আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

''অপারেশন জ্যাকপট''- গৌরবময় অতীতের এক যোদ্ধার অগৌরবজনক বর্তমান । ।

বিনা যুদ্ধে নাহি দিব ছাড়,সূচাগ্র মেদিনীর অধিকার.... ।

ব্লগারগন ..... ঘটনাটিকে দুইটি অধ্যায়ে ভাগ করেই বলা যাক । অতীত এবং বর্তমান । এখানে ভবিষ্যত বলে কিছু নেই .....কারন ভবিষ্যতও যে আলোর বার্তা নিয়ে আসবে কিনা .....তা নিয়ে নিজেই যথেস্ট সন্দিহান । বর্তমান সময়ের কোন একটি দিন : মেডিক্যালের ছাত্ররা টিভিরুমে বসে খেলা দেখছে ।

কেউ কেউ টিভিরুমের ভিতরে টিটি খেলছে , কেউ কেউ এই ছোট পরিসরে ক্রিকেট খেলারও চেস্টা করছে । টিভিতে খেলা দেখার উত্তেজনায়,অথবা নিজেদের খেলার উত্তেজনায় .....অথবা কারনে-অকারনে টিভিরুমের ভিতরে বিশাল হৈ-চৈ। প্রচন্ড গরমেই হাসফাঁস করছেন মুয়াজ্জিন রহিম । ছোট বাচ্চাটির বারবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে টিভিরুমের শব্দে । একটা মাত্র রুম ....কিন্ত কি করা , থাকার আর কোনো যায়গা নেই বলেই টিভিরুমের পিছনে এই ছোট গোডাউনের মত রুমটিতে তিনি আর তার পরিবার থাকছেন গাদাগাদি করে।

বড় হয়ে গেছে দুইটি মেয়ে .....আর তারপর একদম ছোট আরেকটি ,আর স্ত্রী ...এই নিয়েই মুয়াজ্জিন রহিমের সংসার। পাঠকরা....রুমটিকে যদি গোডাউন বলা হয় , তবে ভুল হবে .....টিভিরুমের পিছনে একটুকরো স্থান,যেখানে একটি কার্ডবোর্ড দিয়ে টিভিরুম থেকে আলাদা করা.....পাশেই একটি নোংরা পুঁতি-দূর্গন্ধময় একটি টয়লেট,যেখান হতে সবসময় মানববর্জ্য উপচে পড়ছে , আর সাথে থাকছে খেলা/টিভি দেখতে আসা ছাত্রদের নিত্য আনাগোনা (স্বাভাবিকভাবেই ভদ্রলোকের যেটাকে প্রাইভেসী বলেন , তা কিন্তু অক্ষুন্ন থাকেনা ) । মাসের শেষে হিসেব মেলাতে গিয়ে গলদঘর্ম হন তিনি ....আসলে মাসের হিসাব না , জীবনের হিসাবই তিনি মেলাতে পারেননা। নিত্য টানাটানির সংসার ....সরকার আসে ,যায় .... কিন্তু তার ভাগ্য বদল হয়না । নতুন ছাত্ররা আসে...ক্যান্টিনে আড্ডা মারে .... হয়তো মুয়াজ্জিন বলে প্রায়ই তার প্রতি দৃস্টি দেওয়ার সময়টুকুরও প্রয়োজন মনে করেনা কেউ ।

হ্যাঁ , মাঝে মাঝে তার প্রয়োজন তো পড়েই ......টয়লেটের বাল্ব অথবা রুমের ....ঠিক করার দরকার ??? ডাকো তাকে । সে ম্যানেজ করে নিয়ে আসবে ইলেক্ট্রিশিয়ানকে । এইটুকু শ্রমও কেউ করতে চায়না আজকাল । ...... .....তাতে কি ? মুয়াজ্জিন রহিম সাহেবের তাতে কোনো বিকার নেই .....সবসময় মুখে আছে হাসি । ছাত্ররা যদি ফুটফরমায়েশ খাটার জন্য তাঁকে ডাকেওবা .....তিনি আসবেনই ।

যতই অবহেলায় হোস্টেলের সবচেয়ে অবহেলিত স্থানে তাঁকে রাখা হোক .....তিনি সবার ডাকে আসবেনই । সরকার থেকে একটা ভাতা নাকি আসে ....সেটাও নাকি ঘুষ না দিতে পারার কারনে ঠিকমত পাননা । কিসের ভাতা ??? জিজ্ঞেস করলে চুপ করে থাকেন তিনি । সদাহাস্যময় মুয়াজ্জিন রহিমের মুখটা বড়ই করুন দেখায় তখন । তাঁর অস্বস্তিটাকে আরেকটু বাড়িয়ে আরেকটা প্রশ্ন,'' আপনার পরিচয় কি কেউ জানে ?? '' চুপ থাকেন তিনি .....হয়তো লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে চান তিনি তার অগৌরবময় অতীতের জন্য ।

হয়তো তার ক্ষুদ্ধতা মিশে থাকে ঐ শান্ত নিরবতার মাঝে । অতীতের এক ১৫ই আগস্ট ,১৯৭১ : গভীর রাত ....এগিয়ে চলেছে রহিম । দলের সবচেয়ে ছোট সদস্য সে । সবচেয়ে ছোট হলেও সাহস কারো চেয়ে কম নয় । সে জানে আজকের এই মিশনের উপর নির্ভর করছে পুরো যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ।

এই অস্ত্র বোঝাই জাহাজ গুলো পাকিস্তানিদের হাতে পড়লে বিশাল এক ক্ষতি হয়ে যাবে । আর স্বাভাবিকভাবেই মরনের আগমূহুর্ত পর্যন্ত পাকিস্তানিরা এই বহরগুলোর কোনোরকম ক্ষতি হতে দেবেনা । ফলাফল ?? ......নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও এগিয়ে যাওয়া । তাতে কি ? দেশটাকে তো স্বাধীন করতে হবেই , তাতে নিজের মৃত্যু কি আর এমন বড় ব্যাপার??? আকাশবানীতে বেজে উঠলো যে গানটির জন্য অপেক্ষা করছিলো তারা , ''আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুড় বাড়ি..... '' মুচকি হেসে রহিম চেক করে নিলো লিমপেট মাইন আর ......হয়তো শেষবারের মত তাকালো একবার বাংলার আকাশের দিকে ...... হয়তো এটাই তার শেষবারের মত বাংলার আকাশ দেখে নেওয়া ...... ব্লগার কাঙাল মামার একটি পোস্টে এখানে দেখুন এবং উইকি তে অপারেশন জ্যাকপট সম্পর্কে বিস্তারিত পাবেন । মূলতঃ মুয়াজ্জিন রহিমের কথা সর্বপ্রথম দৃষ্টিগোচরে আনেন সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সেজান মাহমুদ ।

তিনি যায়যায়দিন পত্রিকায় অপারেশন জ্যাকপটের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য রহিমের সোনালী অতীত এবং বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন । আসলে, দেশপ্রেমিকরা চিরজীবনই বন্চিত থেকে যায় । হয়তো তাদের ক্রোধ,হতাশা মিশে থাকে তাদের লজ্জিত আর অবনত মস্তকে । হয়তো বাংলাদেশের জন্মের অন্যতম অনুঘটক ''অপারেশন জ্যাকপট '' এখন তাদের কাছে ধুসর অতীতে পরিণত হয়েছে ......গৌরবময় ইতিহাসও এখন তাদের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয় । কষ্ট করে সময় নষ্ট করে একজন সফল মুক্তিযোদ্ধার বিফল জীবনযুদ্ধ পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।