নাই
পিতা-মাতার বহু বিবাহ, মৃত্যু, সৎ বাবা-মা দ্বারা নির্যাতিত, ভূমিহীন হওয়া, কোনো প্রকার আশ্রয় না পাওয়া, পরিবারের সদস্য সংখ্যা আর্থিক সঙ্গতির অনুপাতে বেশি হওয়া, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, রাগ করে ঘর থেকে পালানো ইত্যাদি কারণে শিশুরা ঘর থেকে বের হয়ে পথে আশ্রয় নেয়। ওরাই পথশিশু। পথশিশুদের মধ্যে মেয়ে শিশুরা সাধারণত বন্ধুবান্ধব, আত্দীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর কাছ থেকে প্ররোচিত হয়ে শহরে আসে। ছেলে শিশুরা নিজেরাই চলে আসে শহরে। গ্রাম ছেড়ে তারা শহরের খোলা আকাশের নিচে, ব্রিজের নিচে, মার্কেট, পার্ক, বাস ও রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়।
বাজার ও নৌ বা বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক তাদের বসবাস। তারা ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ, বাদাম বিক্রি, কুলি, সিগারেট বিক্রি, হোটেলে পানি দেওয়া, হোটেল বয়, গাড়ি ধোয়া-মোছা, ফুল বিক্রি, গৃহস্থালি কাজ, ভাসমান যৌনকর্মী, মাদক বিক্রি, চুরিসহ নানা কাজের সঙ্গে জড়িত।
নৌ বা বাস টার্মিনালে তারা রাত-দিন কাজ করে অল্প টাকা আয় করে। এ টাকা দিয়ে রাস্তার ধারে খাবারের দোকান, ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান থেকে খাবার কিনে খায়। আয় না হলে না খেয়েই দিন যাপন করে।
এজন্য অধিকাংশ পথশিশু অপুষ্টিতে ভোগে। চর্মরোগ, ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা জ্বর, জন্ডিসসহ নানা রোগে তারা আক্রান্ত হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। একটি শার্ট, প্যান্ট পরেই তাদের দিন কাটাতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেজা কাপড় পথশিশুরা তাদের গায়ে শুকায়।
কারণ তাদের গোছল করা ও কাপড় ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানির অভাব। অন্যদিকে চুরি বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে পথশিশুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশে ৬টি ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে মোট আসন সংখ্যা ১ হাজার ৯শ'। অথচ বর্তমানে সেখানে ৩১৯ জন শিশু রয়েছে। প্রতিবন্ধী ও ভবঘুরে পথশিশুদের সেবা-যত্নের কোনো ব্যবস্থা আশ্রয়কেন্দ্রে নেই।
উপরন্তু এসব আশ্রয়কেন্দ্রে জনবলেরও অভাব রয়েছে। অথচ শিশু আইন ১৯৭৪-এর পঞ্চম ভাগে দুস্থ ও অবহেলিত শিশুদের তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় শিশুনীতি ২০১০ (খসড়া) শিশুর অধিকার অংশের ৬.৪.৩নং ধারায়.....'শিশুর পরিত্যক্ত ও আশ্রয়হীন হওয়ার মৌলিক কারণ অনুসন্ধানসহ পরিত্যক্ত ও নিরাশ্রয় শিশুর আশ্রয় ও খাদ্যসহ সুরক্ষার ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ' সেখানে শিশুর সামাজিক অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করেনি। পথশিশুদের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যেসব কার্যাবলী পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো যেন শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, প্রশিক্ষণ, কাউন্সিলিং প্রভৃতি নিশ্চিত করে।
২০০৯-২০১০ অর্থবছরে পথশিশুদের জন্য প্রথমবারের মতো যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা প্রায় ৭ লাখ শিশুর জন্য আশাব্যঞ্জক নয়। পথশিশুদের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সমাজের ধনী মানুষের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। বর্তমানে পথশিশুর জন্য যেসব কর্মসূচি চলছে সেগুলো শিশুর পুনর্বাসনমূলক।
অর্থাৎ কেউ পথশিশু হলে তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
অথচ পথশিশু তৈরি হওয়ার মৌলিক কারণ নিয়ে কোনো প্রকল্প বা কার্যক্রম চোখে পড়ে না। পথশিশু তৈরি হওয়ার যেসব কারণ বর্তমান সেগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া, কারেকশন সেন্টারে শিশুদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা সমাজের জন্য বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হতে পারে। পথশিশুরা সব সময় বিভিন্ন ধরনের মানবিক ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার হয়, সেজন্য ব্যাপকভিত্তিক জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।