যাশিন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, তো দল লীগ শিবিরের লড়াইয়ে জান কবুল এই ক্লাবের সদস্যদের কবিতা প্রতিভাও সীমাহীন, সুতরাং দেখা গেলো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দিনই সামনে রাখা বাস্কে কবিতা জমা হচ্ছে- আশিক ইবনে মাসুদ মাথা নাড়েন প্রবল বেগে, না হচ্ছে না কিছুই, এটাকে কবিতা বলে না মোটেও, এটা কবিতার নামে ধর্ষণ- এইভাবে কেউ কবিতা লিখে- রশিদের কবিতাটা ছুড়ে ফেলবার পরে রশিদ ছুটে যায় আব্বাসের কাছে- বস, আমার কবিতাটা তো উড়ায়া ফেললো আশিক্যা- ওরে কিছু কইবেন না উস্তাদ, আমাগো মহল্লার নাম কি থাকে? মান মর্যাদা কি থাকবে যদি আমার কবিতা এইখানে না থাকে? গিরিঙ্গি আব্বাসের মাথায় রক্ত উঠে যায়, শালার মহল্লার মানসম্মান নিয়া টানাটানি করবো একটা বুইড়াচোদা- আইজকাই শালার পুতেরে একটা বীচি দেখায়া আসবো। আশিক ইবনে মাসুদ আমতা আমতা করে বললো, দেখেন পাশের মহল্লার রবি কিন্তু ভালো কবিতা লিখে, ওর জন্য একটা স্পেস রাখতে হবে- তোর স্পেসের মায়েরে চুদি, আমার মহল্লার পোলার কবিতা না ছাপাইলে স্পেস তোর হোগা দিয়া ভইরা দিয়াম শালা, আমারে চিনোস তুই? আমাগো মহললার পোলাপাইনের কবিতা ছাপানোর পরে যদি কোন খালি জায়গা থাকে সেইটাতে যাইবো বিজ্ঞাপন, সেইটার পরে অন্য কিছু, কিন্তু ৪৮ পাতার সাময়িকীতে ছাপানোর মতো ভালো কবিতা নেই, এখানে যা আছে সেসবকে কবিতা বলা যাবে না, সেসব ছাপানোর দায়িত্ব আমি নিবো না, আমি সম্পাদনা করলে ভালো কিছু একটা করার চেষ্টা করবো- তোরে কেউ ফাঁপর দিতে কইছে? তুই কি এইটা ছাপায়া নাম কামায়া ফেলবি? তোর সম্পাদনার মায়েরে বাপ- শালা আমি কি কম বুঝি? গত ৫ বছর ছাপাইছে কি এই সাময়িকী? এই বান্দাই ছাপায়া আনছে, তোরে দরকার নাই কোনো, যা কইলাম করবি নাইলে খবর আছে। পর দিন সকালে গিরিঙ্গি আব্বাস মজনুর চায়ের দোকানে বসে সিগারেটের প্যাকেটে আঁকিবুকি কাটে- রশীদ আইস্যা বললো, বস কি করেন? ভাবতাছি একটা কবিতা লিখুম, না লিখলে মান সম্মান থাকে না, ঐ পিচ্চি সাজ্জাইদ্যাও দেখি কবিতা লিখ্যা জমা দিয়া দিলো, হ লিখেন বস, না লিখলে আমাগো প্রেস্টিজ থাকবো না।

বিকেল বেলা গিরিঙ্গি আব্বাস নালিতাবাড়ী কিশোর সঙ্ঘের ক্যারামবোর্ডে ম্যাশিনটা রেখে গমগমে স্বরে বললো- এই যে একটা কবিতা দিলাম, প্রথম পাতায় ছাপা হইতে হইবো, নাইলে ঘেট্টি খুইল্যা হাতে ধরায়া দিবো- আশিক ইবনে মাসুদ বিরস বদনে কবিতা পড়ে- চুলকানোর নিয়ম ------------------- এ কিতাব রচিয়াছি আমি, গিরিঙ্গি আব্বাছ চুলকাইতে অনেক মজা, চুলকাই বারো মাস চুলকাই আঙ্গুল দিয়া গভীর মনোযোগে চুলকাইতে গিয়া ঘা হইলো গোপনাঙ্গে তাই তো বলি চুলকানোর নিয়ম জানা চাই চুলকানোর আগেই নখ কাইট্যা নিয়ো ভাই। -------------------------------------------------- দরিদ্র ইলিয়াস ভাঙা থালা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো- আশিক ইবনে মাসুদকে দেখে বললো, কি ব্যাপার কোষ্টকাঠিন্য? সমস্যা নেই, ঘৃতকুমারী খেয়ে দেখতে পারেন আরে না কবিতার যন্ত্রনায় ভুগি নমস্কার সেলাম শুভ কামনা হে কবি। ------------------------------------------------------------------------------ ইদানিং বিরক্ত লাগে এইসব চুলকাচুলকি দেখতে, সবাই চুলকাচ্ছে, হে কবি, প্রীত হলাম, শুভাশীষ, মঙ্গালার্থে তৃতীয় বাংলা চতুর্থ সাময়িকী পরীক্ষায় কে কবিতা লিখছে আর কে লিখছে না এইসব চুলকা চুলকি দেখে মনে হলো- সবারই নেইল কাটার প্রয়োজন, নখ না কেটে চুলকালে ঘা হতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.