ছিড়ে ফেলি ভিন্নতার ভেড়াজাল,মুক্ত করি মনুষত্ব্যকে।
গ্রামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন নবাব আলী চৌধুরী। ঘরে আছে এক স্ত্রী। দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের কোন ছেলে মেয়ে ছিল না। আত্মীয়-স্বজনেরা দ্বিতীয় বিয়ের কথা অনেকবার বলেছিল কিন্তু রাজী হন নি।
কারন সে তার স্ত্রীকে খুব ভালবাসতেন। একদিন তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ভ্রমনে বের হলেন,পথিমধ্যে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী মারা যায়। এত বড় বাড়ী,এত সব সম্পত্তি। এবার তিনি অন্যদের কথা ফেলতে পারলেন না। দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে আনতে হল।
দেখতে দেখতে তাদের একটা মেয়ে হল। মেয়েটির নাম রাখেন অঞ্জনা। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস মেয়েটির জন্মের সময় মা মারা গেল। বাচ্চা মেয়েটিকে তার দুসম্পর্কের এক ফুফি দেখাশোনা করেন। আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল।
মেয়েটি ছিল জেদী প্রকৃতির। সামন্য কিছুতেই রেগে যেত। দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে চলল। একদিন মেয়েটি মেট্রিক পাস করল। এবার তাকে কলেজে ভর্তি করাল।
নিয়মিত কলেজে যায়। কিছু দিন যেতে না যেতে ক্লাসের এক ছেলেকে ভাল লেগে গেল। ছেলেটির নাম ছিল অয়ন। সেও মনে মনে তাকে খুব ভালবাসত। একদিন অয়ন মেয়েটির খাতায় লিখে দেয় "তোমার সাথে কিছু কথা আছে,আগামীকাল ক্লাস শেষে কেন্টিনে আসবে"।
পরদিন কয়েকটা বান্ধবী সহ অয়নের সাথে দেখা করল। কথা হল অনেক। সেই থেকে নিয়মিত কথা হয়। এখন এদের মধ্যে অনেক ভালবাসা। অঞ্জনার দূর সম্পর্কের এক মামাত ভাই এই সম্পর্কের কথা অঞ্জনার বাবাকে বলে দেয়।
মেয়ের কাছে কথাটির সত্যতা জানতে চাইল। অঞ্জনাও ঠিক ঠিক সব বলে দিল। একমাত্র মেয়ের আবদার বলে কথা। বাবাও রাজি হয়ে গেলেন। এখন দুজনেই অনার্সে পড়ে।
শর্ত ছিল অনার্স পাস করতে হবে। দিন যায় মাস যায়। এ ভাবে সময় পেরিয়ে যায়। হঠাৎ একদিন অয়ন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। ডাক্তার কাছে নিয়ে গেল অনেকগুলো টেষ্ট করাল।
এতে তার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। ডাক্তার অয়নের মাকে ডেকে বলল সে যে কোন সময় মারা যেতে পারে। অয়ন কথাগুলো জেনে গেল। যেহেতু তার জীবন প্রদীপ যে কোন সময় নিবে যেতে পারে। তাই সে অঞ্জনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইল।
এখন সে অঞ্জনার সাথে তেমন কথা বলে না। অঞ্জনা বিষয়টি লক্ষ্য করল। সে যখন অয়নের সাথে কথা বলতে চাইল অয়ন তার সাথে খারাপ আচরণ করল এবং বলল আমি তোমাকে চিনি না। তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং ছিল না। অঞ্জনার সাথে আরো অনেক মিথ্যে অভিনয় করল।
অয়নের কথা গুলো শুনে অঞ্জনা মনে মনে খুব কষ্ট পেল। রাগ করে বাবাকে বলল আমার জন্য পাত্র দেখ। পরে বাবাকে সব খুলে বলল। তার বাবাও বিষন কষ্ট পেল। সে জন্য মেয়েকে লন্ডন ফেরত এক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল।
বিয়ের পর জরুরী কাজে একসপ্তাহের জন্য লন্ডন যেতে হচ্ছে বলে চলে গেল। সেখান যাওয়ার পর আর কোন যোগাযোগ করে রাখে নাই। কয়েক মাস পর অঞ্জনার কাছে ডিবোর্স লেটার পাঠায়। এখন একবুক কষ্ট নিয়ে বাবার বাড়ীতে অঞ্জনার অবস্থান। এদিকে কয়েক দিন হল অয়ন অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
আর মারা যাওয়ার সময় মার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বলল এটা অঞ্জনার কাছে পৌছে দিও। সেই শেষ চিঠি ছিল এরুপ...
প্রিয় অঞ্জনা,
তুমি কেমন আছ?আমার সাথে রেগে আছ বুঝি?আসলে ঐ দিন আমি তোমার কাছ থেকে একটা বিরাট সত্য গোপন করেছিলাম। কিন্তু আজ তোমাকে সব খুলে বলব। নিজেকে চরম অসত্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে চাই। তুমি জান মাঝে মাঝে আমার বিষন মাথা ব্যাথা হত।
কিন্তু ডাক্তারি টেষ্টের পর যখন জানতে পারি আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে তখন তোমাকে আমার কাছ থকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম। তাই তোমার সাথে এত সব মিথ্যে অভিনয় করেছিলাম। আসলে আমি তোমাকে মনে প্রাণে ভালবাসি। আর তোমার স্বামীকে আমার কথা বলিও না। তোমাদের সংসারে ঝামেলা হতে পারে।
আমাকে ক্ষমা কর। ভাল থেকো।
এই চিঠি পড়ে অঞ্জনার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না শুধু দুচোখের কোনায় জ্বল। এখন সে আগের মত কারো সাথে কথা বলে না। কেউ কিছু বললে হা করে চেয়ে থাকে।
আর মাঝে মাঝে চিঠিটা পড়ে নিরবে কাঁদে। কিছু দিন পর অঞ্জনা তাদের বাড়ীর দক্ষিনে বাগানের একটা গাছের সাথে ঝুলে নিজে বিসর্জন দিল। এখন তাদের বাড়ী সেই আগের মতই ফাঁকা। কোন কোলাহল নেই। নির্জন নীরবতা এসে যেন বাসা বেঁধেছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।