সবার আগে দেশপ্রেম
ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন পৌছতেই একটি ফরম পেলাম এবং আমার ফরম পুরণ করা বাবদ না কি জন্য যেন আমার কাছে ৫০ টাকা চাইল। আমি বললাম, রশিদ ছাড়া কোন টাকা আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।
আমাকে বলল, তাহলে নিজে নিজে ফরম পুরণ করে দিতে হবে। সাধারণত যারা ৫০ টাকা দেয় তাদের পুরো ফরম পুরণ কর্তে হয়না।
আমি বললাম, দিন আমার ফরম আমিই পুরণ করতে পারবো।
আমাকে বলল, ফরম পুরণে কোন প্রকার ভুল হলে ৫০০টাকা জরিমানা দিতে হবে।
আমি নির্ভুল পুরণ করা ফরম তাদের হাতে দিলাম। তারা আমার ফরম ভাল ভাবে চেক করে দেখলো। আমার পাসপোর্ট চেক করলো। মেশিনেও চেক করলো এবং আমাকে বলল, মেজ সাহেব আসুক সে না আসতে আমাকে যেতে দেয়া যাবেনা তাতে মেজ সাহেব তাদেরকে গালমন্দ করবে।
আমি বসে রইলাম। কারণ এই সময়ে সময় নষ্ট করা ছাড়া আমার আর কোন কাজ ছিল না। ইন্ডিয়া ডুকে আমাকেতো নেপালের দিকেই যেতে হবে। নেপাল যেতে এখান থেকে মাত্র ১ঘন্টার পথ। আমার ইন্ডিয়ার ভিসা রয়েছে ৩ দিনের।
দেড় ঘন্টা বসে থাকার পরও মেজ সাহেব এল না। শেষে একজন আরেকজনকে বলল, আর কতক্ষন বসিয়ে রাখবা এবারে যেতে দাও। আমি কাস্টমস্ এর দিকে যাওয়ার অনুমতি পেলাম।
কাস্টম্সে আমার ব্যাগ ভাল ভাবে যাচাই বাছাই কর্তে কর্তে ৫০ টাকার বায়না করলো।
আমি বললাম, ৫০টাকা কেন দেব?
তারা বলল, এটাই নিয়ম এখানে ৫০ টাকা লাগবে।
আমি বললাম, আমার পক্ষে ৫০টাকা দেয়া সম্ভব না।
তারা বলল, নেপালে ঘুরতে যাচ্ছ আর ৫০ টাকা নাই এসব কি বলছেন।
আমি বললাম, আমি ছাত্র। কত দূরের পথে ঘুরতে যাচ্ছি। রশিদ ছাড়া টাকা দিতে দিতে আমার টাকা ফুরিয়ে ফেলতে পারবোনা।
তারা আমার পাসপোর্টে এনডস দেখলো। কোন ডলার এনডস করা নেই।
তারা বলল, এনডস নেই কেন?
আমি বললাম, ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখিয়ে ভিসা নিয়েছি। এনডস থাকবে কেন?
তারা কোন কথা বলল না।
এসময় তারা আমার ব্যাগ থেকে একটা সিডি ক্যাসেট ও একটি এমপিথ্রি প্লেয়ার বের করে বলল, এটা কিসের ক্যাসেট?
বললাম, বাংলা গানের।
তারা সেটা বাজিয়ে শোনর চেস্টা করলো। একজন কানে নিয়ে বলল, বাংলা, আমি কিছুই বুঝিনা, তুমি দেখতো।
আরেক জন কানে নিয়ে শুনলো বাংলা জনপ্রিয় দেশাত্বাবোধক গানের প্রথম গান, সুর্যদয়ে তুমি তুমি সুর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ, প্রিয় জন্মভূমি। গান শুনে বলল, বাংলাগান ঠিক আছে। এরপর আমাকে বলল, এসব নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
আমি বললাম, দূরের দেশে একা একা ঘুরতে যাচ্ছি সেখানে গান শুনতে নিষেধ আছে নাকি?
তারা আমাকে বলল, ইন্ডিয়ান টাকা আছে?
আমি বললাম, আছে।
তারা বলল, দেখি।
আমি ৫০০টাকার একটি ইন্ডিয়ান নোট বের কর্লাম। তারা বলল, আর আছে?
আমি বললাম, না।
তারা বলল, এই টাকা কোথায় পেয়েছেন?
আমি বললাম, দুইমাস আগে কলকাতা বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফেরার পর থেকে গিয়েছিল।
তারা বলল, এই টাকা না ভাঙ্গিয়ে ফের্লাম কেন?
বললাম, আবার নেপাল যাওয়ার সময় লাগ্বে এই ভেবে রেখে দিয়েছিলাম।
তারা বলল, এই টাকা আপনি নিতে পার্বেন না। এটা এখানে থাকবে। জানেননা ইন্ডিয়ান টাকা বাংলাদেশে নেয়ার নিয়ম নেই।
আমি বল্লাম, জান্তাম না।
আর আপনাদের এই কাজটা করা ঠিক হবে না। আমি একজন ছাত্র। আপনাদেরও ছেলে মেয়েও হয়তো লেখাপড়া করে আমার মতো ছাত্র বা ছাত্রী।
তারা আমার দেয়া ৫০০ টাকার ইন্ডিয়ান টাকাটা ভাল ভাবে দেখে বল্ল এটা যদি জাল টাকা হতো তাহলে আজ আপনার খবর ছিল।
এরপর তারা আমাকে ইন্ডিয়া প্রবেশের অনুমতি দিয়ে একজনের সাথে যেতে বল্ল।
আমি তার পিছু পিছু যেতে শুরু কর্লাম। আমাকে বিএসএফের লোকজন চেক করে বিদায় জানালো। ঐ লোকটি আমাকে এক মানি চেঞ্জের দোকানে নিয়ে দেখিয়ে দিল এখান থেকে টাকা ডলার ভাঙ্গাতে হবে।
আমি বললাম, আমার কাছে ইন্ডিয়ান টাকা আছে ভাঙ্গানোর দরকার নেই।
আমি হেটে হেটে টেক্সি ক্যাবের ডাকে সারা না দিয়ে সামনে চলে গেলাম এবং একটি ব্যান ভাড়া নিয়ে জলপাইগুরি চলে গেলাম।
জলপাইগুরি বাসস্টান্ড থেকে আমাকে বাসে করে যেতে হবে শিলিগুড়ি পর্যন্ত। তখন দুপুর হয়ে গেছে। আমি একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসে উঠলাম।
শিলিগুড়ি পৌছার পর কি করবো না করবো ভাবতে লাগ্লাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।