আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে(সি.সি.ইউ.-তে)একটানা বিপদজনক ২০ ঘন্টা কাটালাম..!! এবং কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। (১)



জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে(সি.সি.ইউ.-তে) একটানা বিপদজনক ২০ ঘন্টা কাটালাম..!! এটা লিখার কারন পুরো ২০ ঘন্টার প্রতিটি মিনিট... প্রতিটি সেকেন্ড...!!! সে কি কষ্টকর এবং এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা আমার জীবনে। রোগী আমার এক আত্নীয় ছিলেন। হ্যাঁ, এটা একটা সতর্কতা মূলক পোষ্ট হিসেবে লিখলাম এবং আমার কিছু অভিজ্ঞতা সবার কাছে শেয়ার করলাম। গত ১২.০৯.১০ ইং তারিখে বিকেল ৪ টার দিকে আমি আর আমার ফ্রেন্ড মিলে চন্দ্রিমা উদ্যানে যাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার বাড়ী থেকে ফোন এলো জানতে পারলাম আমার এক আত্নীয় জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে(সি.সি.ইউ.-তে) ভর্তি হয়েছেন এবং আমি যেন কর্তব্যের খাতিরেও একবার দেখে আসি। ঠিক ঐ মুহূর্তে খবরটি শেনা মাত্র দৌড়ে চলে গেলাম।

গিয়ে দেখি করুন অবস্থা । ডাক্তার বলেছেন অবস্হা খুবই খারাপ। ৭২ ঘন্টা অবজারবেশন...কারনটা হলো হার্টের ২/৩ অংশ কাজ করছে না..!!! দেখলাম চারিদিকে কত্ত সব যন্ত্র চলছে শরীরের সঙ্গে কানেকশনের মাধ্যমে.. অবস্থা খুবই আশঙ্খা জনক । ঐ মুহুর্তে সেখান থেকে কি একজন বিবেকবান মানুষের চলে আসা সম্ভব..? না, সেটা সম্ভব না। তাই আমি থেকে গেলাম।

সেখানে সহযোগিতা বা সেবা করার লোকের অভাব ছিলো না। কিন্তু সবাই ছিলেন রুগীর একদম কাছের, তাই তারা স্বভাবতই ভেঙ্গে পড়বেন। তাই ভাবলাম আমাকে থাকতে হবে। সেখান থেকে ২জনকে আমার রুমে এনে খাইয়ে বললাম আমরা আছি আপনারা সকালে আসলে আমরা যাবো একটু ফ্রেশ হতে। পরে আর তা হয়ে উঠনি.. রাতে থেকে গেলাম ২ জন তারপর.... সারা রাত হাসপাতালে থাকা কালিন যা দেখলাম তা বর্ননা করার নয়।

দেখলাম সারা দেশ থেকে প্রাত ঘন্টায় ২/৩ টি এম্বুলেঞ্চ আসছে এবং ১ জন পৃথীবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। থেকে থেকে গভীর রাতেও সে কি বাতাস ভারী করা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। শুনলাম এটা ওখানকার প্রতিদিনকার ঘটনা। তাহলে ভাবেন, আমরা প্রতিদিন রাতে কত মজা করে ঘুমাই, কত্ত আনন্দ করি আর ঐ জায়গায় প্রতিদিন/রাতে কি ঘটে যাচ্ছে..!!!যখন লিখছি তখনো হয়তো এ রকমই ঘটে যাচ্ছে। তারপরও জীবন চলবে ।

জীবন কারো জন্যে থেমে থাকবে না। এটা মনে করেই নিজেকে সাহস দিতে হবে এবং দিতে থাকলাম। ওখানে দেখলাম একধরনের লোক আছে, তাদের কাজ হলো যখন মেশিন ব্যার্থ হয়ে যায় তখন তারা বুকে এমন ভাবে চাপ দিতে থাকেন মনে হচ্ছে বুকের পাজড় এখুনিই ভেঙ্গে যাবে। যাই হোক তারা কিন্তু ভাবনাহীন ভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন। এমনকি তারা ঐ কাজটি করছেন এবং নিজেরা নিজেরা কি যেনো বলা বলি করে মাঝে মাঝে হাসতেছেনও কিন্তু ঐ রুগীর সকল ভিজিটর কানতেছেঁ...কি দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

পরে শুনলাম ওদের সহ্য হয়ে গেছে এ সব। এভাবে সিসিইউ-তে আমাদের ব্লগে সারা রাতে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন পর পর ৪ জন । এভাবে ওখানে কিছুক্ষন পরপর গুমরে কান্না ভেসে আসে। যাই হোক এভাবে আমাদের রুগীও কিছুক্ষন পর পর অস্থির হয়ে উঠেন কিন্ত তখন ডাক্তার বলেন আল্লাহকে ডাকেন...সঙ্গে সঙ্গে এ ওষধ, সে ওষধ.. ইনজেকশন..কত্ত কি..চলতে থাকে । একটি রোগীকে বাঁচাতে দেখলাম সরকারের অন্ত নেই, কত্ত টাকা ব্যায় করে যাচ্ছেন....!!! শুধু একটু ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ।

আমি জানতে পেলাম একটি অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠিত স্পেশালাইজড্ হাসপাতাল (নাম বলালাম না) সেখানে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে পেস মেকার বসানোরে পর এখানে ট্রান্সফার করলে পরে তিনি মারা যান। কারন বাংলাদেশের যত্ত বড় বড় হার্ট স্পেশালিষ্ট আছে এখানে সরকারী ভাবে কনসাল্ট দিয়ে থাকেন। বলতে গেলে জরুরী বিভাগে এবং সিসিইউ-তে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। ২৪ ঘন্টা কুল এসি চলেতেছে... হার্টের বড় বড় ডাক্তার গন এখানে বসেন। কি তাদের অমায়িক ব্যাবহার ,সর্বক্ষন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

দেখলাম হার্টের প্রয়োজনীয় যেকোনো গুরুত্বপূর্ন এবং দামী সব মেডিসিন যেনো আপনি বেশির ভাগই ফ্রি পাচ্ছেন। সকালে আমাদের রুগী একটু ভালো মনে হইলেও ডাক্তারগন বললেন আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি হচ্ছেনা। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসাই পাচ্ছেন। কিন্তু রোগীর একসঙ্গে অনেক প্রবলেম দেখা দিচ্ছে। উচ্চ পরিমানের ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার একেবারেই নাই...এই সব...কাজেই আশা নাই বললেই চলে ......আল্লাহ ভরসা।

অবশেষে দুপুর একটার দিকে আর টিকলেন না। এবং তখন একটি এম্বুলেঞ্চ ভাড়া করে এলেঙ্গাতে নিজ বাড়ীতে পরবর্তী কাজগুলো শেষের পর্যায়ে আমি কিছুক্ষন আগে ঢাকাতে এসে প্রায় ৩৩ ঘন্টা পড়ে রান্না করে খেয়ে (রেষ্টুরেন্ট বন্ধ) লিখতে বসেছি এবং এখানেই শেষ করে ঘুমোতে যাই কারন পুরো ২দিন আর প্রায় ২ রাত এক্কবারে ঘুমহীন। অন্যদিন কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখবো । সবাই ভালো থাকুন। আর আমার যে উপলব্ধিটা হলো...বিশেষ করে কিছু জিনিস একেবোরেই খাওয়া চলবে না।

১) সিগারেট/বিড়ি/জর্দা বা নেষা জাতীয় খাবার। ২) কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। ৩) চর্বি জাতীয় খাবার এক্কেবারেই চলবে না। ৮) যে সব গোশত্ কাটার পর লাল বর্ন ধারন করে সেগুলো একেবারেই চলবে না....ইত্যাদি ইত্যাদি... চলবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.