আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী চিন্তাধারা

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন : (إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرً‌ا ﴿٢﴾ إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرً‌ا وَإِمَّا كَفُورً‌ا ﴿٣ “অবশ্যই পরীক্ষা করার জন্য আমি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং এ জন্য তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন বানিয়েছি। অবশ্যই আমি তাকে পথপ্রদর্শন করেছি; সে কৃতজ্ঞ হতে পারে, হতে পারে অকৃতজ্ঞও। ” (সূরা আদ্-দাহর : ২-৩) ইসলাম হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম জীবনাদর্শ- যা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং মানবজীবনের প্রতিটি স্তর, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে যার ব্যাপ্তি। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে সুসংহত প্রশিক্ষণপদ্ধতি যা মেধা ও চারিত্রিক গুণাবলীর উৎকর্ষ সাধন করে – যা মানুষের প্রভু সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলা স্বভাবজাতভাবে মানুষকে দান করেছেন এবং এ ব্যাপারে বিশাল বিস্তৃত মহাবিশ্বের অন্যান্য সৃষ্টিও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।

মানুষ হচ্ছে দু’টি জগতের সমন্বয়। দৈহিক জগৎ ও আধাত্মিক জগৎ। পূর্ণতায় পৌঁছতে হলে তাকে অবশ্যই এই উভয় জগতের জন্য তার নিজের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে এবং এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে : ( إِذْ قَالَ رَ‌بُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرً‌ا مِّن طِينٍ ﴿٧١﴾ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّ‌وحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ ﴿٧٢ “(হে রাসূল!) স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদামাটি হতে। অতঃপর যখন আমি তাকে সুষম করবো এবং তার ভিতরে আমার চেতনা সঞ্চারিত করবো তখন তোমরা তার প্রতি সেজদাবনত হও।

” (সূরা ছ্বাদ্ : ৭১-৭২) লক্ষণীয় যে, মানুষের বস্তুগত দিকটা বুঝাতে রূপক হিসেবে ‘কাদামাটি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আত্মা বা ঐশীসত্তার দিকটি তার জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ – যা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের পরিপূর্ণ পবিত্রতার দিকে মানুষকে এগিয়ে নেয়। আর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করে একাকিত্ব ও অসহায়ত্বের মধ্যে ঠেলে দেন নি। তিনি তাদেরকে অসতর্কভাবে ও প্রশিক্ষণ ছাড়া পাঠান নি। আল্লাহ হচ্ছেন নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক, জগতের মালিক, সবকিছুর প্রভু এবং সকল সৃষ্টজীবের মান ও প্রয়োজনানুযায়ী তাদের শিক্ষাদানের দায়িত্বেও তিনিই রয়েছেন।

যেহেতু মানুষ সৃষ্টিসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে, সেহেতু তাকে খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে – যে নিজেকে শিক্ষিত করার সঙ্গে সঙ্গে তার চারপাশের অন্যান্য সৃষ্টিকেও সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। আর এজন্যই সে পৃথিবীতে নেতৃত্বের অধিকারী হতে পারে। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন : وَإِذْ قَالَ رَ‌بُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْ‌ضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ ﴿٣٠﴾ وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَ‌ضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَـٰؤُلَاءِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ﴿٣١﴾ قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ ﴿٣٢﴾ قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَائِهِمْ ۖ فَلَمَّا أَنبَأَهُم بِأَسْمَائِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْ‌ضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ “এবং (হে রাসূল!) আপনার রব যখন ফেরেশতাদের বললেন : “আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি পাঠাবো”, তখন তারা বললো : “আপনি কি সেখানে এমন কাউকে পাঠাবেন যে সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? আমরাই তো আপনার প্রশংসা করছি ও আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি!” তিনি বললেন : “অবশ্যই আমি এমন কিছু জানি যা তোমরা জানো না। ” আর তিনি আদমকে সকল নামের মূল (নামকরণের মূলনীতি) শিক্ষা দিলেন, অতঃপর তাকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থিত করলেন, অতঃপর তিনি বললেন : “তোমরা যদি সঠিক কথা বলে থাকো তাহলে আমাকে এসব বস্তুর নাম বলে দাও। ” তারা বলল : “তুমি পরম প্রমুক্ত; তুমি আমাদেরকে যতটুকু শিক্ষা দিয়েছো তার বাইরে আমাদের কোনো জ্ঞান নেই; নিশ্চয়ই তুমিই একমাত্র সর্বজ্ঞ ও মহাজ্ঞানবান।

” (তখন) তিনি বললেন : “হে আদম! তাদেরকে এ জিনিসগুলোর নাম জানিয়ে দাও। ” যখন সে তাদেরকে সেগুলোর নাম বলে দিলো, তখন তিনি (ফেরেশতাদেরকে) বললেন : “আমি কি তোমাদের বলি নি যে, আমি অবশ্যই আকাশম-ল ও পৃথিবীর সকল রহস্য অবগত এবং তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর তার সবই আমি জানি?” (সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : ৩০-৩৩) আদমই ছিলেন একমাত্র সৃষ্টি যিনি এ বিরাট দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পেরেছিলেন। তাঁর ছিল উচ্চ জ্ঞানগত যোগ্যতা। তাই মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাসন করার জন্য নিযুক্ত হয়েছে, নিযুক্ত হয়েছে তাঁর ঐশীবিধান (শরিয়ত) অনুসরণের উদ্দেশ্যে এবং সে-ই একমাত্র সৃষ্টি যাকে স্বাধীন ইচ্ছা দেয়া হয়েছে, আল্লাহর বিধান সে মানতে পারে, না-ও মানতে পারে, সে ঈমান গ্রহণ করতে পারে কিংবা অস্বীকার করতে পারে। (إِنَّا عَرَ‌ضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْ‌ضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ ۖ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا ﴿٧٢ “আমি তো আসমান যমীন ও পর্বতমালার ওপর এ আমানত অর্পণ করেছিলাম, কিন্তু তারা এটা বহন করতে অস্বীকার করল এবং এ বিষয়ে শঙ্কিত হল।

আর মানুষ তা বহন করলো; সে তো অতিশয় যালেম অতিশয় অজ্ঞ। ” (সূরা আল্-আহযাব্ : ৭২) সুতরাং পথপ্রদর্শনের পরও মানুষ কৃতজ্ঞ হতে পারে, না-ও হতে পারে। আচার-আচরণের দোষের কারণে সে পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতর পর্যায়ে নিপতিত হতে পারে অথবা সে পূর্ণতা লাভের এমন উচ্চতম স্তরে পৌঁছতে সক্ষম যেখানে ফেরেশতারাও পৌঁছতে পারে না। মনুষ্য সমাজের মধ্যে যারা পূর্ণতা ও আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছতে পেরেছেন তাঁদেরকে মনোনীত করা হয়েছে তাঁর বাণীবাহক বা নবী-রাসূল (আ.) হিসেবে। هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَ‌سُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ “তিনি উম্মীদের মধ্যে তাদের একজনকে পাঠিয়েছেন রাসূল রূপে, যিনি তাদের নিকট তাঁর (আল্লাহর) আয়াত আবৃত্তি করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত: ইতিপূর্বে তো তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে ছিলো।

” (সূরা আল্-জুমুআহ্ : ২) কুরআন মজীদে উল্লিখিত আয়াতে আমরা লক্ষ্য করি যে, আল্লাহর আয়াত পৌঁছে দেয়ার পর নবী-রাসূলগণের প্রথম দায়িত্ব মানুষকে সংশোধন করা (তাযকীয়াহ্), এরপর তাদেরকে ঐশী আইন-বিধান ও অন্যান্য জ্ঞান শিক্ষা দেয়া। জ্ঞান সব সময়ই মানবজাতির জন্য কল্যণকর হয় না, বিশেষ করে যদি তা সংশোধন ও অর্থবহ দিকনির্দেশের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। কোনো কোনো জ্ঞান তো সমাজকে বিরাট বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে অথবা সমাজকে বস্তুগতভাবে কিংবা আধ্যাত্মিকভাবে ধ্বংসও করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশতঃ অধুনা জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে পরিশক্তিগুলো মানুষের অজ্ঞতা, দারিদ্র্য ও দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করার কাজে অপব্যবহার করছে। নবী-রাসূলগণের (আ.) আগমন ঘটেছে মানুষের অন্তর ও আত্মাকে পবিত্রকরণের জন্য, ওহী-নিয়ন্ত্রিত জ্ঞান দ্বারা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এবং তাদেরকে নির্ভুল পথপ্রদর্শনের অভিপ্রায়ে।

কিন্তু পরাশক্তিগুলোর নীতি নবী-রাসূলগণের নীতির বিপরীত। মানুষকে এখন ভেবে দেখতে হবে, তারা ‘কৃতজ্ঞ হবে অথবা অকৃতজ্ঞ হবে’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.