একজন সেই দুই শ বছর আগের সম্রাট। আরেকজন এই সময়ের। ক্ষেত্র অবশ্য ভিন্ন, তবে নিজ ক্ষেত্রে দুজনের মূলমন্ত্র একই। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের অভিধানে ‘অসম্ভব’ বলে কোনো শব্দ ছিল না। উসাইন বোল্টের অভিধানেও নেই।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অষ্টম সোনা জয়ের পর ট্র্যাকের সম্রাট বলছেন, ‘যেকোনো কিছুই সম্ভব—ট্র্যাকে এটাই আমার মন্ত্র। ’
নিজের মুখে না বললেও চলত। সবাই তো দেখছেই। ১০০ মিটারে ইতিহাসের সেরা তিনটি টাইমিং তাঁর, নিজের গড়া রেকর্ডই ভেঙেছেন দুবার। ২০০ মিটারেও নিজের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছেন একবার।
সঙ্গে জ্যামাইকার সোনালি প্রজন্মের সৌজন্যে ১০০ মিটার রিলের বিশ্ব রেকর্ডেও তাঁর নাম। ‘লড়াই’ বা ‘প্রতিযোগিতা’ জাতীয় শব্দগুলো নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বোল্ট। তিনি ট্র্যাকে থাকা মানে শুধু কে দ্বিতীয় এ নিয়ে কৌতূহল, আগ্রহ কেবল বোল্টের টাইমিং নিয়ে! গত বছর লন্ডনে অলিম্পিক ট্রিপলের ‘ডাবল’ পূর্ণ করার পর সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টারের বিতর্কটাকে মাটিচাপা দিয়েছেন। এখন আলোচনা তিনি সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট কি না। সেই দাবিটাকে আরও জোরালো করছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি সোনার রেকর্ড ছোঁয়া।
আট সোনা জিতে বোল্ট ছুঁয়েছেন সমসাময়িক মহিলা স্প্রিন্ট তারকা অ্যালিসন ফেলিক্স ও দুই আমেরিকান কিংবদন্তি কার্ল লুইস ও মাইকেল জনসনকে। জনসন তো বিবিসিকে বলেই দিয়েছেন, ‘এখন আর কোনো সন্দেহ নেই, বোল্টই সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট। ’ সর্বকালের সেরায় বোল্টের লড়াইটা মূলত ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড কিংবদন্তি লুইসের সঙ্গে। গত পরশু রিলে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবেই প্রসঙ্গটা উঠল। কিন্তু তুলনায় না গিয়ে জানিয়ে দিলেন শুধু নিজের দর্শনটাই, ‘আমি কঠোর পরিশ্রম করি এবং করেই যাব।
সব সময়ই নিজেকে নিংড়ে দিতে চেষ্টা করি, ভবিষ্যতেও তা-ই করব। ’ চাইলে প্রশ্নটার উত্তর খুঁজে নিতে পারেন এতেই। নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞার মূলে তো সর্বকালের সেরা অ্যাথলেটের ওই চূড়ায় নিজের নিঃসংশয় প্রতিষ্ঠা।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্যও দুঃসংবাদ বোল্টের এই প্রতিজ্ঞা। এমনিতেই তো তাঁর ধারেকাছে কেউ নেই, আরও এগিয়ে গেলে বাকিদের তো লড়ে যেতে হবে শুধুই রুপার জন্য।
বোল্ট নিজেও বোধ হয় চ্যালেঞ্জ খুঁজছেন, নইলে কেন বলবেন, ‘বাকি অ্যাথলেটদের আরও উন্নতি করতে হবে। উদ্দীপ্ত করতে হবে। নিজেকেও, আমাকেও। ’
দুই অলিম্পিকে জিতেছেন ৬টি সোনা। তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৮টি—২০০৯ সালে বার্লিনে ৩টি, ২০১১ সালে দেগুতে ২টি, এবার মস্কোতে আবার ৩টি।
দেগুতে ১০০ মিটারে ওই ফলস স্টার্ট না হলে হয়তো লুইস-জনসনদের ছোঁয়া নয়, ছাড়িয়েই যেতেন এবার। তবে বোল্ট কি আর ওই আক্ষেপ পুষে রাখার লোক! ২০১৫ বেইজিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে লুইসদের ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েই দিলেন, ‘নিজেকে উজাড় করে দেব আমি, আশা করি জিতব আরও তিনটি সোনা। ’ তবে বয়স যতই বাড়বে, কাজটা যে ক্রমেই কঠিন হবে, সেটি মানছেন নিজেও, ‘প্রতিবছরই কাজটা কঠিন হচ্ছে। বয়স বাড়লে কঠিন হতেই থাকবে। যত বেশি দৌড়াব, ততই কঠিন হতে থাকবে।
কিন্তু নিজের মধ্যে তাড়না ধরে রাখতে হবে। ’
তাড়না ধরে রাখতে পারলে সর্বকালের সেরা অ্যাথলেটের বিতর্কটা শেষ হতেও হয়তো সময় লাগবে না। এ বছর ট্র্যাকে নামবেন আর দুবার—২৯ আগস্ট ও ৬ সেপ্টেম্বর ডায়মন্ড লিগের জুরিখ ও ব্রাসেলস মিটে। তবে ট্র্যাকের উত্তাপ, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, দর্শকের আগ্রহ আর সর্বকালের সেরার আলোচনা থেকে আপাতত মুক্তি পেতে ছুটি কাটাবেন কিছুদিন। আগামীকালই পূর্ণ করছেন ২৭, জন্মদিনের আগাম উপহার তো পেয়েই গেছেন।
ছুটিটা পুরোপুরি উপভোগের পরিকল্পনাও করে ফেলেছেন, ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যা করেছি, তাতে আমি খুশি। দেশে ফিরে ছুটি কাটাব, দারুণ মজা করব। ’
বোল্টের এখন ফুর্তিতে থাকারই সময়, ভাবনা তো অন্যদের! এএফপি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।