জ্ঞানই সকল শক্তির মূল উত্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিধর এই রাষ্ট্রটির নীতিনির্ধারক ইহুদি ও খ্রিষ্টান কট্টরপন্থীদের চিন্তা-চেতনায় ইসলাম এবং মুসলমান শব্দের অর্থই হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসী চরিত্রের মানুষগুলো। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টান অধু্যষিত দেশগুলি ইদানীংকালে একাট্টা হয়ে মুসলিম উম্মাহর সর্বনাশ করার লক্ষ্যে বিভিন্নমুখী অপচেষ্টা অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে!
মাত্র কয়েক দশক আগেও ওরা মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলিকে তোয়াজ করতো। নানাভাবে খুশি করে রাখতে চেষ্টা করতো, কিন্তু ধীরে ধীরে ওরা এখন এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ফেলেছে যে, মুসলিম উম্মাহর প্রাণকেন্দ্র সউদি আরব থেকে শুরু করে আমির শাসিত দেশগুলির সবাই ইহুদি-খ্রিষ্টানদের তৈরি করা ছকের মধ্যে বিনা বাক্যব্যয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে।
মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে বর্তমানে যে অস্ত্রটি সাফল্যজনকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে মুসলমানদের ভিতর থেকেই জঙ্গীবাদ নামক এক নতুন দানবের সৃষ্টি! এই দৈত্যের জনক যে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীরাই, এ বিষয়ে এখন আর সন্দেহ করার কেনোই অবকাশ নেই। প্রথমে ব্যাপক প্রচারণা অতঃপর একদল বাছাই করা যুবককে জঙ্গী সাজিয়ে মিডিয়ার সামনে পেশ করা এবং ঐ সাজানো লোকগুলির কথিত জবানবন্দির নামে মসজিদ-মাদরাসা এবং নিছক দাওয়াত ও তবলীগের কাজে নিবেদিত সংস্থা সংগঠনগুলির উপর জঙ্গীর অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে।
মসজিদ-মাদরাসার সাথে যারা সার্বক্ষণিকভাবে যুক্ত, তারা অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে একে অপরকে জিজ্ঞেস করছে, এত বড় ব্যাপার আমাদের ভিতর আবিষ্কৃত হচ্ছে, অথচ আমরা ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতে বা বুঝতে পারলাম না! অবাক কাণ্ডই বটে!
বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই উপদ্রবের বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা বেশি সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন দলমত নির্বিশেষে সর্বশ্রেণীর আলেম সমাজ। একই সঙ্গে দেশের পাঁচশটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণের পর জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররামের তখনকার খতিব মাওলানা উবায়দুল হক রহ. এর ডাকে দেশের প্রায় সবগুলি মসজিদ থেকে একই সময়ে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল, যা এদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তখন আর একটা বিষয়ও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, জঙ্গীবাদের নাটকটি অনেকটাই সাজানো একটি বায়বীয় ব্যাপার ছাড়া আর কিছু নয় এবং এর সাথে ইসলাম ও দীনদার মানুষের মোটেও কোন সংশ্লিষ্টতা নাই।
তারপর থেকে গত নির্বাচন পর্যন্ত জঙ্গীবাদ নিয়ে কাউকেই উদ্বেগ প্রকাশ করতে বড় একটা দেখা যায়নি, কিন্তু নির্বাচনে একটি দলের ভূমিধস বিজয় লাভ করার পরপরই পুনরায় জঙ্গী ইসু্যটি অত্যন্ত জোরালোভাবে সামনে এসে গেছে। অনেক দূরদর্শী চিন্তাবিদের ধারণা, গত নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে বিশ্ব-ইহুদি লবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাঁধে সওয়ার হয়ে ইরাক এবং অন্য কয়েকটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে জঙ্গী মদদদান এবং ইরাকের নানা ধরনের মারাত্মক অস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার গড়ে তোলার অভিযোগ অত্যন্ত জোরেসোরে দাঁড় করানো হয়েছিল।
তখনকার এসব মার্কিনী প্রচারণা যে ছিল নিছক বানোয়াট এবং অত্যন্ত নিম্নমানের মিথ্যাচার, তা দুনিয়ার মানুষের পক্ষে বুঝতে মোটেই দেরি হয় নাই, কিন্তু ততদিনে ইহুদি মার্কিন হায়েনারা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইরাক দেশটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দিয়েছে। হত্যা করেছে দশ লক্ষাধিক মাসুম শিশু নারী বৃদ্ধসহ বিপুল সংখ্যক নিরপরাধ বনী আদমকে।
পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী পিশাচেরা যেহেতু সমগ্র মুসলিম উম্মাহকেই ধ্বংস করে দিতে সংকল্পবদ্ধ, তাই ইরাকের সাথে সাথেই এরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে আফগানিস্তানের উপর, কিন্তু ঈমানের বলে বলীয়ান আফগান মোজাহেদদের পদানত করা এখনও সম্ভবপর হয়নি। সে দেশটিরও লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ খুন করে এখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন ঘাতকগোষ্ঠী অনেকটাই ক্লান্ত। ওরা এখন পাহাড়-পর্বত ঘেরা আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গতঃ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দাজ্জালী শক্তির বিরুদ্ধে 'খোরাসানের' যে মোজাহেদীন এগিয়ে আসবেন বলে হাদিস শরীফে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, অনেক তত্ত্বজ্ঞানীগণের মতে সেই খোরাসানীরাই হবেন আফগান বীর জনতা!
যাহোক, মুসলিম উম্মাহকে সম্পূর্ণরূপে পযর্ুদস্ত করার যে শয়তানী নীলনকশা রয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ সেই পরিকল্পনার বাইরে নয়। এ কারণেই দেশটিকে প্রথমে রাজনৈতিকভাবে তছনছ করে দিয়ে শুরু করা হয়েছে জঙ্গীবাদের ঢালাও প্রচারণা। মসজিদ-মাদরাসা এবং ইসলামী সংস্থা ও সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে অত্যন্ত দায়িত্বহীনভাবে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন বর্তমানে সমাজের নিতান্ত দায়িত্বশীলরা। প্রচারণার এই সয়লাবের মুখোমুখি হয়ে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ইরাকের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলার অভিযোগের সাথে বাংলাদেশের মসজিদ-মাদরাসাগুলিতে জঙ্গী আবিষ্কার অভিযানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অভিন্ন। সেমতে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, ইরাকের উপর যে পৈশাচিক হামলা চালানো হয়েছিল, সে ধরনেরই কিছু একটা কি আমাদের জন্যও অপেক্ষা করছে?
দেশের সবচাইতে ভদ্র ও শান্তিপ্রিয় এবং গণকল্যাণব্রতে নিয়োজিত শ্রেণীটি হচ্ছে আলেম সমাজ।
সেই আলেম সমাজেরই একান্ত নিজস্ব প্রতিষ্ঠান কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধেও ইহুদিলবির আনুকূল্যধন্য কোনো কোনো খবরের কাগজে সন্দেহের তীর নিক্ষেপ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে! পরবর্তীতে রাজনৈতিক মহলের একটি শ্রেণীও মার্কিন ইহুদিদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে কোরাস গাইতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশে সামপ্রতিককালে যতগুলি বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে, এগুলির পেছনে কে বা কারা তেল-মবিল জুগিয়েছে জানি না, তবে বোমা-গ্রেনেডগুলির উৎসস্থল যে আমাদের পাশর্্ববর্তী বন্ধু দেশটি, সে সম্পর্কিত অনেক দলীল-দস্তাবেজ পাওয়া গেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
যারাই এই আত্মঘাতী অপকর্মে জড়িত, তারা যে এ দেশবাসীর বন্ধু বা মুসলিম উম্মাহর হিতাকাঙ্ক্ষী কেউ নয়, এটা এ দেশবাসীর সার্বজনীন বিশ্বাস।
আমরা শুধু এই গোষ্ঠীর নিন্দাই করি না, এদের পরিপূর্ণ উৎখাত চাই। উৎখাত চাই চাঁদাবাজি এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসেরও।
পারিপাশ্বর্িক যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় শীঘ্রই দুনিয়াব্যাপী একটা সর্বগ্রাসী দুর্দিন ঘনিয়ে আসছে। ইহুদি শয়তানদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বক্তব্য হচ্ছে, এরা যাবতীয় ফেতনা-ফাসাদের উদগাতা। এরাই যুদ্ধের আগুন জ্বালায়। এরা তাদের প্রজ্বলিত আগুনেই জ্বলে-পুড়ে মরে। মোটকথা, আল্লাহর গজব সমাগত বলে অনেকেই অনুমান করছেন।
আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন এবং আল্লাহর রহমতের কোলে আত্মসমর্পণ করা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।