হারব বলে আসিনি,কাঁদব বলে হাসিনি
##স্বার্থপর স্বার্থপর##
। ১।
রায়হান ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে । খুব ধান্দাবাজ শয়তান আর বদ একটা পোলা সে । সে খুবই স্বার্থপর ।
কারো কোন কাজ করে দেয়ার আগে সে চিন্তা করে এতে তার লাভ কি ?
এই তো আজকেই সে যাচ্ছিল বড় বোনের কম্পিউটার(কয়েকদিন আগে ঠিক করতে দিয়েছিল) আনতে আইডিবিতে । পিসি বাসায় আনার খরচ বাবদ সে বোনের থেকে ২০০ টাকা নিল । যাবার সময় বাসে প্রচন্ড ভেজাল । দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সে চান্সে একটা সিট ‘’ঘাপায়’’ দিল।
উফ! দুই মিনিটের মাথায় বাসে এক মহিলা উঠল । আর কেউ সিট ছাড়ছিল না দেখে সে নিজে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল আপা আপনি বসেন । এই দিক থেকে মনে হতে পারে সে খুব মহৎ কাজ করছে। কিন্তু আসলে তা না। সে ওই মহিলাকে এই জিনিসটাই বোঝাতে চেয়েছে যে ঢাকার সব ছেলেরাই খারাপ হয় না।
ওই যে বললাম না সে নিজের স্বার্থটাই আগে বুঝে!পুরা রাস্তা দাঁড়িয়ে গেল সে ।
। ২।
কয়েকদিন আগের কথা
ট্রেন প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। রায়হান ট্রেনের জানলার বাইরে মাথা বের করে সব অপরিচিত অজানা মানুষ দের হাসি মুখে হাত নাড়ছে।
মানুষ গুলোর বেশির ভাগই ওর পাগলামি দেখে হাসছে আর কেউ কেউ রিপ্লাই দিচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবে মনে হতে পারে রায়হান ওদের আনন্দ দিচ্ছে । কিন্তু আসলেই কি তাই? নাহ । আগেই বলেছি না ও অনেক স্বার্থপর। ওর আসলে মানুষকে হাসতে দেখতে খুব ভাল লাগে তাই সে কাজ টা করছে।
মানুষকে আনন্দিত দেখে সে আনন্দ পাচ্ছে বলেই সে তা করছে । বললাম না,স্বার্থপর তো!
। ৩।
আইডিবি থেকে ফেরার সময় । হাতে কম্পিউটার তাই সে বাসে যেতে পারছে না।
রিকশাও তেমন বেশি নাই । তাও আবার একজন রিকশাচালক অত্যন্ত বুইড়া । অবশ্যই সে এই রিকশায় উঠবে না । কত দিন লাগায় দিবে কে জানে!কিন্তু তার কপাল টাই খারাপ । আর কোন রিকশাই তো যাবে না।
কি আর করা ! ভাড়া করল রিকশা ওয়ালার সাথে ।
-কত টাকা?
-৮০
-যামুই না
-কততে যাবেন?
-৬০
-বাবা আর দশটা টাকা বেশি দিয়েন । ন্যায্য ভাড়া। অনলি সেভেন্টি
-নাহ যামু না । আমি বাসেই যামু
-আচ্ছা বাবা উঠেন ।
উঠার কিছুক্ষণ পরই রায়হানের গান গাওয়ার শখ জাগল । আশে পাশে লোক তেমন নাই দেখে সে গান শুরু করল বেসুরো গলায় । আতিফ আসলামের আঁখো সে গানটা ।
কিছু কিছু জায়গায় এসে তার গলে এতই চড়ে আসল যে রিকশা ওয়ালা পিছনে তাকাল । এরপর লজ্জা পেয়ে গান বন্ধ করে দিল সে ।
তারপরেও কিছুক্ষণ পর পর রিকশা ওয়ালা পিছনে তাকাতে লাগল। রায়হান ভাবল কম্পিউটারটার জন্য হয়ত তার অসুবিধা হচ্ছে।
জিজ্ঞেস করল ।
-কি হল চাচা,অসুবিধা হচ্ছে?
-নাহ আমি দেখতেসি আপনার অসুবিধা হয় কিনা ।
-না চাচা আমার তেমন অসুবিধা হইতাসে না ।
এর পর কেন জানি হঠাত রিকশাওয়ালার প্রতি তার এক ধরনের মায়ার সৃষ্টি হল । নিজে থেকে জিজ্ঞেস করল
-চাচা আপ্নের নিজের গাড়ী?
-না ,মালিকের
-কত কইরা দেন?
-অনেকে দেয় ৯০ ১০০ , আমার থেকে ৮০ রাখে ।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে রায়হান ।
-চাচা আপনার পোলা মাইয়া কি করে যে আপনারে রিকশা চালাইতে হয়?
-এক পোলায় অনার্সে পড়ে,ব্যবসায় মানে কমার্সে । আর মাইয়ার বিয়া দিসি।
ইন্টার পাশ । আরেক পোলা পড়ে ইন্টারে ।
-ওরে বাবা সবাই দেখি শিক্ষিত । আর আপনার ইন্টারে পড়া পোলা কোন ইয়ারে?
-সেকেন্ড ইয়ার
-বাপ্রে আমার চেয়েও বড়!
-হ
-তা কই পড়ে?
-পড়ে তো বাবা দিনাজ পুর
-তা আপনার পোলারা পড়ালেখা করে আপ্নে রিকশা চালান কেন?
-কি করুম বাবা ওদের কে টাকা পাঠাইতে হয় ।
-ওরা টিউশনি করতে পারে না?
-একজন করে।
তাতেও হয়না বাবা ।
¬-হু । ওগোর পড়ালেখা শেষ হইলে তো চাকরি করব না?
-হ্যা বাবা। তয় চাকরির চিন্তা পড়ে। বড় জনে আগে অনার্স কমপ্লিট করুক ।
তারপর মাস্টার্স কমপ্লিট করবে । তারপরে চাকরি করবে ।
-বাপরে! তাইলে তো আর আপনার আর ওদের কামাই খাওন লাগব না ।
-আল্লায় যদি রাখে তাইলে খামু ইনশাল্লাহ ।
-আপনার পড়াশুনা কতদূর?
-এইট পাশ।
-আলহামদুলিল্লাহ ।
কিছুক্ষণ পর আবার জিজ্ঞেস করে
-চাচা মুক্তি যুদ্ধ দেখসেন?
-হ । তখন বয়স আছিলো ১৮ বছর ।
-মুক্তি যুদ্ধে যান নাই?
-না বাবা। আমাদের দিনাজপুরের কেউ যায় নাই ।
-গেলে যাইতেন?
-হ্যা বাবা যাইতাম ।
-কি করতেন ওই সময়?
-পালায় পালায় বেড়াইছি । দেখলেই তো গুলি করে দেয় ।
-মুক্তি যুদ্ধ করলে আপনার পোলাপাইন অনেক কোটা ফোটা পাইত । অনেক সুবিধা পাইত ।
-না বাবা দরকার নাই আমার ওইসবের ।
আর কিছু বলে না রায়হান । রিকশা চলতে চলতে নির্দিস্ট জায়গায় এসে যায় ।
সে রাস্তার ওইপারে থাকে । কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ গুলা রিকশা এপারেই থামায় দেয় ।
তাও অনেক আগে। তো রিকশাওয়ালা বলল বাপজান আপনে ওদেরকে বলেন যে আপনার কষ্ট হইব আমি একটু আগায় যাই।
রায়হান কলেজের আইডি কার্ড দেখাল । তারপর ছেড়ে দিল । রিকশা ওয়ালা অনেক দূর নিয়ে রাখল ।
নামতে নামতে রায়হান দেখল রিকশা ওয়ালা ঘাম মুচ্ছে ।
-বাবা কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা বলি?একটা রিকোয়েস্ট করব ।
-থামেন । আপনার রিকোয়েস্ট শোনার টাইম নাই আমার।
-আচ্ছা বাবা ঠিকাসে।
মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায় বৃদ্ধের ।
রায়হান এবার মানি ব্যাগ থেকে ১০০ টাকার নোট টা বের করে চাচার হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করল । পিছন থেকে শুনতে পেল রিকশাওয়ালা বলছে আল্লায় আপ্নের মঙ্গল করুক । কিন্তু সে পিছু ফিরল না । কারণ এই কথা শোনার জন্য সে টাকা দেয় নাই ।
৪০ টাকা বাড়তি দিয়েও সে এমন কিছু করে ফেলে নাই । কিন্তু এই বাড়তি টাকাটাই ওই বৃদ্ধ লোকের মুখে হাসি ফোটাল । এইটাই তো সে চেয়েছিল । আরেকজনের সুখে তার কি সুখ সেইটা সে জানে না।
কারণ সে তো স্বার্থ পর ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।