সাধারণ মানুষের কথা
এক)
সারিবদ্ধ সৈনিকদের মত ওরা হাঁটছে। ওদের সামনে বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তর। ঠিক প্রান্তর না-খালি জায়গা। যতদূর চোখ যায়,দিগন্তের কাছাকাছি প্রায়,ধানী জমি। আর পাহাড়।
সারিবদ্ধ। ওদের মতই। ওগুলোর মধ্য দিয়েই খুব দ্রূত হেঁটে চলছে ওরা। কিছুটা ক্লান্ত। মাথার উপর গনগনে আকাশ যেন গলে গলে পড়ছে।
অথচ কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হচ্ছিল বেশ। কাল মেষে ছেয়ে ছিল পুরো আকাশ। কাছাকাছি একটা ছাপড়া-ঘর দেখতে পেয়ে ওটাতে প্রবেশ করে ওরা। ঘরে কিছু নেই। ছন দিয়ে ঘেরা পুরোটা।
এক টাকা দামের কতগুলো বিড়ির খোসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখানে-ওখানে। এটা কৃষকদের একটি অস্থায়ী ঢেড়া। এরকম ঢেড়া সামনে আরো আছে। দূর-দূরান্তে যাদের জমি তারা সন্ধেবেলায় বাসায় না ফিরে এই খুপড়ি ঘর গুলোতে থাকে। ঘরে ঢুকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওরা।
কেউ কেউ হাঁপায়। মেঝেতে শুয়ে পড়ে কয়েকজন।
অনেকটা সময় এভাবেই কেটে যায়। তারপর একজন দাঁড়িয়ে কী একটা কথা বলে,অনেকে শুনতে পায় না। অথবা শুনতে পেলেও তাদের মধ্যে কোন চঞলতা দেখা যায় না।
বাইরের উত্তপ্ত হাওয়া ভেতরে আসতে থাকে হঠাৎ। কারো কারো কাছে ফোন আসে। তারা এবার উঠে দাঁড়ায়। তারপর যে পথে এসেছিল সে পথেই আবার ফিরে যায় সকলে।
দুই)
ক্যাম্পাসের রাস্তায় রাস্তায় রক্তের দাগ মুছছে কিছু লোক।
আশেপাশের দেওয়ালে লাল লাল অক্ষরে লেখা কিছু শ্লোগান,কিছু দাবি-দাওয়া চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। রক্তের দাগ মুছে গেলে ওই লাল লাল অক্ষরগুলোকেও মুছে ফেলে তারা। এবার মজুরদের তদারককারী একজনকে,সানগ্লাস পরিহিত, হেঁটে আসতে দেখা যায় এদিকে। মজুরেরা তাকে “স্যার” বলে সম্বোধন করে। সানগ্লাস কাকে কাকে যেন ফোন করে এবং তার মুখে ‘স্যার স্যার’ ধ্বনি ছাড়া আর কিছু শুনতে পায় না মজুরেরা।
মজুরদের নেতা কিছুটা বিস্মিত হয়। সে বুঝতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর পুলিশের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কি-না!ভযে ভযে থাকে সে। কিন্তু ভয কাটতে তার বেশীক্ষণ লাগে না। এক পাতি নেতা সিগারেটের ভেতরে গাঁজা ভরে টানতে টানতে আসে। মজুর নেতা গাঁজার গন্ধ বেশ বুঝতে পারে।
পাতি নেতা প্রক্টরকে অনেক কিছুই বলে। প্রক্টর জানায় পুলিশকে রিকমেন্ড করেছেন তিনি-আন্দোলনকারীদের ধরা হবেই-at any cost.পাতি নেতা সিগারেটের ধূয়া ছুড়ে মারে বাতাসে। দুজনের দূরত্ব কম হওয়ায় তা প্রক্টরের মুখে আছড়ে পড়ে। প্রক্টর ক্ষণিকের জন্য সংকুচিত হন। মুখে বিরক্তিভাবটা কিছুটা ফুটে উঠে।
পাতি নেতা তা টের পায় না। বা টের পেলেও পাত্তা দেয় না। প্রক্টর দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যান। মুখে অমায়িক হাসি ফুটে উঠে তার। পাতি নেতা আরো কী কী যেন বলে।
মজুর নেতা তা শুনতে পায় না। তীব্র রোদে ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে তার দুই কান।
এমন সময় কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে আর্টস বিল্ডিংযের পেছন থেকে হেঁটে আসতে দেখা যায়। আর্টস বিল্ডিংযের পেছন থেকে শুরু হয়েছে পাহাড়ের লম্বা ট্রেইল। তার ফাঁকে ফাঁকে ধানী জমি।
প্রক্টর দ্রত সচকিত হন। পাতি নেতা অন্যদিকে চলে যায়। গাঁজার গন্ধ বাতাসে ভেসে থাকে কিছুক্ষণ। ছাত্র-ছাত্রীরা কাছাকাছি এলে প্রক্টর দ্রুত ওদের দিকে দৌড়ে যায়।
তিন)
পুলিশের গাড়িটি দ্রুত বেগে বেড়িয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালযের এক নাম্বার গেট দিয়ে।
পেছনে একটি ভাস্কর্যের আবহ ভেসে উঠে। ভাস্কর্যটির স্থানে স্থানে লাল কাপড়ের দাবী সংবলিত কিছু স্লোগান-একটি বুলেটের তীব্র চোখ-কিছু পুলিশের দাম্ভিক পদচারণা দেখতে পাওয়া যায়। ক্লোজ শটে কারও কারও মুখের বলিরেখা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয।
কিছু লোক দৌড়ে দৌড়ে আসে। ভাস্কর্যটির কাছাকাছি এলে তারা নিশ্চুপ হয়ে যায়।
এর বেহাল দশায় তাদের চোখ ছোট হয়ে আসে।
চার)
বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা। টি ভি’র স্ক্রীণে ভেসে আসে লেখাগুলো। ছাত্রদের মাঝে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দেয়। হলে এখনও কোন নোটিশ আসে নি।
তারা দ্বিধাগ্রস্থ হয়। কেঊ কেউ দ্রুত হল ত্যাগ করে। এরই মাঝে কয়েক প্লাটুন পুলিশ এক যোগে হলগুলোতে ঢুকে পড়ে। কারও অনুমতি নেয়ার প্রযোজন বোধ করে না তারা।
পাঁচ)
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরে বসে এক প্রথিতযশা কলামিস্ট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যাতে ব্যর্থ না হয তার দিকে সকলকে তীক্ষ্ণ নজর রাখার আহবান জানান এবং সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরে বর্ধিত বেতন ফি বিরোধী আন্দোলনকারীদের যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বলে অভিহিত করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।