আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গীবত, পরচর্চাকারী ও পরনিন্দাকারীদের রোজা কবুল হবে না



এই বিষয়ে জানতে চেয়ে আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। উত্তরে সাম্বাদিক নামে একজন ব্লগার চমতকার মন্তব্য সহকারে জবাব দিয়েছেন। সেগুলো আমি মুসলমান ব্লগার যারা রোজা রাখেন তাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই, আশা করি তারা এই নসীহত পড়ার পর উপকৃত হবেন : রমযানের যা অর্জন তা নষ্ট করে দেয় এই গীবৎ চর্চা। রোজা সাধনার মাস রমযান মানুষের জীবনে এমন এক প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া যা মানুষের আত্মসুদ্ধির জন্যে এবং নাফসের জন্যে এটি মোক্ষম হাতিয়ার । রোজা রেখে বিশেষ করে পরনিন্দা, পরচর্চা ও গীবত করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন আল্লাহর রাসুল ।

পবিত্র কোরআনেও এসব বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে। আর এজন্যই নিষেধ করা হয়েছে যে, কেউ রোজা রাখে আত্মশুদ্ধির জন্যে । ফলে এসময় তার আচার আচরণ, কথাবার্তা, গতিবিধি সবকিছুর মধ্যে একটা আদর্শগত প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হওয়া দরকার । একটা হাদিসে হুজুর (দ.) পরিষ্কারভাবে এরশাদ করেছেন ,''যে ব্যক্তি গীবত, পরনিন্দা, চোগলখুরী এগুলো করলো সে যেন তার মায়ের সাথে তেষট্টি বার জেনা করলো। '' অন্য এক হাদিসে রাসুলে পাক এরশাদ করেছেন ,''পরনিন্দা, পরচর্চা, চোগলখুরী ও গীবত এগুলো জেনার চেয়েও আরো জঘন্যতম অপরাধ ।

'' আর এসবের কারণে একজন রোজাদারকে সব সময় পারফেক্ট হতে হবে তার কথায়, আচরণে, গতিবিধিতে । এমনকি তার বাচনভঙ্গি ও শব্দ চয়নে এমন শালীনতা থাকতে হবে । এ সম্পর্কে অন্য একটি হাদীসে রাসুলে পাক (সাঃ) বলেছেন ,'' যে ব্যক্তি রোজা রেখে তার কথাবার্তার মধ্যে শালীন হতে পারলো না ; তার কথাবার্তা ও আচার আচরণের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজেকে বিশুদ্ধ করতে পারলো না ; সে পানাহার থেকে বিরত থাকলেও আল্লাহর কাছে তার রোজা গ্রহণ যোগ্য হবে না । আরো একটা হাদিসে আল্লার রাসুল (সাঃ) বলেছেন ,''বহু রোজাদার এমন রয়েছেন যে রোজা রেখে তার কাজে ও আচরণে পরনিন্দা ও পরচর্চা করে ফলে রোজার প্রতিদান হিসেবে সে ক্ষুধার কষ্ট এবং পানি পিপাসার কষ্ট ছাড়া অন্য কিছুই তার প্রাপ্য হিসেবে স্বীকৃত হবে না । '' এ প্রসঙ্গে উনি আরো বলেছেন : একটি ফেতনার নাম গীবত।

এটা বেশী গুরুতর। কারণ এতে মানুষ তার ভাইয়ের সামনে নয় বরং তার পেছনে বসে নিন্দাবাদ করে। তাই কুরআন গীবতকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাবার সঙ্গে তুলনা করেছে : لا يغتب بعضكم بعضا – أيحب أحدكم أن يأكل لحم اخيه ميتا فكرهتموه – “কেউ কারো গীবত করো না। তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? একে তো তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে। ” (সূরা হুজরাত-১২) রাসূলে কারীম (সঃ) গীবতের সংজ্ঞা দান প্রসঙ্গে একবার সাহাবীদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন : ‘গীবত কি তা তোমরা জানো?’ সাহাবীগণ বলেনঃ ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।

’ তিনি বললেনঃ ذكرك اخاك بما يكره فقيل ارايت ان كان فى اخى ما اقول قال ان كان فيه ما تقول فقد اغتبته وان لم يكن فيه ما تقول فقد بهته – “গীবত হচ্ছে এই যে, তোমার ভইয়ের পছন্দনীয় নয়, এমনভাবে তার চর্চা করা। বলা হলো, আমার ভাইয়ের মধ্যে যদি উল্লেখিত খারাবী বর্তমান থাকে? রাসূল (সঃ) বললেনঃ তোমরা যদি এমন খারাবীর কথা উল্লেখ করো, যা তার মধ্যে বর্তমান রয়েছে, তবে তো গীবত করলে। আর তার মধ্যে যদি তা বর্তমান না থাকে তো তার ওপর অপবাদ চাপিয়ে দিলে। ” (মুসলিম-আবু হুরায়রা রাঃ) বস্তুত একজন মুসলিম ভাইয়ের মান-ইজ্জত দাবী করে যে, তার ভাই যেনো পেছনে বসে নিন্দাবাদ না করে। গীবতের একটি রূপ হচ্ছে চোগলখুরী।

আল কুরআন এর নিন্দা করতে গিয়ে বলেছেঃ همَّازٍ مَّشّاء بنميم – ‘যারা লোকদের প্রতি বিদ্রুপ প্রদর্শন করে এবং চোগলখুরী করে বেড়ায়। ’ (সূরা কালাম-১১) হযরত হোজায়ফা (রাঃ) বলেন ঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। ' রাসূলে কারীম (সাঃ) সঙ্গীদেরকে বিশেষভাবে নছিহত করে বলেনঃ لا يبلغنى احد من اصابى شيئا فانى احبَّ ان اخرج اليكم وانا سليم الصدر – “কোন ব্যক্তি কারো সম্পর্কে কোন খারাপ কথা আমার কাছে পৌঁছাবে না, কারণ আমি যখন তোমাদের কাছে আসি, তখন সবার প্রতিই আমার মন পরিস্কার থাকুকু-এটাই আমি পছন্দ করি। ” (আবু দাউদ-ইবনে মাসউদ রাঃ)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.