কেস স্টাডিঃ এক
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই আসলাম বাড়ির পাশের কাঠমিস্ত্রীর দোকান থেকে দাঁতাল করাত নিয়ে এসে তার ঘরের বিশাল খাটটিকে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে মাঝ বরাবর কাটতে শুরু করে। বিদঘুটে শব্দ শুনে আসলামের মা চলে এলেন।
মা এ অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিরে আসলাম খাট কেটে দু’ভাগ করছিস কেন?’
জবাবে আসলাম বিষন্ন মুখে বললো, ‘এত বড় খাটে একা একা থাকার কোন মানে হয় না। তাই কেটে ফেলে দিচ্ছি। ’
মা নির্বিকার সুরে বললেন, ‘ও আচ্ছা।
তাহলে কেটে ফেল। ’
আসলাম মায়ের কথা শুনে আরও জোরে জোরে খাটের ওপর করাত চালাতে থাকে।
কেস স্টাডিঃ দুই
বাড়ির ড্রইংরুমের সোফায় বসে জয়নালের বাবা পেপার পড়ছিলেন। জয়নাল ধীরে ধীরে বাবার দিকে এগিয়ে এল।
বাবা জয়নালকে দেখে পেপারটা নামিয়ে বললেন, ‘কিছু বলবে?’
জয়নাল মুখ হাসি হাসি করে বললো, ‘বাবা দ্যাখো, তোমার শার্ট না-আমার গায়ে লাগে।
’
বাবা মুখ গম্ভীর করে বললেন, ‘হ্যাঁ, তাইতো দেখছি। কিন্তু তোমার শার্টগুলোর কি হয়েছে?’
জয়নাল হাসি থামিয়ে বললো, ‘না বাবা কিছু হয়নি। এমনিতেই দেখলাম তোমার শার্ট আমার গায়ে লাগে কি-না। ’
বাবা বললেন, ‘হুম, আচ্ছা যাও-এই শার্টটা এখন থেকে তুমিই পরো। ’ জয়নাল আস্তে করে বললো, ‘ঠিক আছে বাবা।
’
কেস স্টাডিঃ তিন
হঠাৎ করে কাসিম দুপুরবেলা বাসায় এসে মাকে ডাকাডাকি শুরু করলো, ‘মা, মা একটু এদিকে আসো তো। কাসিমের ডাকাডাকি শুনে মা এসে বললেন, কি হয়েছে বাবা?’
কাসিম অস্থির ভঙ্গিতে বললো, ‘কিছু টাকা দাওতো মা। এখনই গিফট কিনতে যেতে হবে। ’
মা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন আজ কি তোর কোন বন্ধুর বিয়ে?’
কাসিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘নাহ। আজ এক বন্ধুর পাঁচ বছরের মেয়ের জন্মদিন।
’
মা টাকা বের করে কাসিমের হাতে দিলেন। কাসিম টাকা হাতে নিয়ে দ্রুত মায়ের কাছ থেকে সরে গেল। এরপর নিরবে চোখের পানি শার্টের হাতায় মুছে ফেলে গিফট কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
ওপরের প্রতিটি ঘটনাই আমাদের দেশের বিবাহ বঞ্চিত পুরুষের জীবনের মর্মান্তিক প্রতিচিত্র। এভাবেই যুগে যুগে বিয়ের উপযুক্ত বয়সের পুরুষরা বিয়ের সাধ-আহাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে জেনেও অনেক বাবা-মা সেটা বুঝতে চান না। লজ্জায় পরে ছেলেও তাদেরকে বিয়ের কথা বলতে পারে না।
এরকম অবিচারের শিকার হয়ে কাসিমের মতো আর কত নওজোয়ান পুরুষকে নিরবে চোখের জল ফেলতে হবে? আর আসলামের মতো কত ছেলে একা থাকার কষ্টে খাট কেটে দু’ফালি করবে? কিংবা জয়নালের মতো ক’জন বাবার শার্ট পরে, বাবা আমি তোমার মত হয়েছি (মানে আমার বিয়ের বয়স হয়েছে) সেটা বোঝানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে যাবে?
কেন জয়নাল, আসলাম আর কাসিমের বাবা-মা সুন্দরী পাত্রী দেখে তাদের বিয়ে দিচ্ছেন না!
বিয়ের বিষয়টা যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সেটা শো-বিজের তারকাদের বিবাহপ্রীতি দেখেও বেশ বোঝা যায়। তারা নাটক-সিনেমাতে অসংখ্যবার বিয়ে করা সত্ত্বেও বাস্তবে আবার বিয়ে করে ফেলছেন।
আর এদিকে অবিবাহিত উদ্যমী তরুণরা একবার বিবাহ করার উদ্যোগ নিতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন।
সামনেই শীতকাল। আর শীতকালে বিয়ে করা আর হাঁস খাওয়া দুটোরই বেশ উপযুক্ত সময়। ভাবছেন, বিয়ের মাঝে হাঁস কখন কোথায় কিভাবে চলে এলো? বিয়ের সাথে হাঁসের সুসম্পর্ক রয়েছে সুদূর চীন থেকেই। বেইজিংয়ের বিয়ের সকল অনুষ্ঠানেই কনের একপাশে একজোড়া হাঁস রেখে দেয়া হয়।
অবশ্য শুধু হাঁস না রেখে কনের আরেক পাশে একজোড়া মুরগী রাখলে ব্যাপারটা বোধহয় আরও ভালো জমতো।
যাই হোক চীনা হাঁস-মুরগী নিয়ে বেশী মাথা না ঘামানোই ভালো। এমনিতেই দেশে অ্যানথ্রাক্স চলছে। সোয়াইন ফু আর টেনে আনতে চাই না। বরং আসছে কুয়াশা ঘেরা চমৎকার শীতল সময়ে বিবাহ করতে ইচ্ছুক সকল অবিবাহিত পুরুষদের বিয়ে হয়ে যাক।
বিধাতা তাদের স্বপ্নকে সত্য করে তুলুন। আমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।