হাওয়ামে ওড়তা যায়ে...................!!!
বিবিসি ১৪১৩ বঙ্গাব্দের যাত্রালগ্নে পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল, ২০০৬) থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের স¤প্রচার শুরু করে। শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে ২০টি সর্বশ্র্ষ্ঠে গান নির্বাচন করা হয়। জরিপে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা ’ গানটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করে।
বিবিসি পরিচিতিঃ
লন্ডনে ১৯২২ সালে ব্যক্তি মালিকানায় British Broadcasting Company একটি বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কোম্পানিটিকে ১৯২৭ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরিণত করা হয়।
তখন এর নাম হয় British Broadcasting Corporation (BBC). ১৯৪১ সালের ১১ অক্টোবর সপ্তাহে ১৫ মিনিট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবিসি বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। বর্তমানে এর সদর দপ্তর লন্ডনের বুশ হাউসে অবস্থিত। চলতি বছরে বিবিসি রেডিও’র ৩৩টি ভাষায় স¤প্রচারিত প্রোগামের শ্রোতা সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৬ কোটি ৩০ লাখে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সালে তাদের অ্যারাবিক টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল চালুর জন্য বর্তমানে বিভিন্ন রকম কার্র্যক্রম চলছে।
বিবিসির শ্রোতা জরিপে স্থান পাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকাঃ
১ম শ্রেষ্ঠ গান
আমার সোনার বাংলা ....
গীতিকার ও সুরকারঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
গানটির পটভূমিঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ সাল থেকে একযুগ অর্থাৎ ১৯০১ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ছিলেন। তখন বাংলার লোকো সুর ভাটিয়ালী ও বাউলের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। ‘আমার সোনার বাংলা’ এ গানটির সুর তিনি সংগ্রহ করেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের গগন হরকরা নামে একজনের কাছ থেকে। গগন হরকরা বাউল গান গাইতেন। তবে তিনি পেশায় ছিলে ডাক হরকরা।
গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাবো তারে, আমার মনের মানুষ যে রে .......’ গানটি থেকে রবীন্দ্রনাথ সুর সংগ্রহ করেছিলেন। এ গানটির সুরের আদলে কবি রচনা করেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ....’। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে তিনি যে ২৫টি গান রচনা করেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ....’ তার অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানটি ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের এক সমাবেশে প্রথম গাওয়া হয়।
যেভাবে গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতঃ ১৯৭০ সালে জহির রায়হান নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’য় গানটি ব্যবহার করা হয়।
একটি গ্রামের দৃশ্যে গানটি পরিবেশন করা হয়। সে সময় রাজনৈতিক মহলে চলচ্চিত্রটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ রাজধানীর ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ ও স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন তৎকালীন ছাত্রলীদের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ। সর্বপ্রথম এ গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেব স্বাধীনতার ইশতেহারে পাঠ করা হয়। ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবেও ঘোষণা করেন শাজাহান সিরাজ।
১৯৭১ এর ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার ভবেরপাড়া গ্রামের আম্রকাননে মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের দ্বারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার আগে সংগীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথের এ গানটি গাওয়া হয়। মুজিবনগর সরকারও গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করেন।
২য় শ্রেষ্ঠ গান ---
মানুষ মানুষের জন্য ....
শিল্পীঃ ভূপেন হাজারিকা
গীতিকার ও সুরকারঃ ভূপেন হাজারিকা
তথ্যঃ ভূপেন হাজারিকা ষাটের দশকের শেষদিকে আসামের অহমীয়া ভাষায় গানটি রচনা করেন। বাংলায় গানটি অনুবাদ করেন শিবদাস বন্দোপাধ্যায়।
৩য় শ্রেষ্ঠ গান
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ....
গীতিকারঃ আবদুল গাফফার চৌধুরী।
সুরকারঃ আলতাফ মাহমুদ।
তথ্যঃ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রফিকের রক্তাক্ত লাশ দেখে আবদুল গাফফার চৌধুরী একটি কবিত লেখেন। ১৯৫৩ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের অভিষেক অনুষ্ঠানে কবিতাটি প্রথম গান হিসেবে গাওয়া হয়।
৪র্থ শ্রেষ্ঠ গান
কফি হাউসের সেই আড্ডাটা ....
গীতিকারঃ গৌরী প্রসন্ন মজুমদার।
সুরকারঃ সুপর্ণ কান্তি ঘোষ।
শিল্পীঃ মান্না দে।
তথ্যঃ ১৯৮৩ সালে গৌরী প্রসন্ন মজুমদার এ গানটি রচনা করেন। সুরকার সুপর্ণ কান্তি এ গানটি লেখার আইডিয়া দিয়েছিলেন।
৫ম শ্রেষ্ঠ গান
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ....
গীতিকারঃ গোবিন্দ হালদার।
সুরকারঃ আপেল মাহমুদ।
শিল্পীঃ স্বপ্না রায়। পরবর্তীকালে রেবেকা সুলতানা।
৬ষ্ঠ শ্রেষ্ঠ গান -----
আমি বাংলায় গান গাই ....
গীতিকার ও সুরকারঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
শিল্পীঃ প্রতুল মুখোপাধ্যায়ও মাহমুদুজ্জামান বাবু।
তথ্যঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট গীতিকার প্রতুল মুখোপাধ্যায় ১৯৯৩ সালে গানটি লেখেন। তিনি নিজে সুর করে গানটিতে কন্ঠ দেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মাহমুদুজ্জামান বাবুর কন্ঠে রেকর্ড করা গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
৭ম শ্রেষ্ঠ গান ----
একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি ....
গীতিকারঃ গোবিন্দ হালদার।
সুরকারঃ আপেল মাহমুদ।
শিল্পীঃ আপেল মাহমুদ।
তথ্যঃ ১৯৭১ সালে গোবিন্দ হালদার যে কটি গান বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্যে এ গানটি অন্যতম। অনেকের মতে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিজস্ব গানের মধ্যে এটি একটি শ্রেষ্ঠ গান।
৮ম শ্রেষ্ঠ গান
তুমি আজ কত দূরে ....
গীতিকারঃ প্রণব রায়।
সুরকারঃ সুবল দাস।
শিল্পীঃ জগন্ময় মিত্র।
৯ম শ্রেষ্ঠ গান
এক নদী রক্ত পেরিয়ে ....
গীতিকার ও সুরকারঃ খান আতাউর রহমান।
শিল্পীঃ শাহনাজ রহমতউল্লাহ।
তথ্যঃ ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রের জন্য খান আতাউর রহমান গানটি রচনা করেছিলেন। এ ছবির পরিচালকও ছিলেন তিনি।
১০ম শ্রেষ্ঠ গান
ধনধান্যে পুষ্পে ভরা ....
গীতিকারঃ দ্বিজেন্দ্র লাল রায়।
তথ্যঃ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর গড়ে ওঠা স্বদেশী আন্দোলনের সময় গানটি রচনা করেন দ্বিজেন্দ্র লাল রায়। ১৯০৯ সালে প্রকাশিত তার শাহজাহান নাটকেও গানটি ছিল। ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে যে কটি গান গাওয়া হতো তার মধ্যে এটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য গান।
১১তম শ্রেষ্ঠ গান
মুছে যাওয়া দিনগুলি ....
গীতিকারঃ গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার।
সুরকার ও শিল্পীঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
তথ্যঃ ১৯৫৮ সালে গানটি রচনা করা হয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বোম্বের বাড়িতে বসে গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার গানটি লেখেন।
১২তম শ্রেষ্ঠ গান
সালাম সালাম হাজার সালাম ....
গীতিকারঃ ফজল-এ-খোদা।
সুরকার ও শিল্পীঃ আবদুল জব্বার।
তথ্যঃ ১৯৫৯ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি আংশিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৭১ সালের ১১ মার্চ গানটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৯৭১ সালের ১৪ মার্চ এটি প্রথম বেতারে স¤প্রচার কার হয়।
১৩তম শ্রেষ্ঠ গান
জয় বাংলা বাংলার জয় ....
গীতিকারঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
সুরকারঃ আনোয়ার পারভেজ।
তথ্যঃ ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে এবং পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ে উজ্জীবিত হয়ে গাজী মাজহাররুল আনোয়ার গানটি রচনা করেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে গানটি প্রচারিত হয়।
১৪তম শ্রেষ্ঠ গানঃ
খাঁচার ভেতর অচিন পাখি ....
গীতিকার ও সুরকারঃ লালন শাহ।
শিল্পীঃ ফরিদা পারভীন।
তথ্যঃ ১৯৭৩ সালে প্রথম ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস চালুর সময় প্রত্যেক স্টেশন থেকে গানটি সরাসরি স¤প্রচার করা হয়।
১৫তম শ্রেষ্ঠ গানঃ
একবার যেতে দে না ....
গীতিকার ও সুরকারঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
শিল্পীঃ শাহনাজ রহমতউল্লাহ।
১৬তম শ্রেষ্ঠ গান
কারার ঐ লৌহ কপাট ....
গীতিকারঃ কাজী নজরুল ইসলাম।
তথ্যঃ কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ সরকারের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য বাঙ্গালীদের অনুপ্রাণিত করতে ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে লিখেছিলেন এ গানটি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এ গান অন্যতম শক্তি হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার গোটা ভারতবর্ষে গানটি বাজেয়াপ্ত করে।
১৭তম শ্রেষ্ঠ গান
এই পদ্মা এই মেঘনা ....
গীতিকারঃ আবু জাফর।
শিল্পীঃ ফরিদা পারভীন।
তথ্যঃ ১৯৭৩ সালে এ গানটি রচনা করা হয়েছিল।
১৮তম শ্রেষ্ঠ গান
চল্ চল্ চল্ ....
গীতিকারঃ কবি কাজী নজরুল ইসলাম (এটি বাংলাদেশের রণ সঙ্গীত)।
তথ্যঃ ১৯২৮ সালের ফেব্র“য়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নজরুল মুসলিম সাহিত্য সমাজের ২য় বার্ষিক সম্মিলনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন।
ঢাকায় সৈয়দ আবুল হোসেনের বাসভবনে তিনি গানটি রচনা করেন।
১৯তম শ্রেষ্ঠ গান
একতারা তুই দেশের কথা ....
গীতিকারঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
সুরকারঃ আনোয়ার পারভেজ।
শিল্পীঃ শাহনাজ রহমতউল্লাহ।
২০তম শ্রেষ্ঠ গান
তুমি কি দেখেছ কভু ....
গীতিকারঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
সুরকারঃ সত্য সাহা।
শিল্পীঃ আবদুল জব্বার
তথ্যঃ এটি ‘এতটুকু আশা’ ছায়াছবির গান। ছায়াছবিতে গানটিতে ঠোঁট মিলিয়েছেন আলতাফ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।