ব্রেইন আর শরীর দুটোর যে বহুদূরে বসবাস এখন। ব্রেইন চায় দু হাত পাখির মতন মেলে খোলা আকাশের নীচে দৌড়ে বেড়ায়। একসময় শরীরটাকে টেনে নিয়ে ঠিকই সে উড়াল দেয়। দুর্বল শরীরটা ব্রেইনের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টায় সব ভুলে দৌড়ও দেয়.......কতটা গিয়ে মুখ থুবড়ে পরে....। হয়না আর তাল মেলানো।
ব্রেইনও বুঝে মাঝে মাঝে মেনে নিতে হয় যে সে একা সব বদলাতে পারে না।
সাত সকালে আকাশে কালো মেঘ করে আসলে আগে যেন মনটা সায় দিত না। আজ সকালেই আকাশ বাতাস কাপিয়ে ঝড় নিয়ে পানির ধারা নেমে এলো আকাশ ভেঙ্গে......কিছুকি তেমন মনে হলো.......? ক্লান্ত পায়ে হেটে খোলা জানালো দরজা গুলো বন্ধ করে দিলাম শব্দ হবের ভয়ে। ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা চোখে মুখে লাগতেই শান্তির ছোয়া লাগলো।
টিভির সামনে বসে ফুয়াদের আঁতলামি দেখতে ভাল লাগে না।
খবরে বলে আগাম ভূমিকম্পের কথা। এতগুলো মানুষ বাক্সের মত ঘর গুলোতে বসে বসে অপেক্ষায় আছে কখন ভূমিকম্প হবে আর তার পরে তারা মারা পরবে বা মরা ও আধ-মরাদের উদ্ধার কার্য শুরু করবে - যেখানে উদ্ধার কাজের জন্য উপযুক্ত ট্রেনিং বা যন্ত্রপাতি কিছুই নাকি নেই। আর এখানেই আমি কত অসহায়। মাথাটা ঝিম ঝিম করে অস্থিরতায়।
খবরে বলে একজন রিক্সাওলা ছুড়িকাহত হয়ে মারা পরেছে কতগুলো বখাটের হাতে.....।
একজন? এই একজনের জীবন থাকলে বা না থাকলেই বা কি তাদের। অথাচ ঐ একজনকে ঘিড়ে হয়ত ৫ জন মানুষের আশা আর স্বপ্ন ছিল। প্রতিদিন এমন একজন নয়, অন্তত তিন চারজনের কথা আজকাল খবরের একটা অংশ মাত্র যেন, খবর যেন ঘোষনা দেয় জনসংখ্যার কয়টা কমতি হলো। দমবন্ধ হয়ে আসে আবার....ব্রেইনে অক্সিজেনের যেন অভাব হলো হঠাৎ আবার।
হুমায়ুন আহমেদের নাটক!! মনটাকে অন্যদিকে ফেরাতে ভাবলাম হুমায়ুন আহমেদের নাটকটা দেখব - আমার একসময়ের প্রিয় লেখক....নাট্যকার।
প্রায় ১০ বছর তার কোন নাটক দেখিনি। নাটকের শুরুটা জ্বরে তিতে হয়ে যাওয়া মুখটার মতন মনটাকেও তিতা করে দিল। বুঝলাম হুমায়ুন আহমেদ মারা গেছেন। বাকিটা চ্যনেল আইয়ের বিঙ্গাপনের বাড়াবাড়িতে দেখবার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে গেল। বিঙ্গাপন দেবার যেন কোন নিয়ম নেই।
৫ মিনিট মুল প্রগ্রাম আর ২০ মিনিট বিঙ্গাপন দেখবার পরে আর মুল প্রগ্রমার প্রতি আকর্শন থাকেনা। যে কোন কিছুরই সুর বার বার কেটে গেলে সেটা আর পূর্নাঙ্গ হয়না। বুঝলাম না কেন এই বিঙ্গাপন গুলোকে মুল প্রগ্রামের প্রথমে - মাঝে - শেষে দেয়া হয়না। এতে একটা প্রগ্রাম যতটা বাজে মনে হয় ততটা বাজে বোধহয় মনে হতো না। বুঝি বিঙ্গাপণ দাঁতারা তাদের পয়সা উসুল করে নিতে চান।
তবে যদি বিঙ্গাপন দেখাবার সময় নিয়ে কোন নিয়ম থাকতো তাহলেও কিন্তু উনারা সেটা এক সময় মানতে বাদ্ধ হতেন - মানুষ অভ্যাস ও নিয়মের দাস।
একটা কথা ভেবে খুবই গর্ব হয় যে আমাদের দেশের টিভি প্রডাক্শন ও বিঙ্গাপন নির্মানের মান সিংাগাপুর বা মালায়শিয়ার চাইতে উন্নত, তবে যখন তখন বিঙ্গাপন দেখাবার জন্য ও প্রগ্রামের মাঝে মাঝে অকারনে ব্রেক দিয়ে পুরন খবর বিঙ্গাপনের মত প্রচার করায় আমাদের প্রডাক্শনের ভাল দিক গুলো চোখে পরেনা বললেই চলে। সবই নষ্ট মনে হয়।
টিভিতে দেখে মনে হলো আজকাল যে ভাবে মেয়েরা কাপড় পরে তাতে মনে হয় ওরা ঘড় ঝারু দেবার জন্য তৈরি হয়ে ভুল করে বাইরে চলে এসেছে। পাজামাটা ঠিক যেন ঘড় ঝারু দেবার সময় গ্রামের মেয়েরা যেমন উচু করে কমড়ে গুজে নেয় তেমন করে পরেই আজকাল মেয়েরা বাইরে যায়।
অনেক ভেবেও এর কারন খুজে পেলামনা। যেমন বুঝে পাইনা রেডিও ফূর্তির ডি জে রা কেন অদ্ভুৎ ও শ্রুতিকটু বাংলায় উপস্থাপনা করেন আর তা নিয়ে কেউ কিছু বলেন না। আজকালকার ছেলে মেয়েরা কি ঐ বাংলায় কথা বলেন? ওটা তো বাংলা নয়।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমার মুখে কোনটা বাংলা বা বাংলা নয় তা নিয়ে কথা বলা সাজেনা - আমি তো বাংলা বানানই জানিনা তার আবার লম্বা চওড়া কথা!! - উমমম ...... আমি বাংলা বানান হয়তো জানি না তবে বাংলা যেটুকু পারি তা কিন্তু শুদ্ধ বাংলায় উচ্চারন করি যদিও আমার বাংলার ব্যবহার নেই বললেই চলে।
সব ছেড়ে আবার ও খবর দেখা ছাড়া যেন আর কিছু নেই টিভিতে।
"আজকের সংবাদপত্রের শিরোনাম" পড়েন যে মেয়েটা উনার ভয়েস শুনলে মনে হয় উনি ডিহাইড্রেশনে ক্লান্ত ও মাত্র ঘুম থেকে উঠে এসে ঘুম চোখে খবরের শিরোনাম পড়ছে। এমন ক্লান্ত স্বর কেন টিভির সংবাদ শিরনামে আসে মাথায় এলো না।
চ্যানেল আইয়ে প্রতি ঘন্টায় একই খবর বার বার দেখাবার কি কারন। এটাতো নিউজ চ্যানেল নয়। নতুন খবরও নেই যে প্রতি ঘন্টায় খবর দেখাতে হবে।
আর ইংলিশ নিউজ তো কখনই দেখান না অথচ উনারা দেশে বিদেশে এই চ্যানেল প্রচার করছেন - মাতৃভাষার প্রতি টানে? এই টান দেখাতে গিয়ে উনারা নিজেদের সারা বিশ্বের কাছ থেকে দুরে রাখছেন। দেখবার মত শুধু "তৃতীয় মাত্রা" ও "তারকা কথন" ছাড়া আর কিছু দেখিনা।
শুধু যেন বদলাননি আফজাল ভাই, সাবিনা আন্টি, রুনা লায়লা, বন্যা ও তার রবিন্দ্র সংগিত। হঠাৎ পাশের বাড়ির রান্নার গন্ধ উরে এলো আমার জানালা দিয়ে - আমার খিদে পেয়েছে। অনেকদিন পর আমার খিদে পেয়েছে আজ।
তার মানে আমি সেরে উঠছি !!! হঠাৎ মনে পরলো চুলোয় ডিম সেদ্ধ দিয়েছিলাম ঝাল দিয়ে ভর্তা বানাবো বলে ....... তার পর ভুলে গেছি....আর তারই পোরা গন্ধ আসছে এতক্ষন।
আধা পোড়া ডিমের গন্ধ ও স্বাদ তেমন কিন্তু বাজে নয় । তবে আরো একটা ডিম সিদ্ধ বসাতেই হলো । তিতা মুখে আজ খিদে পেয়েছে বলে কথা ....। জানিনা ডিম ভর্তা করলাম পিয়াজ ও শুকনা মরিচ দিয়ে নাকি মরিচ ভর্তা করলাম পিয়াজ ও ডিম দিয়ে, না পিয়াজ ভর্তা করলাম ডিম ও মরিচ দিয়ে - সবই যেন সমানে সমান।
- অনেক দিন পর গরম ভাত দিয়ে এ যেন অমৃত লাগল - এত কিছুর পরে তবু কি ব্রেইন ভুলতে পারছে ওখানে মানুষ গুলো নিজেদের বাক্সবন্দী করে ভূমিকম্পে চাপা পরে মরার দিন গুনছে, আর আমি বসে বসে দিন গুনি স্বজন হারাবার? কোথাও কেউ নেই কেন কিছু একটা করবার......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।