আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুরআনের আরেকটি অজানা মিরাকেল....

কেউ মুক্তচিন্তা করে সঠিক পথ খুঁজে পায়, আর কেউ হয় পথভ্রষ্ট। বাবারা, বুদ্ধিজীবীর খেতাবের লোভে মুক্তচিন্তা করলে সব হবে নষ্ট... কোরআনে অনেক সাইন্টিফিক মিরাকেলই প্রায় আলোচিত হয় কিন্তু এমন কিছু সাইন্টিফিক মিরাকেল আছে যা এখনো অনেকের অজানা। তাই ভাবলাম এই মিরাকেলগুলু নিয়ে কিছু পোস্ট করব ধারাবাহিভাবে...... আজ সকালে"সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকার আর তার কারণ সম্পর্কে কোরআনের ইঙ্গিত " নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। আশা করি পড়েছেন। পড়া না হলে লিঙ্কে ক্লিক পড়ে নিতে পারেন।

কোরানের এই সাইন্টিফিক মিরাকেলের কথা এখন অনেকের অজানা। কুরআন ও মেঘমালা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরণের মেঘমালার উপর গবেষণা করেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন যে, বৃষ্টিবাহী মেঘ নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়। তা গঠিত হয় নির্দিষ্ট প্রকারের বাতাস ও মেঘ দ্বারা। এক প্রকার মেঘের নাম "সাহাবুর রুকাম তথা মেঘপুঞ্জ" (Cumulonimbus) মহাকাশ বিজ্ঞানীরা উক্ত মেঘের গঠন,বৃষ্টি,শীলা ও বিজলী নিয়ে গবেষণা করেছেন।

তারা প্রমাণ করেছেন যে, উক্ত মেঘপুঞ্জ বৃষ্টি তৈরীর জন্য নিম্নের প্রক্রিয়া সমুহ সম্পন্ন করে থাকে। ১. বাতাস কর্তৃক মেঘকে ধাক্কা দেয়া: ছোট মেঘ খন্ডকে বাতাস যখন ধাক্কা দেয় তখন "সাহাবুর রুকাম বা বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ" নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তৈরী হতে শুরু করে। ২. মেঘখন্ডের মিলন: ছোট ছোট মেঘখন্ড একসাথে মিলিত হয়ে বড় মেঘমালায় পরিণত হয়। (বায়ুমন্ডল-এন্থেস ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা-২৬৮-২৬৯, বায়ু বিজ্ঞান-মিলার ও থম্বসন, পৃষ্ঠা-১৪১) ৩. স্তুপ করে রাখা: যখন ছোট ছোট মেঘ খন্ড একত্রে মিলিত হয় তখন তা উচু হয়ে যায় এবং উড্ডয়মান বাতাসের গতি পার্শ্ববর্তী স্থানের তুলনায় মেঘের মুল কেন্দ্রের নিকটে বৃদ্ধি পেয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। এই উড্ডয়মান বাতাসের গতি মেঘের আকার বৃদ্ধি করে মেঘকে স্তুপীকৃত করতে সাহায্য করে।

এই মেঘের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে মেঘটা বায়ুমন্ডলের অধিকতর ঠান্ডা স্থানের দিকে বিস্তৃতি লাভ করে সেখানে পানির ফোটা ও বরফের সৃষ্টি করে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এরপর যখনই এগুলো অধিক ওজন বিশিষ্ট্য হয়ে যায় তখন বাতাস আর তাকে কন্ট্রোল করতে পারে না। ফলে,মেঘমালা থেকে তা বৃষ্টি ও শিলা হিসেবে বর্ষিত হয়। (বায়ুমন্ডল-এন্থেস ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা-২৬৯, বায়ু বিজ্ঞান-মিলার ও থম্বসন, পৃষ্ঠা-১৪১) স্যাটেলাইট থেকে নেয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, মেঘ B,C ও D এর মিলন স্থলের দিকে ঘুর্ণায়মাণ। তীর চিহ্নগুলো বাতাসের গতিপথ নির্দেশ করছে।

(বায়ুমন্ডলের বিশ্লেষণ ও পুর্বাভাষ জানতে স্যাটেলাইটের ছবি ব্যবহার-এন্ডারসন ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা-১৮৮) মেঘের ছোট ছোট টুকরা (স্তুপীকৃত মেঘমালা Cumulus) ছুটাছুটি করছে শেষ প্রান্তের বড় মেঘখন্ডের নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশ্যে। (ঝড় ও মেঘমালা-লুডলাম ৭.৪ Clouds and storms. Ludlam) (A) বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট মেঘমালা একত্রিত হয়ে বড় মেঘে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। (B) ছোট ছোট মেঘ কণাগুলো একত্রিত হয়ে বড় মেঘমালায় পরিণত হয়ে ফোটা ফোটা পানিতে পরিণত হয়েছে। পানির ফোটা (*) চিহ্নিত। (বায়ুমন্ডল-এন্থেস ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা-২৬৯ / The atmosphere) ছোট ছোট মেঘখন্ড একত্রিত হয়ে গঠিত "সাহাবুর রুকাম বা বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ" থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছে।

(আল-জাওয়ু ওয়াল মানাখ (আবহাওয়া ও বায়ুমন্ডল)-বুডিন, পৃষ্ঠা-১২৩) আল্লাহ তায়ালা বলেন: তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ তায়ালা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন? তারপর তাকে পুঞ্জিভুত করেন, এরপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন? অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা বর্ষিত হয়। (সুরা নুর: ৪৩) মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অতি সম্প্রতি কম্পিউটার,বিমান, স্যাটেলাইট সহ বায়ুর চাপ,আর্দ্রতা পরিবর্তন প্রভৃতি নিয়ে গবেষণার যন্ত্রপাতিসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মেঘের সৃষ্টি, গঠন প্রণালী ও তার কাজ-কর্ম সম্বন্ধে জেনেছেন। (ই'জাজুল কুরআনিল কারীম ফি ওয়াসফি আনওয়ায়ির রিয়াহি ওয়াস সিহাবি ওয়াল মাত্বার-ম্যাকি ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা-৫৫) মেঘ ও বৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করার পর কুরআন বরফ ও বিদ্যুৎ সম্বন্ধে আলোচনা করেছে। আল্লাহ বলেন: আর তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন। এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সরিয়ে দেন।

তার বিদ্যুতঝলক যেন তার দৃষ্টিশক্তিকে বিলীন করে দিতে চায়। (সুরা নুর:৪৩) মহাকাশ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, সাহাবে রুকাম তথা বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ; যা থেকে শিলা-বৃষ্টি বর্ষিত হয় তার উচ্চতা ২৫০০০ থেকে ৩০০০০ ফুট বা ৭.৪০ থেকে ৭.৫০ মাইল পর্যন্ত হয়ে থাকে। (মহাকাশ বিজ্ঞান-মিল্লার ও থম্বসন, পৃষ্ঠা-১৪১) তাকে পাহাড়ের মতই দেখায় যেমনটি আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন: " وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ جِبَالٍ " অর্থাৎ, আর তিনি আকাশস্থিত পাহাড় (শিলাস্তুপ) থেকে শিলাবর্ষণ করেন। এই আয়াত নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে-আয়াতে " سَنَا بَرْقِهِ" (বিদ্যুৎঝলক) বলা হল কেন? যা বরফের দিকে নির্দেশ করে? তাহলে কি তার অর্থ দাঁড়ায় যে, শিলাই বিদ্যুৎঝলক সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখে? আসুন! আমরা দেখি "বর্তমান মহাকাশ বিজ্ঞান" (Meteorology Today) গ্রন্থ এ সম্বন্ধে কি বলে? উক্ত গ্রন্থে বলা হয়েছে-বরফ পড়ার দ্বারা মেঘে বৈদ্যুতিক চার্জের সৃষ্টি হয়।

পানি ফোটার সাথে বরফের সামান্য সংস্পর্শ পেয়েই জমাট বেধে তাতে গোপণ তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। আর বরফ টুকরার কারণে উক্ত বরফ পৃষ্ঠে সমুদ্র পৃষ্ঠের চেয়ে বেশী তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এখানে আরেকটা আশ্চর্যজনক প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়;তাহল-এখানে বিদ্যুত অধিক ঠান্ডা থেকে অধিক গরমে পরিণত হয়ে নেগেটিভ চার্জের সৃষ্টি করে। এমনিভাবে ঠান্ডা পানির ফোটার সাথে বরফের সংস্পর্শের পর এর ছোট ছোট কণাগুলো পজেটিভ চার্জ হয়ে উর্ধগামী বাতাসের মাধ্যমে মেঘের উপরে চলে যায় এবং অন্য শিলাগুলো নেগেটিভ চার্জ হয়ে মেঘের নিচের দিকে চলে আসে। এখানে মেঘের নিচের অংশেও নেগেটিভ চার্জ হয়।

আর এই নেগেটিভ চার্জই বিদ্যুত হয়ে প্রজ্জলিত হয়। সারকথা হল- শিলাই বিদ্যুত সৃষ্টির প্রধান উপকরণ। অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বিদ্যুতঝলক সম্বন্ধে এ সমস্ত তথ্য আবিস্কার করেছেন। প্রায় ১৬০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দার্শনিক এরিস্টোটলের তত্ত্বই সারা পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল। তিনি বলেছিলেন:বায়ুমন্ডল দুঃটি নিঃশ্বাসের সম্মিলনের ফলাফল:আর্দ্র ও শুকনো।

তিনি আরও বলেছেন:বজ্রধ্বনি হল শুকনা নিঃশ্বাসের সাথে অত্যাচারী মেঘের সংঘর্ষের ফল। আর বিদ্যুতঝলক হল ভীতিকর আগুনের মত করে শুকনা নিঃশ্বাসকে পুড়িয়ে দেয়া। (এরিস্টোটলের কর্ম:মহাকাশ বিজ্ঞান-রউস ও অন্যান্য,৩য় খন্ড,পৃষ্ঠা-৩৬৯a, ৩৬৯b) ইংরেজীতে অনুদিত। এগুলো মহাকাশ সংক্রান্ত তথ্যাদির মধ্যকার কিছু তথ্য; যা ১৪০০ বছর আগে কুরআন নাযিলের সময় থেকেই তার নিজস্ব প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। From- "Guide to understanding Islam" Written by- I.A. Ibrahim. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।