আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তবুও হাঁটছি পথ সমান্তরাল

পুরনো আমিটাই ভাল ছিলাম...

মাগো । । জানি এ লেখা তুমি পড়বে না। জানবেও না হয়তো কখনো। তবুও লিখছি যে কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারব না; বলতে পারি নি কখনো।

এত মমতা বুকে জমিয়ে রেখে কিভাবে নির্বাক হয়ে থাক মা? হয়তো তাই আমিও কিছুটা ঐরকম। বলতে চাই কতো কিছুই; পারি না। এই যে আজ বাদে কাল ঈদ হয়তো। কতো আনন্দ চারদিকে, কতো উচ্ছ্বলতা, কতো রঙ। কই কিছুইতো আমাকে স্পর্শ করে না।

এবার কোন রঙই আমি দেখি নি। দেখতে ইচ্ছে করে নি। করবে ও না হয়তো কখনো। খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে মা; খুব। বলতে ইচ্ছে করে- অনেক বেশি ভালবাসি মা; সাহস হয় না।

জানি দীর্ঘশ্বাস জমিয়ে জমিয়ে বুকটাকে পাথর করে রেখেছ। তবুও মুখ ফুটে বলবে না; কেন? তুমি কি কখনো জানবে মা?- এখানে আরেকটা পাথর চেপে বসেছে এই ছোট্ট বুকে। অনেক কষ্ট মা; অনেক। শুধুই ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তোমার কাছে। কেন আসি নি?- কেন আসব না?- তুমি কি বুঝবে মা? বুঝবে না কেন? তুমি যে মা।

তবু কেন জানি না খুব বলতে ইচ্ছে করে তোমাকে, অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে সেই ছোট্ট বাবুটা হয়ে। জানি তোমার চোখে আজ জলোচ্ছ্বাস। এখন সময় চোখদু'টো আড়াল করে রাখার। আমারও কি তাই? হয়তো; হয়তো না। পাথর গলে গলে কিভাবে এত অশ্রু হয়?- এত অশ্রু কোথায় থাকে মা বলতে পার? হাত বাড়ালেই আনন্দ।

তবু সে আনন্দের খুব কমই আমাকে টানে। কিভাবে টানবে? ভেতরে যে উল্টো স্রোত। ভাটির টানে বুক হু-হু করে ওঠা বাঁশির সুর, উল্টো স্রোতের সাথে খেলা করে। মাঝে মাঝে মনে হয় কষ্ট আমার একারই। কষ্টের মুখে মুখোশ পড়িয়ে যখন একটু আনন্দ করতে চাই, সহসাই ভুল ভাঙ্গে।

কতো মানুষ যে কতো কষ্ট বুকে চেপে রেখেছে মা। তুমি আমার চেয়ে বেশিই জানতে হয়তো, এখনো জানো। তাই এত নির্বাক হয়ে থাক? আমি যে লুকোতে পারি না কিছুই; এ আমার আজন্মের দুর্বলতা। কষ্ট বুকে চেপে রেখে বেহিসেবি আনন্দ করে যাচ্ছে কতো মানুষ চারপাশে। ওরা এতটা শক্ত কিভাবে হয় মা, বলতে পার? তুমিই-তো সবচেয়ে বেশি ভাল বলতে পারবে।

আমি কেন পারি না ওদের মতো শক্ত হতে? আনন্দের পথে একটু হাঁটলেই কষ্টেরা পাশে এসে দাঁড়ায়; কখন?- আমি বুঝতে পারি না। আমি ওদের এড়াতে পারি না। তাই কষ্টই ফেরি করে বেড়িয়েছি সবসময়; এখনো বেড়াই। চারপাশের আপন মানুষগুলো, কাছের মানুষগুলো, কখনো বোঝে, কখনো বোঝে না; কষ্ট পায়, বিরক্ত হয়, কখনো কখনো হয়তো ঢং মনে করে, দুঃখবিলাসিতা মনে করে। সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা কিছুক্ষণ আগে চলে গেল একটু দূরে।

বারবার জিজ্ঞেস করলো যাবে কি না। আমি কি বলব বুঝতে পারি নি। যদি একবার শুধু না বলতাম, ও যেত না জানি। আমি সেটা চাই নি; ও চলে গেল। আমিও হয়তো একটু একা হতে চেয়েছিলাম।

সেও হয়তো বুঝতে পেরেছিল; অথবা বোঝে নি। এখন বুঝতে পারছি একা হওয়াটা অনেক বেশি দরকার ছিল। এই সময়ে নিজের সঙ্গ ছাড়া আর কারোর সঙ্গ এতটা প্রয়োজন ছিল না আমার। নিজেকে অনেক বেশি কাছে পাওয়া দরকার ছিল খুব। আমি জানি, তুমিও জান, সত্যের রঙ সাদা।

দুঃখবিলাসিতার বিলাসিতা মানায় না আমায়। আমার সত্য সাদা-ই, আর কোন রঙ নেই। এত দুর্বল, এত ভীরু কেন হলাম মা? তোমাকে বলতে পারি না- ভাল থেকো, অনেক ভাল। বললে-তো কষ্টই বাড়বে শুধু তোমার। আর আমিও আরেকটু কাপুরুষ হয়ে যাব।

তাই কিছুই বলতে চাই না মা; কিছুই না। আমার সবচেয়ে প্রিয় দু'টো গান শুনছি মা। কতোবার শুনবো জানি না। মনে হচ্ছে ভেতরের সেই পাথরটার বুকে খোদাই করা আছে লেখাগুলো। পাথর গলে যাচ্ছে।

দীর্ঘশ্বাসে পুড়ে আবার পাথর হয়ে উঠছে। কথাগুলো অশ্রু হয়ে কেবলই জলোচ্ছ্বাসে দু'কূল ছাপিয়ে দিচ্ছে দু'চোখের। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি মা; একেবারেই নিঃস্ব। অনেক বেশি অসহায় লাগছে; অনেক। শূন্যতা চাই; অবিরত শূন্যতা।

আস্থাহীনতার দিন - মাহমুদুজ্জামান বাবু আস্থাহীনতার দিন থেকে যায় অমলিন ফিরে আসে না সেই সোনালী সকাল তবুও হাঁটছি পথ এ শহর জনপথ মুখরতা নেই শুধু আছে দাহকাল তুমিও আমার মতো লুকিয়ে মনের ক্ষত হাঁটছ কি একই পথে সমান্তরাল ফিরে আসে না সেই সোনালী সকাল দিন বদলের দিন আরও কতো দূর দীর্ঘশ্বাসে পোড়া সকাল দুপুর এখানে নষ্ট রাত শিখিয়েছে অজুহাত এলোমেলো হেঁটে যায় বেপথু মাতাল মুখরতা নেই শুধু আছে দাহকাল এখন শুধুই ক্ষয় বিনাশের গান দগ্ধ চোখে জমা ভুল অভিমান চেনা মুখ অচেনা হারিয়েছে ঠিকানা জীবন যাপন আজ মুখোশে আড়াল মুখরতা নেই শুধু আছে দাহকাল...। মেঘবালিকা । । সুখেই আছ। তাইতো কথা ছিল অথবা ছিল অন্যকথা।

এড়িয়ে গিয়েছ তুমি সব; হয়তো আমিও। হয়তো এখনও উৎকন্ঠায় নীল হয়ে থাক। তোমার সেই একজোড়া ছলছল চোখ এখনও চেয়ে থাকে দূর-দিগন্তে মিশে যাওয়া একটা সরু মেঠো পথের দিকে। এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুণ দুরু দুরু পাখি-হৃদয় বুকে চেপে রেখে। কার জন্য? কাহার জন্য? এখনও কি জোৎস্না রাতে সেই বুড়ো নিঃসঙ্গ গাছটার কাছ থেকে ভেসে আসা বাঁশির এলোমেলো সুরে মন কেমন করে ওঠে তোমার? কোন এক অলস বিকেলে একবারও কি মনে পড়ে না সেই ছেলেমানুষী দিনগুলোর কথা?- আমার কথা? কতো কথাইতো বলেছিলাম।

তুমিও বলেছিলে; কিছুটা মান-অভিমান, কিছুটা স্বপ্ন-কথা, কিছুটা বোকা-কল্পণা, রূপকথার রাজ্য-রাজকুমারী-রাজকুমার। তবুও বাকি ছিল অনেক কিছুই। বলা হয় নি আর। হবেও না কখনো। এখন শুধুই পথচলা; ক্লান্তিহীন।

এখন শব্দের সাথে বসবাস, তবুও আমার পৃথিবীতে শুধুই বেড়ে চলে নিরবতা। তুমিও কি নিরব হয়ে গেছ? নাকি আছ সেই সদা-চঞ্চলা, আগের মতোই; মুখরতায় মৌ মৌ হয়ে ওঠে চারপাশ? এখনও কি ঘুমঘুম বৃষ্টির দিনে গুনগুন করে গান গাও আনমনে? এখনও কি মেঘ হতে চাও; উড়ে যেতে চাও সুদূর নীলে? এখনও কি বৃষ্টি হতে চাও; ধুয়ে দিতে চাও সব কষ্ট-ক্লেশ-ক্লান্তি-অভিমান? অনেক বেশি সুখে থেকো মেঘা। অনেকদিন পরে এই নামে ডাকলাম বলে রাগ করলে না তো? কর না হয় একটু রাগ। তোমার সেই রাগে-অভিমানে লাল হয়ে থাকা মুখখানা কতোদিন দেখি না বলতে পারবে? খুব দেখতে ইচ্ছে করে জানো? আমাকে একবারও দেখতে ইচ্ছে করে না তোমার? তোমারতো রাগ পড়ে যেত এক মুহূর্ত পরেই। এতটা রাগ কিভাবে এখনো ধরে রেখেছ তুমি? সুখে থাক- এইতো চেয়েছিলাম।

আমিতো ছন্নছাড়া-তথৈবচ। আমার পৃথবীতে নিদারুণ দাহকাল। কেন জড়াতে চেয়েছিলে নিজেকে? কেন প্রশ্রয় দিয়েছিলে বলতে পার? আমাকে কেন লোভী করে তুলেছিলে তুমি? মুহূর্তের মোহে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম হয়তো, তাই সময়ের পরিহাস বুঝতে পারি নি। যখন বুঝেছি, অনেক দেরি হয়ে গেছে তখন অথবা হয় নি। তুমি থাক তোমার মতো করে সবুজের অনেক কাছাকাছি।

মেঘ হয়ে উড়ে বেড়াও আকাশের নীলে। বৃষ্টি হয়ে ঝর শেকড়ে শেকড়ে। কখনো কিছু চাই নি তোমার কাছে। আজ চাইছি। শুধু একটা জাদুকাঠি এনে দেবে আমাকে, তোমার মেঘের রাজ্য থেকে? যে জাদুকাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তেই কষ্ট বানাতে পারব আবার সুখও।

আমার চারপাশের মানুষগুলোর সব কষ্ট-ক্লেশ দূর করে দেব তোমার দেয়া সেই জাদুকাঠির একটু আলতো পরশে। এনে দেবে মেঘা? আমি সুখেই আছি; অনেক বেশি সুখী। মানুষের মাঝেই আছি। এমনটাই কথা ছিল হয়তো অথবা ছিল না। আমি দূরে সরে গিয়েছি।

নিজের দৈন্যতাকে আড়াল করেছি। মুখোশ পড়ে নিয়েছি মুখে। এখন চারপাশে শুধু মুখোশ আর মেকি-স্বপ্নের আনাগোনা। এখন ভুলে গেছি শেকড়ের টান; বৃষ্টির ঘ্রাণ। কোথাও একবিন্দু প্রাণ নেই।

জড়চক্রের করাল গ্রাস। আনুষ্ঠানিকতার মুখোশে হারিয়ে গেছে আদিম-সরলতা। তবু কখনো কখনো অস্থিরতার সময়ে সহসা শূন্য মনে হয়। শূন্যতা গ্রাস করে আমাকে। দেখলে মনে হবে আকাশ-পাতাল ভাবছি।

আসলে কিছুই ভাবছি না। সুখস্বপ্ন, নীলকষ্ট আমি চাই না। আমি চাই শূন্যতা। শূন্যতা অনেক বেশি আপন। সীমানা জানা নেই শুধু ছুটে চলা অজানায়।

ঝিঁনুক ব্যথা বুকে নিয়ে শূন্যতার অপেক্ষা। অপেক্ষা একটুকরো মেঘের। এক পসলা বৃষ্টির। তুমি কবে আসবে মেঘবালিকা? নাকি আসবেই না? মেঘবালিকা - মাহমুদুজ্জামান বাবু মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা কতো স্বপ্ন-কথা ছিল তোমার সাথে অথচ ক্লান্তিহীন পথচলা থামে না বেড়ে চলে জীবনের নিরবতা মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা অস্থির জনপথ হেঁটে চলা অজানায় মুখোশে মুখোশে সব মুখগুলো অচেনা সীমানা পেরোনো পা খুঁজে ফেরে সীমানা জীবন কুড়িয়ে নেয় ঝিঁনুক ব্যথা মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা শোন মেঘ জলকণা একটু ফিরে চাও একাকী এ দাহপথ অপলক দেখে নাও প্রহরে প্রহরে কাঁদে মানবিক প্রাণ এই দাহকালে বৃষ্টির গল্প শোনাও মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা...।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।