আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুরআনের আয়াতঃ ১) ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা/দ্বীন আর কার হইতে পারে যে মানুষ কে আল্লহ তায়া’লার দিকে ডাকে।

ইরফান হাবিব

কুরআনের আয়াতঃ ১) ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা/দ্বীন আর কার হইতে পারে যে মানুষ কে আল্লহ তায়া’লার দিকে ডাকে। ২) তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত তোমাদের পাঠানো হয়েছে মানুষের কল্যান কামনার জন্য। তোমর সৎ কাজের আহবান করবে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। ৩) সময়ের কসম, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ কেবল তারা বাদে যারা ঈমান এনেছে, নেক আমাল করেছে, হকের দিকে দাওয়াত দিয়েছে ও সবর করেছে। হাদীসঃ ১) আল্লহ তায়া’লার হুকুমের সামনে মানুষের উদাহরণ হল নাকে লাগানো উটের মত।

২) যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে কালেমা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেহ জিজ্ঞাসা করল, এখলাস কি? ফরইমালেন, যা হারাম থেকে ফিরিয়ে রাখে। মুহতারাম দোস্ত, বুজুর্গ, আজিজ, দাওয়াত ইলাল্লহ উম্মতের (ফরজে মুন্তাবী) গুরুত্বপুর্ণ ফরয/বিষয়, উম্মতের কোন সময়ে কোন ব্যক্তি এই ফরয হইতে মুক্ত নয়। এটা জরুরী কথা উম্মত নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য ও জিম্মাদারী আদায়ের ক্ষেত্রে উদাসীন। ঐ মেহনত, ঐ কাজ প্রত্যেক জামানায় প্রত্যেক উম্মতের ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য শর্ত এবং যে তরীকায় মেহনত উম্মতকে দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে, ঐ তরীকায় মেহনত, ঐ যুহদ উম্মতের চিন্তা ফিকির থেকেও বের হয়ে গেছে।

এতে কোন সন্দেহ নেই যতদিন উম্মত দাওয়াতের উপর কায়েম থাকবে উম্মত আপন দ্বীনের উপর কায়েম থাকবে, আর যখন উম্মত নিজেদের দ্বীনের দাওয়াত ছেড়ে দিবে উম্মত নিজেদের দ্বীন ছেড়ে দিয়ে অপরের দ্বীনের দিকে ঝুকে পড়বে, তখন অন্যান্য ধর্মাবলম্বনকারিরা নিজ নিজ দ্বীনের দিকে আহবান করবে। ইতিহাস পুরাপুরিই সাক্ষী যতদিন পর্যন্ত উম্মতের মধ্যে দাওয়াত ইল্লাল্লহ এর ব্যপকতা ছিল তত দিন পর্যন্ত উম্মত পথভ্রষ্ট হয়নি, দ্বীন ছেড়ে দেয়ার নমুনা পাওয়া যায়নি। উম্মত তার দ্বীন ছেড়ে দেয়া এবং দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীনতার যে মূল কারণ তা হল দ্বীনের দাওয়াত ছেড়ে দেয়া। এটাই কারণ। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত কুরআনের বিভিন্ন অধ্যায়ে পরিষ্কার ভাষায়, সুন্দর ভাবে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি দাওয়াত ও আমাল/ইবাদাত দুটোকে নিজের জিন্দেগী একত্রিত করবে তার দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে কোন ক্ষতি দেখা যাবে না।

যেন দাওয়াত ইলাল্লহ দ্বীনের হক এবং দ্বীনের উপর অটল থাকার এবং দ্বীন কে হেফাজ়ত করার যোগ্যতা পয়দা জন্য। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত কুরআনের পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন, ومنْ احْسن قولا مّمّن -الاية আল্লহ তায়া’লা বলতেছেন “ঐ ব্যক্তির দ্বীন থেকে আর কার দ্বীন উত্তম হতে পারে যে দাওয়াত দিতে দিতে আমাল করে। ” এ বাক্যটি এস্তেফহামে এনকারী (প্রশ্নবাচক কিন্তু অস্বীকৃতিমূলক), ওলামাকেরাম লিখেছেন, এস্তেফহামে এনকারী কোন বাক্যকে শক্তিশালী করার জন্য, বাক্যের ভাবকে মজবুত জন্য ব্যবহার হয়। আল্লহ তায়া’লা এখানে বলছেন ঐ ব্যক্তির দ্বীনই সবচেয়ে উত্তম। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত এস্তেমায়ী ভাবে সমস্ত মুসলমানদেরকে নিজের দ্বীনের মধ্যে হুসন/ভালাই/উত্তম রূপ পয়দার জন্য আহবান করতঃ এক কথাই বলতেছেন কোন ব্যক্তির দ্বীন উত্তম হতে পারে না যে পর্যন্ত সে দাওয়াত ও আমাল একত্রিত না করে।

এভাবে মানুষের মাঝে নিজের দ্বীন অন্যের কাছে প্রকাশ করার যোগ্যতা পয়াদা হবে। যে নিজের দ্বীনের দাওয়াত ছেড়ে দিবে তার দিলের মধ্যে দ্বীনের সাথে আল্লহ তায়া’লার যে ওয়াদাসমূহ আছে তার উপর ইয়াকীন কমজোর হয়ে যাবে। যা তাকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। মুফাসসিরিনে কেরাম হেদায়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন দ্বীনের মধ্যে উত্তম পন্থা ও মজবুতি ধরে রাখার জন্য এবং দ্বীনের কোন এক হুকুমের মোকাবেলায় যদি কোন প্রতিবন্ধকতা আসেও সেই প্রতিবন্ধকতা থেকে বাঁচার জন্য জরুরী হল আমাল করুক বা ছাড়ুক প্রত্যেক ঈমানওয়ালা দাওয়াত ইলাল্লহকে নিজের দ্বীনের হেফাজতের জরিয়া মনে করে আমাল করতে থাকে তখন তার মধ্যে নিজেকে মুসলমান দাবী করার যোগ্যতা পয়দা হবে। আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু নিজের জামাতের সাথে রোমে কাজ করতেছিলেন।

রোমের বাদশাহ ছিল খৃষ্টান। রোমের বাদশাহ আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহুকে এই বলে দাওয়াত দিল যে তুমি খৃষ্টান হয়ে যাও। যদি তুমি খৃষ্টান হয়ে যাও তাহলে আমি তোমাকে আমার অর্ধেক রাজত্ব দিয়ে দিব। দুনিয়ার মধ্যে ঐ কি শক্তি এবং নিজের দ্বীনের উপর এস্তেকামাতের যে বড় বড় হিম্মত পেশ করেছেন, এত বড় রাজত্ব অতঃপর নিজের জান চলে যাওয়া সত্ত্বেও নিজ দ্বীন ছেড়ে দেয়াতো দুরের কথা, দ্বীনের কোন আমাল এবং দ্বীনের অংশসমূহ থেকে কোন একটি অংশ, এমনকি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এক সুন্নত, হোক তা অভ্যাসগত অথবা এবাদাতগত, কোন আশা বা ভয়ের কারণে ছেড়ে দিতে তৈরি হননি। তার কারণ হল নিজের দ্বীনের জন্য নকল হরকত/চলাফিরা বা মুজাহাদার দ্বারা দ্বীনের গুরুত্ব ও আজমত দিলের মধ্যে মজবুত হয়ে গেছে।

রোমের বাদশাহের খৃষ্টান হওয়ার দাওয়াতের উত্তরে আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন তোমার পুরা বাদশাহীও যদি আমি পেয়ে যাই তবুও আমি চোখের পলকের জন্যও মুহাম্মাদের (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীন ছাড়তে রাজি নই। বাদশা এতে হতাশ হয়ে গেল এবং বলল যে, আমি তোমাকে কতল করব। আব্দুল্লহ বিন হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন انْت وذاك তোমার দিল যা চায় করগে। বাদশা এক ডেগে পানি গরম কর নিয়ে আসল। এক সাথীকে তাঁর সামনেই শেষ করে দেয়ার জন্য পানি ঢেলে দিল।

আ’ব্দুল্লহ ইবনে হুজাফা রদিয়াল্লহু আ’নহু বিষয়টা দেখতে ছিলেন। বাদশার পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হল এখন তোমাকেও এখানে ফেলে দেয়া হবে। এই কথা বলে ফেলতে শুরু করলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। বাদশা বলল, কি হল? খৃষ্টান হয়ে যাও। তিনি অস্বীকার করলেন।

বাদশা বলল, তাহলে কাঁদছ কেন? বললেন, আমি তো জীবন চলে যাবার ভয়ে কাঁদছি না। বরং আমি আল্লহ তায়া’লার রাস্তায় হাকীর/তুচ্ছ একটি মাত্র জীবন দিতে পারছি বলে কাঁদছি। আমার দিলের তামান্না/আশাতো এই ছিল যে, শরীরের যতগুলো লোমকুপ আছে, প্রত্যেক লোমকুপের গোড়ায় যদি একটি করে জীবন থাকত তবে আমি এক এক করে প্রত্যেকটা জীবনই আমি আল্লহর রাস্তায় কোরবান/উৎসর্গ করে দিতাম। ভাই দোস্ত, যে মেহনত গারীক/মজবুত হবে উম্মতের দিলের মধ্যেও ঐ মেহনতের আছরও গারীক/মজবুত হবে। এটা প্রত্যেক ব্যক্তির দিলের চাহিদা ও কাইফিয়াত/অবস্থা অনুযায়ী হবে।

যে লাইনে মেহনত হবে ঐ লাইনে ইয়াকিন পয়দা হবে। হযরত (ইউসুফ রহমাতুল্লহ আ’লাইহি) বলতেন, মানুষের বৈশিষ্ট্যই হল, যে ব্যক্তি যে জিনিসের ইয়াকীন করবে সে ঐ জিনিসকেই প্রাধান্য দিবে। মৌলিক ভাবে কথাগুলো স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, মেহনতের রুখ/গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। নিজ দ্বীন ও দ্বীনের সমস্ত আহকামাত এবং দ্বীনের উপর এস্তেকামাতের যে বুনিয়াদী ও এস্তেমায়ী অজিফা (প্রধান ও সমষ্টিগত দায়িত্ব) ছিল তা উম্মত এস্তেমায়ী/সমষ্টিগত ভাবে ছেড়ে দিয়েছে। দাওয়াত ইলাল্লহ উম্মতের ফরজে আইন জিম্মাদারী।

ফরযে কিফায়া নয়। উলামা কেরাম লিখেছেন ফরযে কেফায়া ঐ কাজ কে বলে যে কাজ অন্যের জন্য করা হয়। ফরযে আইনতো ঐ কাজ হয় যা নিজের জন্য করার হয়। منْ جاهد فإنّما يجاهد لنفْسه প্রত্যেক ব্যক্তির কোশেশ/চেষ্টা-মেহনত স্বয়ং তার নিনের যাতের জন্য। অন্যকে দাওয়াত দিলে অন্যেরও উপকার হবে কিন্তু দাওয়াত খোদ নিজের জন্য।

কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির জিম্মায় এই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা ফরযে আইন যে পরিমাণ ঈমান তাকে হারাম থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবে। এই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা ফরযে আইন যে পরিমাণ ঈমান তাকে হারাম থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবে। এই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের জিম্মায় এবং প্রত্যেক মুমিন মহিলার জিম্মায় ফরযে আইন যে পরিমাণ ঈমান তাকে হারাম থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবে। দাওয়াত নিজের যাতের জন্য হওয়ার দৃষ্টিকোন থেকে ফরযে আইন। যেহেতু ঈমান শেখা, কমপক্ষে এতটুকু, যতটুকু ঈমান তাকে হামার থেকে ফিরাবে এবং আল্লহ তায়া’লা এতায়াতের উপর কায়েম রাখবএই পরিমাণ ঈমান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের জিম্মায় ফরযে আইন।

ভাই দোস্ত, দাওয়াতের বৈশিষ্ট্যই হল ইয়াকীন পয়দা করা। হযরত (ইউসুফ রহমাতুল্লহ আ’লাইহি) বলতেন যে নিজের মধ্যে পয়দা করতে চাও ঐ জিনিসের আমাল দাওয়াতের সুরতে করতে থাক। স্বয়ং সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম বলতেন, আমরা প্রথম ঈমান শিখেছি এরপর কুরআন শিখেছি। আজ উম্মতের মধ্যে আমাল শেখার জযবাতো আছে কিন্তু ঈমান শেখার ফিকির, ঈমান শেখার জযবা, ঈমান শেখার তরীকা, ঈমান শক্তিশালী করার আসবাব/মাধ্যম এস্তেমায়ী/সমষ্টিগত ভাবে উম্মত ছেড়ে দিয়েছে। খোদ সাহাবাহ কেরাম বলতেছেন আমরা প্রথম ঈমান শিখেছি এরপর কুরআন শিখেছি।

আমাদের চিন্তা করা দরকার ঐ সমস্ত সাহাবাহ কেরাম, যাঁদের অন্তরে ঈমান পাহাড়ের চেয়েও বেশি মজবুত ছিল, ঐ সাহাবাহ কেরাম যাঁদের ঈমান তাঁদের অন্তরের মধ্যে হাকীকতের সাথে বিদ্যমান ছিল সেসমস্ত সাহাবাহ কেরামদেরও হু্যূর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে সভাবগত ভাবেই দাজদীদে ঈমান/ ঈমান নবায়নের নির্দেশ । বর্ণিত আছে হুযুর সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ কেরাম দের লক্ষ্য করে বলেছেন আপন ঈমান নবায়ন করতে থাক। সাহাবাহ কেরাম আরজ করলেন ইয়া রসুলুল্লহ, ঈমান কিভাবে নবায়ন করব। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর কাসরত/আধিক্য এর দ্বারা ঈমান নবায়ন কর। ভাই দোস্ত, উম্মতের মধ্যে থেকে এস্তেমায়ী ভাবে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর দাওয়াত, দেখুন লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ কিসের যিকির/আলোচনা? ইহাতো দাওয়াত এবং আল্লহ তায়া’লা সিফতে আ’লিয়া/উচ্চ গুনাবলীর আলোচনা।

লা-ইলাহা ইল্লাল্লহের যিকির অবশ্যই ফাওয়া পৌঁছাবে কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আলোচনা উদ্দেশ্য। হুকুমত, জমিজমা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি যেগুলো আলোচনা হবে সেগুলি ইয়াকীন বসবে। আর যে জিনিসের ইয়াকীন হবে সেই জিনিসেরই এতায়াত/অনূসরণ হবে। বুনিয়াদী/মৌলিক কথা হল সাহাবাহ কেরামের কালিমার লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর কাসরত/বেশিবেশি যিকিরের দ্বারা ঈমানের নবায়নের এবং ঈমানের মাজবুতির যে উদ্দেশ্য উহা হল এই সাহাবাহ কেরাম মাসজিদের মধ্যে ঈমানী মজলিস কায়েম করতেন, সেখানে তাঁরা গুরুত্বের আল্লহ রব্বুল ইজ্জাতের আলোচনা করতেন। স্বয়ং মুয়ায বিন জাবাল, আ’ব্দুল্লহ বিন রওয়াহা রদিয়াল্লহু আ’নহুমা তাদের মা’মূল/অভ্যাস ছিল মানুষের সাথে মোলাকাত/সাক্ষাত করে এলান/বলতেন আস এখানে বস কিছু ক্ষনের জন্য আপন আপন ঈমান নিয়ে আছ।

ভাই দোস্ত, উম্মতের মধ্যে থেকে ব্যাপক ভাবে এই আমাল ছুটে গেছে। মাওলানা ইলিয়াস সাহেব রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলতেন, আমি যদি এই মেহনতের কোন নাম রাখতাম তবে তাহরীক-ই-ঈমান রাখতাম। আমি এই কথাটা সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করতে চাই আমাদের মেহনত এবং মানুষদের সাথে সাক্ষাতের মৌলিক উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক ঈমানওয়ালা কে দাওয়াতের মাধ্যমে তার নিজ মাদী নকশা/সামাজিক ও পারিপার্শিক পরিস্থিতি থেকে বের করে মাসজিদের পরিবেশে ঈমানের মজলিসে, ঈমানের পরিবেশে ইয়াকীন শিখানো। আমাদের মোলাকাত/সাক্ষাতে মৌলিক উদ্দেশ্য। যে ব্যক্তি যে পরিমাণ সামজিকতা/পারিপার্শিকতায় জড়িত, ঐ পরিমাণ দাওয়াতের দ্বারা, গাস্তের দ্বারা পারিপার্শিকতা থেকে বের করে ঈমানী মজলিসে জুড়িয়ে আল্লহর তাকত/শক্তিকে, আল্লহর কুদরতকে, আল্লহর আজমতকে, আল্লহর গায়েবী নেজামকে বুঝানো, অতঃপর তাদের প্রত্যেকের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দাওয়াত দেওয়ানো।

সমষ্টিগত ভাবে এই চলন/অভ্যাসটা উম্মতের মধ্যে থেকে খতম/শেষ হয়ে গেছে। এর গুরুত্ব এত বেশি ছিল যে, সাহাবাহ কেরাম যাদের ঈমান তাঁদের অন্তরে পাহাড়ের মত দৃঢ় ছিল, যেমন উসমান রদিয়াল্লহু আ’নহু এর ঈমানের ব্যাপারে হযরত উ’মার রদিয়াল্লহু আ’নহু বলেছিলেন, তিনি এমন ব্যক্তিত্ব, যদি তাঁর ঈমানকে একটি বড় সৈন্য দলের মধ্যেও বন্টন করে দেওয়া হয় তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে, এই ধরণের ইয়াকীনওয়ালা সাহাবাহ কেরাম যাদের ঈমান আমাদের সকলের জন্য নমুনা বানানো হয়েছে, পবিত্র কুরআনের ইরশাদ, امنوْا كما امن النّاس তোমরা ঈমান আন যেমন সাহাবাহ কেরাম ঈমান এনেছিলেন, স্বয়ং এমন সাহাবাহ কেরামদের ঈমান নবায়নের জন্য হুকুম করা হয়েছে। হুযুর সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের কায়েনাতের (সৃষ্টি জগত) মধ্যে পরে ঘটবে এমন জিনিসের দ্বারাও ঈমান শিখিয়েছেন। এর উদাহরণ, সময়ের স্বল্পতার কারণে সংক্ষিপ্ত করছি, এর বহু উদাহরণ হাদিসে পাওয়া যায়। যেমন, এক রাতে বৃষ্টি হল।

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ কেরামদের বললেন, সকালে তোমাদের মধ্যে কাফির অবস্থায় উঠবে, কেউ ঈমানদার অবস্থায় উঠবে। কায়েনাতের মধ্যে (সৃষ্টি জগতে) পরিবর্তনশীল জিনিসের সম্পর্ক আল্লহ তায়া’লার সাথে করার মধ্যমেই ঈমান শিখিছেন। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাহাবাহ কেরাম দের বললেন, তোমাদের মধ্যে সকালে কেউ কাফের অবস্থায় উঠবে আর কেউ ঈমান নিয়ে উঠবে, একথা শুনে সাহাবাহ কেরাম ঘাবড়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তা কিভাবে হবে? হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন, এই যে বৃষ্টি হল, যে ব্যক্তি একথা বলবে অমুক নক্ষত্রের কারনে বৃষ্টি হয়েছে যে আল্লহ তায়া’লাকে অস্বীকারকারী এবং নক্ষত্রে বিশ্বাসী। আর যে একথা বলবে, এই বৃষ্টি আল্লহ তায়া’লার হুকুমেই হয়েছে সে আল্লহ তায়া’লার উপর ঈমান গ্রহণ কারী এবং নক্ষত্রের অস্বীকারকারী।

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সাহাবাহদের এভাবেই ঈমান শিখিয়েছেন। আল্লহ তায়া’লার আহকামাতের (বিধান) উপর উঠিয়েছেন বস্তুর মোকাবেলায় এবং সৃষ্টি জগতের পরিবর্তনশীল জিনিস সমূহকে কায়েনাতের সাথে সম্পৃক্ত করার বিপরীতে কায়েনাতের সৃষ্টিকর্তার (অর্থাৎ আল্লহ তায়া’লার) সাথে জুড়িয়ে ইয়াকীনের চর্চা করিয়েছেন। সমষ্টিগত ভাবে উম্মতের মধ্য থেকে এই তরীকার মেহনত খতম হয়ে গেছে। ভাই দোস্ত, আমি কিভাবে উপস্থাপন করব, উপস্থিত সকলে বিষয়টি সরাসরি বুঝতে পারবে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা সর্বক্ষনই আমরা মাখলুকের আলোচনায় ব্যস্ত।

তাহলে ইবাদাত, তেলাওয়াত, যিকির এগুলোর মধ্যে কিভাবে আল্লহ তায়া’লার ধ্যান পয়দা হবে? কারণ সমস্ত দিল ও দেমাগ পুরোটাই আল্লহ তায়া’লার গায়েরের দ্বারা প্রভাবিত। যদি দাওয়াতের মাধ্যমে ভিতরগত/আত্মিক অন্ধকারকে দূর করা না হয় তাহলে ঐসব আমালের মধ্যে কিভাবে আল্লহ তায়া’লার ধ্যান পয়দা হবে? এইজন্য ভাই দোস্ত, আমাদেরকে সমষ্টিগত ভাবে কাজটি রুটিন করে নিতে হবে যে আমাদের মধ্যে প্রত্যেক ঈমানওয়ালা ব্যক্তিই সাহাবাহ কেরামদের মত দৈনন্দিন ঈমানের মাজলিস কায়েম করবে। আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা, মুয়ায ইবনে জাবাল রদিয়াল্লহ আ’নহুমা মানুষের সঙ্গে মোলাকাত/সাক্ষাত করে করে লোকজন জড়ো করে বলতেন, আস ভাই, বস, অল্প সময়ের জন্য ঈমানের আলোচনা করে যাও। এইজন্য ভাই দোস্ত, আমি এ কথাই বলতে চাই যে, ঈমান মজবুত করার মাধ্যম গুলোকে চিন্তা করতে থাকুন। ঈমান মজবুত করার চারটি মাধ্যম।

প্রথমতঃ আল্লহ তায়া’লার কুদরত, আল্লহ তায়া’লার আজমাত, আল্লহ তায়া’লার বড়ত্বকে খুব বেশি বয়ান/আলোচনা করুন। যতবেশি মাখলুকের বড়ত্ব আলোচনা করা হয় পুরোটাকেই অস্বীকার করুন। নবী সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এই কথারই নির্দেশ ছিল। হে নবী, আপনি আমারই বড়ত্ব বর্ণনা করুন। এবং আপনার সকল ইচ্ছাকেই আমার যাতের উপর সমর্পণ করে লোকদেরকে শিখান যে করনেওয়ালা যাত একমাত্র আল্লহ তায়া’লা।

এই বিষটি হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে শিক্ষা দেয়ার জন্যই আল্লহ তায়া’লা বলেছেন যে, আজ একথার দাওয়াত দেন যে করনেওয়ালা যাত একমাত্র আল্লহ তায়া’লা। একদা হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, আগামীকাল বলব, আসহাবে কাহাফ কারা ছিল। বিষয়টি একথারই উদাহরণ যে, নিজের সমস্ত ইচ্ছাকে স্বয়ং আল্লহ তায়া’লার উপর সমর্পণ করার গুরুত্ব কতটুকু। হুযুর সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, আমি আগামীকাল বলব, আসহাফে কাহাফ কারা ছিল। কিন্তু তিনি ইনশাআল্লহ বলতে ভুলে গেলেন।

উলামা কেরাম লিখেন যে, এরপর প্রায় পনের দিন যাবত ওহী আসা বন্ধ ছিল। অহী অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যে এতদিনের ব্যবধান কখনও ছিল না। কারণ তিনি কেন বলেছিলেন যে, আমি কাল বলব, তিনি একথা কেন বলে নাই যে, যদি আল্লহ তায়া’লা চান তাহলে কাল বলব। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অস্থির হয়ে গেলেন, চিন্তিত হয়ে পড়লেন। লোকজন বিভিন্ন ভাবে কটুক্তি করতে শুরু করল, হে মুহাম্মাদ (সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আকাশ থেকে অহী কেন আসে না যে আপনি আল্লহ তায়া’লার কাছ থেকে জেনে আমাদেরকে বলবেন, আসহাফে কাহাফের ঘটনা কি ছিল? দীর্ঘ ১৫ দিন পর এই অহী আসল যে হে নবী, কখনও এই কথা বলবেন না যে, আমি আগামীকাল কাজটি করব।

যতক্ষন না নিজের কোন কাজের ইচ্ছার সাথে ইনশাআল্লহ (যদি আল্লহ তায়া’লা চান) না বলবেন, ততক্ষন কোন কাজ করবেন না। (وَاذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ) (সূরা কাহফঃ ২৪) এখানে ইনশাআল্লহ বলারও কথা বলা হয়েছে। যখনই নিজের কোন কাজকে আল্লহ তায়া’লার ইচ্ছার উপর সমর্পণ করা ভুলে যাবেন সাথে সাথে ইনশাআল্লহ বলে নিবেন। ১৫ দিন পর্যন্ত এই কারণেই অহী আসা বন্ধ ছিল যে, আপনি কেন বলেছিলেন, আমি আগামীকাল বলব, কেন এই কথা বলেন নি যে, যদি আল্লহ তায়া’লা চান তাহলে আগামী কাল বলব। ভাই দোস্ত, ঈমান মজবুত করার মাধ্যম গুলোর প্রথমটি হল এটিই।

আল্লহ তায়া’লার কুদরত, আল্লহ তায়া’লার আজমাত, আল্লহ তায়া’লার বড়ত্বকে বয়ান/আলোচনা করা। খুব বেশি করে একথা আলোচনা করুন, কুদরত আল্লহ তায়া’লার যাতের মধ্যেই, কায়েনাতের মধ্যে, ফেরেশতাদের মধ্যে কারও মধ্যেই কোন ক্ষমতা নাই। ক্ষমতা একমাত্র আল্লহ তায়া’লার। কায়েনাতের মধ্যে যা কিছু আমরা দেখি সব কিছু আল্লহ তায়া’লার কুদরত থেকে সৃষ্টি হয়ে আল্লহ তায়া’লার কুদরতেরই অধীন। এমনও নয় যে, আল্লহ তায়া’লা সব কিছু সৃষ্টি করে মানুষের কাছে সোপর্দ করে দিয়াছেন।

এক সওয়ারীর হাতে সওয়ারের লাগাম রয়েছে। সে আল্লহ তায়া’লা কে বলছে, হে আল্লহ তায়া’লা, এটি আমার কাবুতে/কন্ট্রোলে ছিল না, তুমিই তাকে অধীন করে দিয়েছ। মানুষের হাতে কিছুই নেই করনেওয়ালা যাত/সত্ত্বা একমাত্র আল্লহ তায়া’লা। আসলে একথার ইয়াকীন একথার দাওয়াতের মাধ্যমে দিলের মধ্যে আসে। হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের বিভিন্ন সময় সুযোগে এভাবেই শিখাতেন।

ঈমান মজবুত করার দ্বিতীয় মাধ্যম হল, নবী আ’লাইহিস সালাম দের সাথে আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত যে সব গায়েবী সাহায্য সহযোগীতা করেছেন তা বর্ণনা করা। কেননা নবীদের ঘটনাবলী অন্তরে স্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য বর্ণনা করা হয়। ভাই দোস্ত, এখন বর্তমান অবস্থার পরিপেক্ষিতে এমনিতেই মানুষের মধ্য থেকে দ্বীন ছুটে যাবে এবং এই অবস্থায় মানুষ এমনিতেই আসবাবকে পথ গ্রহন করবে। আল্লহ তায়া’লার যাতে আ’লীর হুকুমের উপর দিলের স্থিরতা তখনই সৃষ্টি হবে যখন নবী আ’লাইহিস সালামদের ঘটনাবলীর দ্বারা ইয়াকীন শেখা হবে। যে সমস্ত ঘটনাবলী নবীদের সাথে হয়েছে তা কিয়ামাত পর্যন্ত আল্লহ তায়া’লার সহযোগীতার একটি নীতিমালা।

ভাই দোস্ত, কায়েনাত কোন নীতিমালা নয়। বরং আল্লহ তায়া’লা আহকামাতই হল আল্লহ তায়া’লার নীতিমালা। আল্লহ তায়া’লার কুদরত ওয়াদার সাথে আর ওয়াদা হুকুমের সাথে। নবীদের ঘটনাবলীর দ্বারা অন্তরের স্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই জন্যই আল্লহ তায়া’লা হুযুর আকরাম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আম্বিয়া আ’লাইহিমুস সালামদের ঘটনাবলী ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন যেন এর দ্বারা তাঁর অন্তরে স্থিরতা পয়দা হয়।

আমাদের জন্য ইয়াকীন মজবুত করার মৌলিক মাধ্যম হল নবীদের ঘটনাবলী এবং সাহায্য সহযোগীতাগুলো এই ইয়াকীনের সাথে বর্ণনা করা যে, আজও আল্লহ তায়া’লা এই দ্বীনের মধ্যে ঐরূপ সাহায্য সহযোগীতা করবেন যেরূপ অতীতে এই দ্বীনের মধ্যে নবীদেরকে সাহায্য সহযোগীতা করেছেন। নতুবা, দিলের মধ্যে এই সন্দেহ সৃষ্টি হবে যে, যে সকল নুসরত মদদ অতীতে হয়েছিল তা এখন আর হবে না। অথচ আল্লহ তায়া’লা নিজের দ্বীনের মধ্যে কিয়ামাত পর্যন্ত সকল মুমিনদের সাথে নবীদের মত সাহায্য সহযোগীতা করবেন। স্বয়ং আল্লহ তায়া’লা পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেছেন (إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ) (সুরাঃ হা-মীম সিজদাহঃ ৫১) অর্থাৎ আমি সাহায্য করব নবীদেরকে এবং তাঁদের উপর ঈমান আনয়নকারীদেরকে। এবং কিয়ামাত পর্যন্ত এভাবেই সাহায্য সহযোগীতা করব।

ভাই দোস্ত বুজুর্গ এটাই হল ইয়াকীন মজবুত করার মাধ্যম যার দ্বারা অন্তরের মধ্যে ঈমান সুদৃঢ় হয়। আল্লহ তায়া’লার ওয়াদাগুলোর উপর ইয়াকীনের দ্বারা আল্লহ তায়া’লার হুকুম আহকামের উপর যায়। দাওয়াত সমস্ত আম্বিয়া কেরাম আ’লাইহিমুস সালামদের এস্তেমায়ী অজিফা, এস্তেমায়ী মেহনত। সকল নবীদের শরিয়াত ভিন্ন ভিন্ন ছিল কিন্তু দাওয়াত একই ছিল। বিভিন্ন জামানায়, বিভিন্ন কওমের মধ্যে যে নবী এসেছেন তার দাওয়াত ওই সময়ে কওমের মধ্যে প্রচলিত নকশার বিরুদ্ধে আল্লহ থেকে সবকিছু হওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন।

উম্মতের জন্য প্রত্যেক নবীই দাওয়াত ছিল কওমের প্রচলিত নকশার মোকাবেলায় আল্লহ জাতে আ’লী থেকে হওয়ার দাওয়াত। প্রত্যেক জামানায় আম্বিয়া কেরাম আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত থেকে এই দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, কওম আল্লহর গায়ের বিভিন্ন আসবাব এবং সেকেলের উপর সমস্যা সমাধান হবার ইয়াকীন রাখনেওয়ালা ছিল, আম্বিয়া আ’লাইহিমুস সালাম আল্লহর তরফ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন নিজের কওমকে সকল আসবাবের মোকাবেলায় নিজেদের কামিয়াবীর ইয়াকীন শিখানোর জন্য। আসল কথা হল, দাওয়াতে বৈশিষ্ট্যই হল ইয়াকীন পয়দা করা। আল্লহ তাকিদের সাথে এই কথাই বলেছেন, যে আমার রাস্তায় মেহনত করবে আমি তাকে অবশ্যই হেদায়েত দিব। এই মেহনতের মাধ্যমে নিজের ইয়াকীন পরিবর্তন করা এই কাজের মাকসাদ।

সবচেয়ে পয়লা যেই দাওয়াত তা হল কালেমার উপর মেহনত, নিজের ইয়াকীন বদলানোর মশক করা এই কালেমার মেহনতের মাধ্যমে। নিজের ইয়াকীন বদলানোর মশক করা এটা কালেমার মেহনত। আসলে এ মেহনত হল ইয়াকীনের পরিবর্তনের জন্য। প্রত্যেক কওমের মধ্যে কিছু না কিছু নবীদের আমাল বাকি ছিল, কিন্তু প্রত্যেক নবীদের মেহনত তার কওমের ইয়াকীন এবং আকীদা আল্লহর উপর আনার জন্য ছিল। ওলামা কেরাম লিখেন ২ লাখের উপরে যে আম্বিয়া কেরাম পাঠানো হয়ে ছিল তাদের বেশির ভাগ মুসলমানদের উপরে পাঠানো হয়েছিল।

তারা দাওয়াতের মাধ্যমে কওমকে আল্লাহর গায়ের থেকে আল্লহর দিকে ফিরানোর জন্য মেহনত করেছেন। দাওয়াতের বৈশিষ্ট্যই হল ইয়াকীন পয়দা করা। যে লাইনে মেহনত হবে ওই লাইনে দীলের ভিতর ইয়াকীন হবে। আমার সবচেয়ে বড় জিম্মাদারী হল এস্তেমায়ী ভাবে পুরা উম্মতকে ওই মেহনতের উপর উঠানো যে মেহনতের দ্বারা আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত হেদায়েতের, তরবিয়তের, তাজকিয়ার এবং নৈকট্য পয়দা করার তাকিদের সাথে ওয়াদা করছেন। দাওয়াত এবং আমাল জমা করানেওয়ালার দ্বীন সব চেয়ে সুন্দর হয়।

আমরাতো মেহনতের ময়দান দুনিয়াকেই বানিয়ে নিয়েছি। আমরা চাইতেছি হেদায়েত দোয়ার মাধ্যমে হাসিল হয়ে যাবে। অথচ যে লাইনে মেহনত হবে ওই লাইনেই ইয়াকীন পয়দা হবে। আমার সবার আগে জরুরী নিজের মেহনতের রুখ/দিক পরিবর্তন করা। মেহনতের রখ পরিবর্তন করা মানে হল আজ থেকে এই নিয়ত করে নিই কালেমার দাওয়াত কালেমার এখলাস হাসিল করার জন্য দিব, আল্লহর গায়েরের এনকার/অস্বীকার, আর আল্লহ থেকে হওয়ার একরার দ্বারা কালেমার হাকিকত অন্তরের ভিতরে আনব।

কালেমার এখলাস হল এই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ তার পড়নেওয়ালা কে হারাম থেকে ফিরাবে। এটাই হল কালেমার এখলাস। এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লহ, কালেমার এখলাস কি জিনিস? রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান, কালেমার এখলাস হল এই, এই কালেমা তার পড়নেওয়ালাকে হারাম থেকে ফিরায়। যা ব্যক্তির কালেমা তাকে হারাম থেকে ফিরাবে, সুনিশ্চিত সে জান্নাতে দাখিল হবে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে এখলাসের সাথে কালেমা পড়বে সে জান্নাতে দাখিল হবে।

সাহাবাহ কেরাম আরজ করেন ইয়া রসুলুল্লহ, কালেমার এখলাস কি? রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান, এই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ তার পড়নেওয়ালাকে হারাম থেকে ফিরায়। আমি দাওয়াতের দ্বারা কালেমার এখলাস চাই। এটাই সবচেয়ে পয়লা কাজ, এই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ কে দাওয়াতের মধ্যে নিয়ে আসা। এর দাওয়াত দ্বারা এর ইয়াকীন হাসিল হবে। ব্যবসা, চাকরী, হুকুমতের মেহনত দ্বারা ওই জিনিসের ইয়াকীন হয়েছে।

একই ভাবে কালেমার মেহনত দ্বারা কালেমার ইয়াকীন হাসিল হবে। কালেমার তাকাদা পুরা করার মধ্যে কামিয়াবীর ইয়াকীন দিলের ভিতরে পয়দা হওয়া এবং কালেমার তাকাদা ছুটার দ্বারা দুনিয়া আখেরাতের নাকামিয়াবীর ইয়াকীন দিলের ভিতরে পয়দা হওয়া এই কাইফিয়ত/অবস্থা এই মেহনতের দ্বারা এটাই চাওয়া হচ্ছে। ইয়াকীনের তরক্কীর জন্য, ঈমান শেখার জন্য ওই মেহনত, ওই তরীকায় মেহনত দরকার যে তরীকায় মেহনত খোদ সাহাবাহ কেরাম মেহনত তাদের জামানায় করেছেন। মাসজিদের মধ্যে ঈমানের মাজলিস কায়েম করেছেন ইয়াকীনের তরক্কীর জন্য। সেখানে আল্লহর মহত্ব/আজমাত, আল্লহর কুদরত, আল্লহর তৌহিদের আলোচনা হত।

মাসজিদের মধ্যে তারা ঈমান শিখতেন এবং ঈমানকে নিয়ে মাসজিদের বাইরে সকল মহল/পরিবেশের মধ্যে ঈমানের দাওয়াত নিয়ে ফিরতেন। এর দ্বারা ইয়াকীন আল্লহর গায়ের থেকে আল্লহর জাতের দিকে ফিরছে। এরপর উম্মতের মধ্য হতে এস্তেমায়ী ভাবে ঈমান শেখার দাওয়াই এবং কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর দাওয়াত ঈমানওয়ালাদের মধ্য হতে বিদায় নিল। বিরাট এক গলদ ধারনা পয়দা হয়ে গেছে যে, দাওয়াত তো গায়ের/অমুসলিম কওমদের জন্য। না! বরং যত্নের সাথে মনে রাখুন আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত ঈমানওয়ালাদের ঈমান আনার হুকুম করেছেন।

ইয়া আইয়ু হাল লাজিনা আমানু আমিনু। ও ঈমানওয়ালা তুমি ঈমান আনো। ঈমানওয়ালা আনুগত্যশীল জীবন যাপন কর। খোদ ঈমানওয়ালাকেই ঈমান আনার জন্য হুকুম করা হয়েছে। খোদ ঈমানওয়ালাই কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ এর, এর মেহনতের, এর দাওয়াতের, এর তাকাদা পুরা করার সবচেয়ে বেশি হকদার।

এই জন্য ভাই, আমরা মাসজিদ গুলোতে ঈমানের মাজলিসের দ্বারা, গায়েবের আলোচনার দ্বারা মাসজিদ গুলো আবাদ করব, এটা মাসজিদ আবাদীর সবচেয়ে পয়লা আমাল। এটা মাসজিদ আবাদীর সবচেয়ে পয়লা আমাল যে, মাসজিদের মধ্যে ঈমানের হালকা কায়েম করা। মায়াজ ইবন জাবাল, আব্দুল্লহ ইবন রওয়াহা রদিয়াল্লহু আ’নহুমা তারা লোকদের ডাকতেন মাসজিদের মধ্যে এই বলে যে, আস কিছু সময় আমরা ঈমান আনি। আল্লহ রব্বুল ইজ্জাত এই জিম্মাদারী সকল ঈমানওয়ালার উপরেই রেখেছেন। ইন্নামা ইয়া’মুরু মাসাজিদাল্লহি মান আ’মানা বিল্লাহ।

আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত ফরমান শতভাগ ঈমানওয়ালাই মাসজিদ আবাদ করনেওয়ালা হবে। এইজন্য সব ঈমানওয়ালারই এটা একটা তাকাদা যে, নিজের মাদী নকশা থেকে ফারেগ হয়ে আসবে এবং মাসজিদে ঈমানী মাজলিসে বসে গায়েবের আলোচনা ইয়াকীনের সাথে শুনে যাতে তার ইয়াকীন দাওয়াতের জরিয়ায় আল্লহর গায়ের থেকে সকল মাদী নকশা থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। ভাই দোস্ত, কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লহ ছয় নম্বরের মধ্যে পয়লা সিফাত। আমি, মাসজিদে, পয়লা সিফাতের মাধ্যমে মাসজিদের মেহনতের সাথে তায়াল্লুক/সম্পর্ক, এটা হল সব ঈমানওয়ালা কে দাওয়াতের জরিয়ায় তাদের মাহল থেকে বের করে মাসজিদের মাহলে জড়ো করার দ্বারা ইয়াকীন এবং ঈমানের মশক করানো। এক এক জন ঈমানওয়ালা মাসজিদ থেকে ঈমানের দাওয়াত নিয়ে দুনিয়ার সব শোবার/শ্রেণীর লোকদের কাছে যাবে।

সে ইয়াকীনের বুনিয়াদের উপরে এবং আমালের কামিয়াবীর বুনিয়াদের উপরে তাকে ওই মাহল থেকে বের করে মাসজিদের মাহলে নিয়ে আসবে। আমাদের গাস্ত, মোলাকাত/দেখা সাক্ষাতের মাকসাদ হল মাসজিদের মাহলে নিয়ে আসা এবং ঈমানের মাজলিসে বসানোর দ্বারা ইয়াকীনের মশক করানো। যখন ইয়াকীনের মেহনতের সাথে সমস্ত বাতিলের মোকাবেলায় আমালের দিকে দাওয়াত দেয়া হবে তখন আমাল ইয়াকীনী বনবে/হবে। নামাজ নষ্ট হবার মুল কারন হল, নিজের এবং আল্লহর মধ্যে আসবাবকে মাধ্যম মনে করে বসা এবং আসবাবকে মাধ্যম বানিয়ে আল্লহর জাত থেকে ফায়দা পাবার চেষ্টা করা। আমি বলতেছি, আমাদের এবং আল্লহর মধ্যে আমরা বিভিন্ন আসবাবকে যে মাধ্যম মনে করে বসে আছি এটাই আমাল নষ্ট হবার, আমাল ছুটে যাবার কারন।

আমাদের এবং আল্লহর মাঝে আমালই জরিয়া/মাধ্যম। আল্লহর কুদরত আল্লহর ওয়াদার সাথে আর ওয়াদা হুকুমের সাথে। আল্লহ জাতে আ’লী থেকে সরাসরি ফায়দা হাসিলের রাস্তা হল আহকামাত/হুকুম সমুহ। আমাদের ইয়াকীন দাওয়াতের জরিয়ার সেকেল/আসবাব থেকে আমালের দিকে ফিরানোর জন্য। যতক্ষন পর্যন্ত আমালের উপর ইয়াকীন না হবে, ততক্ষন আমাল ইয়াকীনের সাথে হবে না।

ইসলামের সবচেয়ে বড় রুকন এবং আল্লহর জাতে আ’লীর সাথে সবচেয়ে নিকতবর্তী হবার আমাল হল নামাজ। কুফর এবং ইসলামের মধ্যে স্রেফ/কেবল নামাজই পার্থক্য। হাদিসে এসেছে কুফর আর ইসলামের মধ্যে শুধু এতটুকুই পার্থক্য যে নামাজ ছেড়ে দেয়া। ভাই দোস্ত, এই ফরজ ততক্ষন পর্যন্ত কায়েম হবে না যতক্ষন না এর মোকাবেলায় সমস্ত কায়েনাতের নকশা থেকে বেআছর হয়ে এই ইয়াকীন দিলের মধ্যে আসে যে আল্লহ জাতে আ’লী থেকে ফায়দা হাসিলের মাধ্যম হল আহকামাত। নিজেদের ইয়াকীন সকল সেকেল/ব্যবস্থপনা থেকে আল্লহ আহকামাতের দিকে ফিরাতে হবে।

এজন্য সবার আগে এই মশক হবে, নামাজের মতই, আল্লাহর আহকামাতের মতই, সমস্ত কায়েনাতের মোকাবেলায়, সমস্ত আসবাবের মোকাবেলায় দাওয়াত দিতে হবে। ইয়াকীন যখন সেকেল/ব্যবস্থাপনার থেকে আহকামতের দিকে ফিরবে তখন আমাল কায়েম হবে। নামাজ ছেড়ে দেয়া, এমন কি এক রুকন ছেড়ে দেয়া এটাও কুফর ও ইসলামের মধ্যে ফারাক করনেওয়ালা। বিশেষ ভাবে আল্লহর রাস্তা বের হয়ে চমৎকার সুযোগ নিজের নামাজের উপর মশক করা। নামাজের উপরে সবচেয়ে পয়লা মশক, প্রত্যেক মুমিনের জিম্মায়, নামাজের জাহের ঠিক করা।

হাদিসে এসেছে যে নামাজের মধ্যে রুকুর পরে কোমর সোজা করে না, আল্লহ তার নামাজের দিকে তাকিয়েও দেখেন না। পুরা দ্বীন কায়েম হওয়া নামাজের উপর নির্ভরশীল। নামাজের জাহের যদি বিগড়ে যায় দ্বীনের কোন শোবা/অংশই, দ্বীনের কোন হুকুমই কায়েম হবে না। এই জন্য নামাজের সবচেয়ে প্রথম ম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।