সংবাদ সম্মেলনে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশি শরীফ এএফপিসমকাল ডেস্ক
মুসলমান পরিচয় জেনে নিউইয়র্কে গলাসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক আহমেদ শরীফকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তোলপাড় চলছে গোটা আমেরিকায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নিউইয়র্কের মেয়রসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠন। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটি হলের বারান্দায় এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে জঘন্য এ ঘটনার বর্ণনা দেন আক্রান্ত আহমেদ শরীফ (৪৩)। তিনি বলেন, মুসলমান বলেই আমি হামলার শিকার। এ সময় তিনি তার গলাসহ দেহের ছুরিকাঘাতে ক্ষতস্থানগুলো সাংবাদিকদের প্রদর্শন করেন।
বিশ্বের শতাধিক দেশের বহু সাংবাদিক এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ শরীফ জানান, গত ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় মাইকেল এনরাইট (২১) নামে এক যুবক নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার থেকে তার ট্যাক্সিতে যাত্রী হিসেবে ওঠে।
নিউইয়র্ক স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টসের ছাত্র মাইকেল প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপচারিতা শুরু করে শরীফের সঙ্গে। এক পর্যায়ে তিনি মুসলমান এই পরিচয় জেনেই মাইকেল ঘৃণায় ফেটে পড়ে এবং হত্যার উদ্দেশে তার গলা ও দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। মাইকেল এ সময় মাতাল ছিল বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা এবং ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। নিউইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, তিনি শরীফের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাকে আশ্বাস দিয়েছেন এই নগরীতে ধর্মীয় কিংবা জাতিগত বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যালায়েন্সও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ শরীফ বলেন, 'আমি মুসলমান_ জানার পরই মাইকেল ট্যাক্সির পেছনের আসন থেকে আমার গলায় ছুরি চালায়। ' ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল আহমেদ শরীফ নিজেকে সামলে নিয়ে হামলাকারীর প্রতি আকুতি জানান তাকে না মারার জন্য। মেরে ফেললে তার চারটি শিশু সন্তানের করুণ দশা হবে। তবুও সে থামছিল না। তার মুখে, নাকে, ঠোঁটে, কাঁধে এবং হাতে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে মাইকেল।
বিশ্বের প্রধান প্রধান মিডিয়ার সাংবাদিক, ফটোগ্রাফাররা হাজির হয়েছিলেন আহমেদ শরীফের সংবাদ সম্মেলনে। ভরদুপুরের প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বেশকিছু ট্যাক্সি ড্রাইভার প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা হামলাকারীর শাস্তির দাবি জানান। খবর এএফপি, ইউএনবি, এনা অনলাইনের।
গলায় ব্যান্ডেজ থাকায় সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের সন্তান আহমেদ শরীফ ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। তিনি ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারেন না। তাকে সহায়তা করেন সিটির ১৩ সহস্রাধিক ট্যাক্সি ড্রাইভারের প্রতিনিধিত্বকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সে'র প্রধান নির্বাহী ভৈরবী দেশাই।
শরীফ এর আগে সিটি মেয়র মাইকেল বল্গুমবার্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তার সঙ্গে তার স্ত্রী এবং তিন সন্তান ছিলেন।
মেয়র তাদের 'আই লাভ নিউইয়র্ক' লেখা কিছু টি-শার্ট, খেলনা এবং পেন্সিল উপহার দেন।
এ সময় মেয়র বলেন, 'নিউইয়র্ক সিটি তথা আমেরিকার ইতিহাস-ঐতিহ্য অবশ্যই বর্ণিল এবং আমেরিকার মূল্যবোধ হচ্ছে সব মানুষের সমঅধিকার। কিন্তু এরই মাঝে কিছু দুষ্ট লোক রয়েছে_ যারা বাজে আচরণ করছে। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে বিপন্ন করছে। তবে আমরা অপরাধীকে ছাড় দেব না।
'
উলেল্গখ্য, গ্রাউন্ড জিরোর সনি্নকটে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৩ তলাবিশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণার পরই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো নিউইয়র্কের মেয়র বল্গুমবার্গও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনাকে সাপোর্ট দিয়েছেন।
নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলো আহমেদ শরীফের ওপর হামলার কঠোর সমালোচনা করে সংবাদ, নিবন্ধ এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সংবাদ সম্মেলনের পর ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী ভৈরবী দেশাই বার্তা সংস্থা এনাকে বলেন, সিটির ৪৫ সহস্রাধিক ট্যাক্সি ড্রাইভারের ২৫ শতাংশেরও বেশি বাংলাদেশি এবং ৫০ শতাংশের বেশি মুসলমান। গত কয়েক সপ্তাহে এ ধরনের ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা আরও ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরেকজন ভিকটিম। তিনিও বাংলাদেশি। তার মুখে ছুরিকাঘাত করা হয়। ২৫ বছর বয়সী এই ভিকটিম মোঃ ইন্তাজ আলী এনাকে বলেন, 'মধ্যরাতে ট্যাক্সি পার্ক করে ব্রঙ্কসের একটি রাস্তায় হাঁটছিলাম। এমন সময় ৩ যুবক এসে আমার নাম জানতে চায়।
মুসলিম জানার পরই ওরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমি জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। '
নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার রেমন্ড ক্যালি বলেছেন, আহমেদ শরীফের ওপর হামলাকারীকে জামিনহীন আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।