!!
"ট্রেন টু পাকিস্থান" বইটির মাধ্যমে সাংবাদিক খুশবন্ত সিং ঔপন্যাসিক হিসাবে আত্নপ্রকাশ করেন। তিনি তার প্রথম বইতেই আলোড়ন সৃষ্টি করেন। যদিও এটি তার প্রথম বই তবুও নির্দ্ধিধায় বলা যায় তিনি তার প্রথম বইতেই লেখক হিসাবে সফল। নি:সন্দেহে বইটিকে ভারতীয় সাহিত্যের অন্যতম রত্ন বলা যায়।
লেখক হিসাবে খুশবন্ত সিং এর সবচেয়ে বড় সফলতা হলো তিনি তার প্রতিটি বইতেই পাঠককে নানা বিষয়ে সচেতন করে তুলেন।
তার বইয়ের মাধ্যমে পাঠকের কাছে শক্ত কোনো মেসেজ পাঠাতে সক্ষম তিনি। এমনকি তার চটুল টাইপ উপন্যাস "দি কোম্পানি অফ দ্য ওম্যান" বইতেও অবাধ যৌনতার কুফল সম্পর্কে পাঠককে সচেতন করে তুলেন। লাগামহীন জীবনের ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেন। "ট্রেন টু পাকিস্থান" ও এর ব্যাতিক্রম নয়। এ বই এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ও তার কুফল সম্পর্কে পাঠককে সচেতন করেন তিনি।
ট্রেন টু পাকিস্থান দেশভাগের গল্প। লাখ লাখ মানুষের স্বপ্নভঙ্গ, ভিটেমাটি হারানোর করুন গল্প। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ভালবাসার জয়ের গল্প। ধর্মান্ধ পাপিষ্টদের কৃর্তকলাপের গল্প।
১৯৪৭ সাল।
ভাগ হয়েছে ভারতবর্ষ। ধর্মান্ধ, লোভী সাম্প্রদায়িকরা শুরু করেছে নিরীহ মানুষ হত্যার খেলা। পাকিস্থানে মারা হচ্ছে হিন্দু ও শিখদের আর ইন্ডিয়ায় মারা হচ্ছে মুসলমানদের। বয়ছে রক্তের বন্যা। ট্রেন ভরে লাশ যাচ্ছে ভারতে।
ফেরত ও আসছে পাকিস্থানে। চারদিকে শুরু হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এর মাঝে ব্যাতিক্রম হয়ে ঠিকে আছে ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম মানো মাজরা। ছোট এই গ্রামটিতে হিন্দু,শিখ ও মুসলমান তিন ধর্মানুসারীরাই বাস করে। চারদিকের অশান্তির কোনো ছাপ নেই এখানে।
সন্ধ্যা হলে আজান হচ্ছে মসজিদে। হিন্দুরা উলুধ্বনি দিচ্ছে,শিখরা করছে পার্থনা। এই গ্রামের জুগ্গাত সিং সে আবার ডাকাত বটে। তার সাথে প্রেম মুসলমান মেয়ে নুরোর। চারপাশে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হুকুম চাদ এখানে আসে।
সে এই পরিস্থিতি দেখে তার অধিনস্থ ইন্সপেক্টর কে বলে, "এখানকার মুসলমানরা কি হিন্দুদের টাকা দেয় নাকি আজান দেওয়ার জন্য?" সত্যি বলতে কি দাঙ্গা সহ নানা আকাম কুকাম গুলো সমাজের নীচুস্তরে বেশী ঘটলেও বরাবরই তাতে উষ্কানী দেয় তথাকথিত উচুশ্রেণীর লোকেরাই। শত উষ্কানী সত্ত্বেও এখানকার পরিবেশ থাকে শান্ত। এর মাঝে এখানকার স্টেশনে পাকিস্থান থেকে আসে এক ভূতুড়ে ট্রেন। এই ট্রেন পাকিস্থানে দাঙ্গায় নিহত শতশত শিখেদের লাশ বহন করে আনে। এতদিন শান্ত থাকলেও মানো মাজরার পরিবেশ এবার অশান্ত হতে শুরু করে।
এতে ইন্ধন দেয় বাইরে থেকে আসা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজরা তাদের সাথে যোগ দেয় লুঠেরা ডাকাতরা। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট হুকুম চাদ সব মুসলমানদের শরণার্থী শিবিরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ওখান থেকে পরে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে পাকিস্থানে। হাজার বছরের ভিটেমাটি, সহায়-সম্পদ ছেড়ে অশ্রুসজল চোখে তারা বিদায় নেয় মানো মাজরা থেকে। এদিকে দাঙ্গাকারীরা পরিকল্পনা করে, যে ট্রেনে করে শরণার্থীরা পাকিস্থানে যাবে সে ট্রেনে আক্রমন করে তারা সকল মুসলমানদের মেরে ফেলবে।
তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে ম্যাজিস্ট্রেট হুকুম চাদ ও তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা। হঠাৎ হুকুম চাদের মাথায় এক বুদ্ধি আসে। সে তাদের কাছে আটক জুগ্গাত সিংকে ছেড়ে দেয়। হুকুম চাদ জানত ঐ ট্রেনে করে পাকিস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জুগ্গাত এর প্রেমিকা নুরোকে। নুরোকে বাচানোর জন্য জুগ্গাত কিছু একটা করবে বলে তার ধারনা ছিল।
অবশ্য আমার কাছে মনে হয়েছে যতটা না অসাম্প্রদায়িক হুকুম চাদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারচেয়েও বেশী প্রেমিক হুকুম চাদ এ সিদ্ধান্তর পিছনে দায়ী। কারন সেও এক মুসলমান বাইজী মেয়েতে ছিল আসক্ত। সেই মেয়েও এই ট্রেনে করে যাচ্ছিল পাকিস্থানে। অবশেষে জুগ্গাত সিং তার নিজের জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করে ট্রেনের সমস্ত মুসলমানদের। জয় হয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ভালবাসার।
ট্রেন টু পাকিস্থান শুধু একটি উপন্যাস নয়। ভারত বিভক্তি ও এর পরের সমসাময়িক কালের এক জীবন্ত ইতিহাস এ বই। এ বইয়ের কাহিনী বিন্যাস পাঠককে মোহবিষ্ট করে রাখে। এক নি:শ্বাষে পড়ার মত একটি বই বলে আমার বিশ্বাষ। বইটি পাঠককে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিপক্ষে সচেতন করে তুলে।
আমার মতে প্রতিটি মুক্তমনা, প্রগতিশীল পাঠককের অবশ্যই এ বইটি পড়া উচিৎ।
এ বই এর বাংলা অনুবাদ দেশের সকল অভিজাত লাইব্রেরীতে পাওয়া যাবে। আর এই ওয়েবসাইট থেকে ইংরেজি ভার্সন টা পাবেন।
বাংলা অনুবাদটি এখান থেকে ডাউনলোড করতে পাবেন। বাংলা অনুবাদের জন্য ব্লগার আমিনুল ভাইকে জানাই বিশেষ কৃতজ্ঞতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।