আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপাল ভ্রমন - (পঞ্চম পর্ব)

সবার আগে দেশপ্রেম

পূর্ব প্রকাশের পর কাকরভিটা থেকে কাটমুন্ডুর উদ্দেশ্যে বাস ছাড়তেই আমি আমার পাশের সিটের যাত্রীর সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম। ১৭/১৮ বছরের তরুন। নামটা ঠিক মনে নেই। কাটমুন্ডু যাচ্ছে কিছু একটা করার জন্য। বেকার ছেলে।

আর্থিক সমস্যা থাকায় গ্রামের বাড়ীতেই এতদিন কাজ কর্তো। এখন বাড়ীতেও কাজ নেই তাই কাটমুন্ডু যাচ্ছে। আমার সাথে খুব ভালো ভাবেই ইংরেজীতে কথা বল্ল। জিজ্ঞেস কর্লাম, লেখাপড়া কতদূর করেছো? বল্ল, ক্লাস ফোর ফাইভ। বল্লাম, ক্লাস ফোর ফাইভ পড়েই এত ভালো ইংরেজী জানো, আমাদের দেশেতো এমএ পাশ করেও এত ভালো বল্তে পার্বেনা।

ও মিটিমিটি হাস্লো। এর পর ধান, গম, পানি, চাল থেকে শুরু করে কোনটাকে নেপালী ভাষায় কি বলে খুটিয়ে খুটিয়ে সব জিজ্ঞেস কর্লাম। ও সব কিছুর উত্তর দিল। এভাবে বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা। চমৎকার পাহাড়ী এলাকা দেখতে দেখতে মন ভরে যাচ্ছিল।

নেপালে ট্রেন আছে? ওকে জিজ্ঞেস কর্লাম। বল্ল, না নেপালে কোন ট্রেন নাই। বেশীর ভাগ এলাকা পাহাড়ী বলে কোন চলাচলের কোন সুযোগ নাই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। বাস একটা খাবারের দোকানের সামনে এসে থেমে গেল।

রাতের খাবারের জন্য বিরতী। এর মধ্যে কোন ক্ষুধাও পেয়ে গেল বেশ। আমি হোটেলের মধ্যে ঢুকে গেলাম। টিনের চাউনিতে কাঠের বেড়ায় তৈরি ঘর। হাত মুখ ধুয়ে খাবারের মেনু দেখতে কাবারের সামনে গেলাম।

হট ইস দিস, প্রত্যেকটা খাবারের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করতে থাকি। একটা মাংশের বল দেখিয়ে জিজ্ঞেস কর্লাম, হট ইস দিস ইট ইস কুকুরা মাসা, উত্তর দিল দোকানী। আমার ভিতর ভয় এসে গেল। কোন মাংশই আর খাবোনা। নিশ্চয়ই কুকুরের মাংশ হবে কুকুরা মাসা।

আমি মাছই খাবো। কোনটার কি নাম বল্ছে ভাল ভাবে না জিজ্ঞেস করেই একটি মাছের অডার কর্লাম। এর মধ্যে আমার পাশের সিটে বসা সেই ছেলেটা এলো। তাকে জিজ্ঞেস কর্লাম, কুকুরা মাসা কি? ও বল্ল, কুকুরা মাসা হচ্ছে মুরগীর মাংশ। আমিতো মনে মনে হাসতে হাসতে শেষ।

আমার মুখ দেখেও বোঝা যাচ্ছিল যে আমি হাসছি। ওকে কিছুই বুঝতে দিলামনা। এরমধ্যে ও কুকুরা মাসার অডার করেছে। এসেছেও গেছে ওর প্লেটে মুরগীর মাংশ। খাওয়া শেষে আবার এসে গাড়ীতে বস্লাম।

গাড়ী আবার কাটমুন্ডুর দিকে চল্তে শুরু করেছে। চাদনী রাতের চাঁদের আলোতে নেপালকে দেখতে দেখতে যাচ্ছি। হঠাৎ গাড়ী থেমে গেল। গাড়ী নষ্ট। ঠিক করে তারপর আবার গাড়ী চলবে।

আমরা সবাই গাড়ী থেকে নেমে গেলাম। যে যেভাবে পার্ছে জল বিয়োগ কর্ছেন। কেউ কেউ সিগ্রেটের ধোয়া ফুক্সেন। এসময় গাড়ী থেকে ৪/৫ জন মেয়ে নেমে এল। আমি জল বিয়োগ করে যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম প্রায় সেখানেই দাড়িয়ে আমি মেয়ে গুলো এসে আমার কাছেই দাড়ালো।

আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি আর চেষ্ঠা কর্ছি কখন এদের সাথে কথা বল্ব এবং পরিচিত হবো। হঠাৎ ২জন মেয়ে আমার প্রায় কাছাকাছিই পিছাব করার জন্য বসে পড়লো। আমিতো লজ্জায় শেষ তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সড়ে এলাম। ভাবলাম, বাংলাদেশে হলে এমন করে পার্তো এই মেয়ে গুলো। আধা ঘন্টা পর গাড়ী কোন রকমে ঠিক হয়েছে।

বাকী টুকু ঠিক করা হবে কাছাকাছি কোন বাজারে গিয়ে। আমরা আবার গাড়ীতে উঠে বস্লাম। গাড়ী ধীর গতিতে চল্তে চল্তে কোন একটা বাজারে এলো আবার সবাই নেমে গেলাম। সেই মেয়েগুলোও নাম্লো। বাজারের দোকান গুলো তখনও খোলা ছিল।

রাত তখন সাড়ে ১০টার মতো। বেশীর ভাগ দোকানগুলোতেই দেখলাম মেয়েরা দোকান কর্ছে। একটা দোকানে গেলাম। একজন ১৫/১৬ বছরের মেয়ে দোকান চালাচ্ছে। মুদি ও মনোহরী দোকান।

তার কাছে কিছু প্রশ্ন কর্বো কর্বো করে কর্তে পার্ছি। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা ভয় লাগ্ছিল। শেষে জিজ্ঞেস কর্লাম, হট ইস ইউর নেম? সে কিযেন বল্ল কিছুই বুজ্লাম না। বল্লাম, আই ডোন্ট নো নেপালী। সে আবারও নেপালী ভাষায়ই কি যেন বল্ল।

একটা চকেলেটের প্যাকেট দেখিয়ে জিজ্ঞেস কর্লাম, কিত্না প্রাইজ? আমাকে যা বল্ল আমি বুজ্লাম না। শেষে হাতের ইসারায় বোঝানো হলো। আমি দাম দিয়ে গাড়ীতে এসে আমার পাশের সিটের যাত্রীকে খুজ্লাম। ভাব্লাম ওকে নিয়ে গেলে হয়তো এখানের কারো সাথে ভালো ভাবে কথা বলা সম্ভব হবে। কিন্তু ও তখন ঘুমের ঘোরে।

ওকে আর ডাক্লাম না। আবার নেমে এদিক সেদিক ঘুর্লাম। গাড়ী ঠিক করার কাজ চল্ছে। ড্রাইভারকে দেখলাম তোয়ালে বিছিয়ে রাস্তায় শুয়েই ঘুমুচ্ছে। গাড়ী কখন ঠিক হবে আর কখন আবার যাত্র শুরু হবে বুঝতে পার্ছি না।

বাজারের দোকান গুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার আমাদের গাড়ী আছে বলে বন্ধ কর্ছে না। আমি গাড়ীতে এসে বস্লাম। পাশের সিটের ছেলেটি একেবারেই ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে। আমি ও আরাম করে বসে ঘুমানোর চেষ্টা কর্লাম।

--- চলবে ---- ভ্রমণ কাল ২০০৫

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।