বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
আমার দেখা যুদ্ধভিত্তিক (ওয়ার) মুভিগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি স্থান দখল করে রয়েছে স্টিভেন স্পিলবার্গের শিল্ডলার্স লিস্ট , রবার্তো বেনিনির লাইফ ইজ বিউটিফুল এবং গ্রিগরি চুখরাইয়ের ব্যালাড অফ এ সোলজার। প্রতিটি মুভিই আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। তাই আমি দ্বিধায় পড়ে যাই কোনটিকে সবার উপরে রাখবো।
১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাশিয়ান মুভি ‘ব্যালাড অফ এ সোলজার’কে শুধু যুদ্ধের মুভির কাতারে ফেললে চলবেনা। এ মুভিটি যুদ্ধকে ছাপিয়ে আরও অনেক কিছু।
চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। নায়ক ১৯ বছর বয়স্ক রাশিয়ান সৈনিক অ্যালোশা। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ছেলেটি মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য দশদিনের ছুটি পায় । ছুটি পায় বললে ভুল হবে। ছেলেটিকে অন্যভাবে পুরস্কৃত করতে চায় সেনাবাহিনী।
কিন্তু অ্যালোশা পুরস্কারের পরিবর্তে ছুটি আদায় করে নেয়।
এখান থেকেই মূল কাহিনী শুরু। বাড়ি যাবে শুনে অ্যালোশাকে সৈনিকদের অনেকেই অনুরোধ করে তাদের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে আসার জন্য অথবা একটু খোঁজ-খবর আনার জন্য। সবাইকেই অ্যালোশা কথা দেয়। আর অ্যালোশার বাড়ি যাওয়া নিয়েই মুভিটির গল্প।
ঘটনাবহুল ও নাটকীয় বাড়ি ফেরার যাত্রায় ছেলেটি শেষ পর্যন্ত তার ঘরে ফিরতে পারে। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। কারণ তার ছুটি যাত্রাপথেই ফুরিয়ে যায়। যাত্রা পথের ঘটনাগুলো খুবই চমকপ্রদ ও কিছু কিছু জায়গায় খুবই আবেগঘন। এ যাত্রাপথেই মুভির নায়িকার সঙ্গে নায়কের পরিচয়।
প্রথম দৃশ্যটিই আপনাকে সিনেমাটির প্রতি আকৃষ্ট করবে। দৃশ্যটিতে এক মা ছলছল চোখে পথ পানে চেয়ে আছে। এই বুঝি তার ছেলে ফিরে এলো! প্রতিদিন মা তার ছেলের জন্য এভাবে অপেক্ষা করে। কিন্তু ছেলের আর বাড়ি ফেরা হয়না।
মুভিটির প্রথমেই নেপথ্যে শোনা যায়, যে ব্যক্তি শহীদ বা গাজী হয়ে আমাদের কাছে জাতীয় বীর অথবা আরও বেশি কিছু , সে মায়ের কাছে কেবল সন্তানই।
আর প্রত্যেক মা’ই চায় তারা ছেলে বেলা শেষে ঘরে ফিরে আসুক।
মুভিটির দুইটি দৃশ্যে আমি চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। একটি হচ্ছে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য যখন অ্যালোশা তার মায়ের সঙ্গে দেখা করে বিদায় নেয়। খুবই আবেগঘন দৃশ্য। মনে হয় প্রতিটি সন্তান ও তাঁর মা এ দৃশ্যটি দেখলে চোখের জল আটকে রাখতে পারবেনা।
(আমি আর আমার মা তারে জামিন পার দেখলে দুজনই কাঁদি। টিভিতে মুভিটি দেখালে একসঙ্গে তাই কখনই দেখিনা। )
আরেকটি হচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটির বিদায়ের দৃশ্য। ঠিক যে মুহূর্তে তারা এক অপরের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করে ঠিক সে মুহূর্তে তাদের বিচ্ছেদ হয়। ‘ভালোবাসি ’এ কথাটা বলার জন্যে শেষ মুহূর্তের যে আকুলতা ছেলে-মেয়ে দু'টির মাঝে প্রকাশ পায় তা দর্শকের হৃদয়েও ভীষণভাবে নাড়া দিবে।
কিন্তু আফসোস না বলা কথাটা বলা হয়ে উঠেনা। ঠিক এ জায়গাটিতে মুভিটি ওয়ার ফিল্মের চেয়ে অনেক বেশি রোমান্টিক একটা মুভি।
সিনেমাটি অস্কার মনোনয়ন পাওয়া।
আইএমডিবি রেটিং ৮.১/১০
আমি মুভি ডিভিডিতে দেখি। তাই ডাউনলোড লিংক দিতে পারছিনা বলে দু:খিত।
তবে মুভি ডাউনলোডের জনপ্রিয় সব সাইটগুলোতে ‘ব্যালাড অফ এ সোলজার' পাবেন বলে আশা রাখি।
ধন্যবাদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।