লোভ লালসার জন্য নয় বরং লোভ লালসার বিপরিতে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই
সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের তাণ্ডবের কথা তুলে ধরে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন পাবনার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার এক মতবিনিময় সভায় এক সপ্তহ আগের ঘটনা তুলে ধরে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা কেঁদেও ফেলেন। কেউ কেউ বলেন, চাকরি জীবনে এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি আর কখনো হননি তারা।
সভায় অংশ নেওয়া সবাই সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার জন্য দায়ীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল করে দেয় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা।
ওই সময় হামলায় আহত হন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর জেলায় এ হামলার জন্য যুবলীগ ৃও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠেছে।
ওই ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে আসছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার সার্বিক বিষয় নিয়ে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তারা।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিজয় ভূষণ পাল সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, "আমি ছিলাম পাবনা জিলা স্কুল কেন্দ্রে।
সকাল ৯টার দিকে কিছু বোঝার আগেই ৩০/৪০ জন যুবক পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে প্রশ্নপত্র কেড়ে নেয়। আমাকে টেনে-হিঁচড়ে রুম থেকে বের করে কিল-ঘুষি মারতে মারতে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসে। আমাকে বাঁচাতে এসে মারধরের শিকার হন দুই পিওন ও ড্রাইভার। "
"২১ বছরের চাকরি জীবনে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার মুখোমুখি আর হইনি। হামলাকারীরা মহিলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও মহিলা পরীক্ষার্থীর গায়েও হাত তোলেন।
আমরা মানুষের বিচার করি, কিন্তু এখন আমরাই নির্যাতিত", বলেন তিনি।
প্রথম শ্রেণীর হাকিম ইশরাত ফারজানা বলেন, "আমি আমার ছোট বাচ্চা নিয়ে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলাম। দেড় থেকে দুই শ' যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে স্কুলের গেট ভেঙে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। "
"ইউএনও আব্দুল হালিমকে মারতে মারতে নিচে নামিয়ে আনে। আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে গায়ে হাত তোলে।
আমরা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই। স্বাধীনভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে চাই", বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি।
এই পর্যায়ে পাবনার জেলা প্রশাসক এএফএম মনজুর কাদির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমি আপনাদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। এ জন্য আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। "
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইমাম উদ্দিন কবির বলেন, "সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে রাত ২টা পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট চালিয়েছি।
যেভাবে অপমান- অপদস্ত করা হয়েছে, তা কল্পনার অতীত। "
জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়মের যে অভিযাগ তোলা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) সাইদুর রহমান বলেন, "জেলা প্রশাসকের সততা নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এর আগে কোনো তদবির ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ডেকে এনে চাকুরি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের দুর্নীতির প্রমাণ কেউ দিতে পারলে যে শাস্তি হয়, তাই মেনে নেবো"
জেলা প্রশাসক মনজুর কাদির বলেন, "আমি কোনো অন্যায় তদবির কিংবা আবদারের কাছে মাথা নত করবো না। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নিউইয়র্ক থেকে গতকাল বিকালে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ফিরলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। "
সভায় অংশ নেওয়া অনেকে সেদিন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন সভায় উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম মোশারফ হোসেন মিয়াজী বলেন, পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তরা করা হয়েছে।
সভায় প্রবীণ রাজনীতিবিদ রণেশ মৈত্র, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পাবনার কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব, স্কয়ার গ্র"পের পরিচালক গোলাম রব্বানী, ইউনিভার্সাল ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদক জাকির হোসেন, পাবনা জেলা মোটর মালিক গ্র"প সভাপতি বেবী ইসলাম সবাই অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এদিকে নিরাপত্তার কারণে পাবনায় অনুষ্ঠেয় সব নিয়োগ পরীক্ষা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের জন্য আগামী ১ অক্টোবর পাবনার এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা সিরাজগঞ্জ অথবা নাটোরে স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।