শূন্য হৃদয়ে ডঙ্কা বাজে এ কিসের, জানো কি হে!
জগতে অনেক আশ্চর্য এবং স্বপ্নময় বস্তু, স্থান বা ব্যক্তি আমাদের জীবনে যেন কেমন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। বিশ্বটা যে কত বিশাল আর কত অজানা যে লুকিয়ে আছে তা কল্পনায় থাকে সারাক্ষণ, না দেখার আগ পর্যন্ত, অনুভবের সঙ্গে মিলন না হওয়া পর্যন্ত।
স্কুলে মাস্টাররা কতবার যে পড়িয়েছে চীনা মানুষ, চৈনিক সভ্যতা. মহাপ্রাচীর আর কনফুসিয়াস এসব। বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে অন্তত কয়েকবার মাও সেতুং, কনফুসিয়াসসহ হাজার হাজার শব্দ পড়তে, বলতে বা শুনতে হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে একীভূত হয়ে গিয়েছিল চীনের প্রতি ভালবাসা।
স্কুলে বা তারও আগে, অবশ্যই তার পরেও 'জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনে যাও' হাদীস অগণিত বার শুনেছি।
তবে, সে পথে যাত্রার স্বপ্ন কখনো সাহস বা ইচ্ছায় রুপ নেয়নি।
ভ্রমণ কাব্য লিখতে বসে এতো ফালতু কথা অপ্রয়োজনীয়! কেউ কেউ খানিক বিরক্তও হচ্ছেন মনে হয়। হলে সেটা স্বাভাবিক। না হলে তা ও।
যা হোক...
সোজা লেখায় চলে যাওয়াই ভালো।
তবে প্রাক কথন থাকলে তেমন মন্দ হবে না আমার বিশ্বাস। যাওয়ার আগে ব্লগে কয়েকজন বন্ধুর কাছে ভালো কিছূ টিপসের সঙ্গে শুভকামনাও ছিল।
স্বপ্ন বুকে ছিল বলেই হয়তো এতো কথা। কারণ...পূরণ হলো যে...
চীন যাব, চীন যাব, একমাস আগে থেকেই সব প্রস্তুত।
কিন্তু তারপরও কোন কিছুই হয়নি।
ভিসা পেতে পেতে সময় লাগলো বেশ। ঈদের তিনদিন আগে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর ছুটি শেষে এসে দেখি আবার আরো কাগজ চায়। এবার তাদেরকে ইনভাইটেশন দিতে হবে।
তবে এমন ঝামেলার কিছূ হয়নি দিল্লী হয়ে লাদাখ যাওয়ার সময়।
ইনভাইটশেনের জন্য যোগাযোগ করা হলো চীনে। সাংহাই থেকে
আয়োজকরা ইমেইল করলেন। জমা দিলাম। যাওয়ার তিনদিন আগে অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর ভিসা পাওয়া গেল। সেদিন আবার বুধবার।
ডলার এনডোর্স করার জন্য ব্যাংকে গিয়ে তড়িঘড়ি।
বৃহস্পতিবার সব কাজ জ্যাম লেগে গেল। সঙ্গে টিকেট কনফার্ম করা হলো চায়না ইস্টার্ন এয়ারে। যাত্রা শুরুর ক্ষণ আসছে শুক্রবার রাতে। রাতে হলেও ভোর সাড়ে ৫ টায় ফ্লাইট হওয়ায় শনিবারই যাত্রীর যাত্রার মুহূর্ত ধার্য।
কিন্তু হায়! এতো রাতে যাব কিভাবে।
সিএনজি নিয়ে একা কি হয়! ১২ টা বা ১ টার আগে চলে যাব কিনা। এমন সব চিন্তায় পড়ে সব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুম।
শুক্রবার সন্ধ্যার পরে বসলাম ব্যাগ গুছানোর কাজে। পুটলার মধ্যে নেয়ার মতো আসলে তেমন কিছু নেই।
ভাবলাম বেশি জিনিস নিয়ে ঘ্যাচর ঘ্যচার করার চেয়ে কম জিনিস নিয়ে যাওয়া ভালো। ল্যাপটপ আর প্যান্ট, শার্ট বাদে তেমন কিছূ ব্যাগে ঢুকলো না।
রাত ১২ টায় হালকা ঘুম দিলাম। নিদ্রার ভাব ছিল তবে নিদ্রা চোখে আসতে পারলো না। আড়াইটায় উঠে ফোন দিলাম জামাল উদ্দীন ভাইকে।
তিনিও যাবেন একই গন্তব্যে। তার কাছে কনফার্ম হলো যাওয়ার সময় মানিক মিয়া এভিনিউর সম্মুখ থেকে আমিও সঙ্গী হবো এয়ারপোর্ট যাত্রায়। এর আগে গত আগস্টে ভারতের
গোয়া যাওয়ার সময় বাসে করেই চলে গিয়েছিলাম এয়ারপোর্টে।
সাড়ে তিনটায় বাসা থেকে বেরেয়ে ৪টার আগেই চলে গেলাম গন্তব্যে। গিয়ে দেখি বেজায় ভীড় চায়না ইস্টার্নের কাউন্টারে।
সাংহাইতে বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক দলের সদস্যরা যাবে। তাদের ইয়া বড় বড় লাগেজ আর শিল্পীদের কলকাকলিতে পেছনে পড়ে রইলাম কিছুক্ষণ।
এরপর সুযোগ বুঝে পাসপোর্ট দেয়ার পর বোর্ডিং হলো। চায়নার পথে আরো কিছূ সময় লাগবে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর। আমরা ৫ জন ছিলাম একসঙ্গে।
ইমিগ্রশেনে সবার কাজ শেষ শুধু শাহনেওয়াজ ভাই ছাড়া। বেচারার পাসপোর্টের সঙ্গে কম্পিউটারের ছবির মিল নেই। শুরু হলো টেনশন। না কোনো মতেই মিলে না।
তার জায়গায় এক মহিলার ছবি আর বায়োডাটা দেখাচ্ছে।
এ নিয়ে বিপত্তির কারণে আমরাও পড়লাম মহা ঝামেলায়। বেচারা ২০০৩ সালের পর আর বিদেশে যায়নি। এখন এ মহা সমস্যায় তার তো ঘাম ঝরছে। পুলিশওয়ালাদের পেছনে লাগলো আরো ২৫ মিনিট। পরে দিলো সিল দিয়ে।
যাক বাঁচা গেল।
এর মধ্যে একজনের কাছ থেকে জানা গেল, অনেক দিন ধরে কেউ বিদেশে না গেলে বা এমন হলে ইমিগ্রেশনের লোকজন এবং আদম বেপারীরা সেই পাসপোর্টের জায়গায় আরেক ব্যক্তিকে বসিয়ে বিদেশে পাঠায়। এরকমম কেস অনেক নাকি আছে।
ভাল তথ্য জানা গেল। কাজে আসবে।
যা হোক বিমানের মধ্যে গিয়ে দেখি ঢাউস সাইজের। এতো বড় বিমানে মানুষ পাবে কই? জায়গা আছে বসার মানুষ নেই। পরে যেগুলোতে চড়েছি চায়না ইস্টার্নের বিমানে সেগুলো এটার চেয়ে অর্ধেক বলা যায়।
ফলস্বরুপ যা হবার তাই হলো। তিনজনের সিটে একজন।
কেউ নিজের সিট ছেড়ে সামনে বা পেছনে, ডানে , বায়ে চলে গেল। ঘুমিয়ে, পায়চারি করে আরামেই যাত্রা শুরু হলো চৈনিক ভালবাসার আলিঙ্গনে সিক্ত হতে.......
১৫ মিনিট দেরীতে চায়না ইস্টার্ণ উড়াল দিলে আকাশে..., আর আমি চীনের পথে।
সেখান থেকে গন্তব্য সাংহাই।
সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে কুনমিং থেকে সাংহাই'র ফ্লাইট। সেখান থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার ভ্রমন শেষে সাংহাই এয়ারপোর্ট।
ঝামেলা যেন শেষ হতেই চায় না। সাংহাই নেমে শুরু হলো আরেক কাণ্ড। এয়ারপোর্টেই থাকতে হবে নাকি ?
(চলবে...)
(চীন যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে শেষ পর্যন্ত লেখার ইচ্ছা থেকেই প্রথম পর্বটি এভাবে অক্ষরবিন্যাস। আপাতত সাংহাই পৌঁছা পর্যন্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।